এই যে ভাই, সিমটা মনে হয় আপনার?
পাশে বসে থাকা যাত্রীটি তার প্যান্টের পকেটে হাত বুলিয়ে, উনার স্টপিজে বাস থেকে নামার মুহূর্তে বলে উঠল- না, না, ওটা আমার না।
সিটের মধ্যে পড়ে থাকা সিমটা জানালা দিয়ে ফেলে দিতে নিয়েও কি মনে করে তাড়াহুড়ায়, শার্টের পকেটে রেখে দিলাম! কারণ, এখন আমার নামার স্টপিজ এসে গেছে।
আজ রিপোর্টটা শেষ করে আসতে বেশ রাত হয়ে গেছে। মোবাইলটা পকেট থেকে বের সময় দেখলাম। রাত ১২.৪৬মিনিট। শীতের রাত বলে রাস্তায় তেমন কোন লোকজন নেই। শুধু কিছুক্ষণ পর পর বাস ছুটে যাচ্ছে আর রাস্তার ওপাশে ট্রাকের জ্যাম শুরু হয়ে গেছে। সারাদিন চলতে পারেনি, তাই এখন সবগুলো হিংস্র গতিতে ছুটে যাবার অভিপ্রায়। আশেপাশে দু’একটা চায়ের দোকান খোলা আছে। কিছু বৃদ্ধ লোক রাস্তার পাশে গোল হয়ে বসে, আগুন জ্বালিয়ে অনুষ্ণ দেহকে উত্তাপিত করার চেষ্টা করছে।
স্টপিজ থেকে আমার বাসার দূরত্ব পায়ে হেঁটে মিনিট সাতেক হবে। আমি সাধারণত রিকশা না নিয়ে হেঁটেই যাই। একটু হাঁটা ভাল। শরীর ও মন দুটোই সতেজ থাকে। পাশে চায়ের একটি দোকান থেকে সিগারেট নিয়ে, ক্লান্ত দেহে হাঁটছিলাম।
এই যে, শুনছেন, শুনছেন !!!
হঠাৎ, পিছন থেকে আর্তনাদ কণ্ঠে একটি মেয়ের ডাক শুনতে পেলাম।
আমি পিছন ফিরি দেখি, না ! কোন মেয়ে তো দূরের কথা, কোন মানুষই নাই। মনে মনে ভাবলাম, আজ যে ক্রাইম স্টোরিটা শেষ করলাম, সেটি ছিল একটি মেয়ের। তাই হয়তো এটা আমার হ্যালুসিনেশন !
যা হোক, কোন কিছু চিন্তা করার মতো এর্নাজি এখন নেই। তাই সোজা বাসায় গিয়ে, চুলোয় গোসল করার জন্য পানি বসিয়ে দিলাম। জানি রাত অনেক হয়েছে, তবুও গোসল করতে হবে। সারাদিন পত্রিকা অফিসের ঝামেলা আর শেষে ঐ রিপোর্ট জমার দেবার জন্য সম্পাদকের ফাঁপড় ! শরীর ম্যাসম্যাস করছে। চোখ দু'টো দিয়ে যেন, আগুনের বাষ্প বের হচ্ছে। শরীরে আর চোখে পানি ঢাললে যদি শান্তি হয়।
আহ! গোসল করার পর একটু আরাম লাগছে। খাওয়ার পর্বটা বাহিরেই শেষ করে এসেছি। তাই বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। একটা লম্বা ঘুম দরকার! কিন্তু কেন জানি হঠাৎ, ঐ সিমটার কথা মনে পড়ল। সোফায় ফেলে রাখা, জামার পকেট থেকে সিমটা বের করে আমার মোবাইল সেটে ঢুকালাম। গ্রামীণ ফোন কম্পানীর সিম। সিমটা তেমন পুরানো নয়। অন্যের জিনিসের প্রতি আমার কোন দিন আগ্রহ ছিল না বা ভবিষৎতেও হবে না। আমি কয়েকবার রাস্তায় টাকা পড়ে থাকতে দেখেছি। কিন্তু পরিবারের শিক্ষা আর নিজের বিবেক কখনো লোভী হতে দেয়নি।
সিমটি ফেলে দেবার সময় আমার স্টপিজ এসে যাবার কারণে অবচেতন মনে পকেটে রেখে দিয়েছিলাম। নেমে যাবার তাগিদে।
পাশে রেখে দেওয়া মোবাইল সেটটায় রিং বেজে উঠল।
শুয়ে শুয়ে চিন্তা করছিলাম। রিং টোনের শব্দে আঁতকে উঠলাম !
একটু দ্বিধা নিয়ে রিসীভ করলাম। নিজেকে ছোট মনে হচ্ছিল।
হ্যালো।
হ্যালো, হ্যালো, আমাকে ওরা মেরে ফেলেছে। ওরা আব্বুকে মিথ্যে বলেছে। আমি পালিয়ে যাই নি। আমাকে মেরে পোড়া বাড়ির পিছনে কবর দিয়ে রেখেছে।
ওপাশ থেকে, দ্রুত নিঃশ্বাসে কান্না মিশ্রিত ভয়ার্থ কণ্ঠে কথাগুলো বলে লাইনটা কেঁটে গেল।
আমি হ্যালো, হ্যালো... বলে চিৎকার করলাম। জানি তার আগেই লাইন কেঁটে গেছে।
কিছুটা সময় যেন, ঘোরের মধ্যে ছিলাম! বিশ্বাস হচ্ছিল না। আমি কি স্বপ্ন দেখছি! নাকি বিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞানে অপমৃত্যু হলো! মৃত মানুষ আমাকে ফোন করে বলে- উনাকে মেরে ফেলা হয়েছে!!!
সেটে নাম্বারটা চেক করলাম। কিন্তু এ কি! রিসীভ কল লিস্টে আননৌন নাম্বার দেখাচ্ছে!
*566# ডায়াল করলাম।
ব্যালেন্স ০.০০টাকা। কিন্তু মেয়াদ ১৮.০৪.২০৫১ !
জিপি সিম আমিও ইউস করি। তাই আমার মেয়াদটা মনে আছে। ২০১৫ পর্যন্ত। কিন্তু এটা দেখছি তার উল্টো! যা হোক, কল ব্যাক করবো তার কোন উপায় দেখছি না। ঐ সিমে টাকাও নাই, আর নম্বরতো পেলামই না!
কি আশ্চর্য! সিমে কোন নম্বর নাই। পুরা ফোন বুক খালি। ০/২৫০ !
একজন ক্রাইম রিপোর্টার হিসাবে জীবনে অনেক ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি। মারামারি, রক্ত, লাশ, মিথ্যের জুয়া, গুম আরো অনেক কিছু দেখতে হয়েছে। তাই ভয় কখনো আমাকে পেয়ে বসেনি। কিন্তু আজ শীতের রাতে মনে হলো, একটু ভয়ে কেঁপে উঠলাম।
না, ঘুমানো যাক। সকালে ঠাণ্ডা মাথায় সব হিসেব কষতে হবে। সিমটা চেইঞ্জ করে ঘুমাবার চেষ্টা করলাম !
**************
সকালে কাজের ব্যস্ততা আর রিপোর্টটি প্রকাশ হবার পর সম্পাদকের সাথে মিটিং থাকায়, কাল রাতের কথা তেমন মনে পড়েনি। এখন নিজের রুমে বসে সিমটির কথা মনে পড়ল। ব্যাপারটি নিয়ে কলিগদের সাথে আলোচনা করতে একটু সংকোচ হচ্ছিল। তারা আবার ফাজলামো বা মেয়েকে নিয়ে মজা করা শুরু করবে। বরং তার আগে নিজে একটু শিউর হওয়া দরকার। তাছাড়া ক্রাইম রিপোর্টার হিসাবে কলিগরা আমাকে সিরিয়াসই ভাবে। তেমন রসক ভাবে আড্ডা দেয়া হয় না। বাহিরে থাকা হয় বেশীর ভাগ। অফিসের পিয়নকে ডাক দেই।
কবির, এদিকে আয়।
জ্বী স্যার।
এখন তো লাঞ্চ। ভাত খেতে যাবি না?
জ্বী, যাব।
তাহলে তোর মোবাইলটা একটু দিয়ে যা, আমার সেটটা একটু প্রবলেম করছে। একটা কল করতে হবে। সিমটাকে চেক করার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিতে হল।
কবিরের সেটে সিমটা ঢুকিয়ে, টেবিলের উপর রাখা ফাইলটা পড়তে লাগলাম। না, কয়েক মিনিট হয়ে গেল। কোন কল আসছে না! আরো প্রায় ২০ মিনিট হল। কল আসে নি। মনে মনে স্বস্তির দ্বীর্ঘশ্বাস ফেললাম। মনকে শান্ত করলাম, হয়তো কাল বেশী পরিশ্রমের ধকলে উল্টা-পাল্টা চিন্তা করেছি!
কবির এসে পড়েছে। সিমটা খুলে, ওর সেট ওকে দিয়ে দিলাম।
কৌতুলবশতঃ সিমটা আবার আমার সেটে ঢুকিয়ে রাখলাম। কবির আসার সময় আমার খাবার নিয়ে এসেছে। তাই প্রচণ্ড ক্ষিধের জ্বালায় পেটকে শান্ত করার জন্য খেতে লাগলাম।
রিং টোনটা বেঁজে উঠল!!
অতর্কিতে বেঁজে উঠা শব্দে, মুখ থেকে তিন-চারটা ভাত ছিঁটকে পড়ে গেল।
না! আমাকে স্থির হতে হবে। মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে। সব সত্যকে সামনে নিয়ে আসতে হবে। আমি স্বাভাবিক ভাবেই রিসীভ করলাম।
হ্যালো! কে বলছেন?
হ্যালো! আমি টুম্পা। আমি আপনাকে কাল ফোন করে ছিলাম।
জ্বী। কিন্তু, আমি কি আপনাকে চিনি?
না। আসলে আমিও আপনাকে চিনি না। আমি অনেকদিন ধরে অনেক মানুষের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কেউই আমার কথা শুনতে পায় না।
বুঝলাম। কিন্তু আমি যে শুনতে পাচ্ছি! আর আপনার নাম্বারও তো দেখা যাচ্ছে না। আই মিন, আননৌন দেখাচ্ছে।
কিভাবে দেখবেন? আমি তো মৃত !
মানে !!
আরে, মানে বুঝলেন না। ১০/১২দিন আগে আমার বন্ধু আমাকে মেরে ফেলেছে।
তাহলে আপনি আমার সাথে কিভাবে কথা বলছেন?
কেন আপনি শুনেননি, অতৃপ্ত আত্মারা আমাদের আশে-পাশেই ঘুরে বেড়ায়! তাঁদেরকে সবাই দেখতে বা শুনতে পায় না। এই যে, আমাকে শুধু আপনিই শুনতে পাচ্ছেন!
তা, আপনি আমাকে কি বলতে চাচ্ছেন?
আমি চাই, আপনি আমার লাশটা খুঁজে বের করুন। যারা আমাকে মারল, তাদেরকে শাস্তি দেবার ব্যবস্থা করেন। আর আমার বাবা সত্যটা জানুক! তাহলে আমার আত্মা শান্তি পাবে।
আমি কিভাবে এটা করতে পারি?
আমার বাসার ঠিকানা দিচ্ছি। আপনি ওখানে গেলেই, বাকিটা বুঝতে পারবেন।
এক মিনিট। আমি কাগজটা নিয়ে নেই।
হ্যা বলুন।
জ্বী, ২৭১/বি-এম শান্তিনগর, দক্ষিণ পাড়া।
আমি কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই, লাইন কেঁটে গেল। যাই, এখনই ঘুরি আসি। ক্রাইম ক্রাইম গন্ধ পেলে, আমি আবার বসে থাকতে পারি না। সমাধান না হওয়া পর্যন্ত নিজেকে এলোমেলো মনে হয়।
*********
সরাসরি, টুম্পাদের বাড়িতে গিয়ে হাজির। একজন ক্রাইম রিপোর্টার হিসাবেই গেলাম। ফোনের ব্যাপারটি বললাম না। ওর বাবা, পরিচয় দেবার পর বসার ঘরে নিয়ে কথা বলল। উনি আমাকে যা বলল তা সংক্ষেপে,
“আমার মেয়ে, তার বন্ধু মিথিলার গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুর যাবার কথা বলেছিল। ওরা রাতেই ফিরে আসার কথা ছিল। আমি না করেছিলাম। কিন্তু আমার আদরের মেয়ের জোরাজুরিতে না করতে পারলাম না। মিথিলাকেও আমি মেয়ে হিসাবে জানতাম! ওরা, রাতে ফিরে আসেনি। আমি টুম্পাকে ফোন করি কিন্তু মোবাইল বন্ধ পাই। আর মিথিলার নাম্বার আমার কাছে ছিল না। পরদিন মিথিলাই ফোন করে বলে, টুম্পা নাকি তার এক ছেলে বন্ধুর সাথে পালিয়ে ইন্ডিয়া চলে গেছে। আমি থানায় ডাইরী করি। কিন্তু মিথিলার স্ট্যাটমেন্টের জন্য পুলিশ আমাকে তেমন সাহায্য করেনি। পুলিশ বলেছে, টুম্পা আর সে ছেলে নাম পরিবর্তন করে ইন্ডিয়া গেছে। ওরা ইন্ডিয়াতে বাংলাদেশের দূতাবাসে ছবি পাঁঠিয়েছে। সময় লাগবে।”
লোকটি কথা বলতে বলতে, চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি।
তা, আপনি মিথিলাকে ভাল করে জিজ্ঞেস করেছিলেন?
হ্যা, বাবা। কিন্তু ওর বাবার অনেক টাকা। শুনেছি রাজনৈতিকও করেন। সরকার মহলে বেশ জানাশুনা। তাই আমার মতো সাধারণ ঘরের লোকের পক্ষে তাদের সাথে পেরে উঠতে পারিনি।
বাবা, বিশ্বাস করো, আমার মেয়ে এমন না। আমি আমার মেয়েকে চিনি। সে যদি কাউকে ভালবাসত, আমাকে অবশ্যই বলত। ও আমাকে ছেড়ে পালিয়ে যাবার নয়। ওর মা মারা যাবার পর, আমি একাই ওকে অনেক স্বপ্ন নিয়ে মানুষ করেছি। আমার একমাত্র সন্তান ছিল, আমার ঐ মেয়েটি।
আঙ্কেল, আপনি শান্ত হবার চেষ্টা করেন। আমি দেখছি কি করতে পারি? উনার কাছ থেকে মিথিলার বাসার ঠিকানা আর মোবাইল নাম্বার নিয়ে আমি বাসায় চলে আসি।
সেদিন আমি আর সিম পরিবর্তন করি নাই। তাই টুম্পা সাথে কথা হয়নি। সকালে উঠে অফিসে ফোন দিয়ে বললাম, আমি একটা জরুরী এসাইনমেন্টের কাজে বাহিরে যাচ্ছি। দরকার পড়লে, ফোনে যোগাযোগ করতে।
এরপর, আমি সিমটা আবার ঢুকালাম। যথারীতি কিছুক্ষণ পর, কল আসে!
আমি খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলি, হ্যালো। আমি জানতাম কলটা আসবে।
ওপাশ থেকে বলে ওঠে- কি, আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে?
আচ্ছা আপনি বলছেন, আপনাকে মেরে ফেলা হয়েছে। অথচ আপনার বাবা বলল, আপনি নাকি আপনার প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গেছেন?
ওপর প্রান্ত থেকে হাসির শব্দ শুনা যায়। বেশ মিষ্টি রহস্যময় হাসি!
কি ব্যাপার, হাসছেন যে?
আমি প্রেমই করিনি আর প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গেছি!! তাই হাসলাম।
একটু পরিষ্কার করে বলেন।
তাহলে শুনুন, “আমাকে আমার বন্ধু মিথিলা প্রায় জোর করেই তাদের গ্রামের বাড়ির কথা বলে বিক্রমপুর নিয়ে গিয়েছিল। আমি যেতে চাইনি। একা বাহিরে যাওয়াটা আমারই পছন্দ না। মিথিলা আমার ছোটবেলার বন্ধু। তবে বেশ কয়েকবছর আগে তাদের অনেক টাকা হয়ে যাবার পর, সে জানি কেমন বদলে যায়। খারাপ খারাপ ছেলেদের সাথে মেলামেশা, উচ্ছঙ্খল জীবন আর ড্রাগ অ্যাডিকট্রেড হয়ে গিয়েছিল। তার কোন এক ড্রাগ ডিলার বন্ধুর শকুন চোখ পড়ে আমার দিকে। সে নরপিশাচ হয়তো মিথিলাকে বলেছিল, আমাকে তাদের হাতে তুলে দেবার জন্য। বিনিময়ে সে তার ড্রাগ পাবে। তাই মিথিলা বাড়ি যাবার নাটক করে, আমাকে তাদের গ্রামের বাড়ি নিয়ে যায়। কিন্তু সেখানে আগেই তার সেই ডিলার বন্ধু, সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে বসে থাকে। আমি দেখেই দৌড়ে আসতে চেয়ে ছিলাম। কিন্তু তারা আমাকে দেয়নি। আমি পারি নি।
তারপর তারা আমাকে জোর করে বেঁধে একটা ইনজেকশন দেয়। আমি কেমন যেন নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়ি! কোন শক্তি ছিল না। কিন্তু সব বুঝতে পারছিলাম। এরপর, তারা মানুষরূপি পশুর ক্ষুধা মেটাবার জন্য আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পশুগুলো আমাকে হায়নার মতো ছিঁড়ে-ফুঁড়ে খায়। শুধু খেয়ে তারা ক্ষান্ত হয়নি! আমাকে মেরে তাদের বাড়ির একটু দূরে একটা পোড়া বাড়ির পিছনে কবর দেয়। আর বাসায় গিয়ে বলে, আমি নাকি পালিয়ে গেছি! আমি ছাড়া আমার বাবার আর কেউ নেই। তাই আমি উনাকে কখনো কষ্ট দেইনি। আমি চাই, আমার বাবা সত্যটা জানুক। ওদের বিচার হোক আর আমার আত্মা শান্তি পাক।”
আমি গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম। মনে হচ্ছিল, ঘটনাটিকে আমি দেখতে পারছি। ইচ্ছে করছিল, সেই ক্ষুধার্ত জানোয়ার হায়নাগুলোকে গুলি করে মারি।
আপনি আমাকে মিথিলাদের গ্রামের বাড়ির ঠিকানা বলেন।
ঠিকানাটি সংগ্রহ করে, আমি ফোন রেখে দেই।
এরপর আমার এক আইজি বন্ধুকে ফোন দিলাম। মিথিলাদের বাসার ঠিকানা দিয়ে সেখানে আমার সাথে মিট করতে বলি।
পথে ফোনে আইজি বন্ধুটিকে আমি সংক্ষেপে সব কাহিনী খুলে বলি। যেহেতু আমি ক্রাইম দুনিয়াতে থাকি, আমার বন্ধু সব বিশ্বাস করেছিল।
*************
ঝামেলা একটু কম হয়, মিথিলার বাবা ব্যবসায়ীক কোন এক কাজে ঢাকার বাহিরে গেছে। তাই ফোনে তিনি তেমন সুবিধা করতে পারলেন না। কারণ বন্ধুটি সবসময় আমাকে বেশ সাহায্য করে।
এরপর মিথিলাকে নিয়ে, আমি আর আমার বন্ধু ঐ গ্রামের বাড়ির ঠিকানায় চলে যাই। মিথিলাকে নিয়ে আসার একটি উদ্দেশ্য ছিল। যদি লাশ সনাক্ত করতে পারি, সে আরও ভীত হযে যাবে। তাহলে ছেলেগুলোকে খুঁজে পাওয়া সহজ হবে। পুরো ঘটনাটির পিছনে এই মিথিলাই দায়ী। তাই শাস্তি তাকেও পেতে হবে।
হ্যা, তাদের বাড়ির কিছু দূরে আমরা এবটি পোড়া বাড়ির সন্ধান পাই। পিছনে কবরের মতো একটি গর্ত পাওয়া যায়। স্থানীয় পুলিশ দিয়ে লাশ খুঁড়ে বের করার কাজটি আমার বন্ধুই করে। এরপর আস্তে আস্তে, মিথিলা সব ঘটনা খুলে বলতে বাধ্য হয়। উন্মোচন হয় সত্য ইতিহাস। জানা যায়, ঐ সকল নপুংসক ছেলেদের নাম এবং ঠিকানা। যদিও একজনকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। কারণ, সে আগেই নেশার ফাঁদে মারা গিয়েছে। টুম্পার বাবা অন্তত তার মেয়ের হত্যাকারীর বিচার পেয়েছে।
টুম্পার লাশ পাবার পর, আমি আর কোনদিন তার ফোন পাইনি। বহুবার ঐ সিমটা ঘণ্টার পর ঘণ্টা রেখে, অপেক্ষা করেছি। না, কোন কল আসে নি। বরং, এখন *566# ডায়াল করলে unknown application দেখায়! সাইন্স আর যুক্তি দিয়ে আমি আর তার ব্যাখ্যা খুঁজতে চাইনি। তারচেয়ে অতৃপ্ত এক আত্মা শান্তি পেয়েছে, ফিরে গেছে তাঁর ভুবনে এতেই আমার শান্তি।
ও, একটি কথা বলা হয়নি। আমি কিন্তু আমার সেই বন্ধুকে সিমের কথাটি বলিনি। লুকিয়ে গিয়েছিলাম।