৫১.
শাল সত্তর, আসন আশি
জাম বলে পাছেই আছি।
তাল বলে যদি পাই কাত
বার বছরে ফলে একরাত।
৫২.
পূর্ণিমা আমাবস্যায় যে ধরে হাল,
তার দুঃখ হয় চিরকাল।
তার বলদের হয় বাত
তার ঘরে না থাকে ভাত।
খনা বলে আমার বাণী,
যে চষে তার হবে জানি।
৫৩.
থেকে বলদ না বয় হাল,
তার দুঃখ চিরকাল।
৫৪.
বাপ বেটায় চাষ চাই,
তা অভাবে সহোদর ভাই।
৫৫.
ভাদরের চারি আশ্বিনের চারি,
কলাই রোব যত পারি।
৫৬.
ফাল্গুন না রুলে ওল,
শেষে হয় গণ্ডগোল।
৫৭.
মাঘে মুখী, ফাল্গুনে চুখি,
চৈতে লতা, বৈশাখে পাতা।
৫৮.
সরিষা বনে কলাই মুগ,
বুনে বেড়াও চাপড়ে বুক।
৫৯.
গোবর দিয়া কর যতন,
ফলবে দ্বিগুণ ফসল রতন।
৬০.
লাঙ্গলে না খুড়লে মাটি,
মই না দিলে পরিপাটি,
ফসল হয় না কান্নাকাটি।
৬১.
খনা বলে চাষার পো
শরতের শেষে সরিষা রো।
৬২.
সেচ দিয়ে করে চাষ,
তার সবজি বার মাস।
৬৩.
তিনশ ষাট ঝাড় কলা রুয়ে
থাকগা চাষি মাচায় শুয়ে,
তিন হাত অন্তর এক হাত খাই
কলা পুতগে চাষা ভাই।
৬৪.
বৎসরের প্রথম ঈশানে বয়,
সে বৎসর বর্ষা হবে খনা কয়।
৬৫.
পটল বুনলে ফাল্গুনে,
ফল বাড়ে দ্বিগুণে।
৬৬.
উঠান ভরা লাউ শসা,
খনা বলে লক্ষ্মীর দশা।
৬৭.
শুনরে বেটা চাষার পো,
বৈশাখ জ্যৈষ্ঠে হলুদ রো।
আষাঢ় শাওনে নিড়িয়ে মাটি,
ভাদরে নিড়িয়ে করবে খাঁটি।
হলুদ রোলে অপর কালে,
সব চেষ্টা যায় বিফলে।
৬৮.
পান লাগালে শ্রাবণে,
খেয়ে না কুলায় রাবণে।
৬৯.
ফাল্গুনে আগুন চৈতে মাটি,
বাঁশ বলে শীঘ্র উঠি।
৭০.
জ্যৈষ্ঠে খরা আষাঢ়ে ভরা,
শস্যের ভার সহে না ধরা।
৭১.
ভাদ্র আশ্বিনে বহে ঈশান,
কাঁধে কোদালে নাচে কৃষাণ।
৭২.
বৈশাখের প্রথম জলে,
আশুধান দ্বিগুণ ফলে।
৭৩.
বাড়ীর কাছে ধান পা,
যার মার আগে ছা।
চিনিস বা না চিনিস,
ঘুঁজি দেখে কিনিস।
৭৪.
শীষ দেখে বিশ দিন,
কাটতে কাটতে দশদিন।
ওরে বেটা চাষার পো,
ক্ষেতে ক্ষেতে শালী রো।
৭৫.
খনা ডাকিয়া কন,
রোদে ধান ছায়ায় পান।
৭৬.
গাই দিয়া বায় হাল,
দুঃখ তার চিরকাল।
৭৭.
তপ্ত অম্ল ঠাণ্ডা দুধ
যে খায় সে নির্বোধ।
৭৮.
ডাক দিয়ে বলে মিহিরের স্ত্রী, শোন পতির পিতা,
ভাদ্র মাসে জলের মধ্যে নড়েন বসুমাতা।
রাজ্য নাশে, গো নাশে, হয় অগাধ বান,
হাতে কাটা গৃহী ফেরে কিনতে না পান ধান।
৭৯.
ফাল্গুনে আট, চৈতের আট,
সেই তিল দায়ে কাট।
৮০.
ষোল চাষে মূলা, তার অর্ধেকতুলা,
তার অর্ধেক ধান, বিনা চাষেপান।
খনার বচন, মিথ্যা হয় না কদাচন।
৮১.
আশ্বিনে উনিশ, কার্তিকের উনিশ,
বাদ দিয়ে যত পারিস, মটর কলাই বুনিস।
৮২.
চৈত বৈশাখে লাগাইয়া ঝাল,
সুখে কাটে বর্ষাকাল।
৮৩.
আরে বেটা চাষার পো
চৈত্র মাসে ভুট্টা রো।
৮৪.
আষাঢ়ে উৎপত্তি, শ্রাবণে যুবতী,
ভাদে পোয়াতী,
আশ্বিনে বুড়া,
কার্তিকে দেয় উড়া।
৮৫.
আসমান ফাঁড়া ফাঁড়া,
বাতাস বহে চৌধারা।
কৃষক ক্ষেতের বান্ধ আইল,
বৃষ্টি হইবে আইজ কাইল।
৮৬.
মাঘের মাটি হীরের কাঠি
ফাল্গুনের মাটি সোনা,
চৈতের মাটি যেমন তেমন
বৈশাখের মাটি নোনা।
৮৭.
মাঘ মাসে বর্ষে দেবা,
রাজায় ছাড়ে প্রজার সেবা।
খনার বাণী
মিথ্যা না হয় জানি।
৮৮.
ধানের গাছে শামুক পা,
বন বিড়ালী করে রা।
গাছে গাছে আগুন জ্বলে,
বৃষ্টি হবে খনায় বলে।
৮৯.
কচু বনে ছড়ালে ছাই,
খনা বলে তার সংখ্যা নাই।
৯০.
পশ্চিমের ধনু নিত্য খরা,
পূর্বের ধনু বর্ষে ঝরা।
৯১.
স্বর্গে দেখি কোদাল কোদাল
মধ্যে মধ্যে আইল,
ভাত খাইলাও শ্বশুর মশায়
বৃষ্টি হইবে কাইল।
৯২.
তিথি বারো, স্বনক্ষত্র মাসের বারোদিন
একত্র করিয়া তারে সাতে করো হীন,
একে শুভ, দুইয়ে লাভ, তিনে শত্রুক্ষয়
চতুর্থেতে কার্যসিদ্ধি, পঞ্চমে সহায়,
ষষ্ঠে মৃত্যু, শূন্য হলে পায় বহু দুঃখ,
খনা বলে যাত্রা কভু নাহি সুখ।
৯৩.
চৈতের ধূলি, বৈশাখের পেঁকি
ধান হয় ঢেঁকি ঢেঁকি।
৯৪.
আগে বেঁধে দেবে আইল,
তবে তায় রুইবে শাইল।
৯৫.
ঊণা মাতে দুনা বল
অতি ভাতে রসাতল।
৯৬.
আউশের ভুঁই বেলে,
পাটের ভুঁই আঁটালে।
৯৭.
যদি বর্ষে আগনে, রাজা যায় মাগনে,
যদি বর্ষে পৌষে, শস্য যায় তুষে।
৯৮.
মধুমাসে প্রথম দিবসে হয় যেইবার,
রবিশেষে মঙ্গল বর্ষে, দুর্ভিক্ষ বুধবার,
সোম, শুক্র গুরু যার,
পৃথ্বী সয়না শস্যের ভার।
৯৯.
আঁধারে পড়ে চাঁদের কলা,
কতক কালা, কতক ধলা,
উত্তর উঁচু, দক্ষিণ কাত
ধারায় ধারায় ধানের হাত,
ধান-চাল দুই-ই সস্তা
মিষ্টি হবে লোকের কথা।
১০০.
যে গুটিকাপাত হয় সাগরের তীরেতে,
সর্বদা মঙ্গল হয়, কহে জ্যোতিষেতে।
নানা শস্যে পরিপূর্ণ বসুন্ধরা হয়,
খনা কহে মিহিরকে, নাহিক সংশয়।
[কৃতজ্ঞতা: খনার বচন, নারীগ্রন্থ প্রবর্তন, ঢাকা
পঞ্চম সংস্করণ ১১ জানুয়ারি, ২০০৭, ২৮ পৌষ, ১৪১৩]