মানুষ নামকে বড় করে আবার নাম মানুষকে বড় করে। কেউ কেউ আদর করে নামকে ছোট করেও ডাকে যেমনঃ কামরুজ্জামান কাদির সংক্ষেপে কাকা আর জুলকার তানিম সংক্ষেপে হয় জুতা। আজকের লিখাটা মূলত সেরকম কিছু নামের বিড়ম্বনা নিয়ে যতটা বেকায়দা-
বিড়ম্বনা ১ – আফিসের নতুন ড্রাইভার নিয়ে কলিগের বিয়ের দাওয়াতে যাচ্ছি মাইক্রো বাস করে, পথি মধ্যে গাড়ির ষ্টার্ট বন্ধ। কি ব্যাপার গাড়ি বন্ধ হলো কেন? স্যার গাড়ির মনে হয় কোথাও সমস্যা হয়েছে, দাড়ান দেখতাছি। ধর্য্য চ্যুত হয়ে জিঙ্গেস করলাম- তুমি কি বুঝতে পারতেছ কোথায় প্রবলেম? জি স্যার গাড়ির একটা স্ক্রু ঢিলা হয়েছে। তুমি তো জানতে আজকে লং ড্রাইভে যেতে হবে, তুমি গাড়ি চেক করাওনি কেন? মেজাটা চরমে উঠে গেল, পাশে বসে থাকা বড় ভাইকে বললাম দেখছেন শালা কত বড় মফিজ, গাড়ি প্রপার চেক না করেই লং ড্রাইভে বের হইছে ! কথা শেষ না হতেই বুঝলাম আমি বেকায়দায় কারন যাকে বলতেছি তার নাম মফিজ ভাই ! অবশেষে স্ক্রু ঢিলা মাইক্রোটি আরেকটি মাইক্রোর সাথে বেধেঁ ফিরে আসি ঢাকাতে, পথি মধ্যে একটিবারও তাকাতে পারিনি মফিজ ভাইয়ের দিকে।
বিড়ম্বনা ২ – প্রয়াত চলচিত্র অভিনেতা দিলদার তার কৌতুক অভিনয়ের জন্য একসময় ব্যপক জনপ্রিয় ছিল। আমরা বন্ধুরাও তার বিশাল ভক্ত ছিলাম। বাস্তবে দিলদারের দেখা পেলাম নুরুল ইসলাম স্যারকে দেখে, অবিকল দিলদার তাই আড়ালে তাকে আমরা দিলদার স্যার বলেই ডাকতাম। অনেক কষ্টে ক্লাশে হাসি চেপে রাখতে হতো। কিন্তু আনোয়ার কোনদিন চেপে রাখতে পারেনি। ক্লাশের পড়া শিখে এসেও সে কোনদিন বলতে পারেনি। স্যারও একসময় বুঝল তাকে পড়া ধরে লাভ নেই তাই প্রতিদিন হে হে করে হেসে দুটো বেতের বাড়ি দিয়ে চলে যেতেন। কিন্তু একদিন স্যার আনোয়ারকে কি মনে করে পেঁপে ইংরেজি জিঙ্গেস করলো। আনোয়ার তার স্বভাবমতো হে হে করে হেসে ফেলল। স্যারও হে হে করে বলল -তুই পেঁপে দেখেসিস? জি স্যার দেখেছি, হে হে তুই পেঁপে খেয়েছিস? জি স্যার খেয়েছি, তাহলে হে হে পেঁপে ইংরেজি বলতে পারিস না কেন, বলেই দু ঘাঁ। আচ্ছা হে হে তুই একটা অনুবাদ কর – আমার একটা গরু আছে। স্যার, ইউ আর এ কাউ । পুরা ক্লাশ থ মেরে গেলাম, শালা বলে কি ! দূররা মারার মতো স্যারের বেত্রাঘাত-আই এম এ কাউ বলতে পারিস নাই, ইউ আর এ কাউ বললি কেন? ভুল হয়ে গেছে স্যার, আপনি কাউ না আপনি দিলদার! বেকায়দা, পুরা বেকায়দা ! সারা ক্লাশের কেউ সেদিন বেত্রাঘাত থেকে রক্ষা পেল না।
বিড়ম্বনা ৩- “ চিন্তা কর’ছ মাখন !” কথাটা বন্ধুরা মজা করে প্রায়ই বুলতাম। কিন্তু কথাটা এমন ভাবে রটে যাবে যা কেউ ভাবি নাই। প্রাইমারী স্কুলে হাফ প্যান্ট পড়া বাচ্চা থেকে শুরু করে বয়স্ক মুরুব্বিরাও কোন কিছু হলেই- “চিন্তা কর’ছ মাখন। যেন মাখনের চিন্তা করা ছাড়া আর কোন কাজ নাই, সারা রাজ্যের চিন্তার ইজারা নিয়েছে একাই !
মাখন চাচাও ব্যাপারটা একসময় লক্ষ্য করে চিন্তায় পড়ে গেলেন। আসলে ঘটনা কি ? সবাই তার অগোচরে কেন এই কথা বলে? বিহাইন্ড দ্যা সিন এ কারা? কথায় আছে না যেখানে রাতের ভয় সেখানে আন্ধকার হয়। সেদিনও বন্ধুদের আড্ডায় কথার প্রেক্ষিতে বলে ফেললাম “চিন্তা কর’ছ মাখন” কিন্তু কেউ লক্ষ্য করি নাই যে মাখন চাচা পিছনে দাঁড়িয়ে। আফসুস, দে দৌড়... শুধু শুনলাম- “মাখন কেন একা চিন্তা করবে, মাখনের এতো চিন্তা করার কি দরকার”। তারপর থেকেই মাখন চাচার গন্ধ নাকে আসলে অন্য পথে যেতাম ঘুড়ে ।
আসলে আমাদের সবার ই চিন্তা করে কাথা বলা চাই, পিছনে না আবার বেকায়দায় পড়ে যাই !
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১১ রাত ১০:০৩