অপরিচিত নাম্বার থেকে একটা টেক্সট আসলো কিছুক্ষন আগে।
'পুরোনো মেইলটা চেক করিস'।
ভাবলাম ভুল করে হয়ত কোন রেন্ডম নাম্বারে চলে এসেছে।
রুমে ফিরে মনে হলো আমার নতুন মেইল আইডিটার অনেক আগে আরেকটা মেইল আইডি ছিলো। সেই কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে খুলেছিলাম। কিন্তু সেটার পাসওয়ার্ড তো মনে নেই।
পুরোনো ডায়রি খুজে খুজে আইডিটার পাসওয়ার্ড উদ্ধার করলাম। অনেকগুলা আনরিড মেইল জমে আছে। ইনবক্সের ২য় মেইলটার দিকে চোখ পড়তেই বুঝলাম অচেনা নাম্বার থেকে আসা ক্ষুদেবার্তার মানে। বাংলাতে লেখা বড় একটা প্রবন্ধ-
''প্রিয় সাম্মান,
প্রায় শেষ ডায়রিটার মাঝের পাতাটা খুলতে ইচ্ছে হবে কখনো ভাবিনি। যেটা ভেবেছি সেটাই করেছি তেমন দৃষ্টান্ত ও যে খুব বেশি আছে তাও তো না । তবুও ধাক্কা লাগলো একটু । তোর অবজ্ঞার কাছ থেকে কিভাবে লুকিয়ে রেখেছিলাম আমার এই ভালবাসাটুকু কখনোই বুঝিনি । কতদিন হল বল তো? আমি সময়ের হিসেব রাখি না আর। বছর পাঁচেক হবে ,না? অথচ কত যুগান্তরই দেখে ফেললাম আমরা। এক জীবন দূরে চলে গেলি নিমেষে। ঘণ্টা , মিনিট, সেকেন্ডের কাঁটাগুলোর অহেতুক ঘোরা দেখলে খারাপই লাগে এখন , ওদের কেউ বলেনি কি ভীষণ অর্থহীন এই আবর্তন! আজ খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গেছিল , শীতটা পালিয়েছে শহর ছেড়ে কদিন হলো। কালো চাদরটা গায়ে জড়িয়ে একটু হাঁটতে বেরিয়েছিলাম । মোড়টা ঘুরতেই চোখে পড়লো শিউলি গাছটার নিচে ছোট্ট একটা শালিক পাখি বসে আছে চুপ করে, কখনো এত শান্ত শালিক দেখিনি আমি । চোখে জল এলো হঠাত । কি আশ্চর্য ! চোখে জল এলেই আজো তোর কথা মনে পড়ে! আমরা এমন কোন সকাল দেখিনি একসাথে। শহরের নিরামিষ শীতে বার দুয়েক দেখা হয়েছিলো ,সন্ধ্যের মুখে । একবার ভীষণ অস্থির হয়ে ছিলি, এলোমেলো হেঁটে বেড়াচ্ছিলি , তোর চাদরটা হাতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম আমি ।
আরেকবার আবৃত্তি করে শুনিয়েছিলি- 'পাগলী তোমার সাথে হুলুস্থুল জীবন কাটাবো, পাগলী তোর সঙ্গে ভয়াবহ জীবন কাটাবো, মনে পড়ে? শুনতে শুনতে সেদিনও চোখে জল এসেছিলো। মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলাম। শূন্যতা ছাড়া কিছু পাইনি তবু জলের উপর থেকে তোর দাবীটাকে ছাড় দিতে পারলাম না কখনো । কি ভীষণ যুদ্ধ যে করতে হয়েছে নিজের সাথে!
আমি বড্ড ক্লান্তরে সাম্মান! স্রোতের বিপরীতে আর পারছি না সাঁতরাতে। তোকে জলটুকু দিয়ে আমি ডাঙায় উঠবো আজ। আরেকবার ভালবাসবো নিজেকে ,ভালবাসবো কুয়াশার চাদরে মোড়া পুরোনো পথটাকে,চপটি করে বসে থাকা শালিকটাকে, হয়তো তোকেও!''
আমি লিখাটার সাথে মিলাবার চেষ্টা করছি পুরোনো ঘটোনাগুলো। আমি আবার পড়ছি প্রবন্ধটা!
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:২৪