তিনটি জিনিস যে কোন সুস্থ মস্তিস্কের মানুষকে মাতাল করে দিতে পারে, তা হলো- মদ, নারী আর ক্ষমতা।
মদ - এমন একটা জিনিস যার প্রধান কাজ হলো আপনাকে মাতাল করা অবশ্য আপনি কতটা মাতাল হবেন তা নির্ভর করে এ্যালকোহলের % এর উপর। মাত্রাতিরিক্ত এ্যালকোহল খেলে সোজা চলে যাবেন ভবের জগতে, মনে হবে এ সুখের যেন নেই কোন তুলনা অথবা মনের অজান্তে বলে ফেলতে পারেন- ওরে পার্থ তুই আর খাস নে, তোকে ঘোলা দেখা যাইতেছে ...। কখনো যদি মাতালের কথাপোকথন শুনেন তবে মন, প্রান জুড়ায় যাবে –
“জানিস, আমার মন খারাপ হলে দুনিয়াটা মনে হয় কিনে ফেলি।
কিন্তু দুনিয়াটা কিনবি কী করে?
কেন?
আমি বেচলে তবে তো। এখন বেচার কোনো ইচ্ছে নেই। তবে পয়সার টান পড়লে দেখা যাবে।“
নারী - (সকল নারীর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে) নারীর সংস্পর্ষ হিতাহিত জ্ঞান ভুলিয়ে দিয়ে যে কোন সুস্থ মস্তিস্ককের মানুষকে পারে কল্পনার জগতে ভাসাতে আর ডুবাতে। নারী বিয়োগ আপনাকে মদের চাইতে কঠিন নেশায় ডুবিয়ে দিতে পারে। নারী আপনার নাকে রশি বেধেঁ বান্দর নাচ নাচাতে পারে। আরো পারে ট্রয় নগরী ধ্বংস করে দিতে। তারপরো আপনি এই নারীর জন্য গাইবেন-
“চাইলে পাইতে পার এক ফালি রোদ্দুর
চাইলে পাইতে পার দক্ষিনের সমুদ্দুর
চাইলে গোটা বাংলা তোমার
শুধু যদি তুমি চাইতে পার !”
ক্ষমতা – সবচাইতে তীব্র নেশা হলো ক্ষমতা। ক্ষমতায় থাকলে ক্ষমতা প্রয়োগের নেশা আর ক্ষমতায় না থাকলে তা ফিরে পাবার নেশা। পর্যাপ্ত পরিমান ক্ষমতা দিয়ে আপনি কাউকেই বিশ্বাস করতে পারবেন না। আমার এক বড় ভাইয়ের কথা – “ ক্ষমতা দেওয়া হলে তুমি মিয়া পুরা দেশটাকে স্যান্ডুইচ বানাইয়া খাইয়া ফেলবা।“ অতিব সত্যি কথা।
আমাদের দেশের রাজনীতিবীদরা কি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বা থাকার জন্য আমাদের দেশটাকে স্যান্ডুইচ বানাইয়া ফেলে নাই? বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের সুযোগ সুবিধা মত স্যান্ডুইচের বিভিন্ন প্রান্ত কামড়ে কামড়ে খাচ্ছে। দাবী আদায়ের উপায় কোন বিদ্যালয়ে না শিখালেও এদেশের রাজনীতিবিদরা একটা উপায় ভাল জানে – তা হলো হরতাল।
গতকাল মহাখালী ফ্লাইওভারের নীচে রাত দশটার সময় এক অটোচালককে বললাম-ভাই মোহাম্মদ পুর যাবেন? আসাদ গেট পর্যন্ত যেতে পারি, চালকের উত্তর। আমি বললাম কেন? সে আমার হাত টেনে আমাকে তার গাড়ীর পিছনে নিয়ে গেল এবং দেখাল হরতালের নামে তার গাড়ীর কি হাল করেছে। মুহাম্মদপুর পর্যন্ত গেলে বাকিটা নাও থাকতে পারে। চালকের মতে আগামী দুই দিন হরতাল তাহলে আজকে কেন তিতুমীর কলেজের সামনে এভাবে গজারী কাঠ দিয়ে গাড়ী ভাংচুর করা হলো? আমার কোন উত্তর জানা নাই। কোন গাড়ীই ছাড়ে নাই মামা, লাখ লাখ টাকা দামের পাজারো, প্রাডো থেকে আরম্ভ করে আমাদের মতো গরীবের গাড়ী পর্যন্ত। গাড়ীর লোকগুলো হাঊমাউ করে কাদঁতেছিল যেন তাদের গাড়ী গুলো ভাংগা না হয়। কিন্তু কে শুনে কার কথা, ভাংগনের পৈচাশিক আনন্দে মত্ত তারা। লোকটির কন্ঠ আস্তে আস্তে ভারী হতে থাকে আর বলতে থাকে সারাদিন গাড়ী চালিয়ে যা উপার্জন করি তা থেকে গাড়ীর জমা পরিশোধ করে যে টাকা থাকে তা দিয়ে জীবন ধারন করাই কঠিন, এখন আমি কি ভাবে মালিক কে জরিমানা দেব? কত টাকা জরিমানা দিব? তারপর আবার আগামী দুই দিন হরতাল ! চোখের কোনে তার জল টলমল করে, চিবুক বেয়ে গড়িয়ে পড়ার জন্যে, আমি তার কাঁদে হাত রেখে শুধু বলি চিন্তা করো না মামা, সব ঠিক হয়ে যাবে, গাড়ী স্টার্ট করো, আসাদ গেট চলো।
গাড়ীতে বসেই হরতাল নামের একটা পদ্য লিখি, কলমের কালিতে নয়, চালকের চোখের পানিতে-
পৈচাশিক আনন্দ, হরতালের মূলমন্ত্র
হরতাল হরতাল
এনালগ দেশ, হবে ডিজিটাল
হরতাল হরতাল
ভাংবো গাড়ী, করবো গোলমাল
হরতাল হরতাল
লাটে উঠাবো, আব্দুল মুহিত আল্লাহর মাল
হরতাল হরতাল
ঘোরবে না চাকা, বন্ধ অন্নসংস্থান
হরতাল হরতাল
অফিসে বেরুন, হাতে নিয়ে জান
হরতাল হরতাল
বেজায় খুশি, স্কুলের পোলাইপান
হরতাল হরতাল
ঘরে বসে, মার বিড়িতে টান
হরতাল হরতাল
দাবী আদায়ের, একটাই গান
হরতাল হরতাল
বুঝবি সরকার, কত ধানে কত চাল
হরতাল হরতাল
সরকার তুই গদি ছাড়, গদি কি তোর বাপদাদার
হরতাল হরতাল
দাবী না মনলে, হবে লাগাতার
হরতাল হরতাল
তবু তো নড়েনা টনক, ছিড়েনা বাল ?
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:১৬