আমার বাবার জন্ম ১৯৬৬ সালের মে মাসে। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে বাবার বয়স ছিল মাত্র পাঁচ কি সাড়ে পাঁচ বছর। সুতরাং বাবা যে কোন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না সেটা খুব সহজেই অনুমান করা যায়। যদিও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তির বয়স তখন ঠিক কত ছিল সেটা আমার সঠিকভাবে জানা নাই।
বাবা ছিলেন দাদার ছেলেদের মধ্যে পঞ্চম নাম্বার সন্তান। আর ছেলে মেয়ে মিলিয়ে সপ্তম। বাবার ছোট এখনো একটা ভাই এবং একটা বোন আছে। তবে বাবা মুক্তিযোদ্ধা না হলেও আমার বড় দুই চাচা ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তারা ৯ নং সেক্টরে মেজর এম. এ. জলিলের নেতৃত্বে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। আমার ব্যক্তিজীবনে মুক্তিযুদ্ধের যত ইতিহাস জানা, তার প্রায় সবই এই দুই চাচার কাছ থেকে। উনারা দু'জনেই আমাকে খুব ভালোবাসতেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, আমার বড় চাচা এখন আর এই পৃথিবীতে বেঁচে নেই!
তবে মেঝো চাচা এখনো পর্যন্ত জীবিত। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কর্নেল আতাউল গনী ওসমানী কর্তৃক স্বাক্ষরিত সার্টিফিকেট তার ঘরে আমি নিজে দেখেছি। মেঝো কাকু যখন আমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনাতেন, তখন গর্ব করে বলতেন, 'তোরা হয়তো জানিস না! আমার সাহসীকতায় খুশি হয়ে আমাদের কমান্ডার আমাকে তার ব্যবহৃত একটা মাফলার উপহার দিয়েছিলেন।'
বলে সেই মাফলারটাও তিনি আমাদেরকে দেখাতেন। কিন্তু মজার বিষয়টা কি জানেন? আমার মেঝো চাচা ছিলেন একজন হুজুর। মানে মাওলানা আরকি! তৎকালিন সময়ে আমাদের গ্রামের স্থানীয় মাদ্রাসার একজন সদ্য নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষক ছিলেন তিনি। এবং পরবর্তিতে অবশ্য সেই মাদ্রাসার প্রিন্সিপালও হয়ে গিয়েছিলেন। সত্যি বলতে, একজন হুজুর মানুষ যে রাইফেল কাঁধে যুদ্ধ করতে পারে (!) সেটা আমি আমার চাচাকে না দেখলে হয়তো কখনোই বিশ্বাস করতাম না! আমি ভাবতাম, হুজুর মানুষ হবে নরম শরম। এবং অন্যদের থেকে তাদের মন মানসিকতা যে ভিন্ন হবে এটা হল প্রাকৃতিক নিয়ম। অথচ আমার মেঝো চাচা ছিলেন ঠিক তার বিপরিত। প্রচন্ড মেজাজি আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীন।
তবে চাচার যে গুণটা দেখে আমার সব থেকে বেশি আশ্চর্য লাগে তা হল, উনার ঘরে মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট থাকা সত্বেও তাকে আমি কখনো মুক্তিযুদ্ধের সুবিধা ভোগ করতে দেখিনি। কেন (?) জিজ্ঞেস করলে বলেন, 'এই দু'টাকার ভাতা আর পেনশন খাওয়ার জন্য আমরা যুদ্ধ করি নাই। আমরা যুদ্ধ করেছি নিজেদের নায্য অধিকার প্রাপ্তির আশায়!'
যদিও সেটা পেয়েছে কিনা জিজ্ঞাসা করে আমি আজ পর্যন্ত তার কাছ থেকে কোন প্রতিউত্তর পাই নাই। তবে বর্তমানে তার নামে যে ভাতা আসে, তার পুরোটাই ভোগ করেন আমাদেরই পাশের গ্রামের হতদরিদ্র মরিয়ম নামের এক বুড়ি মহিলা। যাকে আদর করে আমরা ভদি দাদী বলে ডাকি। এই ভদি শব্দটা নিয়ে আসলে এইখানে হালকা একটু কপচানো দরকার। কারণ তা না হলে শব্দটার অশ্লিলতা নিয়ে অনেকেই হয়তো প্রশ্ন তুলতে পারেন। আসলে আমাদের অঞ্চলে ছোট থাকতে কেউ যদি শরীর স্বাস্থ্যের দিক থেকে একটু বেশি পরিমাণে নাদুশ নুদুশ থাকতো, তাহলে তাকে আদর করে সবাই ভদি বলে ডাকতো। সুতরাং এখন নিশ্চই বুঝতে পারছেন, মরিয়ম দাদীকে কেন সবাই ভদি বলে ডাকে?
সে যাহোক! তো আমি একবার কৌতুহল বশত আমার মেঝো চাচাকে জিজ্ঞাসা করছিলাম; 'চাচা আপনার প্রাপ্য অধিকার আপনি নিজে ভোগ না করে কেন ভদি দাদীকে সব দিয়ে দেন?'
জবাবে চাচার কাছ থেকে যেটা জানলাম সেটা ট্রাজেডিক কিনা জানি না, তবে রোমহর্ষক তো বটেই। ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে চাচা তার ফিল্ড কমান্ডারের কাছ থেকে দুই দিনের ছুটি নিয়ে গ্রামে আসছিলেন বাবা মায়ের মুখটা দেখার জন্য। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! শহর পেরিয়ে গ্রামে প্রবেশ করতেই তিনি পড়ে যান পাক বাহিনীর খপ্পরে। পাক বাহিনী সেদিন গ্রামের প্রত্যেকটা ঘরে ঘরে তল্লাশি চালিয়ে সামর্থ্যবান সকল পুরুষকে ধরে নিয়ে যাওয়ার অভিযানে নেমেছে। চাচা পাক বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার ভয়ে তাদের কাছ থেকে পালাতে গিয়ে দূর্ভাগ্যক্রমে ডান পায়ে গুলি খান। কিন্তু গুলি খাওয়ার পরেও তিনি না থেমে বরং প্রাণের ভয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কোন রকমে পাশের গ্রামের একটা কাঁটা ঝোঁপের আড়ালে লুকিয়ে পড়েন।
ঠিক তখনই তার প্রচন্ড রকমের পানির পিপাসা পায়! একদিকে কাঁটা ঝোঁপে কাঁটার খোঁচা, অন্যদিকে তীব্র পানির পিপাসা! তাছাড়া পায়ের ক্ষতস্থান থেকে অনবরত রক্তপাতে তিনি ক্রমশ্য দূর্বল হয়ে পড়ছিলেন। এমতাবস্থায় এইখানে পড়ে থাকলে নিশ্চিৎ মৃত্যু জেনে তিনি পিপাসিত শরীর নিয়ে খোঁড়া পা'টাকে টানতে টানতে কোন রকমে একটা বাড়ির দরজায় এসে করাঘাত করেন। কিন্তু ভিতর থেকে কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে পরে টলতে টলতে ঐ ভদি দাদীর জীর্ণ কুঠিরের সামনে এসেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। দাদী সম্ভবত তখন কুপি বাতি নিভিয়ে শোয়ার আয়োজন করছিলেন। কিন্তু ভিতর থেকে হঠাৎ ধপাস শব্দ শুনে দরজা খুলে বাইরে এসে দেখেন, তার দরজার সামনে একজন মানুষ উপুড় হয়ে পড়ে আছে! যার শরীর থেকে প্রচুর রক্ত বের হয়ে তার দরজার সামনেটা প্রায় ভিজিয়ে দিয়েছে!
এত রক্তক্ষরণ দেখে দাদী প্রথমে ভাবছিলেন লোকটা হয়তো মরেই গেছে। তবে কিছুটা পরীক্ষা নিরিক্ষা করে তিনি বুঝতে পারলেন যে, না মরে নাই! জ্ঞান হারা হইছে। দাদী ছিলেন কিছুটা কবিরাজ টাইপের। একা নির্ভেজাল মানুষ! যতদূর জানি, গ্রামে উনার আপন বলতে কেউ ছিল না। ঐ কবিরাজী করে আর পরের বাড়িতে খেটেখুটে তার কোনরকমে কষ্টে সষ্টে দিন চলে যেত। তো দাদী উপুড় হয়ে পড়ে থাকা আমার মেঝো চাচাকে চিৎ করে শুইয়ে দিতেই তৎক্ষনাত তাকে চিনতে পারেন। সাথে সাথে তিনি চাচাকে টেনে হিচড়ে ঘরের ভিতরে নিয়ে সামান্য সেবা সুশ্রুষা করতেই চাচার জ্ঞান ফিরে আসে। তখন দাদী চাচাকে কিছু ভাত আর ডাল খেতে দিয়ে দরজার সামনে বসে থাকেন বঁটি নিয়ে। যদি কেউ এসে দরজায় টোকা দেয়, সাথে সাথে তাকে জবাই করে দেবেন!
চাচার খাওয়া শেষ হলে তাকে ঘরের মধ্যে শোয়ার ব্যবস্থা করে দিয়ে তিনি দরজা বাইরে থেকে তালা দিয়ে ঐ রাত্রেই হ্যারিকেন নিয়ে বেরিয়ে যান আমাদের বাড়িতে খবর দিতে। তারপর আমাদের বাড়ি থেকে লোকজন এসে চাচাকে সেই রাত্রেই বাড়িতে নিয়ে যায়।
চাচা মনে করেন, তিনি যদি মুক্তিযোদ্ধা হন; তাহলে তার ভদি চাচীও একজন মুক্তিযোদ্ধা। তারও মুক্তিযুদ্ধের ভাতা পাওয়ার অধিকার আছে। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, দাদী বয়স্ক ভাতা বাবদ সামান্য কিছু টাকা ছাড়া আর কিছুই পান না। আর সেজন্যই আমার চাচা তার মুক্তিযুদ্ধে প্রাপ্য ভাতা বাবদ যাবতীয় সুযোগ সুবিধা সব ঐ দাদীকে দিয়ে দেন। চাচা মনে করেন, এই ভাতা তার থেকে তার চাচীরই সব থেকে বেশি প্রাপ্য!
তবে আমি বড় দুই চাচার গর্বিত মুখের কথা চিন্তা করে মাঝে মাঝে বাবার উপরে রাগ করে বলি, 'আচ্ছা বাবা, তুমি যুদ্ধে যাও নাই কেন বলতো?'
আমার কথা শুনে বাবা বিস্ময় মাখা কণ্ঠে বলেন, 'বলিস কিরে! পাঁচ বছর বয়সে কি যুদ্ধ করবো? তোর ভাল ভাবে কথা ফুঁটতেই তো পাঁচ বছর লেগে গিয়েছিল!'
বাবার কথা শুনে আমি লজ্জা পাই। যদিও আমি জানি, বাবা একদম ঠিক কথাটাই বলেছেন! মাত্র পাঁচ বছর বয়সে একটা বাচ্চা হয়তো সবেমাত্র অ=তে অজগর আসছে তেড়ে, আ=তে আমটি আমি খাব পেড়ে পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে! তবে তার দ্বারা যুদ্ধ (?) অসম্ভব!
তবে বাবা যুদ্ধ না করলেও তিনি যুদ্ধ পরবর্তি এই দেশের একজন গর্বিত সৈনিক ছিলেন। প্রায় চব্বিশ থেকে পঁচিশ বছর তিনি এই দেশের জন্য ছিলেন একজন নিবেদিত প্রাণ মানুষ। দেশের প্রয়োজনে পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে গিয়ে নিজের জীবনবাজি রাখতে ছিলেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমি কুমিল্লার ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টে থাকাকালীন সময়ে দেখেছি, কেবলমাত্র সৎ আর সাহসীকতার জন্য অনেক বড় বড় অফিসারও বাবাকে যথেষ্ট স্নেহ করতো। বাবাও তাদেরকে খুবই সম্মান করতেন। যদিও আমার বাবা কোন বড় মাপের কমিশন্ড অফিসার ছিলেন না। ছিলেন একজন সামান্য নন কমিশন্ড অফিসার। তবে বাবা যুদ্ধ করতে না পারলেও আমি যে একজন গর্বিত সৈনিকের সন্তান, সেজন্যও মনে মনে গর্ব অনুভব করি!
আমার বাবার মোট তিনজন সন্তান। দুইটা ছেলে আর একটা মেয়ে। বাবার তিন সন্তানের মধ্যে আমিই সবার বড়! মেঝো বোন শান্তা, এবার অনার্স ফাস্ট ইয়ারের ছাত্রী! আর ছোটভাই সীমান্ত পড়ে ক্লাস সেভেনে। ছোট বোন পিচ্চি থাকা অবস্থায় দেখতে একটু বেশি সুন্দরী হওয়ায় আমার এক দূর সম্পর্কের দাদী ওকে আদর করে পরী বলে ডাকতো। সেই পরী ডাক পরে এতটাই জনপ্রিয়তা পায় যে, পরবর্তিতে ঐটাই তার ডাক নাম হিসাবে ফিক্সড হয়ে যায়। আমি কোথায় যেন পড়েছিলাম, পৃথিবীতে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের মধ্যে ছেলে শিশুদের তুলনায় মেয়ে শিশুরা সব সময় একটু বেশি কিউট হয়! কেন হয় জানি না, তবে হয় যে এটা জানি। এবার একটা মজার কথা বলি? সত্যি বলতে, আমি নিজেও মনে মনে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি- 'হে আল্লাহ, বিয়ের পরে আমার প্রথম সন্তানটা যেন মেয়ে হয়!'
ধুর, কি বলতে কি বলছি। ধান ভানতে শিবের গীত গাওয়াটা বোধহয় ঠিক হচ্ছে না! এবার কাজের কথায় আসা যাক। গতকাল অফিসে কাজ না থাকায় বসে বসে ফেসবুকের "কোটা সংস্কার চাই" নামক পেজটাতে ক্রলিং করে করে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সাহসী ভাই বোনদের বীরত্ব গাঁথা কাহিনী গুলো পড়ছিলাম। এমন সময় ছোট বোন শান্তা ফোন করে আমাকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বেশ সাহসী গলায় বলল-
'ভাইয়া, চলমান এই যৌক্তিক কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণ করার জন্য আমি চললাম ফিল্ডে! পারলে তোরা কিছু করিস! আমরা দেখতে চাই, তোদের আর তোদের সরকারের পোষ্য বাহিনীর অস্ত্রের কত ধার!'
প্রায় ঝড়ের বেগে কথাগুলো বলে সে আমার প্রতিউত্তরের অপেক্ষা না করেই ফোনটা কেটে দিলো। আকস্মিক এই ঝড়ের কবলে পড়ে আমি তখনও প্রায় স্তম্ভিত হয়ে বসে আছি। পরে কিছুটা ধাতস্থ হয়ে ওকে আবারও ফোন দিলাম। কিন্তু ওপাশ থেকে কোন সাড় শব্দ না পেয়ে পরবর্তিতে বাড়িতে ফোন দিয়ে বিস্তারিত জানলাম...
সত্যি বলতে আমাদের দুই ভাইয়ের মাঝখানে ঐ-ই একমাত্র বোন হওয়ায় বাবা মা সহ আমাদের পরিবারের সবাই ওকে একটু বেশি আদর করে। আমার খুব ভাল রকম মনে আছে, ছোট থাকতে ও এতটাই ভীতু ছিল যে আমাকে রোজ বাইকের পিছনে করে ওকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে আসতে হতো। যদিও আমাদের দিকে তখন বাচ্চাদের সাথে অভিভাবক যাওয়ার কোন রীতি প্রচলিত ছিল না। তবে আমি যেতাম! কারণ ঐ যে বললাম, ও ছিল একটু বেশি পরিমাণে ভীতু আর অতি আদরের। তাছাড়া বাইক থেকে নামার সাথে সাথে প্রায় প্রতিদিনই সহপাঠীদের বিরুদ্ধে ওর অভিযোগ শুনতে শুনতে আমি সত্যিই টায়ার্ড হয়ে যেতাম।
কোনদিন কেউ হয়তো ওর জামা ছিড়ে দিছে। কেউ বা কলম কেড়ে নিছে। কেউ হয়তো ওর বসা বেঞ্চ দখল করে নিজে বসে আছে ইত্যাদি ইত্যাদি হাজার রকমের অভিযোগ। আর প্রতিদিনই স্কুলে গিয়ে আমাকেই সেগুলোর সমাধান করে দিয়ে আসা লাগতো। অথচ ও নিজের থেকে কাওকে কিচ্ছু বলতো না।
আমি নিজে দেখেছি, অতিরিক্ত রান্না বান্নার চাপ না থাকলে আম্মা কখনোই ওকে চুলার পাশে যাইতে দিতো না। পাছে চুলার উত্তাপে তার আদরের মেয়ের কোন স্কিন প্রবলেম দেখা দেয়! সেটা নিয়ে আমাদের দু'ভাইয়ের অবশ্য ক্ষোভের কোন সীমা ছিল না। তাছাড়া পথে ঘাটে বখাটেরা উত্তক্ত করে কিনা সেই ভয়ে বাবা সার্বক্ষণ যাকে চোখে চোখে রাখতো।
আমার সেই সহজ সরল বোনটাও আজ যখন বারুদের মত জ্বলে উঠে স্বশরীরে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার কথা বলে, তখন খুব ইচ্ছা করে আমিও ওর পাশে দাঁড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে সাহস দিয়ে বলি, 'যা বোন! আমি তোর ভাই, তোর পিছনে আছি! দেখি তোদের কে কি বলে!'
কিন্তু চাইলেও আসলে সব কিছু করা যায় না! আমি একজন সরকারি চাকুরিজীবি। এখান থেকে চাইলেই আমি সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারি না। আমি যদি কোন বিষয়ে সরকারকে কোন পরামর্শ প্রদানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি, তাহলে অবশ্যই সেটা অফিসিয়াল নীতিমালা মেনেই করতে হবে। তা না হলে আমি নীতিমালার বাইরে যাই করি না কেন, সেটা রাষ্ট্রদ্রোহীতার সামিল বলে গন্য হবে। এবং তৎক্ষনাত আমার নামের সামনে পিছনে বিদ্রোহী ট্যাগ লেগে যাবে। হোক সেটা যৌক্তিক অথবা অযৌক্তিক। সুতরাং এই জায়গায় বসে বোনের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে চোখের পানি ফেলে দোয়া করা ছাড়া আসলে আমার আর কিছু করার নাই!
তবে এর বাইরে আমার আরো একটা পরিচয় আছে। আমি একজন মানুষ! আর এটাই আমার সব থেকে বড় পরিচয়! একজন বিবেক সম্পন্ন মানুষ হয়ে দেশের মধ্যে চলমান এই কোটা সংস্কার নামক যৌক্তিক আন্দোলনকে সাপোর্ট না করার মত এতটা মনুষত্বহীন হয়তো এখনো হয়ে উঠতে পারি নাই। আর তাই আমি একজন সরকারি চাকরিজীবি হিসেবে নয়। বরং একজন সাধারন মানুষ হিসাবে, এক বোনের ভাই হিসাবে বলতে পারি-
'মন খারাপ করিস না বোন! সাথে নেই তো কি হইছে। একজন ভাই হিসাবে আমি সব সময় তোর পাশে আছি। তুই এগিয়ে যা বোন! আমি দূর থেকে তোকে স্যালুট জানাই! তোদের এই আন্দোলনকে স্যালুট জানাই। আর মন থেকে দোয়া করি, এভাবেই প্রতিবাদী কণ্ঠে যেন সারাজীবন তোরা সকল অন্যায়ের প্রতিবাদ করে যেতে পারিস! জয় তোদের নিশ্চিৎ...!!'
পরিশিষ্টঃ- কোটা ব্যবস্থা নিপাত যাক, মেধাবীরা সুযোগ পাক!
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ- টাইপিংয়ের ভুলের কারণে হয়তো অনেক জায়গায় বানানে ভুল থাকতে পারে। সেটাকে বিবেচ্য বিষয় হিসাবে না ধরে, ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখলে কৃতার্থ হবো!