এখন আন্দোলন আপাতত স্থগিত। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার প্রেক্ষিতে তারা আন্দোলনটি আপাতত স্থগিত ঘোষণা করে যার যার মত করে ফিরে গেছে। যদিও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্যে অনেক অস্পষ্টতা ছিল তারপরেও তারা ফিরে গেছে। আস্থা রেখেছে প্রধানমন্ত্রীর উপর। প্রধানমন্ত্রী যদিও বলেছেন উপজাতি ও প্রতিবন্ধীদের বিশেষ উপায়ে চাকরির ব্যবস্থা করা হবে সেই বিশেষ উপায়টি বিন্দুমাত্র খোলাসা করা হয় নি। তাছাড়া মুক্তিযোদ্ধা কোঠার এখন কি গতি হবে সে ব্যাপারেও তার কোনো স্পষ্ট মতামত ছিল না। তারপরেও তারা চলে গেছে। কিন্তু চলে যাওয়ার পর আন্দোলনকারীদের উপর সরকার দলের নানা মুখী চাপ একের পর আন্দোলনকারী নেতৃবৃন্দদের সামলাতে হচ্ছে। প্রথমত পুলিশ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিভাগ মোট ৪টি মামলা করে তাদের নামে। গতকাল পুলিশ তো রাশেদ সহ আন্দোলনকারীদের মোট তিনজন নেতাকে চোখ বেঁধে থানায় নিয়ে হেনস্থা করে। হেনস্থা করে তাদের পরিবারকেও। বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রলীগ আন্দোলনকারীদের নির্যাতন করছে। কুষ্ঠিয়ার ইসিলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৪০ জনের মত শিক্ষার্থীকে এই আন্দোলন করার অপরাধে হল থেকে পর্যন্ত বের করে দেয়। সরকারের নানা মহল যারা এতদিন চুপটি মেরে বসে ছিলেন তারা নানা ভাবে এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারীদের এবার জামাত শিবিরের কর্মী বলে প্রমাণের জন্য উঠে পড়ে লাগলেন। বিভিন্ন মন্ত্রী এমপি তাদের বক্তব্যে একের পর এক লাগামহীন ভাবে তাদের জামাত শিবির বলে ফাঁসানোর অপচেষ্টা করতে থাকেন। শেষমেষ এতে যুক্ত হয়েছে একটি সংবাদ মাধ্যমের নামও। তারা বেশ উদ্দেশ্যপ্রবণভাবে আন্দোলনকারী প্রত্যেক নেতৃবৃন্দের নামেই কমবেশি শিবিরের সংশ্লিষ্টতা লিখে একটা ভুয়া নিউজ প্রকাশ করেন। এই নিউজ প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথেই সব মহলে ধিক্কার উঠে। শুরু হয় ব্যাপক হারে ইত্তেফাক বর্জনের হিড়িক। অর্থাৎ পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর অনেকেই এবার তাদের আসল চেহারাটি দেখাতে শুরু করেছেন।
এই বিষয়টি আমাদের প্রত্যকেরই গভীরভাবে ভাবতে হবে। শুধু ভাবা নয়, এর যথেষ্ট প্রতিবাদও দরকার। অযথা শিবির ট্যাগ দিয়ে যেকোন সাধারণ নাগরিককে হেনস্থা করার রীতি বেশ কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশে চলে আসছে। এটি অদ্ভুত এক রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে ক্ষমতাসীনরা। আমি নিজেও অসংখ্য জায়গায় দেখেছি এবং শুনেছি। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৪ সালে যখন এক ছাত্রলীগ নেতা সাদ ইবনে মমতাজ ছাত্রলীগের গ্রুপিং এর জেরে মারা যায় তখন তাকেও শিবির তকমা দিয়ে তাকে কিলিং এর বিষয়টি একটু হালাল করার ধান্দা থেকে ছাত্রলীগ তখন পিছপা হয় নি। তারা নানা ভাবে সাদকে শিবির কর্মী প্রমাণের অপপ্রয়াস চালিয়েছিল। ছোট্ট একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিবির ট্যাগ লাগিয়ে একটা ছেলেকে হল থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে। তাকে মারধর করা হচ্ছে। এগুলো বিভিন্ন জায়গার সাধারণ ঘটনা। কিন্তু এত বড় একটা আন্দোলনের নেতৃত্বকে এই মিথ্যা ট্যাগ লাগিয়ে হেনস্থা করা সরকারের রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। এটি পুরোপুরি হঠকারি একটি সিদ্ধান্ত। জামায়াতে ইসলামী কিংবা তার ছাত্র সংগঠন শিবিরের প্রতি আওয়ামী লীগ যতই বিরক্তি কিংবা ঘৃণাবোধ দেখাক না কেন জামায়াত থেকে নেতাকর্মীরা নিজ দলে আসতে চাইলে আওয়ামী লীগকে বেশ সাদরেই গ্রহণ করতে দেখা যায়। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জেলায় এখন পর্যন্ত এরকমটি হয়েছে। এসব জামায়াত ইসলামী নেতাকর্মীদের যোগদান অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন। তারা ফুলের মালা দিয়ে তাদের বরণ করেছিলেন। প্রশ্নটি সেখানে নয়। প্রশ্নটি হচ্ছে এরকম মিথ্যাচার করে এই আন্দোলনকারীদের উপর এই ট্যাগ লাগানোর অপচেষ্টা করে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ফায়দা লুটার পরিবর্তে একটি ঐতিহাসিক ভুল করেছে। যার জবাব তারা নিকট ভবিষ্যতেই পাবে। কারণ এই আন্দোলন কয়েকজন আন্দোলনকারী নেতার কোন বিষয় ছিল না। এটি সারা বাংলাদেশর তরুণ প্রজন্মের আন্দোলন ছিল। যারা পড়াশুনা শেষ করেছে কিংবা করছে। আর সবার লক্ষ্য একটি সরকারি চাকুরি। এরাই এদেশের ভবিষ্যত প্রশাসন চালাবে। সেই তরুণ সমাজের নেতাদের প্রতি এরকম অবমূল্যায়ন তরুণরা আজীবন মনে রাখবে। আর সব থেকে বড় কথা জনগণ এসব যে কেবল দেখে তা নয়। তার ভেতরের এই সত্যগুলোও আঁচ করতে পারে।
পরিশেষে একটা কথাই বলবো। যেকোন আন্দোলনে একটি ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থন থাকবে বিষয়টা আমরা আশা করছি না। কিন্তু আন্দোলনকারীদের এরকম অযাচিতভাবে অন্য রাজনৈতিক দলের ট্যাগ ঝুলিয়ে তাদের আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াস থেকে ক্ষমতাসীনরা দূরে থাকবেন এটাই প্রত্যাশাই করছি। এই রাজনৈতিক শিষ্টাচারটি যেন আমরা দেখাই।
সৌরভ দাস
সভাপতি
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট
বাকৃবি শাখা।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:২০