ওর নাম আহইয়ান, অদ্ভুত একটা নাম, ওর মা রেখেছে। আরবি এই নামের অর্থ “A Gift from the God”। আজ ২১ দিন, আহইয়ান বিয়ে করেছে। এই যুগে বাবা-মার পছন্দে এরেঞ্জ বিয়ে, ওর নববধুর নাম শায়িরা। ছোট একটা জব করে আহইয়ান, কাধে ল্যাপটপের ভারী ব্যাগ নিয়ে সারাদিন ঘোরাঘুরি।
বৃহস্প্রতিবার আজ, বেলা পড়ে এল, কাল ছুটি, অফিস শেষ করে নববধুকে ফোন দিয়ে বলল যেন শহরে তাড়াতাড়ি চলে আসে, শায়িরা কে নিয়ে একটু ঘুরবে, একটু ফুচকা খাবে, শায়িরা ফুচকা ভীষণ পছন্দ করে। ওর বউ আবার রেস্টুরেন্টের দামী ফুচকা খেয়ে টাকা নষ্ট করার পক্ষপাতী নয়। ও বলে, ধুর একি জিনিস অযথা বেশি দাম দিয়ে খেতে যাব কেন? ফুটপাতেরটাই বেশি ভাল। আহইয়ান বুঝে না কেন ও এমন কথা বলে। সত্যিই ওর বউ অনেক মিতব্যয়ী নাকি আহইয়ানের সল্প বেতনের টাকাই সংসার চালানোর পন্থা।
বাইরে যেতে হবে শুনে শায়িরা ফোনে একটু বিরক্ত প্রকাশ করলেও মনে মনে ও ভীষন খুশি। কালো রঙের বোরখার ওপরে সুন্দর একটা স্কার্ফ পড়ে ও রওনা দিল।
আহইয়ান ভাবে ও অনেক সুখী, ও যেন বিশেষ কিছু একটা খুঁজে পেয়েছে। নতুন বিবাহিত জীবন অথচ এ কদিনেই শায়িরার প্রতি অন্যরকম এক মায়া তৈরি হয়ে গেছে। ওর ভাল লাগে, সারাদিনে বার বার মেয়েটা ফোন দিতে থাকে, দুপুর হয়েছে খেয়ে নাও, রোদে হেটো না, কখন বাসায় ফিরবে... যেন কতদিনের চেনা।
মাগরিবের আযানের কিছু সময় বাকি আছে, আহইয়ান আসরের নামাজ পড়তে মসজিদে ঢুকল। ওর মোবাইল সাইলেন্ট মুডে ছিল, নামায শেষে বাইরে এসে দেখে মোবাইলে শায়িরার ১৩টা মিসড কল। একটু চিন্তিত হয়ে কল লিস্ট চেক করতে করতেই আবার শায়িরার ফোন আসল। হ্যালো বলার আগেই ওপাশের এক পুরুষ কন্ঠ বলে উঠলো, এই ফোনটা যার তিনি একটু আগে একসিডেন্ট করেছেন... মাথায় আঘাত পেয়েছেন, আমরা তাকে হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি।
ঠিক কি করবে আহইয়ান বুঝতে পারছিল না, কাধের ল্যাপটপ ব্যাগ যেন অনেক বেশি ওজন হয়ে গেছে, ধরে রাখতে পারছিল না, প্রচন্ড ভয়ে ওর ভেতরটা কুঁকড়ে গেল। বারবার ফোনে খোঁজ নিচ্ছিল- মাথায় আঘাত পেয়েছে, জ্ঞান নেই, ব্লিডিং হয়েছে। আহইয়ান ভয় পাচ্ছিল, প্রচন্ড ভয়। কেন যে বাইরে ডাকতে গেল!
আহইয়ান হসপিটালের ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে পৌছে দেখল, শায়িরা ওয়ার্ডের একটি বেডে আধাশোয়া অবস্থায় বসে আছে, মাথায় ব্যান্ডেজ, মুখটা লাল। প্রচন্ড অপরাধীর মত ও বেডের একপাশে দাঁড়িয়ে থাকল, কি বলবে বুঝতে পারছিল না। ওর খুব ইচ্ছে করছিল শায়িরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে। আসলে ওর ইচ্ছে করছিল শায়িরা যেন ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে, আমি ঠিক আছি তুমি ভয় পেও না। আহইয়ানের কান্না ধরে রাখতে খুব কষ্ট হচ্ছিল।
প্রচন্ড আবেগী এই ছেলেকে শায়িরা ভাল করেই চেনে, ও মাথা নেড়ে আহইয়ানকে নিষেধ করল কাঁদতে, ইশারায় জানাল ও ভাল আছে। মুখে বলল, তুমি নামায পড়েছো? আহইয়ানের না শুনে বলল, মাগরিবের ওয়াক্ত এখনও আছে, তুমি নামায পড়ে এসো।
আহইয়ান নামাযে দাঁড়াল, সেজদায় গিয়ে ও যেন মাথা তুলতে পারছিল না, কান্না আর ধরে রাখতে পারল না, ডুকরে কেঁদে উঠল, কান্নার তোরে ওর পিঠটা বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছিল। সেজদায় থেকে ও বারবার সুরা বাকারার শেষের আয়াতের একটি অংশ পড়ছিল, “রব্বানা ওয়ালা তু হামমিলনা মা লা ত কতালানা বিহ্”—“হে আমার রব, তুমি আমাকে এমন কোন কষ্ট দিও না যা বহন করার সামর্থ আমার নেই”।
নামায শেষ করে আহইয়ান ধীর পায়ে শায়িরার কাছে ফিরে যাচ্ছিল...ওর ভালবাসার মানুষটার কাছে।
*****************
পবিত্র ভালবাসা টিকে থাক।
সবাই মরীচিকার পেছনে ছোটা বন্ধ করুক।
মরীচিকা আশা দেখায়...
কাছে গেলেই নেই।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:১২