ক্যাফেটেরিয়ার সামনে তাদের প্রথম দেখা। তবে প্রথম দেখাতেই কোন প্রকার চোখাচোখি হয়নি কিন্তু। ছেলেটা তাকিয়ে ছিলো এক-ধারসে, কিন্তু মেয়েটা একবারও না।
অবশ্য এমন একটি মুহূর্তকে মিনারে 'আহারে' গান দ্বারা কিছুটা প্রকাশ করা যেতে পারে-
'আমি কি দেখেছি হায় একলা পথে দাঁড়িয়ে সে ছিল দূরে দূরে তাকিয়ে আহারে আহারে কোথায় পাব তাহারে'।
না, তখনো তাকে পাবার জন্যে 'আহারে' আক্ষেপ মনে জন্ম নেইনি।
'এমন ক্ষণিকের প্রেমে তো রবীদ্রনাথ থেকে শুরু করে বারাক ওবামা পর্যন্ত পড়েছেন, তো আমি পড়লে কি দোষ?' - এমন দোষহীন ভাবনায় প্রেমটা সহসায় গুরুত্বহীন হলো।
কিন্তু এমন করে 'এক'ই জনের 'ক্ষণিকের প্রেমে' ছেলেটা বহুবার পড়তে লাগলো। মেয়েটাকে দেখলেই এমন 'প্রেমে পড়াটা' তার অভ্যাসে পরিনত হলো। এখন তার ক্ষনিকের প্রেমিকাকে প্রায়ই দেখতে ইচ্ছে করে! কি অদ্ভূত! তপন-মিজান কেন্দ্রিক ছেলেটা হটাৎ করে ক্যাফেকেন্দ্রিক হয়ে উঠলো। দলবল নিয়ে সে প্রতিদিন নিয়ম করে তিনবেলা যায় ক্যাফেটোরিয়ায়।
আর তাতে প্রতিদিন আনুপাতিক হারে অল্প অল্প করে ছেলেটা প্রেমে পড়তে থাকে। অল্প থেকে একটু বেশি অল্প, একটু বেশি অল্প থেকে আরেকটু বেশি অল্প। এভাবেই...অল্প অল্প গল্প গুলো বড় হতে থাকে।
ততোদিনে 'সাময়িক ভালোলাগা'টা 'সম্পূর্ন ভালোলাগাতে' পরিনত হয়েছে!
মেয়েটা যথেষ্ট চালাক না হলেও এমন পার্মানেন্ট 'ফলোয়ার'কে তার নজরে আসতে বেগ পেতে হলোনা।
কোনএক ক্ষণে তারা পরিচিত হলো। সেই ক্ষণটি শুভ না অশুভ ছিলো তা নির্ধারন করা যায়নি সেই সময়। ছেলেটি মনে করলো সেই ক্ষণটিই ছিলো বছরের সবচেয়ে শুভক্ষণ।
এরপর ছেলেটি প্রায়ই মেয়েটিকে ফোন দিয়ে 'জ্বালাতন' করতে শুরু করলো। সম্ভবত অনিচ্ছা সত্ত্বেও মেয়েটি ছেলেটির সাথে কথা বলতো। কথা বলে বুঝিয়ে দিতে - আমি আপনার সেই জন নয় যাকে আপনি খুঁজছেন!
এভাবেই কেটে যায় বেশ ক'টা দিন। দিনে দিনে ছেলেটা বুঝতে পারে যে সে ভুল মানুষের প্রেমে পড়েছে। কি অদ্ভূত!-এই ভুলকে সত্য জেনেও সে ভুল মানুষটাকে সত্যি সত্যি মিস করতে থাকে।
ছেলেটি ভাবে এই মেয়েটিই সে যাকে কিনা - 'কফি মগের ওপর দিয়ে রেস্তোরার এপাশে ওপাশের টেবিলে চোরাচোখে তাকিয়ে দেখা যায়' কিংবা 'গেটের কাছে রেখে যাওয়া গোলাপ
পাপড়ি ছিঁড়ে ডায়রীর পাতায় রাখা গন্ধহীন অনুভূতিপূর্ন শুকনো পাপড়ি গুলো দিয়ে বলা যায়- 'ভালোবাসি'।
হটাৎ রাস্তায় অটোতে যদি ভীষণ বাতাসে মেয়েটিকে চুল এসে পড়ে তার নাকের উপর- 'তোমার ঐ রেশমি কালো চুল দেখে পাগল আমি হবোই তো' গানতো কেবল এই মেয়েটিকেই শুনানো যায়!
কিংবা হঠাত রাস্তায় সামনে দাঁড়িয়ে হৃদস্পন্দন থমকে দেওয়া যায়! এক মুহূর্তে যুগান্তর
কাটিয়ে দেওয়া যায়- মেয়েটি পাশে থাকলে।
মানুষ ভুল করে, ভুল মানুষের প্রেমে পড়ে। কিন্তু ছেলেটা ভুল করে নয় যেন সজ্ঞানে ভুল মানুষের প্রেমে পড়েছে! ছেলেটি বুঝতে পারে যে- ভুল করছি, তবুও ভুলটাকে শুধরে নেওয়ার ইচ্ছে তার নেই। মেয়েটিকে ভালোবাসতেই সে ভালোবাসে। ভুল মানুষটাকে আরো বেশি ভালোবেসে ফেলে। ভুলটাকে সত্য বানাতে ইচ্ছে করে খুব।
প্রিয় সুপ্তী,
আমি জানি আমাকে তোমার খুব একটা পছন্দ না। কিন্তু তবুও আমি আজ তোমাকে লিখছি কেননা আজ থেকে ২০ বছর পরের কোন একটি সকালে আমি এমন একটি গিলটি ফীল নিয়ে ঘুম থেকে উঠতে চাইনা যে ২০ বছর আগে আমার তোমাকে আমার ভালোলাগার কথাটা জানানো উচিত ছিলো। আমি উত্তরটা জানি, কিন্তু না বলে যেন পারছিলামনা! আজ তোমাকে না বললে আমাকে সারাটা জীবন একটা 'না বলার যন্ত্রনা' নিয়ে কাটাতে হতো! তাই আজ বলে দিচ্ছি- তোমাকে ভালোলাগা, ভীষণ ভালোলাগে। এই ভালোলাগার মানুষটিকে নিয়ে যুগান্তর পাড়ি দিতে চাই। সঙ্গি হবে?
- অর্ঘ্য
সুপ্তী সেদিনও একটা ভাবলেশহীন ভাব নিয়ে চিঠিটা পড়ে। কোন উত্তর দেয়না।
অর্ঘ্য ফিরে আসতে চায়। ভুলমানুষকে কেন এতো ভালোবাসা?
অর্ঘ্য বিশ্বাস করতে চায় তার ভালোবাসায় কোন খুঁত ছিলনা। তার বিশ্বাসের কোন কমতি ছিল না। সে বিশ্বাস করতে চায় মানুষটা একদিন হয়ত বুঝবে। কিন্তু মানুষটা কখনোই বুঝেনি। সুপ্তী তাকে হয়ত তুচ্ছ করে ভাবছে। তুচ্ছ জিনিসের প্রতিতো আর মানুষের কোন আগ্রহ কাজ করেনা।
দিন কেটে যায়। অর্ঘ্য মেনে নেয়। যেন এমনটাই হবার কথা ছিল। অর্ঘ্য ভাবে- পৃথিবীতে ভুল মানুষগুলোই সবচেয়ে বেশী নিরেট ভালোবাসা পাওয়ার ভাগ্য নিয়ে পৃথিবীতে জন্মায়!
ভুল মানুষকে ভালো করে ভালোবাসার মতন বিড়ম্বনা এই পৃথিবীতে আর একটাও নেই!
এভাবেই অর্ঘ্য একদিন ভালোবাসাহীন হয়ে পড়ে। অর্ঘ্য অবাক হয়না- যেন এইটাই স্বাভাবিক!
আসলে… যার মনে ভালোবাসা থাকেনা সে সহজে অবাক হয়না। ওরা অবাক হবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে!
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:১৫