রঙের ওপারে (গল্প)
বাসে উঠেই মেজাজ খিঁচরে গেলো ! ধ্যাত ! পাশের সিটে একজন বৃদ্ধা ! দুঃখের প্যাঁচাল পেরে পেরে কান পচিয়ে দেবে আজ ! পিছনে কোন সিট ও নাই ! বাধ্য হয়েই বুড়ির প্যাঁচাল শুনতে হবে । নানা কষ্টের কথা , কত বড় ঘরের মেয়ে ছিলেন ! স্বামী মারা যাওয়ায় এখন ছেলেমেয়ের গলগ্রহ হয়ে কষ্টের জীবন কাটাচ্ছেন ! হাজারো নানাবিধ কাহিনী ! জানি এসব কষ্টের অনেক ! কিন্তু হাস্যকর লাগে যখন অপরিচিত কারো কাছে এসব বলেন উনারা । কি লাভ ! চারিদিকে নানা অশান্তি ! নিজের সংসার , ছেলে মেয়ে , শাশুড়ি ননদ । এর মধ্যে চাকরি ! উফ ! মিটিং এর কাজে ঢাকা যেতে হচ্ছে ! বিকেলেই মিটিং ! ঘুমোতে ঘুমোতে যেতে পারলে বেশ হতো । রাতে ঘুম হয়নি । এই এক বাজে অভ্যাস ! জার্নি করতে হবে ভাবলেই ঘুম পালায় ।
খালাম্মা একটু সরে বসবেন ? আমি বসতাম ।
হ্যাঁ রে মা । তুমি কি জানালাড় পাশে বসবা ? তাইলে বস ।
না না খালাম্মা , আপনি বসেন । আমি এখানেই ঠিক আছি । মনে মনে অবাক হলাম । বুড়ি মহিলারা নিজেদের স্বার্থ খুব ভালো বোঝেন । ইনি দেখছি উলটো ! আর কথা বাড়াতে দেয়া ঠিক হবে না । এখন হেড ফোন কানে লাগিয়ে ঘুম দিতে হবে । নইলে শুরু হবে প্যাঁচাল । আগেও এমন দুই মহিলার খপ্পরে পড়ে খুব শিক্ষা হয়েছে !
কি নাম গো মা ?
সাদিয়া ।
বাহ ! দারুণ মিষ্টি নাম । আমার নাম জানতে চাইলে না ? আচ্ছা , আমিই বলি । আমার নাম আয়েশা খানম ।
ওরে বাপস ! বুড়ি তো বেশ স্মার্ট আছে ! কৌতূহলী হয়ে তাকালাম । বেশ পরিচ্ছন্ন একটা অফ হোয়াইট তাঁতের শাড়ি । মাথায় একটা সাদা ওড়না হাতে কালো একটা হ্যান্ড ব্যাগ । বেশ সচ্ছল পরিবারের মনে হচ্ছে । যাক বাবা ! বাঁচা গেলো ! দুঃখের কাহিনী শুনতে হলো না । খালাম্মা কি ফরিদপুর থাকেন ?ঢাকায় কার কাছে যাচ্ছেন ? নিজেই আগ বাড়িয়ে জানতে চাইলাম ।
না রে মা । ঢাকায় থাকি । দুই ছেলে ঢাকায় । মেয়েটাও ওখানে ।মেজো ছেলে আমেরিকায় আছে ! খুব ইচ্ছে করে ফরিদপুর নিজের ভিটেয় পড়ে থাকি ! কিন্তু ওরা কি আমাকে একা থাকতে দেবে ? কি যে অস্থির রে মা ! এমন ছেলে মেয়ে পেটে ধরেছিলাম ভাবতেও গর্বে বুক ভরে যায় ! বড় ছেলে সাজিদ । নামকরা ডাক্তার ।পিজিতে পোস্টিং । বউমাও ডাক্তার । শিশু হাসপাতালে আছে । দুই নাতনী । কথা আর সুর নাম !
কথা আর সুর ? কি সুন্দর নাম !
হ্যাঁ । ওর দাদু বেঁচে থাকতেই ওদের জন্ম । নাম রেখেছিলেন নিজেই । কি যে গান ভালোবাসতেন উনি ! খুব ইচ্ছে ছিলো নাতনীদের গান শুনবেন । কথা নাই বার্তা নাই পালিয়ে গেলেন আমাদের ফেলে ! বলে চোখ মুছলেন আয়েশা খানম !
কি আর করা খালাম্মা ! আল্লাহ যে কয়দিন হায়াত রেখেছেন তার বেশি বাঁচার সাধ্যি কি আমাদের আছে । কথা আর সুরের গল্প করেন খালাম্মা ।
হুম । কথা ১২ বছরের । ক্লাস ফোর এ পড়ে । ভিকারুন্নিসায় । আর সুর একই স্কুলে ক্লাস টু তে ।ওর বয়স ৮ । এই দেখো মা , নারকেলের চিড়া , গুড়ের সন্দেশ , আচার নিয়ে যাচ্ছি । ওদের সবার জন্য । খাবে ? এই নাও । বলে একটা কৌটা থেকে ধবধবে সাদা নারকেলের চিড়া বের করে হাতে দিলেন । তারপর পিছনের সিটে বসা এক মহিলার দিকে তাকিয়ে বললেন , মা তুমিও নাও । মহিলা ইতস্তত করছিলো । তার কোলে বসা বছর ৪ /৫ এর শিশুটি হাত বাড়িয়ে নিলো ।
শিশুর বাবা হাসলেন , খালাম্মা আমি পাবো না?
অবশ্যই বাবা । বলে তিনি আর একটু দিলেন ভদ্রলোককে ।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন , বুঝলে মা ফরিদপুরের বাসে করে কোথাও গেলে কত যে পরিচিত মুখ সাথে পাই । তারপরও আমার বাচ্চারা অস্থির ! মা , তুমি একা আসবে ? গাড়ি পাঠিয়ে দেই ? আর বলো না মা ! কি যে ভীষণ অস্থির ! ঢাকা থেকে তো একা কিছুতেই আসতে দেবে না । হয় দুই ছেলের একজন , নইলে ড্রাইভার দিয়ে হলেও পাঠাবে ! তুমি বলো মা একা একা এইটুকু পথ এলে কি হয় ! আমি কি বুড়ি হয়ে গেছি নাকি ! বলে দারুণ সুন্দর করে হাসলেন ! অবাক হয়ে দেখলাম কি সুন্দর একটা টোল পড়ে গালে ! আমি মুগ্ধ হয়ে সুখি মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকলাম । তারপর জানতে চাইলাম আর ছেলেমেয়েদের গল্প বলুন ।
মেজো ছেলে আমেরিকায় সেটেল । নিজের রেস্টুরেন্ট আছে । ৩ বছরের এক ছেলে। বললে বিশ্বাস করবে না মা , ভীষণ দস্যি সে! বউমা সারাদিন ওকে নিয়েই ব্যস্ত ! আমাকে ওরা নিয়ে গিয়েছিলো ওখানে । কি যে সুন্দর বাড়ি ঘর । রাস্তা ঘাট ঝকঝক করছে ! কি যেন নাম শহরের ! ওহ আচ্ছা মনে পড়েছে , ফ্লোরিডা ! চমৎকার সুন্দর । বউমা খুব যত্ন করেছে । নাতিটা এমন নেওটা হয়ে গেছিলো ! একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি । তারপর বললেন , এই নাতি একদম ওর বাপের মতন । ওর বাবাও এমন দস্যি ছিল ! কি ভীষণ জিদ্দি ! এখন কেমন শান্ত হয়ে গেছে ! মেজো ছেলের নাম সাকিব । নাতির নাম মিলিয়ে রেখেছে আকিব ! নাতিটা দেখতে হয়েছে বৌমার মত ! খুব মিষ্টি !
আর ছোট ছেলে ? মেয়ে ? ওরা কোথায় ?
ছোট ছেলে সজল বি বি এ পড়ছে । নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ।থাকে মেয়ের কাছেই । মেয়ে আমার দারুণ লক্ষ্মী !শায়লা ! কি সখ করে ওর বাবা ওদের নাম মিলিয়ে রেখেছিলো ! জামাই একটা হীরের টুকরো ! ভালো পরিবারের ভালো ছেলে । একটা ব্যাংকে আছে । মেয়ে জামাই এর মধ্যে ভীষণ মিল । জামাই এর মা মারা গেছেন। আমাকেই মা ভাবে। কি যে আদর করে রে মা। মাঝে মাঝে মনে হয় এত সুখ আমার ভাগ্যে ছিলো ! সজল আর শায়লা এখনো ছেলেবেলার মত খুনসুটি করে কাকে আমি সব থেকে ভালোবাসি তা নিয়ে ! এই যে আচার নিয়ে যাচ্ছি বলতো কেন মা?
শায়লার বাবু হবে ?
আরে ! তুমি তো দারুণ বুদ্ধিমতী মেয়ে ! আল্লাহ তমাকে অনেক ভালো করুক । নিজেই সারাক্ষণ বকবক করলাম ! তোমার কথা তো কিচ্ছু জানা হলো না । আমাদের জামাই কি করেন ? ছেলে মেয়ে আছে ?
জী খালাম্মা এক ছেলে এক মেয়ে । ওদের বাবা কলেজে আছেন । অংকের টিচার ! সাথে শাশুড়ি থাকেন । এই আমার সংসার !
বাহ ! সুখের সংসার ! ভালো থাকো মা । অনেক ভালো রেখো সবাইকে । মাগো , আমি নবীনগর নেমে যাবো । উত্তরা যাবো এদিক দিয়ে । আসি রে মা । ভালো লাগলো কথা বলে । আল্লাহ হাফেয !
জী খালাম্মা । আপ্নিও ভালো থাকবেন খুব। দোয়া করবেন আমাদের জন্য !আল্লাহ হাফেয ।
আমি মুগ্ধ হয়ে বৃদ্ধার চলে যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইলাম । আল্লাহ কিছু মানুষের এত্ত সুখ দিয়েছেন ! আমার সন্তানরা বড় হলে কি এমন সুখে থাকবো আমি ? আল্লাহ ! এই মানুষটির সুখ তুমি নষ্ট করো না ।
আপা , পিছনের সিট এর সে বাচ্চার মা ডাকতে ঘুরে তাকালাম ।আপনার পাশে এক্তু বসতে পারি ? ছেলেটা খুব জ্বালাচ্ছে । সিটে বসতে চায় ! আসি আমি?
আরে ! নিশ্চয়ই ! আসুন প্লিজ ! মেয়েটা পাশে বসতেই ছেলে মায়ের সিট দখল করে রাজ্য জয়ের হাসি দিলো ! আমি হেসে বললাম রাজপুত্র এবার সিংহাসন দখল করেছে ।
মেয়েটা মিষ্টি করে হাসলো । বলল আপা একটা কথা বলি ?
বলুন না প্লিজ ।
উনাকে আপনি চেনেন ?
কাকে ?
এই যে যিনি আপনার পাশে বসে ছিলেন । আপনি খালাম্মা ডাকছিলেন ! চেনেন না উনাকে ?
না তো ! আজই প্রথম কথা হলো ! কি চমৎকার উনার জীবন ! ছেলেমেয়ে নাতিপুতি নিয়ে কি দারুণ আছেন। আমাদের বৃদ্ধ বেলা যদি এমন কাটতো !
আল্লাহ না করুক ! কারো জেন উনার মত না হয় !
কেন !
আপা , উনার ছেলে মেয়ে কেউ বেঁচে নেই ।
কি বলেন আপনি ! আমি কিছুতেই মেলাতে পারছিলাম না। উনি যে বললেন ?
একটা কার এক্সিডেন্টে উনার স্বামী , তিন ছেলে একমাত্র মেয়ে মারা যায় । বেঁচে যান শুধু উনি ! তখন থেকে উনি ঠিক স্বাভাবিক নেই । উনি খুব নামকরা ফ্যামিলির মেয়ে । এখন থাকেন ভাইদের সাথে । মাঝে মাঝে ঢাকা আসেন । যে জায়গায় কার এক্সিডেন্ট হয়েছিলো তার পাশের ফুটপাথে বসে থাকেন।। তারপর কবর যিয়ারত করে ফিরে যান ফরিদপুর ! তাই বললাম আপা , উনার মত ভাগ্য যেন কারো নাহয় !
একটা কিছু দলা পাকিয়ে ঠিক শ্বাস নালীতে আটকে যেন যাচ্ছে ! এক্তু আগেই নিজেকে উনার মত ভাবতে চাইছিলাম ভেবে শিউরে উঠলাম ! হুট করেই সব কেমন স্তব্ধ হয়ে গেলো ! রঙের ওপারের সাদা কালো মানুষগুলোর জন্য বুকটা হু হু করে উঠলো !আয়েশা খানমের দেয়া সাদা নারকেলের চিঁড়া গুলো কেমন লেপটে আছে হাতের তালুতে । যেন এক মুঠো সাদা ভালোবাসা !
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মপোলব্ধি......
আত্মপোলব্ধি......
একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !
হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।
আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।
আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন