somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্রমণ পোস্ট: ঢাকা হতে রাঙ্গামাটি।

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অনেকদিন ধরে লং জার্নি করা হয় না। এবার পূজোর ছুটিতে বড় বোন বলল, "যাবি নাকি, রাঙ্গামাটি।" আমিও দুম করে বলে ফেললাম, যাব। সামনে আবার ঈদের ছুটিও আছে। যাওয়া যেতে পারে। বোনের একটু কাজ থাকায়, অফিস থেকে আগেই ছুটি নিয়ে বের হয়ে গেলাম ০১.১০.২০১৪ তারিখে দুপুর ১.৩০ মিনিটে। সাথে বোন-দুলাভাইয়ের প্রাইভেট কার থাকার কারণে টিকিট পাওয়া, না পাওয়ার দুশ্চিন্তা ছিল না। B-) গন্তব্য নোয়াখালি জেলার নোয়াখালি সদর উপজেলা অর্থাৎ মাইজদি। সাথে আছে বড় বোন, ভাগ্নে, ভাগ্নের মামী এবং গাড়ির চালক। এখানে উল্লেখ্য, বড় বোন সরকারি এমবিবিএস চিকিৎসক এবং উনাদের (দুলাভাই সহ) পোস্টিং ওখানে।

যাত্রা পথে, খামার বাড়ি থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত প্রায় ৩৫/৪০ মিনিটের জ্যাম X(( ছাড়া বাকি পথটুকু প্রায় জ্যামহীন যেতে পেরেছি। মানে, বড় ধরনের কোন জ্যাম পাইনি। পথে দু'বার গ্যাস এবং হালকা নাস্তা করার জন্য বিরতি নিয়েছিলাম। ভ্রমণে অনেকদিন পর প্রথম যে দৃশ্যটি দেখার সুযোগ হল, সেটি ছিল শীতলক্ষ্যা ও মেঘনা নদীর সৌন্দর্য। শীতলক্ষ্যার জল কম থাকায় তাকে কিছুটা অপূর্ণ মনে হল। কিন্তু মেঘনার জল মোটামুটি স্বাভাবিক বলে, ওকে বেশ শান্ত মনে হচ্ছিল। তাই চট করে গাড়ি থেকেই তুলে নিলাম কিছু ছবি।

০১. ফ্রেশ সিমেন্ট কারখানা



০২. মেঘনা ব্রিজ



০৩. কাশফুল



এরপর, গাড়ি ছুটে চলে কুমিল্লার মহাসড়ক ধরে। কুমিল্লা সেনানিবাসের কিছুদূর অতিক্রম করলেই বুঝা যায়, পিছনে ফেলে এসেছি ঢাকার যানজট এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইডের বিষাক্ত পরিবেশ। !:#P দু'ধারের গাছ-গাছালির মনোরম দৃশ্য দেখতে দেখতে পথ চলা আর স্মৃতিতে কিছু জমিয়ে রাখা।

০৪. দূর-বহুদূর



০৫. একলা পাখি



০৬. কোরবানীর জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গরু




রাত প্রায় ৮টার দিকে পৌঁছে গেলাম, বোনের বাড়ি। সেখানে যেয়ে কিছুক্ষণ আড্ডা দেই ও ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করি। কিন্তু জার্নির ক্লান্তির কারণে তাড়াতাড়ি রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়ি। পরদিন অষ্টমী পূজো ছিল এবং বোনের শ্বাশুড়ীর কি জানি একটা পূজো দেবার কথা। আমি সেসব জানি না। তাই সেদিন আর বের হইনি। বরং একটু হাঁটা-হাঁটি করে সময় পার করে দেই।

পরদিন অর্থাৎ ০৩.১০.২০১৪ তারিখে ভোর ৫টার দিকে ভাড়া করা মাইক্রো নিয়ে বের হয়ে যাই রাঙ্গামাটির পথে। ভ্রমণ সঙ্গী হিসাবে এবার যোগ হয় আরো চারজন। দুলাভাই, উনার মা, ছোট বোন এবং একজন বন্ধু। সাথে মাইক্রোর চালক। ভোর বেলা আলো-আধারীর ঠাণ্ডা পরিবেশ। মাইক্রো ছুঁটে চলে জ্যাম ছাড়া। এরই মধ্যে আগমন ঘটে সূর্য মামার। কানে ধ্বনিত হচ্ছে হালকা শব্দে গান। চট্টগ্রামের মীরসরাই এসে কিছুক্ষণের জন্য জ্যামে পড়তে হয়। তবে মাইক্রো চালকের বুদ্ধিমত্তার কারণে স্থির হয়ে থাকা দূর পাল্লা গাড়িগুলোর বাম পাশ দিয়ে মাইক্রো ভালই কেঁটে যায়। সাবাশ। :)

০৭. দূরের পাহাড়




আনুমানিক সকাল ১১.৪০ মিনিটে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট সড়কে আসলে ভুলে যাই, ভোর রাতে ঘুম থেকে উঠার সকল কষ্ট আর ক্লান্তি। চোখ আর মন ভরে যায় আঁকা-বাঁকা পথ, ছোট ছোট পাহাড়, ঝিল, খোলা মাঠ এবং সবুজ দেখে। সবার মধ্যে কৌতূহলোদ্দীপক মনোভাব ফিরে আসে। প্রকৃতির স্নিগ্ধ রূপে সবাই সিক্ত হয়ে যায়। মাইক্রো থেকেই চলে অবিরাম ছবি তোলা। ভুল করে, চালককে গতি কমাবার কথা বলতেই ভুলে যাই। তাই অনেক সুন্দর ছবি মিস হয়ে গেল। |-) তবে আমার সাট্যার থেমে থাকেনি।

০৮. ঝিল ০১



০৯. ঝিল ০২



১০. Bhatiary Golf & Country Club



১১. ঝিল ০৩



বিএসএ এলাকা দিয়ে চলা আর ছবি তোলা। তাই সামনে পুলিশ চেক পোষ্ট আমাদের মাইক্রোকে থামিয়ে দেয়। পরিচয় জানতে চায় এবং বলে এখানে ভিডিও করা নিষেধ।X(( আমি বলি, ভিডিও নয় ছবি তুলছি। তবে, কোন সমস্যা হয়নি। কিন্তু আমার ছবি তোলা কি আর থামে ! :P

১২. চট্টগ্রাম বিএসএ এলাকা



১৩. ছুটে চলা



১৪. চট্টগ্রাম পুলিশ চেক পোষ্ট



১৫. বিদ্যুৎ কেন্দ্র




এরপর চট্টগ্রামের হাটহাজারীর চিশতিয়া সিএনজি স্টেশন থেকে গ্যাস নেওয়া এবং সকাল থেকে জমে ওঠা ভরকে হালকা করতে নেমে যাওয়া। হাটহাজারীর বাজারে স্থানীয় কোরবানী হাটের কারণে ছোট ছোট জ্যামে পরতে হয়। এ পথটুকু পার হয়ে রাঙ্গামাটির রাস্তায় উঠলে গাড়িকে আর থামাবার প্রয়োজন হয়নি। বরং সরু সরু পথ দিয়ে চলা, গ্রাম্য বাজার, কর্মঠ মানুষ, সেগুন গাছের সারি আর সবুজে ঘেরা বিশাল বিশাল পাহাড় দেখতে দেখতে ছুটে চলা। আঁকা-বাঁকা পথ আমাদের মনের ওলিতে-গলিতে আমুদে ভাব এনে দেয়।

১৬. আঁকা-বাঁকা পথ




রাঙ্গামাটি রাস্তার প্রায় একদম শেষ ধারে হোটেল সৈকতে গিয়ে উঠি। মাঝারি মানের হলেও খারাপ না। আমরা তিনটি কামরা ভাড়া নেই। দু'টি এসি আর একটি নন-এসি। এ হোটেলের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল বাজার, খাবারের দোকান সব কাছে। এরই মধ্যে রাসেল নামক ছেলের সাথে আমাদের পরিচয় হয়। সেই হোটেল এবং ইঞ্জিন চালিত নৌকা রির্জাভ করে দেয়। এক্ষেত্রে বলে নেয়া ভাল, ছেলেটি কোন প্রকার চালাকি করেনি বা আমরা তাকে পাত্তা দেইনি। নিজেরা আগে দেখে, তারপর যা সিদ্ধান্ত নেবার নিয়েছি।

ফ্রেশ হয়ে তাইপিং হোটেলে দুপুরের খাওয়া পর্ব শেষ করি। এ হোটেলের নামটি আগেই কোন এক সামুর ব্লগারের কাছ থেকেই জেনে নিয়েছিলাম। খাবারের মান ভাল। এরপর আমরা রাঙামাটির রিজার্ভ বাজার লঞ্চ ঘাটে চলে যাই। সেখানে আগে থেকেই ইঞ্জিন চালিত নৌকা ভাড়া করাই ছিল। বেশ ভালই ছিল। গন্তব্য রাজবন বিহার এবং চাকমা রাজবাড়ি।


১৭. রাঙামাটির রিজার্ভ বাজার লঞ্চ ঘাট



১৮. যাত্রা শুরু




ছবি আর বর্ণনা মিলে পোস্ট মনে হয়, বড়ই হয়ে গেল। তাই আজ এই পর্যন্তই। আগামী পর্বটি হবে রাঙ্গামাটিতে ঘোরাঘুরিকে কেন্দ্র করে।

অপারগতা: ভ্রমণ পোস্ট বলতে যা বুঝায়, এটা হয়ত কোন ভাবেই তা হয়নি। তবুও স্মৃতিস্বরূপ আমার ব্লগে রেখে দিলাম। এটা নিতান্তই আমার ব্যক্তিগত কথোপকথন করা।


...........................♦ ♦ ♦ ............................
৪২টি মন্তব্য ৪২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×