বছরজুড়ে সারা বিশ্বে নানা রকমের দিবস পালন করা হয়। ছোট বেলায় এতো এতো দিবস পালনের হিড়িক পড়তো কিনা মনে পড়ে না। যতো বড় হচ্ছি ততোই যেনো বাড়ছে দিবসের বিস্তৃতি। একদিন বন্ধু দিবস তো পরের দিন ভালোবাসা দিবস! বৃহস্পতিবার শিক্ষক দিবস তো শুক্রবারে চলে আসে বাবা দিবস!
এই যে এতো এতো দিবস এগুলোর উদ্দেশ্য কী আসলে? আদৌ কোনো উদ্দেশ্য আছে তো! নাকি অযথাই এক ধরনের ঘোরের মধ্যে ডুবে থাকা? আমার নিজের কাছে এইসব দিবস-টিবস খুবই বিরক্তিকর একটি বিষয়। ভালোবাসার জন্য আবার দিবস লাগে নাকি! ভালোবাসা তো প্রতিদিনের। তা সে ভালোবাসা প্রিয়সীর জন্য হোক বা ছোট ভাইটার জন্য হোক। আমার কাছে ভালোবাসার বিস্তৃতি পুরো জীবনজুড়ে। জীবনের প্রতিটি মূহূর্তে।
আজকাল যে ভালোবাসা দিবস পালন করা (!) হয়, তাকে আমার কাছে শুধুমাত্র আদিখ্যেতা লাগে। আমার কাছে ভালোবাসা দিবস পালনের নামে যা কিছু করা হয়, সেগুলোকে লাগে সস্তা ন্যাকামি। কখনো কখনো ‘ডিজুস জেনারশেনের’ ভালোবাসা আমার কাছে শুধুমাত্র বেহায়াপনা মনে হয়। আফসোস লাগে তাদের ভালোবাসা প্রকাশের ভাবনা ও উপায় দেখে।
একইভাবে স্কুলে একসাথে দশটা বছর পড়ে আসার পর নতুন করে বন্ধুকে বন্ধু ভাবার জন্য আমার দিবস লাগে না। মন খারাপ হলে এমনিই আমি বন্ধুর কাঁধে হাত রেখে একটা বিষন্ন বিকেল কাটিয়ে দিতে পারি। তা বিকেলটা বন্ধু দিবসে আসুক বা না আসুক। স্কুল বন্ধুকে তথাকথিত বন্ধু দিবসে কোনো গিফট দিতে ইচ্ছে করে না আমার। আমি কর্পোরেট জোয়ারে ভেসে যেতে চাই না প্রিয় বন্ধুর সাথে। প্রিয় শিক্ষকের সাথে আমার সম্পর্কটা দৃঢ় থাকে একটা ফোন কলে। বা একবার দেখা হয়ে গেলে আমি যে লম্বা করে সালাম দেই, তাতেই জানি শিক্ষকের চোখটা ছলছল করে উঠে। আমাকে কাছে ডেকে যে তিনি বলে দেন, কী রে খবর কি তোর? এটিই আমার কাছে প্রিয় শিক্ষকের সাথে সম্পর্ক। এর জন্য শিক্ষক দিবসে গিফট কিনতে যেতে হয় না আমার। শিক্ষকের দেওয়া শিক্ষাটা মেনে চলাই শিক্ষকের জন্য আমার সেরা গিফট।
দিবস পালনের কর্পোরেট ভাবনা থেকে বাবাকেও দূরে রাখতে চাই। আমার প্রতিটি নিঃশ্বাসেই তো বাবা মিশে থাকেন। সেই বাবাকে আবার কিভাবে পালন করবো! বাবা তো রক্তের প্রতিটি কণিকায় মিশে থাকা শ্রদ্ধার নাম। বিশেষ দিনে সেই শ্রদ্ধাকে আমি আলাদাভাবে কিভাবে কী করবো! আমার হাসি পায়!
মা দিবস বলেও একটা দিবসের আমদানি হয়েছে। কবে কিভাবে এই আমদানি; আমার তা জানতে ইচ্ছে করে না। কেনোই বা ইচ্ছে করবে! মা’র জন্য আমার কোনো দিবস লাগে না। দিবস পালনের এই ভিনদেশি রীতিতে আমার কোনো বিকার নেই। থাকাও উচিত না।
মূল লেখা।