তখন আমি রেগুলার টিভি দর্শক।
ফেসবুক তখনো ত্যামন জনপ্রিয়তা পায়নি। খেলার চ্যানেলগুলার পাশাপাশি বাংলা চ্যানেলগুলোতেই ঘুরেফিরে পরে থাকতাম দিনে অন্তত ৬/৭ ঘন্টা।
বয়স অল্প হলেও খুব রাজনৈতিক সচেতন ছিলাম আর খবর দেখার প্রতি ঝোক ছিলো।
তো একদিন খবর দেখছি এটিএন বাংলায়। খবরে বাধ্যতামূলকভাবে প্রায় প্রতিদিনই এ চ্যানেলের চেয়ারম্যানের একটা করে রিপোর্ট থাকতো!
সেদিন কথানাই বার্তা নাই দেখলাম নিউজ রিপোর্টার এটিএন বাংলার চেয়ারম্যানের নামের আগে ডক্টর জুড়ে দিলো! ইভা রহমানের স্বামী মাহফুজুর রহমান কোন বার্তা ছাড়াই ডক্টর হয়ে বসলেন!
ওনি ঠিক কিসে ও কোন বিষয়ের উপর ডক্টরেট করেছেন, তা মহান আল্লাহ পাক ভালো বলতে পারবেন। কেননা টেলিভিশন চ্যানেল কম থাকার বৌদলতে তখন এটিএন বাংলা প্রায় প্রতিদিনই দেখা পড়তো এবং প্রতিদিন মাফুজুর রহমানের একটা করে রিপোর্ট থাকতো! আমি ওনাকে বিভিন্ন সামাজিক-অসমাজিক প্রোগ্রামের অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে দেখতাম। এতো সামাজিকতা করে ওনি রিসার্চ'টা করলো কিভাবে?
আমি তখন উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র হলেও আমার মনে প্রশ্ন জাগলো, ওনি ঠিক কবে, কিসের উপর ও কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রিটা নিলেন? ডক্টরেট ডিগ্রি'র দাম কত নাদেরালী?
সস্তা! ভীষণ সস্তা এইসব টাইটেল! টাকার কাছে এখন সব পাওয়া যাচ্ছে। টাকা দিয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি কিনেছেন, এইটা সবাই জানে। তবুও আমাদের কারো কিছু বলার নেই। ঘেন্না লাগলো শিক্ষা ব্যাবস্থার উপর!
তারপর মাফুজুর রহমান নিজের কারিশমা দেখাতে দেখাতে ছাড়িয়ে গেছেন নিজেকে প্রতিদিন। ওনিই একমাত্র,যে কিনা নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী। নিজের দুইটি চ্যানেল থাকার বৌদলতে নিজেকে 'ডক্টর' বলে পরিচয় দেয়াটাকে 'হালাল' করে ফেলেছেন ইতোমধ্যে! নিজেকে ব্যবসায়ী, সমাজসেবক, চেতনাধারী, নেতা, এমনকি সংগীত শিল্পী-এমন কিছু বাদ নেই সে নিজের দখলে নেননি!
গান নিয়ে ওনি যা ছেলেখেলা করলেন তার জন্য স্বয়ং ওস্তাদ আলাউদ্দিন খানও বোধহয় কবরে থুবড়ে বুক চাপড়াচ্ছেন!
এইবার ওনি নিজেকে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছেন! সাহিত্যের গাড় মেরে দিতে ওনি এইবার বইমেলায় নিয়ে এসেছেন 'সাড়া জাগানো উপন্যাস'-স্মৃতির আলপনা আঁকি! মজার ব্যাপার হলো- এ বইয়ের প্রচারনায় ওনি 'সাড়া জাগানো উপন্যাস' বলে পোষ্টারিং করে বেড়াচ্ছেন অথচ বইটি এখনো প্রাকশিতোই হয়নি!
আমি হলফ করে বলতে পারি, এ উপন্যাস তার নিজের লেখা না! কাউরে টাকা দিয়া লেখাইছে।
টাকা দিয়ে শিক্ষা, সংগীত ও সাহিত্যকে কতোটা যত্নকরে পোঙ্গা মারা যায়, আমাদের মাহফুজুর রহমান'রা তা প্রতিদিন দেখিয়ে যাচ্ছেন!
আর আমরা মজা পেয়ে 'হাত-তালি' দিয়ে যাচ্ছি!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:৫৯