বৃষ্টি আমার চোখের পাতা ছুঁয়েছিল গত বৈশাখে বৃষ্টি- প্রথম পর্ব
বৃষ্টিকে আজকাল তেমন বাইরে যেতে দেখি না। রমজান মাসে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় মনে হয় বের হয় না। যতটুকু জানি শপিং টপিঙের পোকাও তেমন সে নয়। তবে প্রতিদিন নিয়ম করে ছাদে উঠতে সে ভুল করে না। ছাদের দক্ষিন দিকে তার বাবা তার জন্য এক বিশেষ চেয়ারের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। সে চেয়ারে বসে উত্তর দিকে মুখ করে অদূরে এক চিলেকোঠার দিকে প্রতিদিন সে তাকিয়ে থাকে। আজকাল আমারও কিছুটা সাহস বেড়ে গেছে। বিকেলে আমিও ছাদে উঠা শুরু করেছি। আসলে কি এক অজানা টানে আমাকে ছাদে নিয়ে যায়। অদূর সেই চিলেকোঠার ছাদের উপরে একটি শালিক বসে রয়েছে। আমাকে দেখলে বৃষ্টির চেহারায় একটা অদ্ভুত ধরনের বিরক্তি খেলা করে যেন মনে হয় পার্কে অপেক্ষায় বসিয়ে রাখা প্রেমিকা তার প্রেমিককে দেখলে অপেক্ষার বিরক্তিতে যে ভাব করে।
-এক শালিক দেখলে কি হয় জানেন?
-না।
-জোড় শালিক দেখলে কি হয় জানেন?
-না।
-আপনি ছাদে কেন আসছেন জানেন?
-না।
-আচ্ছা আপনার ডিকশনারিতে না শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ নাই মনে হয়!!
-না আছে।
-তাহলে সবসময় না না করেন কেন? বিরক্ত লাগে জানেন না? খলিল ভাইকে দেখছেন আমার সব কিছুতে কেমন হ্যাঁ হ্যাঁ করে!!!!
খলিল ভাই। যাকে বৃষ্টি দুই টেকো ভাই বলে। তবে একসময় রিকশাওয়ালা ভাই বলে ডাকত। কারন বৃষ্টি বাসা থেকে বের হলেই উনার কাজ ছিল তাকে রিকসা ঠিক করে দেয়া। তবে বৃষ্টি এক এক সময় এক এক নামে ডাকে খলিল ভাইকে। ভাই এলাকার শেয়ানা ঘোচের ছেলে হলেও বৃষ্টি সামনে পড়লে উনি সুবোধ বালক হয়ে পড়েন।এলাকায় গায়ে পড়ে সমাজ সেবক হিসেবে পরিচিত। আমি একসময় খুব ভয় পেতাম। তবে যেদিন উনি আমার সামনে সাক্ষাৎ ধরা খেলেন এর পর থেকে আমি উনাকে ভয় পায়না। খলিল ভাই কোথায় লেখাপড়া করেন জিজ্ঞেস করার পর উনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ডিপার্টমেন্ট এর যে ইয়ারে পড়ে বলেছিলেন দুর্ভাগ্যক্রমে আমি সেই ডিপার্টমেন্ট এর সেই ইয়ারে পড়তাম। এর পর থেকে উনিও লজ্জায় তেমন গায়ে পড়ে আমার সাথে কথা বলতে চান না। কোন একদিন বৃষ্টি বাসার নিচে দাঁড়িয়ে দারওয়ান কে খুঁজছিল শ্যাম্পু কিনে আনার জন্য। শেষে খলিল ভাইকে পেয়ে ১০ টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেছিল ২ টাকা দামের ৫ টা হেড অ্যান্ড শোলডার শ্যাম্পু এনে দিতে। সেদিন থেকে বৃষ্টি খলিল ভাইকে দুই টেকো ভাই বলে ডাকে। তবে পরিবর্তনশীল বিধায় এই নামও পরে পরিবর্তন হতে পারে।
-দেখেছেন খলিল ভাই আমার সব কথা কেমন শুনে?? শুধু আপনিই না না করেন। আপনিই দেখেন না। আপনিই বুঝেন না কোনকিছু।
বৃষ্টি আজকাল আমাকে পরীক্ষা করা শুরু করেছে। পরীক্ষা ব্যাপারটা আমার কেন কারো পছন্দ না। ছোটবেলায় পরীক্ষার কথা শুনলে গায়ে জ্বর হয়ে যেত। আর মনের পরীক্ষা!!! সেতো আরও কঠিন। না আর বেশি সময় এই পরীক্ষা দিব না ভাবছি। এই আষাঢ় টা যাক। না এই বর্ষা টা যাক। সামনের শরতে কোন একদিন আকাশের সাদা মেঘের ভেলার দিকে তাকিয়ে বলে দিব---
"চল, নীলাকাশের ওই সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে হারিয়ে যায় দূর নীলিমায়!!!"
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:৩৭