রাঙ্গামাটির রিজার্ভ বাজার লঞ্চ ঘাট থেকেই শুরু হয় আমাদের রাঙ্গামাটি ভ্রমণ। সেখানে আগে থেকেই ইঞ্জিন চালিত নৌকা ভাড়া করা ছিল। বেশ ভালই ছিল। গন্তব্য রাজবন বিহার এবং চাকমা রাজবাড়ি। সময়ের অভাবে সেদিন এ দু'টো জায়গাই ঘোরা সম্ভব ছিল। কারণ যাত্রা শুরু করতে আমাদের অনেক দেরী হয়ে যায় এবং বলা হয়েছিল সন্ধ্যার আগে ফিরে আসতে হবে। আনুমানিক দুপুর তিনটার দিকে আমাদের নৌকা কাপ্তাই লেকের উপর দিয়ে ভাসতে শুরু করে। প্রথমেই যে বিষয়টি আমাদের বিরক্ত করে তুলেছিল, সেটি ছিল ইঞ্জিনের ভটভট শব্দ। কান একদম ঝালা-পালা। নৌকা যখন আস্তে আস্তে বাজার ছেড়ে লেকের জলের বুকে যাচ্ছিল, ততোক্ষণে ঐ শব্দ আমাদের সহ্য হয়ে গেছে। কারণ চারিপাশে বিশাল জলরাশি, খোলা আকাশ আর সুউচ্চ পাহাড়সারি মন্ত্রমুগ্ধের মতো আমাদেরকে তাদের কাছে টেনে নিয়ে গিয়েছিল। আমরা হারিয়ে গিয়েছিলাম প্রকৃতির মাঝে।
হারিয়ে গিয়েছি, এইতো জরুরি খবর
অবাক দুই চোখে, ছায়া কাঁপে ভয় অভিমানে
হারিয়ে যাওয়ার নিয়ম নেই এখানে…………..
নৌকায় উঠে চলে, কিছুক্ষণ ফটোসেশন। পাশ দিয়ে বয়ে চলা আদিবাসীদের ছোট ছোট নৌকাগুলো দেখতে খুবই সুন্দর। তাই ছবি তুলে রাখা।
০১। ছায়া।
০২। নির্মল হাসি।
০৩। খোলা আকাশ।
০৪। বিশাল জলরাশি।
এরপর নৌকা যতই এগিয়ে চলে, আমরা ততই বিমোহিত হচ্ছিলাম। চারিপাশের জলরাশি আর খোলা আকাশের মাঝে নিজেদের অন্য ভুবনের বাসিন্দা মনে হল। যেখানে নেই কোন, ব্যক্তিজীবনের চাপ কিংবা দায়বদ্ধতা। সারা বছরের ব্যস্ততাকে টা টা বায় বায় বলে, প্রকৃতির অতল গহ্বরে নিজেকে বিলিয়ে দেয়া। শেষ বিকেলে রোদের তাপ থাকা সত্ত্বেও সবার মনে এক অদ্ভুত স্নিগ্ধতা ছুঁয়ে যাচ্ছিল। এছাড়া লেকের দুইপাশে সবুজের সমারোহ, পাহাড়ী বন বা বাগান এবং আদিবাসীদের জীবন ধারাও দৃষ্টিকে যথেষ্ট আর্কষিত করে তুলেছিল। কারণ বহুদিন পর এমন সব দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য স্বচোখে দেখার সুযোগ হল।
০৫। আদিবাসীদের জীবন।
যা হোক, এভাবে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক কাপ্তাই লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে পৌঁছে যাই বাংলাদেশে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বৃহত্তম বিহার রাজবন বিহারে। এখানে রয়েছে দেশের বৌদ্ধসম্প্রদায়ের অন্যতম শীর্ষ ধর্মীয় গুরু শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাথের (বনভান্তে) সংরক্ষিত মরদেহ।
এখন, কিছু ছবি হয়ে যাক।
০৬। রাজবন বিহারে ওঠার সিঁড়ি।
০৭। মন্দিরের সন্মুখভাগ।
০৮। ভাগ্নে ও হাতি।
০৯। শ্রদ্ধা ও ভক্তি।
১০। রাজবন বিহার।
১১। মন্দিরের ঘন্টা।
১২। মন্দির।
১৩। স্মৃতিস্তম্ভ -০১।
১৪। স্মৃতিস্তম্ভ -০২।
১৫। সময়ের অভাবে ক্যাপশন সংগ্রহ করা হয়নি।
১৬। সাত স্বর্গ।
১৭। মন্দির ঘুরে আবার নৌকায় ওঠা।
এরপর আমাদের মাঝি যে পুরাতন রাজবাড়িতে নিয়ে গেল, সেটি চাকমা রাজবিহার নয়। বরং সেটি ছিল চাকমারাজ রাজা ভুবন মোহন রায়ের রাজবাড়ি। নৌকার ঘাট থেকে জমিদার বাড়িতে ওঠার সিঁড়ির মাঝে কোন পাড় বা ভাল ব্যবস্থা ছিল না। তাই মহিলাদের উঠতে একটু বেগ পেতে হয়েছে। তবে মাঝির সহায়তায় কোন রকম সমস্যা হয়নি।
১৮। রাজবাড়িতে ওঠার সিঁড়ি।
সন্ধ্যা হয়ে আসছিল, তাই আলোর স্বল্পতার কারণে বেশী ঘুরতে ও ছবি তুলতে পারিনি। অবশ্য সেখানে দেখার তেমন বিশেষ কিছু ছিল না। একটি/দুইটি বাংলো, দুইটি স্মৃতিস্তম্ভ এবং ভাঙা-চুঁড়া জায়গা। যা যত্নের অভাবে আগাছা আর জঙ্গলে পরিণত হয়ে গেছে। আমরা সেখান থেকে কিছু পাতা বাহারের গাছও তুলে নিয়ে আসি। মজা করার জন্য।
১৯। রাজা ভুবন মোহন রায়।
২০। রাণী তাতু রায়।
তবে সবচেয়ে অবাক করার বিষয়, সেখানে রয়েছে চাকমা রাজবিহার পালি কলেজ ও পরীক্ষা কেন্দ্র। ছাত্র-ছাত্রীরা কতটা না কষ্ট করে এখানে এসে পড়াশুনা এবং পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ! সন্ধ্যার কারণে আর ভিতরের রুমগুলো দেখা হল না।
২১। চাকমা রাজবিহার পালি কলেজ ও পরীক্ষা কেন্দ্র।
এবার হোটেলে ফিরে যাবার পালা। সবাই একে একে নৌকায় গিয়ে ওঠে যায় এবং সন্ধ্যার আলোতে লেকের মনোরম বৈচিত্র্যকে দর্শন করতে থাকি।
২২। মেঘ।
২৩। বয়ে চলা।
সবার চোখে-মুখে ফুঁটে উঠেছে ক্লান্তির ছাপ। দেহ একটু বিশ্রাম চায়। আজকের মতো ভ্রমণ শেষ। তাই হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হওয়া ও কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে যাওয়া। কারণ কাল সকালে সুবলং জলঝিরি ও রাঙ্গামাটি ঝুলন্ত সেতুতে ঘুরতে বের হবো।
আগামী পর্বে থাকবে সেখানকার ভ্রমণের কথা।
প্রথম পর্বটির লিংক:
ভ্রমণ পোস্ট: ঢাকা হতে রাঙ্গামাটি।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৪৮