যে দেশের রাস্তার টিউব লাইট গুলাতেই ভাল কইরা আলো জ্বলে না, সেই দেশ মহাকাশে পাঠাইছে স্যাটেলাইট (!) এর থেকে বড় বিনুদন বর্তমান সময়ে আর কি হইতে পারে? খবরে পড়লাম, গতকাল সংসদে মাদার অব অনেকগুলো (ম্যালা টাইটেল বলে বাক্যটাতে বহুবচন ব্যবহার করা হইল) নাকি কইছেন একটাতে হয় নাই; বরং প্রথমটার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আকাশে আরও একটা ‘বঙ্গবন্ধু-2’ পাঠানো হইবে সমগ্র দেশবাসিকে নজরবন্দি কইরা রাখবার জন্য!
উত্তম প্রস্তাব! এরেই বোধহয় বলে গরিবের ঘোড়া রোগ! প্রথমটাই এখনো তার নিজ কক্ষপথ ঠিকমত খুঁজে পাইছে কিনা তার কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য নাই, এদিকে দ্বিতীয়টার জন্য প্রস্তুতি শুরু হইয়া গেছে। আজব ব্যাপার!
দুঃখের কথা কারে কই! বিশ্বাস করেন অথবা নাই করেন, মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানোর পর থেকে আমি হেলমেট ছাড়া ঘরের বাইরে বের হইতেও সাহস পাচ্ছি না। সারাক্ষণ একটা ভয় তাড়া করে ফিরছে। এই বুঝি সবশুদ্ধু ভেঙে চুরে মাথার উপরে এসে পড়লো বলে। অবশ্য সেইখানে স্যাটেলাইট ধইরা নাড়াচাড়া করার মত জামাত বিম্পির কেউ নাই বইলাই হয়তো যা একটু ভরসা পাইতেছি। নয়তো আমার অবস্থাও যে কবিতার সেই নন্দলালের মত হইতো এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই।
তবে দ্বিতীয়টা মহাকাশে পাঠানোর পূর্বে সরকারকে আমার একটা পরামর্শ আছে। দুইটাকেই এক কাজে ব্যবহার না কইরা বরং দুই কাজে ব্যবহার করলে সেইটা সব থেকে ভাল হইতো না? মানে দেখা গেল একটা স্যাটেলাইট পাহারা দিলো পদ্মাসেতু, আর একটা দিলো সংসদভবন! যাতে আবার কোন হরতাল সমর্থকগোষ্ঠির সদস্য অথবা অশুভ শক্তি নাড়াচাড়া কইরা দেশের এই দুইটা অনন্য স্থাপনাকে ভেঙে ফেলতে না পারে।
অবশ্য আমার পোস্টটা পড়ার পর তৈলমর্দনকারী চেতনায় অবচেতনবাজ সমর্থকগোষ্টির সদস্যরা হয়তো তাদের চেতনাদন্ড খাঁড়া করাইয়া আমার দিকে স্যাটেলাইট গতিতে তেড়ে আসতে পারেন। ব্যাপার না, আমার কাছে সুলেমানী তরবারি আছে। এমন জায়গা থেকে চেতনাদন্ড কাটা হইবে যাতে আগামীতে সব কিছুই কাজ করবে কেবল চেতনাদন্ড ছাড়া।
আসলে একটা জিনিস এইখানে পরিষ্কার করা দরকার। আমি যে চাইনা দেশ ডিজিটাল হোক এমনটা নয়। বরং আমিও চাই দেশ আগাইয়া যাক। দেশ এমন একটা কিছু করুক যেটা নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি। কিন্তু কোন ভাবেই সেটা গরিব, দুখী আর অসহায় মানুষের চোখের জলে নয়। একটা দেশের মোট জনসংখ্যার একটা বড় অংশই যখন ক লিখতে দশটা কলম ভাঙে, তখন সেই জনসংখ্যার মানোন্নয়ন না কইরা বরং সেই দেশের জন্য মহাকাশ জয় করাটা কি এতটাই জরুরী?
শুধু আমি না। একজন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সচেতন নাগরিক মাত্রই বলবে, যতদিন পর্যন্ত সে বা তার দেশের প্রত্যেকটা মানুষ পেট পুরে দু’বেলা দু’মুঠো খেতে না পারবো, পরতে না পারবো, ততদিন পর্যন্ত তার কাছে স্যাটেলাইটও যা; ঘোড়ার ডিমও তা।
এতদিন মানুষ বলাবলি করতো দেশ আগাইয়া যাইতাছে। কথা সত্য! কিন্তু আগাইয়া যে কোন দিকে যাইতাছে সেইটা কেউ কইতেও পারতো না। আজ বুঝতে পারছি, দেশ আসলে ডাইনে-বাঁয়ে বা সামনে-পিছনে কোন দিকেই আগাইতেছে না। বরং দেশ ক্রমশ্য উর্দ্ধো দিকে আগাই যাইতেছে। কিন্তু কথা হইতাছে এভাবে উর্দ্ধো দিকে আগাইতে আগাইতে যদি উপ্রে ধরার মত কিছু না পায়, তাইলে সেখান থেকে যে ধড়াম করে পড়লে হাড়গোড় কিছু আস্ত থাকবে না; তা কি দেশ একবারও ভাবতেছে না?
শুনছি প্রধানমন্ত্রী কইছেন স্যাটেলাইট নাকি জনগনের সম্পত্তি। কথা যদি সত্যি হয় তাইলে আমার ভাগের সম্পত্তির ট্যাকা আমারে ফিরাইয়া দ্যান! আমার এই শ্যাটেলাইটের দরকার নাই। বরং সামনে ঈদ-ঊল-ফিতর। আমি বউরে নিয়া এবারে ঈদের মার্কেটটা জমাইয়া করতে চাই। গত কয়েকদিন ধইরা বউ ‘ঈদের মার্কেট করুম ঈদের মার্কেট করুম’ কইয়া কানের কাছে খালি ঘ্যান ঘ্যান করতেছে। স্যাটেলাইটের ভাগের সম্পত্তি বাবদ ট্যাকাডা পাইলে এবারের মার্কেটটা অন্তত ভাল কইরা করতে পারুমনে!
তবে শেষ কথা বলি। দেশ ক্যামনে চালাইতে হয় আমাদের গোবর গনেশ নেতাগো সেইটা শিক্ষা নেওয়া দরকার মালেশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহথিরের কাছ থেকে। দেশের জাতীয় ব্যয় সংকোচন করার জন্য ড. মাহথির যেখানে নিজের বেতন সহ কেবিনেটের সকল মন্ত্রীর বেতন কর্তন করতেছেন, সরকারি কর্মকর্তাদের আপ্যায়ন ভাতা কর্তন করতেছেন। সেখানে আমাদের দরদী সরকার তার মন্ত্রীদের মোবাইল কেনার জন্যই দিচ্ছেন 75 হাজার টাকা। ভাল তো, ভাল না। তবে কেবল মোবাইল কেনার জন্য কেন, বরং ব্লেড কেনার জন্যেও কিছু অনুমোদন থাকার দরকার আছে। মনে রাখতে হবে, একটা ব্লেডের অভাব অনেক সময় মরণঘাতি ক্যান্সারেরও কারণ হইয়া দাঁড়াইতে পারে।
কিভাবে? আসনে দেখি- “মনে করুন ব্লেডের অভাবে কেশ বড় হবে। কেশ বড় হইলে সেখানে খোস-পাঁচড়া দেখা দেবে। আর খোস-পাঁচড়া থেকে হবে খচ্চর-খচ্চর চুলকানি। আর নিয়মিত চুলকানির ফলে সেখানে বড় রকমের ইনফেকশন দেখা দেবে। আর বড় রকমের ইনফেকশন মানেই যে ক্যান্সারের লক্ষন সেটা তো আর বলে দেওয়া লাগবে না। সুতরাং ক্যান্সারের লক্ষন মানেই ম্যালা ট্যাকার খরচ। অতএব সেই ট্যাকা বাঁচানোর লাইগা ব্লেডের বিকল্প কি অন্য কিছু আছে?”
সত্যি কথা বলতে কি এসব দেখে দেখে এখন মনেহয়, এই সোনার বাংলায় জন্মগ্রহণ না কইরা যদি কোন মগের মুল্লুকে জন্মাইতাম; তাও বোধহয় ভাল হইতো। তাইলে অন্তত এখানে জন্মগ্রহণ করাটাই আজন্ম পাপ বইলা আর নিজেই নিজেরে গাইলানো লাগতো না। আফসোস, পূণঃজন্ম লাভ করার কোন সুযোগ আমার জীবনে নাই...
ফটো ক্রেডিটঃ- ‘KaKa কালা কাউয়া’ নামক ফেসবুক পেইজ থেকে ছবিটা সংগ্রহ করা হইছে!
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ- টাইপিংয়ের ভুলের কারণে হয়তো অনেক জায়গায় বানানে ভুল থাকতে পারে। সেটাকে বিবেচ্য বিষয় হিসাবে না ধরে, ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখলে কৃতার্থ হবো!