ক্যাপশনঃ যে ছবি বাঁধিয়ে রাখা যায় আজীবন। বিবর্ত'১১ এর কয়েকজন।
২০১৩ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারী আমাদের (খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় "১১ ব্যাচ) পিঠা উৎসব করার কথা ছিলো। তখনো ভালো করে ২২টা ডিসিপ্লিনের তেমন কাউকেই ভালো করে চেনা হয়ে উঠেনি ।
একটা-দুইটা করে অনেকগুলা ছোট-খাটো মিটিং করে সবাই নিজেদের চিনবার চেষ্টা করলাম, নিজেদেরকে জানবার চেষ্টা করলাম। নিজেরদের মধ্যে গুছিয়ে আনার চেষ্টা করলাম।আমরা ক’জনের সারাদিন এই নিয়ে কথাবার্তা হতো...এই নিয়েই ছিলো উঠাবসা। আমাদের প্রাথমিক টার্গেট ছিলো – ‘এই আমরা ক'জন’-এর সংখ্যাটাকে ১০-১২ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে ২২টা ডিসিপ্লিনের ভাই-বন্ধুদের মধ্যে ছড়িয়ে দিবো,আমরা মিলে একসাথে বসবো, একসাথে আড্ডা দিবো , এক আমি থেকে আমরা এক হয়ে উঠবো ...এই আরকি! কাপ-যাপ যা করার সবই করবো একসাথে । ভুল করলে একসাথে করবো । ভালো কাজ করলেও একসাথে করবো । মোটকথা "১১ ব্যাচ একসাথে থাকবে একসাথে চলবে। শুধু নিজের ডিসিপ্লিনের সাথে না...এইখানে সম্পর্ক হবে ভাই-বন্ধুর সম্পর্ক,অন্তর-আত্মার সম্পর্ক- সকলের সাথে সবার।
ক্যাপশনঃ প্রথম বর্ষের ২য় টার্ম। আমাদের প্রথম ব্যাচ মিটিং। স্থান- শহীদ মিনার, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।
এই ধরনের সূচনা সহজ ছিলোনা। কিন্তু ভাগ্য আমার এতটাই ভালো যে, অমায়িক কিছু পোলাপান পেয়েছিলাম নিজের ব্যাচে। এই কঠিন কাজটাকে সহজ করা আসলেই অনেক সহজ হয়ে গেছিলো তাদের জন্য। আমাদের আড্ডাগুলো ডিসিপ্লিনের নিজস্বতা ভেঙ্গে নাসিরের বটতলা,তপন চত্ত্বর আর ভার্সিটির মেইনগেট কেন্দ্রীক হয়ে উঠলো। গুছাতে শুরু করলাম নিজেরা।
সবকিছু গুছিয়ে যখন নিজেরা প্রস্তুত ঠিক একদিন আগে আমাদের জানিয়ে দেয়া হলো এখন পিঠা উৎসব হচ্ছেনা! দেশের বর্তমান (ফেব্রুয়ারী ২০১৩) পরিস্থিতির সাথে আনন্দ উৎসব যাচ্ছে না!
মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো আমাদের। পুরা ব্যাচের ছয়-সাতশ জনকে আমরা কিভাবে বুঝাবো! কিছুই ভেবে পাচ্ছিলাম না । সবাই মিলে আবার বসলাম । সিদ্ধান্ত হলো শীত যেহেতু চলে যাচ্ছে তবে ক'দিন পর "বসন্ত মেলা" হোক। আমরা স্লোগান, পোষ্টার থেকে শুরু করে পুরো থিম সাজিয়ে ফেলেছি। পোষ্টার প্রিন্ট দিয়ে দেয়ালে লাগানো হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। স্থাপত্যের বন্ধু হাসনাত থিম নির্ধারন করে ফেললো। সবাই একবাক্যে ওর দেয়া স্লোগানের পক্ষেই মত দিলাম।
‘হাসল সকাল রোদ্দুরেতে, উঠলো মেতে মন
বসন্তের এই উৎসবেতে তোমায় নিমন্ত্রণ’
ক্যাপশনঃ বসন্ত মেলার পোষ্টার। ডিজাইনার-হাসনাত, স্থাপত্য
সেটাতেও বাধা আসলো। খান জাহান আলী হলের ফিস্ট নিয়ে একটা ঝামেলার কারনে শিক্ষকরা আমাদের প্রোগ্রামে উপস্থিত হতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন তাই প্রোগ্রাম বন্ধ! ব্যাচের প্রায় ৫০-৬০জন এর মত আবার গেলাম স্যারের কাছে। কোন কাজ হয়নি তাতে।
আমার এখনো মনে আছে ২য় বারের মত ব্যার্থ হয়ে যখন ফিরছি তখন কিছু অসহায় মুখ কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছিলোনা -তখনো ফার্স্ট একাডেমিক বিল্ডিং এর ৩য় তলায় চলছিলো ভরপুর রিহার্সেল। রাজি,অন্তু, জিহাদ,মাসুম, সজল আর ডিকে ওদিকে ব্যাস্ত আয়োজনের ব্যাবস্থাপনা নিয়ে।
প্রথম একাডেমিক ভবনের এর তিন তলায় উঠে রিহার্সেল বন্ধ করে ইন্সট্রোমেন্টগুলো ফেরত দিতে যাবো। আমি - মাইকেল আর সাকিবের দিকে চেয়ে আছি। পিছনে নিশা, পিকে জাহিদসহ আরো কয়েকজনকে দেখলাম। মাইকেল ড্রামস গুছাচ্ছে। আমি তাকায়ে রইলাম কিছুক্ষন...। নিজের অজান্তেই গেয়ে উঠলাম- We shall overcome someday। এই দেখে মূসা হাসলো। তার স্বভাবসূলভ ব্যাঙ্গাত্মক অথচ নিষ্পাপ হাসি।
তারপর অনেক কথা ...অনেক মানুষের (বন্ধু এবং সিনিয়ার) এর কাছে টিটকারি শুনা। সহ্য করে গেছি কয়েকটা মুখ। দেখতে দেখতে প্রোগ্রামহীন একটি বছর চলে যায়। আমরা তখনো কর্মী। আয়োজক হয়ে উঠিনি।
আমরা সত্যিকারের আয়োজক হয়েছি বুড়ো বয়সে এসে। তখন আমরা ৩য় বর্ষে পড়ি। বর্ষবরণ আয়োজনের দায়ীত্ব দেওয়া হলো আমাদেরকে। দিনে দিনে আমাদের এই চেনা মুখের সংখ্যাটা বাড়লো। আমরা আর তখন শুধু নিজ নিজ ডিসিপ্লিনের ক’জনের সাথেই নয় বরং গোটা ’১১ মিলে একটা ডিসিপ্লিন হওয়ার পথে।
তারপর ৩য় বর্ষের ১ম টার্মের পরীক্ষার মধ্যে আচারে আহারে বৈশাখী বাহারে শ্লোগান নিয়ে ‘বর্ষবরণ-১৪২১’ নামিয়ে বুঝিয়ে দিলাম আমাদের অস্তিত্ব...আমাদের সতন্ত্রটা। টেলিযোগাযোগ কোম্পানি এয়ারটেলের স্পন্সরশিপে আয়োজিত আমাদের এ প্রোগ্রামটি ছিলো এখন পর্যন্ত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচে বড় পহেলা বৈশাখের আয়োজন। সে প্রোগ্রাম আয়োজনের সকল প্রস্তুতির টাইমল্যাপস ধারন করা হয়েছে ৪টা ক্যামেরা দিয়ে ননস্টপ। ইয়্যুটিউবে এখনো আমাদের টাইম ল্যাপসের ভিডিওটি বিদ্যমান।
ক্যাপশনঃ চৈত্রের শেষ বিকেল। বৈশাখ আসবে বলে।
পহেলা বৈশাখ নামাতে গিয়ে কয়েকজনের শরীরের ওজন কমেছিলো কয়েক কিলোগ্রাম পর্যন্ত! দিন নেই, রাত নেই সারাদিন প্রোগ্রাম নিয়ে ভাবনা আর নতুনত্ব আনার প্রচেষ্ঠা।
ক্যাপশনঃ সফল আয়োজন শেষে বিজয়ের হাসি।
পহেলা বৈশাখে আয়োজনে আমাদের অল্প-সল্প-গল্পগুলো এতো অসাধারন ছিলো যে সবগুলোকে একত্রে করলে একটা উপন্যাস হয়ে যাবে। কথায় আছে ‘থার্ড ইয়ার-পার্ট ইয়ার’। আমাদের শ্লোগান ছিলো ‘ওয়ান ওয়ান- সেই পার্ট’! বলতে গেলে অন্যরকম একটা পার্ট নিয়েই চলেছি পুরোটা বছর। একসাথে ঘুরতে যাওয়া...হুট করে সারারাত পিনিক নিয়ে রুপসা ব্রীজে কাটানো কিংবা কোন কারণ ছাড়া সারারাত জেগে থাকা, একসাথে বসে ভুলবাল করা, কঠিনতম সময়গুলোতে একসাথে থেকে আন্দোলন করা আর মিটিং গুলার কথা নাইবা বলি!
কি করিনি আসলে? যে স্বপ্নটা প্রথম বর্ষে ছিলো সেটা অনেকাংশেই পূরন হয়ে গেছে ততদিনে। ১০-১২জন মিলে আর ওয়ান-ওয়ানকে প্রকাশ করতে পারেনা। সংখ্যা প্রায় ততোদিনে ১০০’র কাছাকাছি চলে গেছে। এই একশ জন মিলে দিনে দিনে কাছে এনেছি বাকি ছয়শ সাতত্রিশ জনকে।
তারপর সেকেন্ড, ঘন্টা ,দিন কিংবা মাস এর এককে কেটে গেলো বছর। আমাদের শেষের শুরু। নিজেকে চূড়ান্ত বর্ষের শিক্ষার্থী ভেবে যতোটা না ভালো লাগতো তারচেয়ে বেশী খারাপ লাগতো ‘শেষ’ শব্দটা। ২০১৫ সালে আমরা যা করছি তার সবই যেন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ বারের মতো। আমাদের দিন ফুরিয়ে এসেছে। পহেলা বৈশাখে সবাই মিলে হৈ-হুল্লুর করে দিনশেষে নীল-সাদা’র পাতায় লিখেছিলাম –
“আমাদের সময়টা শেষ হয়ে আসছে। আমরা বুঝতে পারছি এখন। ক্যাম্পাসের বুড়ো-ভাম আমরা! কিছুই করার নেই আমাদের এখন শুধুমাত্র দেখা ছাড়া। আয়োজন সব শেষ, আমরা পৌছে গেছি শেষ বেলায়, দীর্ঘ পথের যাত্রা শুরুর মুহুর্ত বাকি মাত্র। এই বছরের প্রত্যেকটি অনুষ্ঠান আমাদের শুনিয়ে যায় অতল নৈশব্দের মাঝে বিলাপের সুতীক্ষ্ণ ধ্বণি । যেনো একে একে এগুলো আমাদের ঘীরে ধরতে চাইছে !গত তিন বছর চৈত্রের শেষ রাতের ব্যাস্ততা ছিলো আকাশ ছোয়া। গল্প আর কাজের অভূতপূর্ব সমর্পণে একাকার হতো রাতগুলো। বৈশাখের প্রথম প্রহর শুরু হতো ডিসিপ্লিনের বড়ভাই ‘তীর্য’কে জন্মদিনের 'উইশ'(!!!) করে। এমন উইশ কতোটা ‘আনন্দদায়ক’ হতে পারে সেটা কেবল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই জানে।
রাতে ফুটবল খেলা হতো। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠটাকে তখন একদম নিজের মনে হতো। ১৪২১ এর আয়োজন যখন আমাদের উপর পড়ে তখন সেই রাতে আর ফুটবল খেলা হয়ে উঠেনি। কোন ব্যাস্ততায় কিভাবে যে কেটে গেছে সেই চৈত্রের শেষ প্রহর তার টের পাইনি। যতদূর মনে পরে ব্যাস্ততা শেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলাম ১৪ই এপ্রিল রাতে, বৈশাখের প্রথম রাতে। একগাল স্বঃস্তির হাসিও হেসেছিলাম সেইরাতে। গতকাল সকলে একসাথে ছিলাম। কেউ একটা মূহুর্তও নষ্ট করতে চাচ্ছিলোনা। কেউ-ই দল ছেড়ে বাইরে যেতে চাইছিলোনা। এই একসাথে থাকা-একসাথে হাসা আর গাওয়া বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছিলো আমাদের 'শেষ বৈশাখ'। বিকেল পর্যন্ত সবাই মাঠে বসা। একসাথে একত্রে সকলে যখন বসে 'অপেক্ষা'য় আছি কারো কাছ থেকে একটি ফোনের।কিন্তু কারো কাছে ফোন আসেনি। অপেক্ষার প্রহর ভাঙ্গলো। নিজেরাই সানন্দে উপস্থিত হয়ে জানিয়ে দিলাম-
'কেউ ডাকেনি...তবুও এলাম! বলতে এলাম ভালোবাসি'
সন্ধায় ক্যাম্পাসে সকলে বসে আবার গান-বাজনা।বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছিলো আর মাত্র কিছু মুহুর্ত। তারপরেই সব মৌজমাস্তি শেষ। এতক্ষণ বেক্কলের দল অযথাই আড্ডা পিটিয়েছে, কাজের কাজ কিছুই করেনি।
রাতে আবারো ব্যাচের অনেকজন মিলে জিরো পয়েন্ট খেতে যাওয়া। আসলে ক্যম্পাসের বিরাট একটা সার্কেল পেয়েছিলাম বলেই খুলনা টিকতে পেরেছিলাম। সামনে আমাদের আর মাত্র একটা প্রোগ্রাম হাতে। র্যাগডে! তারপর থেকে আমরা অতীত হয়ে যাবো”।
ক্যাপশনঃ বিবর্ত'১১, র্যাগ-১৫,খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল পোষ্টার। ডিজাইনার- নির্ঝর, স্থাপত্য।
ক্যাপশনঃ গ্র্যান্ড কনসার্টে পারফর্ম করছে ব্যান্ড আরবোভাইরাস।
ক্যাপশনঃ গ্রান্ড কনসার্টে পারফর্ম করছেন গুরু নগরবাউল জেমস
ক্যাপশনঃ সেদিনের গ্র্যান্ড কনসার্টে উপস্থিত ছিলো খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ খুলনা শহরের প্রায় ১৫ হাজার দর্শক।
হ্যা! সেদিনের সেই প্রতীক্ষিত প্রোগ্রাম র্যাগডে শেষ হয়ে এলো। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের সবচে বড় বাজেটের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করলাম আমরা। ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন টাকার প্রোগ্রাম আয়োজন করলাম আমরা।
আমাদের গল্প ফুরালো। স্টেজ থেকে একে একে নামলো পাওয়ার ভয়েজের মাসুম, আমাদের নয়েজ ফেক্টরি, আরবো-ভাইরাস, আর সবার শেষে গুরু নগরবাউল জেমস । আমরা কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছিনা। খালিদ কাঁদছে…রাজীকে পাচ্ছিনা,রাকিব, দেবাকেও না … খালিদকে বুঝ দিতে গেলাম। ইমরানকে দেখলাম অনুভূতি শূন্যবস্থায় তাকিয়ে আছে। দাতে দাঁত কামড়ে ধরে নিজেকে শান্ত রাখলাম। বুঝলাম এক অসংজ্ঞায়িত বিচিত্র অনুভূতি আমাকে গ্রাস করে ফেলেছে। আমি কাঁদবো না,কাদবোই বা ক্যানো? যা চেয়েছি তা তো হয়েছে! আজ আমরা সত্যিই ‘Overcome’ করেছি।
একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে মাইকেল…মাইকেলকে জরিয়ে ধরে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি…।। আমাদের থামাতে আসলো সিয়াম আর আয়শা। এদিকে মিনহায আবেগ কন্টোল করা ব্যার্থ চেষ্টা করে যাচ্ছে মুক্তমঞ্চের সিড়িতে বসে। কেন চোখ দিয়ে পারি বের হলো কিংবা আবেগগুলো কেন প্রকাশহীন অবস্থায় রাখতে পারলামনা সেসব প্রশ্নের উত্তর খুজতে যাইনি।
ক্যাপশনঃ কালার ফেস্ট, বিবর্ত'১১, র্যাগ-১৫,খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।
তারপর...সবকিছু শেষ, তখন ইংরেজি ১৭ তারিখ, অক্টোবর ২০১৫ সাল। শনিবার ভোর ৬টা । সবাইকে ক্যাম্পাসে রেখে চারুকলার বন্ধু সুজন আর আমি আহসানউল্লাহ হলে ফিরছি। একা একা বিড়বিড় করে কি যেন বলছি। কটকা মনুমেন্টের উপরের আকাশে দেখি সূর্য্য উঠেছে। আরেকটি নতুন সকাল হয়েছে…আমি হাটছি …পিছনে রেখে এসেছি সাড়ে চার বছরের গল্প, সারে চার বছরের কথা আর অধিকার। আজ থেকে এই গল্প আর আমার কিংবা আমাদের অধিকারে নেই। আজ থেকে এই বিকেলের সেই প্রভাতগুলোতে আমাদের আর পদচারনা থাকবে না!
‘অস্থির কিছু সময় অস্থির কিছু কল্পনা
ভাবায় আমায় সারাক্ষণ দিয়ে যায় কিছু যন্ত্রণা।
এলোমেলো ভাবনাগুলো আজ আঁকড়ে আছে হৃদয়ের ভাঁজে
রঙীন স্বপ্নগুলো কখন যেন খেই হারিয়ে স্মৃতি হয়ে গেছে!’
যখন এই শব্দগুলো লিখছি অভ্র চালু করে কীবোর্ড চেপে। তখন আমার মাথার চিন্তা, বুকের অনুভূতি আর আঙ্গুলগুলোর ব্যাপক ভালোবাসা মিলেমিশে সৃষ্টি করছে স্ক্রীনের উপরে ভেসে থাকা একেকটি শব্দ। আমি বুঝি এই শব্দগুলোকে আমারই ভালোবাসার ছায়া। আমাদের বিবর্তের ভালোবাসা। ভালো থাকুক বিবর্ত‘১১ ব্যাচ। মুখে থাকুক গান- এক আমি আমরা এক!
ক্যাপশনঃ আমাদের আয়োজন শেষ। আমরা আছি ভালো। আবার শহীদ মিনার, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।
পুনশ্চঃ
আমাদের বিবর্ত'১১- এক আমি,আমরা এক- র্যাগের বাজেট এখন পর্যন্ত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় বাজেটের প্রোগ্রাম বলে আমরা দাবি করি। আমাদের প্রোগ্রামের সর্বমোট বাজেট ছিলো দুই দশমিক ছয় মিলিয়ন টাকা। আমাদের প্রোগ্রামের প্ল্যান ছিলো যা-ই করবো তাতেই হুলুস্থুল তৈরী হবে। সেজন্য প্রায় মাসব্যাপী আমরা ক্যাম্পাসে আওয়াজ দিয়েছিলাম এবং র্যাগকর্নার, গ্রাফিটি, কাউন্টডাউন,ক্রাশ এন্ড কনফেশন বক্স, অনলাইন হ্যাশট্যাগ, শ্লোগান ইত্যাদি প্রতিটা ইভেন্ট দ্বারা হুলুস্থুল ফেলে দিয়েছিলাম।
আমাদের প্রোগ্রাম সাকসেসফুলি শেষ হওয়ার পর আমাদের প্ল্যান ছিলো টাকা বেঁচে গেলে ব্যাচের সকলে মিলে ভরপুর একটা পার্টি দিবো...বিশাল চড়ুইভাতি উৎসব হবে ! কেননা পুরো প্রোগ্রামের কোন অংশে আমাদের ব্যাচের জন্যে খাবারের ব্যাবস্থা ছিলো না।
আগের বছর '১০ ব্যাচ র্যাগের পরে ক্যাম্পাসে একটা গরু কিনে এনে তার সাথে সেলফি-টেলফি দিয়ে একাকার অবস্থা করে ফেলছিলো। পরের দিন সেই গরু জবাই করে ব্যাচের ছয়-সাতশো জন একসাথে বসে খেয়ে বিশাল মজা করেছিলো। অবশ্য ইমিডিয়েট জুনিয়ার হিসেবে তাদের খাওয়া-দাওয়ার উৎসবে শরীক হয়েছিলাম আমরাও।
প্রতিটা ব্যাচের মধ্যে একটা মৌন যুদ্ধ চলে, আগের বারের চেয়ে ভালো কিছু করার। সেই তাগাদা থেকেই আমার প্ল্যান ছিলো আমরা একটা উট কিনে আনবো! সেই 'উট' কয়েকদিন ক্যাম্পাসে ঘাস খাবে তারপর সকলে মিলে বিশাল হৈ-হুল্লুর করে সেটাকে কুরবানি দিবো । বিশাল চড়ুই ভাতি হবে আমাদের!
সবাইকে সারপ্রাইজ দিবো বলে সে প্ল্যান আমরা কয়েকজন শুধু জানতাম!
যাইহোক, শেষমেষ চারুকলার বন্ধু ফারহার মৃত্যুর পর কোন রকম আনন্দ উৎসবে যেতে ইচ্ছে হয়নি। র্যাগ পরবর্তি আমাদের 'বিবর্ত-চড়ুইভাতি' প্রোগ্রামটিও আর হয়নি। ইচ্ছেও ছিলোনা করার... কেননা চোখের সামনে অনেকগুলা অসুস্থ মুখ দেখলাম একে একে। আমরা আসলে কাউকে হারাতে চাইনা আর...।।
আমাদের ''বিবর্ত'১১- RAG'15,Khulna University'' প্রোগ্রাম শেষে আমাদের কাছে সর্বমোট টাকা থেকে গিয়েছিলো 'দুই লক্ষ ৩ হাজার টাকা'। আমাদের এই টাকাগুলো যেভাবে বন্টন করা হয়েছেঃ-
১. রিয়াসাত (BAD'13) এর বোন- ৬০০০০।
২. নাদিম (Physics'11) এর আম্মু - ৬০০০০।
৩. রিতু'র (Pharmacy'12) বাবা - ৫০০০০।
৪. দেব্যু'র (URP'12) স্কুল - ১৫০০০।
৫. ক্ষতিপূরণ এবং অন্যান্য খুচরা খরচ- ১৮০০০।
একবেলা খাওয়ার আনন্দ উৎসবের চেয়ে কারো সহযোগীতায় আসতে পেরেছি এতেই আমরা আনন্দিত ছিলাম।সবচেয়ে অদ্ভূত ব্যাপার ছিলো ব্যাচের সবাই একযোগে বিষয়টা মেনে নিয়েছিলো, কারো দ্বিমত ছিলোনা তাতে!
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:২২