সকল দলগত ভ্রমনেই কোন না কোন মজাদার ঘটনা ঘটে থাকে। যেটা আবার অরণ্যদের ভ্রমণ দলের কাছে অনিবার্য ব্যাপার! কারণ, অরণ্য-শীতল-তিল-ডিউ-বিরাগ ও চঞ্চল, ওদের ছয় জনের চরিত্র ছয় রকম! চিন্তা-ভাবনা আর জীবন-যাপন, ধরন-ধারন ছাড়াও অন্যান্য কোন কিছুতেই কারো সাথে কারো কোন মিল নেই। তারপরেও কিভাবে কিভাবে যেন ওরা একটি ভ্রমণ গ্রুপে একত্রিত হয়ে বেরিয়ে পড়ে মাঝে মাঝেই!
হয়তো একমাত্র ভ্রমণ নেশাটাই ওদের একত্রিত করে বার বার। আর প্রত্যেকবার ভ্রমণে বের হবার পরে কোন না কোন হাস্যকর ঘটনা ঘটে থাকে বা কেউ ঘটিয়ে থাকি যা পুরো ভ্রমণকে দারুণ আনন্দঘন আর উপভোগ্য করে তোলে সব সময়ই! এবারও যে তেমন ঘটবে সেটা ওদের জানাই ছিল, কিন্ত এবারের রম্য যে ভ্রমণ শুরু আগেই শুরু হবে সে কি জানতো? কিন্তু যেটা ভাবেনি সেটাই ঘটেছে বা ঘটিয়েছেন ভ্রমণের এক নিয়মিত সদস্য এবং কোননা কোন রম্যর কারিগর!
তবে চলুন শুনি ভ্রমণ শুরুর আগেই কি রম্য তিনি সবাইকে দিয়েছেন? ওদের পুরো ভ্রমণের আনন্দের খোরাক জোগাবে।
প্রায় ১ মাস আগে থেকে পরিকল্পনা হচ্ছে কোথায় যাওয়া যায় আর কিভাবে যাওয়া যায়? এই নিয়ে প্রতিদিন কত মিটিং-সিটিং-টুকটাক ইটিং কেউ কেউ মিসিং! আবার কারো কারো চিটিংও আছে!! যাই হোক মিটিংএ ভারত থেকে শুরু করে নেপাল-ভুটান এমনকি ইন্দোনেশিয়াও বাদ যায়নি!
আর বাংলাদেশের তো বান্দরবান-সুন্দরবন-সিলেট-রাঙামাটি-কক্সবাজার-সেন্ট মারটিন সকল জায়গায় ঘুরে আসা হয়েছে মিটিং এর আলোচনার মাধ্যমেই!
শেষমেশ এসে ঠিক হল একটু ভিন্ন স্বাদ, পরিবেশ আর আবহের উত্তর বঙ্গ বিশেষ করে পঞ্চগড় আর তেতুলিয়ার বাংলাবান্ধা ঘুরে আসা যায় এবার। সেটাও নীল সাগর ট্রেনের তাপানুকুল বাথ এ করে! যেটা ওদের অন্যান্য ভ্রমণ ও মানসিকতার সাথে একেবারেই যায়না! তারপরও কারণ যুক্তি হল, এতে যতটা না নতুন কোন অ্যাডভেঞ্চার হবে, তারচেয়ে অনেক বেশী একত্রে লম্বা সময়ের ভ্রমণ আড্ডা হবে। যেখানে শুধু ওদের ভ্রমণ সদস্যরাই থাকবেন, অন্য কেউ থাকবেন না আর কারো কোন রকম বিরক্তির উদ্রেকও আমরা করবোনা।
মিটিং এ এ নিয়ে আলোচনা, টিকেটের ভাড়া-সময়-ছাড়া-পৌঁছানোর ব্যাপার-স্যাপ্যার দেখা হল, এমনকি নীল সাগর ট্রেনের এইসব কাগজ প্রিন্টও করা হল, তা নিয়েও হল অনেক অনেক আলাপ-আলোচনা। ২৩ তারিখ বিমান বন্দর রেল স্টেশনে গিয়ে সবার টিকেট কাটা হল, যেখানে দুইজন ছাড়া বাকি সবাই উপস্থিত ছিল, আর যারা উপস্থিত ছিলোনা তাদেরকেও টিকেট কাটার সাথে সাথে জানিয়ে দেয়া হল, টিকেট কাটার কথা এবং স্টেশনে পৌঁছানোর বিস্তারিত।
পরদিন অফিসে এসে আবার সবার সাথে মিটিংএ বসা। আলাপ-আলোচনা এবং কে কোথা থেকে উঠবে সেই নিয়ে কথাবার্তা... এমনকি একটাও বলা হল যে নীল সাগর ট্রেন ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে ছাড়ে, চাইলে কেউ ওখান থেকেই উঠতে পারে অথবা বিমানবন্দর স্টেশন থেকে। বেশ ভালো সবাই যে যার স্টেশন কনফার্ম করলো।
মিটিং প্রায় শেষ শিঙ্গাড়া-সমুচা আর চায়ের পর্ব চলছে, এমন সময় “ডিউ” জিজ্ঞাসা করে বসলেন......
আচ্ছা “নীল সাগর” কি ট্রেন না বাস......!!! এরপর আর কি বলার আছে বা থাকতে পারে আপনারাই বলুন?
যে নীল সাগর ট্রেন নিয়ে এতো-এতো আলোচনা, এসি বাথ নিয়ে কথাবার্তা, সেসব প্রিন্ট দিয়ে দেয়া, টিকেট কাটার পরে সবাইকে জানানো এবং কে কোন রেল-স্টেশন থেকে উঠবে সেসব ঠিক করা, এতো সবের পরেও যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে যে “নীল সাগর” কি ট্রেন না বাস!!?? ভ্রমণের শুরুতেই এরচেয়ে বড় রম্য আর কি হতে পারে??
তাই এবারের ভ্রমণের শুরুতেই যে রম্যের অবতারণা তা হল.........
আচ্ছা, “নীল সাগর” কি ট্রেন না বাস............!!!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৩