একটি দেশ কেমন? কেমন তার অর্থনীতি, কেমন তার জাতীয়তাবোধ, কেমন তার রাজনীতি? এসব বোঝা কি খুব কঠিন? না। এসব বোঝার জন্য সে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস এবং তার আবাসিক হলগুলোতে একটু ঢুঁ মারলেই যথেষ্ট। কারণ এসব জায়গায়ই লুকিয়ে রয়েছে একটি দেশের ভবিষ্যত। সে দেশের বিবেক, সে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি সব।
সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি বোঝার জন্য, রাষ্ট্রের অর্থনীতি, রাজনীতি এসব বোঝার জন্য স্ট্যাটিসটিক্যাল ডাটা নিয়ে অযথা মাথা ঘামানোর কোনো প্রয়োজন নেই। চলুন একটু ঘুরে আসি যে কোনো একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। মনে করুন সেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আপনি ঢুকলেন কোনো একটি ক্লাম রুমে, দেখলেন যে টিচার ক্লাস নিচ্ছে তার ক্লাস নেয়ার মানটা খুব নিচু। আরো খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারলেন সে মন্ত্রী মহাশয়ের পকেটে কয়েক লাখ টাকা পয়সা ঢেলে টিচার হয়েছে। আরো খোঁজ খবর নিয়ে জানলেন, তার চরিত্রে ডাল কুচ কালা হ্যায়! মাঝে মাঝে তার নামে বিভিন্ন ধরনের প্রত্যাশিত, অপ্রত্যাশিত স্ক্যান্ডাল শোনা যায়। সে নাকি আবার রাজনীতিও করে। বিশাল লম্বা হাত তার, টেনে টুনে দেখলে একেবারে বারো ফিট। মন্ত্রী মিনিস্টারদের সাথে তার গলায় গলায় ভাব। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতিতেও তার বিশাল প্রভাব। বিভিন্ন ইলেকশনে জিতে একেবারে একাকার অবস্থা!
তারপরে মনে করুন ক্লাস রুম শেষে আপনি গেলেন মধুর ক্যান্টিনে। মধুর ক্যান্টিন জায়গাটা ঐতিহাসিকভাবে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখানে নাকি মুক্তিযুদ্ধের পরে অনেকে পিস্তল নিয়ে বসে থাকতো। যাই হোক, সে প্রসঙ্গ আর টানছি না। তো আপনি মধুর ক্যান্টিনে গিয়ে দেখলেন এক গাধা নেতা বসে আছে সেখানে- ছাত্র নেতা! চোখে বিশাল বড় বড় কালো চশমা, সিনা টান টান, মুখ ভর্তি দাঁড়ি, ইস্পাতের মতো শক্তিশালী তাদের হাত। সবাই সবার উপর তেল মারায় ব্যস্ত। ছোট নেতা বড় নেতাকে তেল মারছে, বড় নেতা আবার তার চেয়েও বড় নেতাকে তেল মারছে। কারো তেল মারা কম হলে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন পোস্ট পদবিতে তার সিরিয়াল বেশ পেছনের দিকে। সে এক মহা ঝামেলার বিষয়! তাই এ ব্যাপারে সবাই বেশ সচেতন।
তারপরে মনে করুন আপনি কোনো একটি আবাসিক হলে গেলেন। মনে করুন সেটা বিজয় একাত্তর হল কিংবা শহীদ জিয়া হল কিংবা অন্য যে কোনো একটি। দেখলেন হলে প্রবেশের যে গেট সে গেটে তালা। কারণটা কী? কারণটা হলো- একটু পরে একটা মিছিল বেরুবে। তাই প্রত্যেকটা রুম ক্লিয়ার করে ছাত্র রূপী গরু ছাগলগুলোকে টেনে টেনে বের করা হচ্ছে। সবাই বেশ ভয়ার্ত মুখে গেটের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে। একটু পরে হলের নেতারা আসলেই মিছিল শুরু হবে। মিছিলটি শুরু হলে আপনি হলের ভেতরে প্রবেশ করলেন। হলের ভেতরে ঢুকেই আপনার চোখ মুখ অন্ধকার হয়ে গেলো। আপনি দেখলেন- হলের প্রভোস্ট স্বয়ং তার চেম্বারে বসা! তার চোখের সামনে দিয়েই তার হলের সব কয়টা ছাত্রকে গরু ছাগলের মতো টেনে টেনে বের করে নিলো। রাগে দু:খে আপনি হল থেকে বের হয়ে আসলেন।
হল থেকে বের হয়ে আপনি লক্ষ্য করতে লাগলেন প্রতিটি স্টুডেন্টের কথা বার্তা, চলন বলন। আপনি দেখলেন, এদের কথার মধ্যে যৌনতা বৈ আর কিছুই নেই। দেশের কোনো সমস্যা সংকট নিয়ে এদের কোনো চিন্তা নেই। এসব ব্যাপারে তারা অতি মাত্রায় উদাসীন। বরং ঐ সব নেতাদের কে কত বেশি তেল দিতে পারলো এ নিয়ে যেনো তাদের খুশির কোনো সীমা থাকে না।
এগুলো দেখার পর আপনি কলা ভবনের সামনে থেকে একটা আইসক্রিম কিনে খাওয়া শুরু করুন। আইসক্রিমটা শেষ হওয়ার আগেই বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের ভবিষ্যত, তার অর্থনীতি, রাজনীতি সব কিছু আপনার চোখের সামনে অ্যানালাইসিস সহ চলে আসবে।
(পরিসংখ্যানে অনেকেই ভয় পান জানি। সেই পরিসংখ্যান ছাড়াই এত বড় একটা সমস্যার সমাধানের পথ বাতলে দিলাম। সিগারেট তো খাই না, সময় করে এক কাপ চা খাইয়ে দিয়েন। আজকের জন্য টা টা।)
লেখক
শিক্ষার্থী,
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৬ রাত ১১:২৮