এই শহর, এই ঢাকা শহরে কি কোন মায়া আছে? আছে কি কোন টান বা সত্যিকারের ভালোবাসা? কি জানি, কখন তো তেমন কিছু ছুঁয়ে যায়নি মন-প্রান বা হৃদয়কে! তবে হ্যাঁ একটা অদ্ভুত আকর্ষণ আছে এই শহরের। যে কারণে যে যত কিছুই বলুকনা কেন, এই শহর ছেড়ে কেউ কোথাও যেতে চায়না। যদিও আছে শত শত অসহ্যতা! কি সেই সব?
সকাল বেলা, বাসায় বুয়ার না আসা, জ্যামে জর্জরিত রাস্তা, ঘামে ভেজা কাপড়-জামা, লেট করে অফিসে পৌঁছা, অফিসে পৌঁছে বসের ঝাড়ি খাওয়া, শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজ-ভার্সিটিতে ক্লাস বা পরীক্ষায় সঠিক সময়ে উপস্থিত হতে না পারা। আর যারা অফিসের বাইরে রোদে বা ধুলার মাঝে কাজ করে, তাদের তো তথৈবচ অবস্থা। সঠিক সময়ে সঠিক বাহন না পাওয়া, এদিক-ওদিক ছোটাছুটি, খোঁড়া রাস্তায় আটকে থাকা, ঘেমে-নেয়ে একাকার, জীবনটা বিষিয়ে যাওয়া, নিরুপায় হয়ে জীবনকে টেনে চলা!
আর যারা অফিসে এসির ভিতরে কাজ করে, তাদের সইতে হয় কতশত গঞ্জনা, দেখতে হয় কতশত অনিয়ম, স্বার্থপরতা, নীতি বিবর্জিত কাজের পসরা। কেউ কেউ বসে-বসে, বাতাস খেয়ে, বসের সাথে কিছু সময় কাটিয়ে, অন্যের সমালোচনা করা, কান ভারী করা, তেল দিয়ে দিয়ে পিচ্ছিল করে দিয়ে, সময় কাটায় এবং বছরের পর বছর কাটিয়ে দেয়।
আর কেউ-কেউ সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত খেটে-খেটে ক্লান্ত হয়, কাজের চাপে হয় বিকৃত মস্তিক, চেয়ার থাকা সত্ত্বেও বসার সময় হয়ে ওঠেনা চেয়ারে, এই কমিটি, সেই কমিটি, ওই কমিটিতে গিয়ে গিয়ে দিনের অধিকাংশ সময় কাটাতে বাধ্য হয়, আর নিজের টেবিলের কাজের স্তূপ জমা হওয়ায় দিন শেষে অদক্ষ বা ফাঁকিবাজ কর্মী হিসেবে তিরস্কার শুনতে হয়! তারপর এমন হুমকিও শুনতে হয় কাউকে কাউকে যে কাজের তেমন চাপ নেই, আরও বেশী বেশী কাজ দেয়া উচিৎ এবং করা উচিৎ!!
অথচ অন্য অনেকে...... কি যে করে সে নিজেই জানেনা, কোথাও একজনের কাজ চারজন করে! কেউ কেউ চারজনের কাজ একজন!! কাজের এমনই সমবণ্টন!! আর এই কথা বলতে গেলেই বেয়াদপ অথবা গ্রিভেন্স এর আওতায় আনা হয়!!!
হাঁয়রে মানুষ, আর তাদের নীতিবোধ! সৎ কি শুধু অসৎ পথে টাকা উপার্জন না করেই থাকা যায়? সৎ হতে হবে মনে-প্রানে-কাজে-চিন্তায়-ভাবনায়-বিচার-বিবেচনায়-বোধে-নীতিতে আর সর্বোপরি নিজের কাছে নিজেই আগে!! তাই প্রশ্ন করুন না নিজেকে, আপনি কি সৎ আপনার নিজের কাছে? নিজের সকল চিন্তা-ভাবনা আর কর্মের কাছে, বিচার আর বিবেচনার কাছে? দেখুন কি উত্তর পান? সেই বিচারের ভার রইলো আপনার কাছেই!
বড় অদ্ভুত এক শহর আর তার চেয়েও অদ্ভুত এই শহরের মানুষগুলো। তাদের চিন্তা-ভাবনা আর বিচার-বিবেচনা। আর নীতি বা বিবেকের কাছে জিজ্ঞাসা? সেতো তাদের বোধ ও কোন রকম বিবেচনার বাইরে! সেই বোধই তাদের আছে কি নেই, সেই প্রশ্নই প্রশ্নের বাইরে!!
সব অসুখ, অসহ্যতা, অভব্যতা আর অস্থির দুস্থ চিন্তা ছাপিয়ে এই শহরে কিছু সুখের খোঁজ মিলেছে... সে এক অন্য সুখ, মনের সাময়িক সুখ, একান্ত আনন্দ আর অন্যরকম ভাবনার আবেশ! কি সেটা, কি সেই সুখ?
হ্যাঁ আছে, আজকার এই ইট-পাথর আর নীতিহীনদের শহরে কিছু সময়ের সুখের অনুরণ হয়ে গাছে গাছে ফুটেছে লাল কৃষ্ণচূড়া-লাল হলুদের রাধাচূড়া-রক্ত বরণ শিমুল-গোলাপি জারুল আর হঠাৎ হঠাৎ সুখের ঝড়ো হাওয়া...
যা দেখে মন ভালো হয়, প্রান প্রান ফিরে পায়, নতুন উদ্যমে বাঁচতে ইচ্ছে করে, দুঃখ-কষ্ট আর অপমান-অবহেলা দূরে সরে যায়।
কৃষ্ণচূড়া-রাধাচূড়া-জারুল-শিমুলের নির্মল আর নিঃস্বার্থ ভালোবাসায়.........
ওরাই এই শহরের একমাত্র ভালোবাসা আর ভালোলাগা............!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৫৪