আমার সলিট্যারি রীপার
তুমি আমাকে চোরকাটার গান শুনিয়েছিলে, সেই ছোটবেলায়, এখনো এক বিন্দু ভুলিনি, বিশ্বাস করেই চোরকাটা মুখে পুরে ছিলাম, টান দিয়েই দিলে দৌঁড়, দুই তিন দিন গলা ব্যাথায় ভাত পানি গিলতে কষ্ট হয়েছিল।
স্কুল থেকে ফেরার বিল পথের নাম 'সেবা খোলা বিল'। ' তোমার মনে আছে তো ! লম্বা লম্বা বালাম ধানের ফাঁকে তোমার সাদা পাজামা, হালকা নীল এপ্রোন,বুকের দুধার দিয়ে ওরপাড় করে গোঁজা ওরনা, চোখে পড়া নিত্য আলোর নেগেটিভে তুমি বনর্নাতীত। মনে আছে তোমার, আমি আগে থেকেই ওঁতপেতে থাকতাম, আমাকে দেখেই দিতে এক দৌঁড়। ঝাপটে ধরে তোমার শরীরের তামাটে ঘ্রান নিতে ইচ্ছে হত।
জানো, সে সব দিন গুলো আঁটসাঁট মালার অংগহানীতে না গিয়ে কিউ করে মাথার চারপাশে ঘুরে অবিরাম।আজ নষ্টালজিয়াটা বোধ হয় আর লুকাতে পারলাম না। কিছু মনে কর না লক্ষীটি!
বেত গুলো খেতে চেয়েছিলে, মল্লিকদের বাড়ী থেকে চুরি করে চুপি চুপি দিতে গিয়ে খেলাম ধরা, তোমার আমার নিক নেইম হল'বেতগুলো'-দুজনেই নিরূপায়-মুচকি মুচকি হাসতে।
এ আগানো জীবনের না বলা, না পারা'দের ভিড়ে তোমাকে মনের আপন একটা কথা বলতে না পারা টা, জানো, নিশান ওড়ায়, সে ইতিহাসের বীরদের চিনে না, কিন্তু নিজেই চিন্তক, না দের অস্থিত্ব জানান দেওয়া খনি খোদক।
তুমি আমার একবছরের বড় ছিলে কিন্তু, হা হা হা । ক্লাস থ্রিতে উঠলাম, তোমার বাবা,তোমাকে আমাদের ক্লাসে ঢুকিয়ে দিল, ফ্রেশ বকা খাওয়া ফোলানো মুখ, রোদে ঘেমে হাতের মাংসল বাহু মরিচ বর্ন।টীটকারি ছলে হেসেছিলাম,সফি স্যারের নাতিদীর্ঘ বেতে বাড়িতে হুঁশ হল। তোমার কি মনে পড়ে, প্রাইমারীতে দুপুর ছুটিতে স্লুলের পাশের কালীবাড়ীতে জমতো লুকোচুরি খেলা। একান্ত ইচ্ছায় নিয়ে নিতাম তোমার গায়ের গন্ধ।
সবসময় আমি, তোমার হাসিমাখা মুখ দেখতে চাইতাম, তবে হাসতে খুব কম, কী কষ্ট ছিল জানতে পারি নি, সেই শৈশব-কৈঢর পাড় হওয়া অবধিসে অভ্যাস টা বজায় ছিল। ঈষৎ কালো মুখ টা নিয়ে তোমার যত আহংকার আর আমার রাম ধনু নিশানা, বর্ষার জলপুকুরে আমার সুখ সাঁতার।
তোমাদের ছায়াঘন উঠানের জবা ঝাড়টা আমার খুব প্রিয়, পুকুরের দূর পাড় থেকে চেয়ে থাকতাম, সন্ধ্যায় ঘাঁটার নাগেশ্বর তলায় আমার ছায়া তোমাদের গেছোভুতদের ভয় দেখাতো ! কিন্তু তোমার ছায়া দেখতে পেতাম খুবই কম।
দূর্গাপূজায় তোমাকে প্রাণভরে দেখতাম, অষ্টমীতে লাল পেড়ে শাড়ীতে তোমাকে 'ডালিম দানা' মনে হত।একটু হাসি দেখবো বলে , ধুতি গুঁজে দাড়িয়ে যেতাম নবমীর বলীতে। বার্ষিক ক্রীড়া-প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কবিতা আবৃত্তিতে
" Oh marry, call the cattle home,
Call the cattle home, across the Sand's of Dee. পড়েছি জোর গলায়,ফার্স্টা প্রাইজ পেয়েছি, তবে তোমার তালি পাইনি।
হালদা পাড়ের বাজার, যেতে হত ঘুর পথে, জানো, রাস্তা ধরে না গিয়ে তোমাদের পচা ডোবা লাফ দিয়ে পেড়িয়ে যেতাম, কচুরি পানার পার্পেল রঙের ফুল গুলো তুল লুকিয়ে রাখতাম তোমার জন্য পাশের ঢেঁকিঝাড়ে, ফেরা পথে দেখি আমার সেই ফুল শুকিয়ে শেষ !
ব্রাহ্মমূহুর্তে আজানের পর পর তাল কুড়াতে তোমাদের তাল পুকুরে যেতে সাহস হতো না, দূরের সরকার বাড়ী, দত্তে'র বাড়ী, মজুমদার বাড়ী'র গাছ গুলো চেক করে, সূর্যের আংশিক আভা নিয়ে দাড়ি্য়ে থাকতাম তোমার পুকুরঘাটের ঝোপের আড়ালে, তুমি যে কী! তোমাকে কখনো ই অত সকালে দেখিনি, শুনেছি তুমি সকালে উঠেই পড়তে বসতে...।তবে বিকালে পাশের মাঠ থেকে গরু আনতে দেখেছি অনেক বার।তোমাদের লাল টগবগে বাছুরটাকে আদর করতাম মন ভরে, জানো ওর কালো বড় বড় চোখ গুলো আমাকে শাসাত।
আজ বলছি, তুমি সাধারনের অজানায়, আমার খুব জানা, আমার চেনা একজন মানুষ।রাজ্যের সব জলে আমার পিপাসা মেঠে না, শুধু তোমাকে একবার দেখেই আমি ক্ষান্ত, আমি নির্লিপ্ত।
স্যরি , তা নামতো বলা হলো না....থাক আরেক দিন।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১২ রাত ৮:৫৫