somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু সারা, না দেখেও যার এই ছবিটি এঁকেছিলাম..

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১০:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার হাতে আকাঁ এই ছবির মেয়েটির কেতাবী নাম আলা সিহাব। আমি ডাকি সারা। মানে আমার সারা। আমার বন্ধু। সবচেয়ে প্রিয় একটি মানুষ। আমার সারার বাড়ি ফিলিস্তিনে। এখন দেশের প্রধান মেডিকেল কলেজে ইন্টার্ণী করছে। আমার সংগে তার পরিচয় সম্ভবত ২০০৪ সালে। ইয়াহু ম্যাসেঞ্জারে। দিনে দিনে সারার সংগে অনেক কথা হয়। ওর এসব কথায় পরিশীলিত একটি মনের ছাপ পাই। আমি নিজেও আরবী জানি। সারার সংগে আরবীতে কথা বলা প্রাকটিস করতাম । বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকাকালে আরবী, উর্দ্দু, ফার্সি বিভাগের শিক্ষার্থীদের সংগে আরবী প্রাকটিস করতাম। কিন্তু হল ছাড়ে দেয়ার পর তা আর হয়ে উঠেনি। সারার সংগে সেই সুযোগটা পেয়ে গেলাম। আমাদের কথা হতো-ইংরেজী- আরবী মিলিয়ে। কিন্তু প্রথম দুই বছর ওকে আমি দেখিনি। আমি তখন মানবজমিন পত্রিকার রিপোর্টার। দিনরাত খবরের পেছনে দৌড়াই। অন্যকিছু ভাবার সময় কোথায় পাই? কিন্তু একসময় আমি সারাকে দেখার জন্য আকুল হয়ে গেলাম। সে রাজী হলোনা। বললো, আমাকে দেখতে পারবে একটা শর্তে। সেটা হলো-তুমি নাকি আর্টিস্ট। আমার সংগে কথা বলেছো, আমরা দুজন দুজনকেই এতটা জেনেছি যে-দুরত্ব আমাদের কাছে ম্লান হয়ে গেছে। এজন্য তোমাকে একটা পরীক্ষা দিতে হবে। তোমার পরীক্ষাটা হলো-তুমি আমার ছবি আঁকবে। ছবিটা মেইল করে পাঠাবে। আমার সংগে মিল হলেই তুমি কেবল আমাকে দেখতে পারবে। কি আর করবো। আমি তাকে দেখার জন্য যেকোন পরীক্ষা দিতে রাজি হলাম। স্বপ্ন দেখা আমার সারাকে কল্পনার সংগে মিলিয়ে কাঠ পেন্সিলে তার একটি ছবি আঁকি। বললাম, তোমার রঙ্গিন পোট্রেট আমি ইচ্ছা করেই আঁকবোনা। এটা আমার জীবনে সাদাকালো হয়েই থাক। আমি ছবিটির উপর আরবীতে লিখে দিলাম..ইয়া আলা, হাল আনতে হাকাজা?-সায়েম…অর্থ্যাৎ আলা, তুমি ঠিক এই ছবির মতো।–সায়েম। মেইল করে পাঠিয়ে দিলাম তার কাছে।

কিছুদিন পর আমি সারার একটি মেইল পাই। আমার আঁকা ছবির পাশাপাশি বসিয়ে ওর একটি ছবি সে পাঠিয়ে দেয়। মেইল করে লিখে..how r u saem u know i miss u very much this the first time i can connect the net again in my home there was a problem in the modem oh seam now i saw my pic i think it looks like me i found in it something from me i like what u wrote in arabic if it match me , saem i send 4 u my pic but first promise me that u will delete it and nobody will see it ,plz saem tell me about u, ur working about ur self ur life what do u think u will do in future.. i hope that i will read ur replay soon..saem i have to go now to study my exam in neurophysiology
take care my best friend 4 ever
Yours Sara

আমি ওর ছবি দেখেতো অবাক। এটা হয় কিভাবে? একবারে হুবহু আমার আঁকা ছবির সংগে তার চেহারার মিল। আমি যেন বিশ্বাস করতে পারছিনা। এ যে প্লাটুনিক কিছু। এরপর ওকে ভিডিওতে দেখেছি। ও চিরদিনের জন্য এদেশে আসতে চেয়েছিল। আমি বললাম, ফিলিস্তিনে একজন ডাক্তারকে খুবই দরকার। দেশের সেবা করার চেয়ে মহৎ আর কিছু নেই। মানুষের সেবার মধ্য দিয়েই আমরা দুজনে এক বিন্দুতে গিয়ে মিলে যাবো। এরপর জীবনের তাগিদে আমি ব্যস্ত হয়ে পড়ি। সব ছেড়েছুড়ে বিসিএস পরীক্ষা দিতে শুরু করি। যেদিন আমার বিসিএস এর ভাইভা, তাকে জানালাম। বললাম, এদেশে সাংবাদিকতা আর করতে ইচ্ছা করেনা। এর চেয়ে ইতরামী অনেক ভাল পেশা। সে বললো, আমি তোমার জন্য বায়তুল মোকাদ্দাসে গিয়ে দোয়া করবো। ওই সময় বায়তুল মেকাদ্দাসে যাওয়াটা অনেক ঝুকির ব্যাপার ছিল। কিন্তু ও কোন বাধা মানেনি। আমার ভাইভার দিন সে বাইতুল মোকাদ্দাসে গিয়ে দোয়া করেছিল।
এরপর আমি বিসিএস প্রশাসনে চাকুরী পেয়ে গেলাম। যেখানে ক্যারিয়ার নিয়ে দিনরাত উর্ব্ধমুখী ছুটে চলা, সেখানে আবেগ কেমন যেন ধুসর হয়ে যায়। আমার আঁকা সারার ছবিটার কথা ভুলেই যাই। মানুষের জীবনে আর কি চাওয়া থাকতে পারে। আমি সেবাপ্রার্থী হলে যে সেবাটা চাইতাম সেটাই মানুষকে দেয়ার চেষ্টা করছি। গভীর রাতেও আমার অফিস শেষ হয়না। অন্যদিকে ফিলিস্তিন সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের সরকারের স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে সারাও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পড়তে যায়। ফলাফল আমাদের আকৃতিগত যোগাযোগ সীমিত হয়ে আসে। মেইলে মাঝে মাঝে চিঠি লেখা হয়। আমি ভুলে যাই। ও আবার আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এভাবেই চলছিল।

দুইদিন আগে সারার একটি মেইল পেয়ে আমি সেই আগের দিনগুলোতে ফিরে গেলাম। সারা আমার আঁকা এই ছবিটি পাঠিয়ে দিয়েছে। আর লিখেছে-Hi saem, how are you, hope you are doing well, long time we don't write to each other, I remember this pic, do you remember it?
Let me know your news.
Yours Sara

জীবন কখনো থেমে থাকেনা। থেমে নেই আমাদের বেলায়ও। হয়ত দুনিয়ার দুই প্রান্তের দুটি মানুষ কালের চাকায় ঘুরে নিজেদের জীবন চক্র শেষ করবে। কিন্তু অব্যক্ত এই অবিশ্বাস্য ঘটনা সাক্ষী হয়ে লেখা থাকবে কোনখানে।
রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন,
যারা কাছে আছে তারা কাছে থাক্, তারা তো পারে না জানিতে-
তাহাদের চেয়ে তুমি কাছে আছ আমার হৃদয়খানিতে॥
যারা কথা বলে তাহারা বলুক, আমি করিব না কারেও বিমুখ-
তারা নাহি জানে ভরা আছে প্রাণ তব অকথিত বাণীতে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৫৩
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×