নিঝুম দ্বীপ থেকে ফিরছি... সন্ধা বেশ আগেই পেরিয়ে গেছে। আকাশে মেঘ-চাঁদের রেষারেষি আর আলো-আধারির খেলা, নদীতে ভাটার টান, মাঝিদের নিজস্ব সঙ্গীত! সামান্য ঢেউয়ে ক্ষণে-ক্ষণে নৌকার দুলে ওঠা, কিছুক্ষণ আগের অরন্য ভ্রমণের পূর্ণতার পরে, ভর সন্ধার এই নৌকা বিলাস যেন, ভ্রমনের মধুর পরশ। সাথে উপরি হিসেবে ছিল মাছ ধরার ট্রলারে সান্ধ চায়ের তৃষ্ণা মেটানোর অভাবনীয়তা। সেসব যাই হোক, চলছিলাম বেশ হেলে-দুলে, মনে সুখের পাল তুলে। এরই মধ্যে দূরে কোনো এক চর দেখে, একজনের মনে খেয়াল চাপলঃ
“আচ্ছা ওই দূরের চর গুলোতে নাকি কোনো মানুষ থাকেনা, তো ওখানে বাঘের চাষ করা যায়না...!”
এই শুনে অন্য একজনের উত্তর, “বাঘের চাষ যে করবেন, বাঘ খাবে কি? ওখানে তো কোনো খাবার নাই?”
এবার বাঘ চাষির উত্তর,
“কেন? নিঝুম দ্বীপ থেকে, হরিণ ছেড়ে দেবে! বাঘ খাবে!”
যেখানে, নিঝুম দ্বীপের হরিণই ঠিকঠাক খাবার পাচ্ছেনা, শুকিয়ে প্রায় হাড্ডিসার অবস্থা, সেখানে আবার বাঘ চাষের স্বপ্ন! বাহঃ অতি উৎকৃষ্ট চিন্তা!
এইবার অন্যরাও এই বিনোদন মূলক আলোচনায় যোগ দিয়ে, তাঁদের ভিন্ন-ভিন্ন প্রাণী চাষের স্বপ্নের ফিরিস্তি দিতে লাগলোঃ
একজন, “আচ্ছা, তাইলে আমি, বাঘ চাষের পাশের টায়, হাতির চাষ করমু!”
অন্য জনের জিজ্ঞাসা, “তাইলে হাটি খাবে কি?” কেন, কলা গাছ লাগাইয়া দিমু, পুরা চর জুইরা!”
বাহঃ তবে তো বেশ হত, হাতিরও একটা অভয়ারণ্য হত, সাথে অনেক-অনেক কলার চাষ, কিন্তু আমরা করিনা কেন?
“আমরা ওইসব চিন্তা কখন করবো, চর দখল আর মারামারি-কাটাকাটি নিয়াই তো সময় কাইটা যায়!” আমাদের মাঝির উপলব্ধি!
“তুই যদি, হাতির চাষ করস, তো আমি তার পাশের টাতে, অজগরের চাষ শুরু করমু!” “খাওয়ার কোনো চিন্তা নাই, নদীতে নামবে, আর মাছ খাবে!”
“তাইলে আমি, একটা চরে ডাইনোসরের চাষ করমু!” আর একজন। ডাইনোসর কি খাবে? “ক্যান, যখন খাইতে মন চাইবে, তখনই, বাঘ খাবে, হরিণ খাবে, হাতি খাবে, মাছ খাবে, ওর তো খওয়ার সমস্যা একদমই নাই, যা খুশী, যখন খুশী, তাই খাবে!”
হায়রে, বাঘ-হরিণ-হাতি-ডাইনোসর বা অজগর না হোক, আসলেই যদি এই চর গুলো নিয়ে হানাহানি না করে, কিছু উন্নতির চিন্তা করতো? সেটা হতে পারে কোনো প্রাণীর অভয়ারণ্য, কোনো বনজ বা প্রয়োজনীয় বৃক্ষের চাষ, কোনো নান্দনিক পর্যটন কেন্দ্র, বা একান্ত রক্ষণশীল কোনো স্পট গবেষণার জন্য!
কিন্তু, আদৌ কি সম্ভব, এই সব কিছুর? আমাদের দেশে? এই, সব খেকোদের দেশে?
এ শুধুই দীর্ঘশ্বাস......!
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:০৯