পুতিনের মতে কে এই আইসিস এর সৃষ্টিকর্তা ভিডিও!!!!!
শিল্প সাহিত্যের আঁতুড় ঘর বলা হয় প্যারিসকে। প্যারিস এমন একটা শহর যেখানে যে কোন কাউকেই তারা সাদরে আমন্ত্রন জানায়। কিছুদিন আগে ২০১২ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত রকস্টার MADONA এর একটা লাইভ কনসার্ট দেখছিলাম ইউটিউবে। সবাইকে তিনি ধন্যবাদ জানাচ্ছিলেন এটা জেনে যে ৩ দিন ধরে দিনরাত লাইনে দাঁড়িয়ে যারা তারা কনসার্ট দেখার জন্য টিকেট কিনেছিল তাদের। কনসার্টের মাঝখানেই তিনি তার স্বভাবসুলভ কথা বলছিলেন। সেইসব কথার মাধ্যমে প্যারিস সম্পর্কে একটা ধারনা পেয়েছিলাম।
এই শহরের মানুষরা খুবই সংস্কৃতিমনা, শিল্প সাহিত্য খুব পছন্দ করে। বিবিসির মতে এরা আবার খুব প্রাইভেসি প্রিয়। বলা হয়ে থাকে সে কারনেই প্যারিস শহরে সিসিটিভির সংখ্যা ইউরোপের অন্যান্য পশ শহরের তুলনায় খুব কম। আবার এরা প্রাইভেসি প্রিয় বলে শহরের কোথাও কিছু দেখলে তেমন কাউকে জানানো এমনকি পুলিশ বা এরকম কাউকে জানানো সমীচীন মনে করে না। যেমনটা ইউরোপের অন্যান্য বড় শহরের বাসিন্দারা করে থাকে। তাই হয়তো হামলাকারীরা এই সুযোগ নিয়েছে।
এখন প্রশ্ন হতে পারে যতই প্রাইভেসি প্রিয় হোক না কেন কালানিশিকভের মত অস্ত্র বা একে-৪৭ এর মত অস্ত্র নিয়ে বোমা নিয়ে প্যারিসের মত একটা শহরে কেমন করে এত বড় সন্ত্রাসী গ্রুপ প্রবেশ করতে পারে!!??? চার্লি হেবদোর কারনে এরকম হামলা ফ্রান্স আগেই এক্সপেরিএন্স করেছে তাহলে এরপরে নাগরিক নিরাপত্তায় ফ্রান্স সরকার কি কি ব্যবস্থা গ্রহন করেছে!!!????
এই হামলা বর্বর এই হামলা নিষ্ঠুর। কোন সংজ্ঞাতে ফেলা যায়না এই হামলা কে!!!। একমাত্র পশুমনের অধিকারীরা এরকম হামলা চালাতে পারে। এই কথাগুলো বলে আমি কিন্তু তবে এসব কোন শব্দ ব্যবহার করতে চায়না। কারন এরকম হামলা মানবতা বিরুধী। কিন্তু বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বহুদেশের প্রগতিবাদী ভাই বোনেরা ঢালাও ভাবে মুসলিমদের দোষ দিয়ে যাচ্ছেন এই হামলার জন্য। ৮ জন সন্ত্রাসীর হামলার জন্য প্রায় দেড় বিলিয়ন(নেট থেকে প্রাপ্ত) মুসলমান কে দায়ী করা বোকামি বৈ আর কিছু না। আচ্ছা বাদ দিলাম সে কথা। কথা হল আইসিস বা আইএসআইএল যাইহোক না কেন তারা অলরেডি দায় স্বীকার করেছে এবং তারা বলেছে যে এরকম হামলার এটি শুরু মাত্র। এবার চলুন জুড়ে দেয়া লিঙ্কে পুতিনের প্রেস কনফারেন্স এর বক্তব্য গুলো শুনি। যেখানে তিনি স্পষ্ট বলেছেন এই আইসিস এর স্রষ্টা কে, কে তাদের পেট্রোনাইজ করে, তাদের কে ভাড়াটিয়া গুন্ডা কে বানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের তেলকূপ দখল করতে আইসিসকে কে সাহায্য করছে, তাদের কাছে এসব ভারী অস্ত্রশস্ত্র আসে কথা থেকে। এক বাক্যেই তিনি বলেছেন আইসিস আমেরিকা এবং পশ্চিমাদের সৃষ্টি। এবং উপরিল্লিখিত সব ধরনের সহায়তা তাদেরকে আমেরিকা এবং পশ্চিমা দেশ গুলোই করে থাকে। এমনকি তিনি প্রেস কনফারেন্সের এক পর্যায়ে আমেরিকান সাংবাদিকদের বলেন যে তার বলা এসব কথা যেন তারা ওবামা কে পৌঁছে দেয়। পুতিনের মত একজন ব্যক্তিত্ব যখন কিছু বলেন তাহলে নিশ্চয় ডেফিনেট এবং অথেনটিক তথ্যের ভিত্তিতেই বলেন।
তাহলে এই হামলার দায় কার??
একবার ভাবুন উপসাগরীয় যুদ্ধের আগে যখন এক রাতেই ইরাক কুয়েত দখল করে ফেলেছিল তখনও এরকম অবস্থার সৃষ্টি হয়নি। তখনও এভাবে চোখে আঙুল দিয়ে মুসলমানদের দোষারোপ করা হয়নি!!! না মুসলমানদের গুণগান গাচ্ছি না। আমার উদ্দেশ্য সেটা নয়। আফগানিস্থান বা ইরাক হামলার আগে আমেরিকা ও তাদের মিত্ররা কি বলেছিল? আফগানিস্থানে আল কায়েদা আছে আর ইরাকে আছে পারমাণবিক অস্ত্র। আল কায়েদার কথিত নেটওয়ার্ক ধ্বংস করলেও ইরাকে কোন পারমাণবিক অস্ত্র পাওয়া যায়নি। মাঝখানে পড়ে প্রান দিল লক্ষ লক্ষ নিরীহ মানুষ। তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে হামলা কোন উদ্দেশ্যে?? ভাবতে থাকুন!!
সিরিয়া নিয়ে রাশিয়া এবং সিরিয়া সরকারের বিপরীতে বেশ কিছুদিন ধরেই আমেরিকা আর পশ্চিমা বিশ্বের অবস্থান। আর সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে এক প্রকার বলে কয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে সিরিয়া অংশের আইসিস। এক্ষেত্রে সিরিয়া অংশের আইসিস এবং পশ্চিমা বিশ্বের সাথে নৈতিক একটা মিল রয়েছে। এবার আমরা একবার চোখ বুলায় প্যারিস হামলায়। এই হামলা থেকে সবচেয়ে বেশি উপকার পাবে কারা? কারাই বা সবচেয়ে বেশি হুমকির সম্মুখীন হবে?
নিঃসন্দেহে প্রথমত সিরিয়া। কারন সন্ত্রাসবাদের নাম করে প্রথমেই হামলা করা হবে এই দেশে। এরপর মূলত রাশিয়া কিছুটা গুডওয়িল প্রবলেমে পড়ে যাবে। কারন রাশিয়ার রাষ্ট্রগত অবস্থান সবসময় সন্ত্রাসবাদের বিপক্ষে। আর আমেরিকা তো চাইই সেটা। সিরিয়া হয়ে যাবে আরেকটি আফগানিস্থান, ইরাক বা লিবিয়া। আর মুসলিম রা তো অবশ্যই সমস্যার সম্মুখীন হবেই। কারন হামলাকারীরা হামলা চালিয়েছে “আল্লাহ আকবর” বলে।
এখন পুতিনের কথা যদি সত্যি হয় যে আইসিস এর প্রতিষ্ঠাতা আমেরিকা এবং পশ্চিম বিশ্ব আর আইসিস আবার প্যারিস হামলায় জড়িত তাহলে এই প্রায় ১৫০ নিরীহ নিষ্পাপ মানুষকে গিনিপিগ বানাল কে? কার স্বার্থে? কোন উদ্দেশ্যে??
প্রশ্ন রয়ে যায়।
বিদ্রঃ সম্পূর্ণ ব্যাক্তিগত মত। অবশ্যই আমি এবং আমার লেখা সমালোচনার বাইরে নয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪৫