যুগের হালচাল ও একটি প্রেমের গল্প।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
ছিঃ, ছিঃ, তুমি আজও জিন্স প্যান্ট আর টি-শার্ট পড়ে আসো নি! তোমাকে না, কাল রাতে ফোনে বারবার বললাম, আমার দেওয়া কাপড়গুলো পড়ে আসতে। ফেসবুকে চ্যাট করার সময়ও তো বললাম! তারপরেও তুমি এই রকমভাবে চলে আসলা?
চোখ গরম করে, হাঁপাতে হাঁপাতে কথাগুলো বলেও যেন শেষ হয়নি, এমন একটা বিরক্তিকর ভাব নিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে নন্দি।
দূর্জয়, যথারীতি হেসে ওঠে। হোঁটের কোণে হালকা দুষ্টমি হাসি। নন্দির এসব কথাবর্তায় খুব মজা পায় সে। কারণ, অনেকবার নন্দির এই কথা শুনবে বলে কখনো শোনেনি। বলা যায়, কথা দিয়েও রাখেনি।
আচ্ছা! এই প্রচণ্ড ভ্যাঁপসা গরমে মানুষগুলো এত মোটা জিন্স প্যান্ট পড়ে কিভাবে? যদিও কিছু পাতলা ধরণের জিন্স প্যান্ট বাজারে পাওয়া যায়। তবে তা সংখ্যায় অনেক কম। বাসের মধ্যে যখন জ্যামে বসে থাকি কিংবা বাদুড় ঝোলা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি তখন ভাবি পাশের লোকটি বা আজকালের ইয়াং জেনারেশনের ছেলেটি যার সারা শরীর দিয়ে ঘাম পড়ছে আর জিন্স প্যান্ট হাঁটুর উপর ধরে টান দিয়ে বাতাস বের করার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে!! দেখে হাসি পায়। এত গরমের মধ্যে জিন্স প্যান্ট পরার কারণ খুঁজে পাই না। আজকাল আবার কিছু উঠতি যুবকের নতুন ফ্যাশান হয়েছে। তারা গায়ে ঝুলাবে একটা পাতলা টি-শার্ট নতুবা টাইট ফিটিং শট শার্ট যা কোন রকমে কোমড়কে স্পর্শ করে করে! আর জিন্স প্যান্টটি এমনভাবে পড়ে যেন তাদের পশ্চাৎ ভাগের কিঞ্চিৎ অংশ ভালভাবেই দর্শন হয়!! লজ্জা লাগে যখন দেখি, তা দেখে পাশের কোন মেয়ে লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে নেয়। খারাপ লাগে যখন শুনি, পাশের কোন বয়স্ক লোক অবজ্ঞাসূচক বাক্য ছুড়ে।
অবশ্য যারা পড়াশুনার গণ্ডি পেরিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করেছে তারা কিন্তু সেগুলোকে মর্জিত এবং রুচিসম্মত ভাবেই ব্যবহার করে। বলতে পারেন, কেতা-দুরস্ত হয়ে অফিস পাড়ায় যেতে হয় সেই নিয়মের বলয়ের কারণে! যত সমস্যা করে এই হাল ফ্যাশান যুগের উঠতি যুবক-যুবতীরা! মাঝে মাঝে লজ্জায় নিজের মাথা হেড হয়ে যায়।
কিছুক্ষণ পর নন্দিই চেচিঁয়েই উঠে, তা এখানে কি হাঁ করে দাঁড়িয়ে থাকবা নাকি যাবা?
আমি কিছু বলছি, না তুমি কিছু বলতে দিচ্ছ? একা একাই তো পো পো করে যাচ্ছ।
চুপ, একদম চুপ। একটাও কথা বলবে না। যাও, রিকশা নাও।
রিকশায় বসে, নন্দিকে ভাল করে দেখল দূর্জয়। এতক্ষণের চ্যাঁচামেঁচিতে উপরের ঠোঁটে আর নাগের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। আজ মনে হয়, নন্দিকে একটু বেশীই সুন্দর লাগছে। হালকা রঙ্গের একটি শাড়ি আর তার সাথে মিলিয়ে কানে ছোট পাথরের দুল পড়েছে। বড় ঘরের মেয়ে নন্দি। তাই বলে বড়লোকী কোন ভূত তার মাথায় চেপে বসেনি। আর পাঁচটা মধ্যবিত্ত মেয়ের মত জীবনযাত্রা। মারসিডিস গাড়ি দিয়ে ক্যাম্পাসে যাওয়া-আসা করত না। পোশাক, চাল-চলন এবং কথাবার্তায় আছে ভদ্রতার ছাপ। প্রথমে দেখে কেউ বিশ্বাস করবে না, যে তার বাবার প্রচুর টাকা আছে।
নন্দি একটু ঠাণ্ডা হবার পর, দূর্জয় নন্দির একটি হাত তার দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বলে - আচ্ছা, আমি কি কখনো তোমাকে ক্যাটরিনা বা দিপীকার মত মিনি স্কাট পড়ে আসতে বলেছি? না, তুমি কখনো ঐ সব পড়বে? তাহলে আমাকে কেন বল?
মাঝে মাঝে যখন দেখি, মেয়েরা জিন্সের সাখে বোরখা পড়ে, তখন হিসেব মিলাতে পারি না। তারা আসলে কোন অনুশাসন অনুসরণ করে কিংবা তাদের অভিভাবকও কেন এগুলোতে সম্মতি দেন? আজকাল আবার কিছু মেয়েদের দেখা যায় স্কিন টাইট জিন্স প্যান্ট পড়ে। দেখে মনে হয়, আঠার মত চামড়ার সাথে লেগে থাকে। ভাবতে আবাক লাগে, কিভাবে তারা এইগুলো পড়ে আর খুলে? শুনেছি, বাসায় গিয়ে অন্য আরেক জন দিয়ে কিংবা বিভিন্ন রকমের শরীরের কসরত করে টেনে-হিঁচড়ে কষ্ট করে খুলে। আরে বাবা, এত কষ্ট করে অন্য জনের সাহায্য নিয়ে প্রতিদিন খুলতে লজ্জা করে না! ওদিকে উত্তরা, বনানী, গুলশান এবং আরো কিছু জায়গায় হাই সোসাইটিতে, আধুনিকতার ছোঁয়া চরমভাবে প্রভাবিত করছে। তারা আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে ধ্বংশ করে যাচ্ছে। কারণ বাংলাদেশের মানুষদের চিন্তাধারণা এখনো ঐ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেনি যে, তারা পশ্চিমা সমাজ ব্যবস্থাকে গ্রহণ করবে।
তাছাড়া স্বাধীনতা মানে তো উচ্ছঙ্খলতা নয়, যে তুমি স্বাধীনতার নামে যা খুশি করে যাবে। যে কোন কিছুই সুন্দর ও শালিনতার মাধ্যমে উপস্থাপন করা যায়। আধুনিকতার নামে তুমি নোংরামী আর নিজ দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং কৃষ্টিকে অপমান করবে, সেটা তো মেনে নেওয়া যায় না। আর শিক্ষিত এবং সুনাগরিক হিসাবে তোমার কাছ থেকেও দেশ এটা আশা করে না। তাই সব সময় নিজেকে মার্জিত ভাবে প্রকাশ করার মধ্যে রয়েছে সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ।
হয়েছে, অনেক হয়েছে। তোমাকে আর বলতে হবে না। স্নিগ্ধ হেসে উঠে নন্দি।
একটু পরেই দূর্জয় আর নন্দি তাদের নতুন জীবন শুরু করবে। নন্দি তার বাবা-মাকে বলেই এসেছে, বিয়ে যদি করতেই হয় দূর্জয়কেই করবে। তা না হলে কাউকে করবে না। নন্দি আত্মহত্যা করতে চায় না। কারণ, সেটা পাপ। তবে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু হলে, পরে ভেবে দেখবে বলে তার বাবা-মাকে ভয় দেখিয়েছে। নন্দি খুব জেদী প্রকৃতির মেয়ে। তাই তার বাবা তাকে শুধু বলেছে, ঘর ছেড়ে চলে যেতে।
দূর্জয় খুব সাধারণ চাষী ঘরের ছেলে। তার মা তার জন্মের সময়ই মারা যায়। মামার কাছে শুনেছে চার বৎসর বয়সের সময় তার বাবা মারা যায়। সেই থেকে মামার কাছে কলেজ জীবন শেষ করে পড়াশুনার জন্য ঢাকায় এসে মেসে থাকা শুরু করে। এখন পড়াশুনা শেষে একটা সরকারী চাকরী জোগাড় করে, দু’রুমের একটি ছোট বাসা ভাড়া নিয়েছি, নন্দিকে নিয়ে নতুন জীবন শুরু করবে বলে !!!
২৯টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
=হয়তো কখনো আমরা প্রেমে পড়বো=
পোস্ট দিছি ২২/১২/২১
©কাজী ফাতেমা ছবি
কোন এক সময় হয়তো প্রেমে পড়বো আমরা
তখন সময় আমাদের নিয়ে যাবে বুড়ো বেলা,
শরীরের জোর হারিয়ে একে অন্যের প্রেমে না পড়েই বা কী;
তখন সময় আমাদের শেখাবে বিষণ্ণতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
বর্তমান সরকার কেন ভ্যাট বাড়াতে চায় ?
জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে অতিষ্ঠ হয়ে জনগণ ছাত্রদের ডাকে রাস্তায় নেমে আসে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটায়। অবশ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
গরিবের ডাক্তার জাফরুল্লাহ্ সময়ের চেয়ে অগ্রবর্তী মানুষ ছিলেন। শ্রদ্ধাঞ্জলি।
“যুগে যুগে জড় জীব সবে পড়ে রবে নিবিড় অবেলায়
ধুলি ধূসর পদচিহ্ন আঁকা মরুর বালুকায়”- নিজ জয়গায় গেয়ে গেছেন ডা জাফরুল্লাহ স্যার। অবিভক্ত বাংলার ভাসানী থেকে ডা জাফরুল্লাহ, এমন কিছু... ...বাকিটুকু পড়ুন
আপনার অন্তরে ঠিক যা রয়েছে, আপনার জিহবা দিয়ে ঠিক তাই বের হবে।
"আপনার অন্তরে ঠিক যা রয়েছে, আপনার জিহবা দিয়ে ঠিক তাই বের হবে।"
এ কথাটি আমাকে একজন ভাই এশার সালাতের পরে বলছিলেন।
বেশ কিছুদিন আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে কাজলার মোড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
পরিপূরক.......
পরিপূরক............
০৩ জানুয়ারী ২০২৪ খৃষ্টাব্দ, আমি ৬৭ বছরে পদার্পণ করেছি। অর্থাৎ আমার বরাদ্দ আয়ু সীমা থেকে ৬৬ বছর চলে গিয়েছে।
জন্মদিন মানেই মৃত্যুর আরও কাছে যাওয়া....
জন্মদিন মানেই জীবন পথে... ...বাকিটুকু পড়ুন