একটা বিষয় মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেছে যে- বর্তমানে বিভিন্ন হুজুর আর মাওলানাদের বয়ান সাধারন মানুষকে খুব একটা আকর্ষন করতে পারছে না। ধর্মের কাছাকাছি টানতে পারছে না।
ফলে হুজুর সমাজের একটা কমন অভিযোগে বাকিরা বিপর্যস্ত হচ্ছেন। কথায় কথায় 'নাস্তিক-টাস্তিক' বলে একাকার করে দিচ্ছেন!
তবে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বর্তমানে 'হালের নাস্তিক'-এর সংখ্যাটা বৃদ্ধি পেয়েছে যারা মূলত ইসলাম ধর্মের বিরোধীতা করেই নিজেকে উচ্চশ্রেনীর জাতে উঠা নাস্তিক বলে মনে করছেন। তাদের নিয়ে আগেও আলোচনা করেছি, সামনে না হয় আরো করবো!
আমাদের 'মৌলভি-হুজুর সমাজ' কেন সমাজের এমন পরিবর্তনে কোন ধরনের ভূমিকা রাখতে পারছে না সেটা আমাকে অনেকদিন ধরেই ভাবাচ্ছে এবং এ নিয়ে ভেবে আমি কিছু ফলাফল পেয়েছি। আজ তাদের নিয়ে বলা হয়ে যাক কিছু কথাঃ
১। আমাদের মৌলভিদের জাগতিক জ্ঞ্যান বলতে বিভিন্ন নামি-বেনামি লেখকদের বিভিন্ন কিচ্চা-কাহিনীর বই। কুরআর ও সহিহ হাদিসে জ্ঞ্যান সল্পতা। আপনি খেয়াল করে দেখবেন প্রত্যেকটা ওয়াজ-মাহফিলে ধর্মকে উপস্থাপন করতে গিয়ে প্রতিটা হুজুর 'কিতাবে এসেছে...' বলে একটা গল্প জুড়ে দেন! যার কোন সঠিক রেফারেন্স নাই। এক গল্পকেই ইনিয়ে বিনিয়ে হাজার রকমে উপস্থাপন করেন যা অসহ্য! বাইদ্যাওয়ে, আজকাল তো 'ফেসবুকে দেখলাম...' বলেও শুরু করতে দেখা যায়!
২। মাহফিলে হুজুররা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই শুধু চিল্লাফাল্লা করেন আর রাগ ঝাড়েন। । হুজুররা চিৎকার করে 'খালেদা-হাসিনা'র গুষ্টি উদ্ধার করেন! পারলে আম্রিকার জর্জ বুশ থেকে শুরু করে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মাহফিলের চেয়ারে বসেই ক্ষমতাচ্যুত করেন! উপস্থিত শ্রোতারা এ বয়ানে মুগ্ধ হয়ত হয়, কিন্তু দিনশেষে 'তাতে শিক্ষা লাভ হয়না'! তাই, ২য় দিন এমন বয়ান শুনতে আগ্রহী হননা!
৩। হুজুরদের রেফারেন্সিং অত্যান্ত খারাপ। বর্তমান বিশ্বে কোথায় কি ঘটছে তার হিসাব প্রায় থাকেনা বললেই চলে। ফলে 'আম্রিকার বিজ্ঞানীরা অমুক জিনিস আবিষ্কার করেছেন... আর আমাদের নবীজি(সাঃ) এ সম্পর্কে বলে গেছেন ১৪০০ বছর আগে টাইপের কাহিনীগুলো বলে বেড়ান যার বেশীর ভাগই ভুয়া। নবীজি (সাঃ) কোথায় এমন তথ্যের কথা বলে গেছেন তার কোন রেফারেন্স দেন না, ফলে একজন শিক্ষিত মানুষ সহজেই ওনার কথার পার্থক্য বুঝতে পারে এবং তার এসব বয়ানকে তুচ্ছাজ্ঞান করেন!
৪। খেয়াল করলে দেখবেন, হুজুরদের ফেসবুক ওয়ালগুলোতে প্রচুর ফেইক নিউজের শেয়ার দেয়া। যেমনঃ কুরআনের গায়ে প্রসাব করার জন্য একজনের পুরুষাঙ্গ ডায়নেসরের হওয়ার মত ছবি, আর থুথু দেয়ার জন্য মুখ কুকুরের মত হয়ে যাওয়ার ছবি তো প্রায় প্রত্যেকটা হুজুর শেয়ার দিয়ে বসে আছেন! সত্য ছবি আর ফটোশপড ছবি'র পার্থক্য ওনা বুঝতে অপারগ! এত অল্প জ্ঞ্যান নিয়ে ওনারা কি করে ধর্মের প্রচার করেন! মানুষ বিরক্ত এসব দেখে!
৫। বেশীর ভাগ হুজুর-ই শিক্ষিত মানুষদের পছন্দ করেন না। ফলে শিক্ষিত মানুষগুলোও আগ্রহী হয়না তাদের ব্যাপারে।
৬। একটা সময় ছিলো যখন হুজুররা সমাজের সবচেয়ে সম্মানের জায়গায় ছিলেন। তখন বেশীর ভাগ মানুষই জাগতিক জ্ঞ্যান আহরণে অনাগ্রহী ছিলেন ফলে তাদের বুঝানো সহজ হতো। এখনকার যুগে সবাই কম-বেশী পড়াশোনা করেন। তাদেরকে সঠিক রেফারেন্স না দিলে যেকোন বিষয় মানতে নারাজ। অথচ হুজুররা তাদের পুরোনো পদ্ধতিতে ধর্ম প্রচার করছেন। যারা একটু অন্যভাবে ধর্ম প্রচার করছে যেমন- ড. জাকির নায়েক, আহমেদ দাব্বাগ কিংবা ড. বিল্লাল ফিলিপ এর মত লোকজনকে নিয়ে সমালোচনা করছেন। অথচ নিজেদের জ্ঞ্যানের পরিসীমা সম্পর্কে আমাদের হুজুররা অবগত! পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন এক-দিন একদিন করে। হুজুররা এগিয়ে যেতে নারাজ!
৭। সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটা তৈরী হয়েছে- হটাৎ করে বাংলাদেশে বিভিন্ন 'মাযহাব' এর বিপ্লব শুরু হয়েছে! কথানাই-বার্তা নাই দুদিন সৌদি আর ইরান ঘুরে এসে মাওলানা সেজে যাচ্ছে। তারা একজন অন্যজনের সমালোচনায় মগ্ন থাকেন সারাক্ষণ। ফলে, 'ইসলামিক মজলিস'গুলো হয়ে উঠছেন 'গীবত-মজলিস'। সাধারন মানুষ তাদের এসব আচরণ দেখে 'ভন্ডজ্ঞ্যান' করছে। ফলে হুজুররা কাছে টানতে পারছেন না সাধারনদের।
আমরা যদি বর্তমানে এই 'সঠিক হুজুর' সংকট কাটিয়ে উঠতে না পারি তাহলে হয়ত আমাদের জীবদ্দশায় একটা 'ধর্মের সংকট' দেখে যাবো, যার পরিণতি হবে ভয়াবহ!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:৪৭