ছোটবেলায় এনালগ ছত্রিশ রিলের ইয়াশিকা ক্যামেরার ফ্ল্যাশ যখন গায়ে পড়ত ইয়েইইই করে চিল্লাইয়া কইতাম আহা ছবি তে উইঠা গেসি। একটু বড় হয়ে “মাননীয় স্পিকার” হয়ে গেসিলাম যখন জানলাম ‘ফ্ল্যাশ পড়লে হবে না ফ্রেমেও থাকতে হবে’। তখনকার দিনে মনে হয় এরকম যারা ভাবতো তাদের এনালগ বলদ বলা হত। প্লিজ আমাকে বলদ ভাববেন না। আগের পোস্টের কারনে এমনিতেই এনটিটি জটিলতায় আছি।
এখনকার দিনে কিছু মানুষকে আবার ডিজিটাল বলদ বলা হয়। সেদিন ফেইসবুকে একটা স্ক্রিন শট দেখলাম যেখানে একজন বাবা দিবসে পৃথিবীর সব বাবাকে ওয়িশ করে লিখেছে “হ্যাপি ফাদারস ডে টু অল মাই ফাদারস”। নিঃসন্দেহে ডিজিটাল বলদ। আবার ‘ডেস্পারেইটলি সিকিং’ পেইজে একজনে লিখছে সে আইফোন কিনবে কিন্তু কোন ব্র্যান্ডের কিনবে বুঝতে পারতেসেনা।
আজ বহদ্দারহাট পুকুর পাড় দিয়ে আসার সময় এক পোলা আমারে দেইখা খুব অনুনয়ের সাথে আমার হাতে তার দামি মোবাইল খানা দিয়ে বলল ‘ভাই পুরা পুকুরটা সহ নিয়ে আমারে একটা সেলফি তুলে দেন না’। পুরাই স্পিকার হয়ে গেলাম।আমি তুইলা দিমু এটা আবার সেলফি হয় ক্যামনে!!! যাহোক তার কথা ধরতে পাইরা পুরা পুকুর তো নিলাম। সাথে পুকুরের আরেক পাড়ে এক পাশে একটা বলদ আর একপাশে পুলাপাইন ফুটবল খেলতেসে তাও নিলাম। মোবাইল খানা তার হাতে দিয়া ‘কইলাম দেহেন পুকুর না শুধু ওই পাশে একটা বলদ আছে তাও নিলাম আর ফুটবল ও নিলাম। আপনে চাইলে এটার নাম “বলদাফি” দিতে পারেন অথবা “বালফি” ও দিতে পারেন’। তবে সে মাননীয় স্পিকার হইল কিনা বুঝি নাই। কারন সে হাসতেসিল।
ডিজিটালের বলদের কথা বলতে বলতে ডিজিটাল সাইন এর কথা মনে পরে গেল। চট্টগ্রামে একটা বিখ্যাত হোটেলের নাম ‘PENINSULA’ । রাতে দেখলাম ওই হোটেলের নামটা লাল লাইটে জ্বলে থাকে। বিশাল বিশাল অক্ষর হওয়াতে দূর থেকে খুব সুন্দরভাবে দেখা যায়। একবার এটা জ্বলছিল। কিন্তু মাঝখানে দুইটা বর্ণের লাইট নষ্ট হয়ে গেসিলো। PENI এর পরে আরেকটা N এবং S এর পরে U কোনরকমেই জ্বলে না। এরপরে হোটেলটার নাম কি হইয়া গেসিল সেটা আমি পড়ে দেখতে পারিনি হাতে সময় না থাকার কারনে।
একজন ডিজিটাল মুরুব্বী সেদিন এক দোকানে গিয়ে বললেন “আমারে একটা থ্রিজি সিম দেন তো”।দোকানি জিগাইল “থ্রিজি সিম দিয়ে কি করবেন”। চাচা বলেন উনি নাকি বিদেশে উনার ছেলের সাথে ভিডিও কল দিয়ে কথা বলবেন। তা দোকানি কোন মোবাইল দিয়ে কথা বলবেন জিজ্ঞেস করতেই চাচা তাঁর হাতের মোবাইল খানা দেখায়া বললেন “কেন এইডা দিয়া ভিডিও তে কথা কমু!!!”
চাচা মিয়ার মোবাইল খানা ছিল ‘নকিয়া১১০০’
পোস্ট লিখতে লিখতে আমার মোবাইলে একটা ডিজিটাল কল আসছে। ওহ বৃষ্টি কল দিসে। হে আবার ভিডিও কল দেয়না। বলে ভিডিও দেখে কলে আবেগ থাকে না। ভালবাসার মানুষের সাথে ভিডিও কলে কথা বলতে নেই। খালি এদিক ওদিক চোখ যায়। অডিও কলে ফোন থাকে কানে আর কথা আসে মন থেকে। কানে কানে কথা আবেগ বাড়ায় আর মনে মনে কথা ভালবাসা পোক্ত করে।
যাই এই বেলা মন থেকেই কিছু কথা বলে আসি
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:০৬