আমাদের এলাকার সাত্তার দাদা যে বিষয়টা নিয়ে সবচেয়ে বেশি কন্সারন থাকেন সেটি হল ফ্রী। এটার সাথে ওটা ফ্রী বিষয়টা উনি খুব পছন্দ করেন। একবার তিনি আমাদের এলাকায় একটা ছোট্ট মুদির দোকান দিয়েছেন। উনার দোকানে মোটামুটি এটার সাথে ওটা ফ্রী বিষয়ক জিনিস গুলো খুব পাওয়া যেত। মাঝে মাঝে উনার দোকানে আমি বসতাম আড্ডা দেয়ার জন্য। একবার হঠাৎ তিনি আমাকে বললেন তেলের ডিলারের সাথে উনি নাকি ঝগড়া করে আসছেন। কারন কি জিজ্ঞেস করতেই উনি জানালেন বোতলের গায়ে ফ্রী লেখা আছে কিন্তু ডিলার ওই ফ্রী টা কোনভাবেই নাকি উনাকে দিচ্ছে না। কারন ডিলারও নাকি ওই ফ্রী টা পাইনি। আবার ফ্রী এর আগে কি লেখা আছে পড়ালেখা কমতি হওয়ার কারনে তিনি বুঝতে পারছেন না। আমি বোতল টা দেখলাম। বোতলের গায়ে লেখা আছে-
“CHOLESTEROL FREE”
কিছুটা সময় নিয়ে আমি উনাকে বুঝালাম এই ফ্রী মানে মুক্ত, এই ফ্রী পাওয়া যায়না। এই ফ্রী টা বেশি মাত্রায় হলে শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। যেমন ক্ষতিকারক বিড়ি সিগারেট। বিড়ি সিগারেট খেলে ফ্রী তেও অনেক রোগ শোক পাওয়া যায়। এমনকি মৃত্যুও। তাই সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকে “ধূমপান মৃত্যু ঘটায়”। একবার আমার এক বন্ধু আমার এক ইন্ডিয়ান বান্ধবীর সামনে সিগারেট খাচ্ছিল। বান্ধবীটি হঠাৎ বলে উঠলো “ওহ.এম.জি তুমি সিগারেট খাও? ইউ নো ইটস হারম্ফুল ফর হেলথ”। তার মুখের কথাটি আমার কাছে মনে হয়েছে ‘ভূতের মুখে রাম নামের’ মত। কারন আমি জানতাম সে ড্রাই-ডে ছাড়া সপ্তাহের বাকি ৬দিনই দ্রিঙ্কস করে। আর অতিরিক্ত মাত্রার দ্রিঙ্কসও যে ফ্রী’তে ক্ষতিকারক অনেক কিছু দেয় তা পাগলও জানে। ব্যাপারটা দাঁড়ালো সে ডাকাতি করতেসে কোন সমস্যা নাই। কিন্তু আরেকজনে হালকা চুরি করতেসে, সেটাই পাপ।
চুরি করা পাপ। কিন্তু ডাকাতি করা তার চেয়ে বড় পাপ। আবার দিনে দুপুরে মাইনর হয়ে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে মানুষ খুন করে বাপ চাচার জোরে বেঁচে যাওয়া কে ডাকাতি বলা যাবেনা। এটাকে বলা হবে বাহু শক্তির কাছে আইনের নির্লজ্জ পরাজয়। অথচ হাশেম চোরার মত ছিঁচকে চোরও আইনের বাইরে যেতে পারেনি। আমাদের এলাকায় হাশেম নামে এক চোর ছিল। গোবেচারা টাইপের হাশেম কারো ঘরের দামি কিছু চুরি করত না। তারপরও এলাকায় কোন চুরি হলেই সব দোষ ওর উপর গিয়ে পড়ত। আর মানুষ আইন হাতে তুলে নিয়ে এক পশলা মাইর তার উপর দিয়ে দিত। একবার এলাকায় চুরি হল যথারীতি তাকেই দোষ দেয়া হল। অথচ সেদিন ছিল তার বিয়ে। ওই রাতেই বেচারার বাসর রাত ছিল। সে বাসর ঘরে বিড়াল মারার আগে নিজেই মার খেয়ে বসে রইল। সেকেন্ড চান্স বলে ব্যাপারটা কোননদিনই পায়নি সে।
আমার এক বন্ধুও আমাকে সেই সেকেন্ড চান্স টা দেয়নি। ছোটবেলায় আমার এক বন্ধু ছিল। চালচলন দেখেই বুঝতাম সে অনেক বড় লোকের ছেলে। কিন্তু কখনো জিজ্ঞেস করা হয়নি তার বাপে কি করে।অল্পদিনের বন্ধুত্তের খাতিরে একদিন তাদের বাসায় বেড়াতে গেলাম। ওদের ড্রয়িং রুমে গিয়ে আমার চক্ষু ছানাবড়া। জীবনে প্রথম ইয়া বিশাল টেলিভিশন দেখলাম। হা করে বললাম-“ দোস্ত এইরকম টিভি দুই টাইপের মানুষের বাসায় থাকা সম্ভব। হয় বড় ব্যবসায়ী নাহয় পুলিশ”। তোর বাপ কিসের ব্যবসা করে?”। এমন সময় পুলিশের পোশাক পরে এক লোক বাসায় প্রবেশ করল। বন্ধু মুখ কালো করে আমাকে বলল- “দোস্ত আমার বাবা”।
এরপরে বন্ধু আমার সাথে আর কখনো কথা বলেনি। আবার খুব অল্প দিনের মধ্যেই তারা অন্যখানে চলে যায়। তাই আর দেখাও হয়নি।
তবে ভালবাসায় সেকেন্ড চান্স বলতে কিছু নেই। একবার ধোঁকাবাজ তো বারবার ধোঁকাবাজ। ব্যতিক্রম আছে। তবে ব্যতিক্রম কখনো উদাহরণ হতে পারেনা। ধোঁকাবাজ প্রেমিক বা প্রেমিকা বেশি মাত্রার কোলেস্টেরলের মত, সিগারেটের নিকোটিনের মত। ধীরে ধীরে আপনাকে নিঃশেষ করে দিবে। মন নিয়ে খেলবে, আবার সময়মত ফুটো করে ফাটিয়েও দিবে। দেখুন,বুঝুন,শুনুন,সময় নিন। তার পর মন দিন। আবেগ কে প্রশ্রয় দেয়ার আগে প্র্যাকটিক্যাল হন। মনে রাখবেন-
"একটি দুর্ঘটনা, সারাজীবনের কান্না”
জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক, শান্তিতে থাকুক
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:৩২