কাজের ক্ষেত্র ও বেতন :
প্রতিষ্ঠান ভেদে কাজের ক্ষেত্র ও বেতন পরিবর্তন হয়। তবে প্রতিষ্ঠান আলাদা হলেও পোশাক শিল্পের সংশিংষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোয় কিছু কমন ক্ষেত্র রয়েছে যা প্রায় সব গার্মেন্ট একই ধরনের হয়ে থাকে।
মার্চেন্ডাইজার : এ সেকশনটা তৈরি পোশাক শিল্পের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। যার মাধ্যমে এক পোশাকে উৎপাদন উপযোগী তোলা থেকে শুরু করে শিপিং পর্যন্ত সবই একজন মার্চেন্ডাইজারকে করতে হয়। ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী পোশাক তৈরির জন্য পণ্য সামগ্রীর বাজার মূল্য জেনে ক্রেতা বা বায়ারকে মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া মার্চেন্ডাইজারের প্রধান কাজ। এর সঙ্গে উৎপাদন বিভাগের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখাও মার্চেন্ডাইজারের দায়িত্ব। প্রতিদিন কি পরিমাণ পোশাক উৎপাদন হচ্ছে, পোশাকটির কোয়ালিটি সম্পর্কে জ্ঞান, ব্যাংকের হিসাব, পরিবহন, এক্সেসরিজ ইত্যাদি সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখা একজন মার্চেন্ডাইজারের কাজ। অভিজ্ঞতার আলোকে আমাদের দেশে একজন মার্চেন্ডাইজার ২০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত সম্মানি বা বেতন পেয়ে থাকে।
জেনারেল ম্যানেজার বা জিএম : প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টরের পরে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হলো জেনারেল ম্যানেজার। একটি প্রতিষ্ঠানের খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদ এটি। কোম্পানির লাভ-ক্ষতি সবই তার ওপর বর্তায়। তাই প্রতিটি সেক্টরে তাকে খোঁজখবর রাখতে হয়। এ পদে শুধু অভিজ্ঞরাই কাজ করতে পারবেন। তবে এ কাজের জন্য অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা প্রয়োজন। এ পদের ব্যক্তিদের সাধারণত ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা বেতন হয়ে থাকে।
একাউন্টস অফিসার : প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে একাউন্টস সেকশন প্রয়োজন। যেহেতু গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠানে বিদেশি অর্থের লেনদেন করতে হয় তাই এ সেকশনের গুরুত্ব অনেক। প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কর্মীর বেতন এবং প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের সব হিসাব রাখা একাউন্টস বিভাগের কাজ। সাধারণত একাউন্টিংয়ের ছাত্রছাত্রীরাই এ বিভাগে কাজের অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে। এ সেক্টরে একজন একাউন্টস অফিসার দক্ষতার গুণে ১৫ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা বেতন পেয়ে থাকে।
ফ্যাশন ডিজাইনার : একজন ডিজাইনার তার ক্রিয়েটিভ ধারণা থেকেই পোশাকের ডিজাইন করে থাকে। ডিজাইনারের কাপড় সম্পর্কে অনেক বেশি ধারণা রাখতে হয়। কারণ সব কাপড়ের ওপর সব রঙ টেকশন হয় না। এতে ডিজাইন এবং প্রিন্ট নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ডিজাইনাররা বিভিন্ন প্যাটার্ন পিচ তৈরি করে কাগজে অরিজিনাল সাইজ ও মাপসহ প্যাটার্ন ড্রয়িং বা অঙ্কন করে সে মাপ অনুসারে ফেব্রিক্স কেটে ও সেলাই করে দেখেন যে পোশাকটি ফিট হয়েছে কি না। একজন ডিজাইনার একাধিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারে। আমাদের দেশে একজন ডিজাইনারকে সাধারণত ১৫ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত সম্মানি দিয়ে থাকে।
প্রোডাকশন ম্যানেজার : আমাদের দেশে একজন প্রোডাকশন ম্যানেজার পেশাগত দক্ষতা দিয়ে ২৫ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারে। একজন প্রোডাকশন ম্যানেজার গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ। তার ওপর প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের অনেকাংশ নির্ভর করে। প্রোডাকশন ম্যানেজারকে কাটিং, সুইং, ফিনিশিংসহ অনেক সময় বায়ারদের নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। তাই এ পদে চাকরির জন্য অভিজ্ঞতার প্রয়োজন পড়ে।
কমার্শিয়াল অফিসার : ব্যবসায় শাখার ছাত্রছাত্রীদের এ পদে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হয়। সঙ্গে ইংরেজিতে দক্ষ হলে চাকরি পেতে অনেক সহায়ক হয়। একজন কমার্শিয়াল অফিসারকে প্রতিষ্ঠানের বাজেট তৈরি থেকে শুরু করে ব্যাংক সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ যেমন আমদানি-রপ্তানি, এলসি খোলা, জাহাজ বুকিং, এক্সেসরিজ ক্রয়, ইন্স্যুরেন্স করা, ট্রেড লাইসেন্স, কাস্টমস অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ সবকিছুই করতে হয়। এবং তার এ ধরনের কাজের জন্য সম্মানি দেয়া হয় ১৫ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
অন্যান্য : উপরোক্ত পদগুলো ছাড়াও আরো কিছু পদ রয়েছে যেখানেও কাজ করার প্রচুর সুযোগ আছে যেমন ফিনিশিং ইনচার্জ, কাটিং মাস্টার, কোয়ালিটি কন্ট্রোলার, ডাইং মেশিন অপারেটর, প্যাটার্ন মেকার ইত্যাদি। এসব পদেও ভালো সম্মানিতে কাজ করে ক্যারিয়ারে সাফল্য অর্জন সম্ভব।
প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা : দেশের প্রধান রপ্তানিখাতে পোশাক শিল্পের উন্নয়নে এবং এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন গার্মেন্ট শিল্পের মালিকরা। বর্তমানে যে লোকবল এ শিল্পে কাজ করছে তাদের আরো বেশি দক্ষ ও ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা, কর্মমুখী এবং বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। যাতে একজন শিক্ষার্থী শিক্ষা অবস্থায় গার্মেন্ট শিল্প সম্পর্কে জানতে পারে এবং অধিক রিসার্চ সেন্টার স্থাপন করা। পোশাক শিল্পের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন পাওয়ার বা বিদ্যুতের যেটা ছাড়া পোশাক তৈরি করা সম্ভব নয়। সঠিক বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকলে এ শিল্পের উৎপাদন আরো বাড়ানো সম্ভব এবং আরো অধিক হারে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাবে বলে সংশিংষ্টরা মনে করছেন।
প্রশিক্ষণ : পোশাক শিল্পের জন্য প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি একটি বিষয়। প্রশিক্ষণ ছাড়া কোনো অবস্থাতেই এ সেক্টরে সাফল্য অর্জন করা যায় না। যেহেতু এ সেক্টরে অনেক অংশ আছে তাই কোন বিষয়ে ক্যারিয়ার শুরু করবেন সেই অনুযায়ী প্রশিক্ষণ নেয়া প্রয়োজন। নিম্নে কিছু প্রতিষ্ঠানের নাম দেয়া হলো সেখানে প্রশিক্ষণ নেয়া যেতে পারে।
* ফ্যাশন ডিজাইনিং ও মার্চেন্ডাইজিংয়ে প্রশিক্ষণ :
* বিজিএমইএ ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি ১০৫ উত্তরা মডেল টাউন, সেক্টর-৭, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০।
শান্তা-মারিয়াম ক্রিয়েটিভ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি
বাড়ি নং-১, রোড-১৪
সেক্টর-১৩, উত্তরা, ঢাকা।
বাংলাদেশ অ্যাপারেল ইন্সটিটিউট
নিউডিওএইচএস, মহাখালী, ঢাকা।
ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ফ্যাশন ডিজাইন
কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ
বনানী, ঢাকা।
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা
কলেজ অফ টেক্সটাইল টেকনোলজি
তেজগাঁও, ঢাকা।
আহছান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
তেজগাঁও, ঢাকা।
ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
শুক্রাবাদ, মিরপুর রোড, ঢাকা।
টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট
সি অ্যান্ড বি রোড, বরিশাল
টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট
বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী
টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট
শালতাড়িয়া, পাবনা।
টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট
চট্টগ্রাম।
লেখা : সাইফুল ইসলাম শান্ত
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০০৯ রাত ৮:৩২