ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত হইলেও বিশ্ব প্রেমিকদের জন্য বহুল আকাংখিত বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের এখনো একদিন বাকি আছে। তবে এর মধ্যেই দিনটাকে অত্যন্ত জাঁকজমক পূর্ণভাবে উদযাপন করার জন্য গোটা বিশ্বের প্রত্যেকটা প্রেমিক-প্রেমিকা, কপোত-কপোতি অথবা ফুল্টুস-ফুল্টুসি যাই বলেন না কেন, সবার মধ্যেই এক ধরনের চাপা উত্তেজনা বিরাজ করতেছে। অনেকেই হয়তো চাইবেন, এই দিনটাকে তার ভালোবাসার মানুষের জন্য একটু স্পেশাল কিছু কইরা দেখাইতে! কেউ হয়তো নদীতে ঝাঁপাইবেন, কেউ হয়তো ধুলা উড়াইয়া পার্কে বেড়াইবেন, কেউবা লং ড্রাইভে যাইবেন, যারা একটু কম খরচে পাব্লিক; তারা হয়তো ব্যাপারটা সাধারণ ফুচকার উপ্রে দিয়াও সাইরা ফেলাইতে পারেন (অবশ্য সেজন্য কাউকে কাউকে তার গার্লফেরেম কর্তৃক কৃপণ, কঞ্জুস, বখিল, স্বার্থপর ইত্যাদি গালি খাওয়ার সম্ভবনা থাকতে পারে বিধায় পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ কইরা হাজিরা খাতায় নাম লেখানোর জন্য সবিনয় অনুরোধ জানানো হইল)।
কিন্তু আমার আজকের পোস্টটা আসলে সেই সমস্থ প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য নয়, যারা ইতোমধ্যে তাদের পেরানের পিরিও জান্টুস জোগাড় কইরা নিজেদের ইয়ে দুলাইতেছেন। বরং আজকের পোস্টটা কেবল মাত্র সেই সমস্থ হতভাগ্য, ভাগ্যাহত, অভাগা-হতাশাগ্রস্থ, এ জীবন নিঃস্ব হইয়া গেছে টাইপের পাবলিকদের জন্য, যারা সারাজীবন ধইরা হাজারও চেষ্টা-তদবির করার সত্ত্বেও আজ অবধি একটা গার্লফেন্ড অথবা বয়ফ্রেন্ড তো জুঠাইতে পারেনই নাই। বরং ছেঁকা খাইয়া ব্যাঁকা হইয়া মনভার কইরা বইসা রইছেন।
তো প্রিয় প্রেমাকাতুর প্রেমিক ভাইয়্যুমনি এবং প্রেমিকা আপুনিমনিতা, প্রেমে ছ্যাঁকা খাইয়া সারাজীবন ধইরা তো কেবল স্যাড সং-ই গাইয়া গেলেন। আসেন না জীবনের শেষ চিকিৎসা মনে কইরা আসন্ন বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের দিন নিচের স্ট্যাইল গুলা একবার ব্যবহার কইরা দেখি, এবার কোন রোম্যান্টিক সং গাওয়ার সৌভাগ্য হয় কিনাঃ-
☆ ☆ ভ্যালেন্টাইন স্ট্যাইলঃ- বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের দিন নিজের ভালবাসা প্রকাশ করবেন, আর ভ্যালেন্টাইনকে স্মরণ করবেন না তাই কখনো হয় নাকি? যদিও এটা বর্তমান স্ট্যাইল গুলোর তুলনায় কিছুটা সেকেলে গোছের। কিন্তু তারপরেও, যে মানুষটার জন্য আজ আমরা এই বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে পেলাম; সেই বিখ্যাত মানুষটার প্রপোজালের স্ট্যাইলটাকে তো আর এক্কেবারে ফেলে দেওয়া যায় না। সুতরাং আসন্ন বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের দিন আপনিও আপনার প্রিয় মানুষটার কাছে নিজেকে একজন সত্যিকারের ভ্যালেন্টাইন হিসাবেও উপস্থাপন কইরা দেখইতে পারেন। হয়তো সেজন্য কিছুটা কাজ হইলেও হইতে পারে...
তবে সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ বার্তা হিসাবে প্রথমেই বলে নেওয়া ভাল যে, এই স্ট্যাইলটাকে অনুসরণ করা একজন সাধারন প্রেমিকের জন্য খুব একটা সহজ কাজ হবে বলে মনে হয় না। কারণ সেজন্য হয়তো আপনাকে অত্যন্ত কঠিন থেকে কঠিনতর পরীক্ষার সম্মূখিনও হওয়া লাগতে পারে। এমনকি শেষ পর্যন্ত ভালোবাসার জন্য নিজের প্রিয় জানটাও চইলা যাইতে পারে। তাছাড়া ফলাফলও কিছুটা সময় সাপেক্ষ। তবে আপনি যদি চান, যে ভ্যালেন্টাইনের মত আপনার ভালোবাসার কাহিনীও মানুষের মুখে মুখে প্রচারিত হোক। এবং সর্বসমক্ষে সেটা ভালোবাসার নমূনা হিসাবেও উপস্থাপিত হোক। তাহলে অবশ্যই এই পদ্ধতিটা কেবলমাত্র আপনার জন্যই প্রযোজ্য। তবে সেক্ষেত্রে আপনাকে নিন্মোক্ত থিউরি গুলো অবশ্যই পালন করতে হবেঃ-
প্রথমতো মুরগী চুরির দ্বায়ে আপনাকে ফাঁসির আসামী হিসাবে থাকতে হবে পরিত্যক্ত কোন একটা ভাঙাচোরা জেলখানার অন্ধকার ঘরের মধ্যে। তাছাড়া সেক্ষেত্রে উক্ত জেলখানার প্রধান কারাধ্যক্ষেরও একটা সুন্দরী এবং যুবতী মেয়ে থাকাটা খুবই অত্যাবশ্যক। এবং সেই মেয়েকেও প্রথমে আপনার প্রতি কিছুটা ইয়ে মানে অনুরক্ত হতে হবে। তারপর আপনার সেই মনের মানুষ (পড়ুনঃ কারাধ্যক্ষের মেয়ে) প্রতিনিয়ত জেলখানায় আপনার জন্য খাবার পাঠাবে এবং সাথে সুন্দর করে একটা চিঠিও লিখে দেবে। যে চিঠিতে লেখা থাকবে আপনার প্রতি তার অসম্ভব রকমের ভলোবাসার বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু আপনি তাকে ভালোবাসলেও প্রথম প্রথম সেটা একদমই প্রকাশ করতে পারবেন না। তারপর ঠিক যেদিন আপনার শেষ বিদায়ের ঘন্টা বেঁজে যাবে, মানে ফাঁসি কার্যকরের দিন চলে আসবে; সেদিন জীবনের শেষ ইচ্ছা হিসাবে জেলখানার কোন একটা গার্ডকে দিয়ে এক টুকরো কাগজ এবং একটা কলম আনিয়ে খুব সুন্দর করে একটা চিরকুট লিখে তাকে দিতে পারেনঃ-
'ওগো মোর ঝামেলা বানু, আমায় তুমি ভুলো না জানু। তোমায় আমি ভালোবাসি, ভয় নেই তাই পরতে ফাঁসি। এখানে তোমায় পায়নি তো কি? ওপার দেখা হবে ঠিকই। ভালো থেকো আল্লাহ্ হাফিজ, ইতি তোমার প্রিয় মফিজ!'
ব্যাস, তারপর আপনি চিরকুটটা সুন্দর মত ভাঁজ করে সেটা ঐ রুটির পাত্রের মধ্যে ভরে গার্ডের কাছে দিয়ে দেন। তারপর একসময় আপনার ফাঁসিও হয়ে যাবে। আর ফাঁসির সাথে সাথে আমাদের প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়্যুমনিরা তাদের স্ব স্ব সংবাদ পত্রে অত্যন্ত রসিয়ে রসিয়ে সুন্দর মনমুগ্ধকর শিরোনামের মাধ্যমে আপনার মৃত্যু সংবাদ প্রকাশের নিমিত্তে উদোম গায়ে ঝাঁপাইয়া পড়িবে আপনার মৃতদেহের উপ্রে...
☞ "মৃত্যুর পূর্বে আলোচিত মুরগী মফিজের শেষ ইচ্ছাটা কি ছিল জানুন" অথবা
☞ "ভালোবাসার অমরকৃত্তিঃ আলোচিত মুরগী মফিজ কর্তৃক মৃত্যুর পূর্বে কারাধ্যক্ষের সুন্দরী মেয়েকে প্রেম প্রস্তাব! পুরো জেলখানা জুড়ে কঠিন তোলপাড়। আবেগ সামলাইতে ১৪৪ ধারা জারি!" অথবা
☞ "মুরগী মফিজের প্রেমাপুখ্যানঃ ফুলের বদলে চুলের তোড়া। চেতনা কি তবে আজকাল চুলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে?" অথবা
☞ "কে এই মুরগী মফিজ? যার সাথে কারাধ্যক্ষের মেয়ের এতটা লটরপটর। আসুন জানি তার চৌদ্দগুষ্টির ইতিহাস সম্পর্কে!"
এছাড়াও তারা সেখানে আপনার স্বহস্তে লিখিত সেই ভালোবাসার চিরকুটটাও ছাপাতে ভুল করবে না। আর সাথে সাথে 'মুরগি মফিজের মৃত্যু দিনে, দিবস চাই জনে জনে' এই স্লোগানকে সামনে রেখে গোটা দেশ জুড়ে শুরু হয়ে যাবে হরতাল, ধরপাকড় আর কঠোর আন্দোলন। মাঝে মাঝে টিভিতে ব্রেকিং নিউজ আসতে থাকবে, 'ভালবাসার জন্য জীবনদানকারী বিরল প্রজাতির প্রেমিক মুরগী মফিজের জন্য গোটা দেশ আজও ভয়ংকর ভাবে উত্থাল। উরুথখালি থেকে দশজন আটক, পুলিশের সাথে সংঘর্ষে ভদিরমোড়ে পাঁচজন নিহত ছাড়াও বড়বালে (একটা জায়গার নাম) ১৪৪ ধারা জারি।'
তাছাড়া আপনার মৃত্যুর প্রতি গভীর শোক জানিয়ে আবাল পাবলিক কর্তৃক সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম গুলোতেও খোলা হবে লক্ষ লক্ষ ইভেন্ট। 'রেডিও ইয়ে' টাইপের কোন একটা পেইজ থেকে বলা হবে- "মৃত্যুর পূর্বে মুরগি মফিজ কর্তৃক স্বহস্তে লিখিত সেই বিরল প্রেম পত্রটি দেখুন! দয়া করে কেও লাইক না দিয়ে যাবেন্না!"
তখন আপনার প্রতি জনমানুষের এই গভীর আন্তরিকতা, আপনাকে কেন্দ্র করে দেশের মধ্যে চলতে থাকা হরতাল, আন্দোলন এবং দেশের সকল প্রেমিক সমাজের মনকে শান্তনা দিতে বাধ্য হয়ে সরকার আপনার মৃত্যু দিবসের দিন নতুন করে একটা 'ডে' ঘোষনা করতে বাধ্য হবে। জীবনে আর কি চাই। এবার দেখা যাবে দিনে দিনে সেই ডে'টাই একসময় মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করবে "বিশ্ব মফিজ ডে" হিসাবে!
☆ ☆ বাংলা সিনেমা স্টাইলঃ- প্রপোজ করার স্ট্যাইল গুলোর মধ্যে এই স্ট্যাইলটাকেই সাধারণত সব থেকে সহজ এবং কার্যকরি হিসাবে ধরা হয়ে থাকে। বেশি কিছু না, জাস্ট বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের দিন 'সন্ধ্যার পর তোদের সব্বাইকে চা খাওয়ামু, তয় তার আগে আমার একটা কাজ কইরা দিতে হইবেক' বইলা আপনার চার-পাঁচজন অন্তরঙ্গ বন্ধু ভাড়া করুন। তারপর তাদেরকে খুব ভাল ভাবে সেট করুন আপনার মনের মানুষের আশে-পাশে। এবং সময়-সুযোগমত ( পড়ুনঃ ফাঁকা জায়গা দেখে! মানুষের সামনে কইরা মাইর-ধইর খাইলে কিন্তু লেখক দ্বায়ী থাকবে না), তাদেরকে ঝাঁপিয়ে পড়তে বলুন আপনার মনের মানুষের উপর। আর আপনিও লুকিয়ে থাকুন তাদেরই আশে-পাশের কোন একটি ভাঙা-চোরা বিল্ডিং-এর দেওয়ালের আড়ালে।
তারপর যখন আপনার মনের মানুষ সেই সব ছেলেদেরকে বখাটে ভেবে তাদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য 'বাঁচাওওওওও, বাঁচাওওওওও' বলে চিৎকার করতে থাকবে; ঠিক তখনই আপনি পাশের সেই ভাঙা-চোরা বিল্ডিং-এর উপর থেকে লাফিয়ে পড়ুন আপনার বন্ধুদের ঘাড়ের উপর (একটু দেইখা-শুইনা পইড়েন ভাই। আবার লাফাইয়া পড়তে গিয়া তাদের ঘাড়-ঘুড় গুলা ভাইঙ্গা ফ্যালাইয়েন্না। অথবা আপনিও ঠ্যাং-ঠুং গুলা ভাইঙ্গেন না)।
তারপর আর কি! কিছুক্ষন তাদের সাথে সিনেমাটিক স্ট্যাইলে ঢিসুম ঢুসুম এবং হিরুলোম স্ট্যাইলে শারীরিক কসরত প্রদর্শন করুন। এভাবে কিছুক্ষন করার পরে তারা যখন ক্লান্ত হয়ে চলে যাবে, তখন আপনিও ঢিসুম ঢুসুম বাদ দিয়ে দেখতে থাকুন আপনার মনের মানুষের কোন ক্ষতি হইছে কিনা। আর গভীর ভাবে পর্যবেক্ষন করতে থাকুন আপনার মনের মানুষের মনের গতি।
অতঃপর যখন তাকে একদম অনড় অবস্থায় দেখবেন (আসলে সে অনড় থাকবে এতক্ষন যাবৎ ঘটে চলা ঘটনাটার করুণ পরিণতি কথা চিন্তা করে। মানে আপনি না থাকলে এতক্ষণে তার যে কি দূর্গতি হইতো ইত্যাদি ইত্যাদি), তখন আপনিও একটু ভাব দিয়ে চলে যাওয়ার উদ্দ্যোগ করতে থাকুন (আপনি যে কত বড় হিরু, এতদিন পর্যন্ত সে বুঝতে পারে নাই কেন (?) তাই একটু অভিমান আরকি)। আর আপনি চলে যাওয়ার উদ্দ্যোগ করতেই যদি পিছন থেকে খুব মিষ্টি কণ্ঠে "এই যে শুনছেন?" টাইপের কোন ডাক শুনতে না পান, তাহলে আমার এই লেখাটা পড়ার জন্য আপনার যতটুকু মেগাবাইট খরচা হইছে; তার সবটুকুই আমি বিনা বাক্য ব্যয়ে পরিশোধ করে দেবো... গ্যারান্টেড......
☆ ☆ হলিউড অথবা বলিউড স্ট্যাইলঃ- এই স্ট্যাইলটা বর্ননা করার আগে প্রথমেই বলে রাখি, একজন মাল্দার পার্টি হওয়ার পাশা-পাশি আপনার বডি ফিটনেসটাও কিন্তু এক্ষেত্রে হলিউড এবং বলিউড স্ট্যাইলের হইতে হইবেক। মানে আপনি যদি ধ্যাঁড়স বডি নিয়ে এই স্ট্যাইলটা দিতে যান, তাহলে অবশ্যই সেটা কাকের পালকে ময়ূরের পূচ্ছ লাগানোর মত একটা ব্যাপার-স্যাপার হয়ে যাবে। তবে আসলেই যদি আপনি কোন মাল্দার পার্টির পোলা অথবা মাল্দার পার্টি হন। এবং আপনার বডির পরিমাপও যদি নায়ক সলেমান খান অথবা ঋত্তিক রোশন স্ট্যাটাইলের হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে পৃথিবীর যে কোন মেয়েই আপনার প্রপোজ গ্রহণ করার জন্য শতকরা পঞ্চাশ ভাগ অগ্রসর হয়ে আছে।
এখন শুধু আপনাকে যেটা করতে হবে, আগামীকাল বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের দিন আপনি নায়িকার কলেজ যাওয়ার রাস্তায় শার্টের বোতাম খোলা অবস্থায় বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকুন। হাতে থাকবে একটা গিটার, মুখে থাকবে একটা বেনসন সিগারেট। আর আপনার লক্ষ থাকবে.....গার্লফ্রেন্ডের বাসার গেট। একসময় আপনার নায়িকা গেটখুলে বাসা থেকে বের হবে, আর আপনিও সেই সুযোগে বাইক থেকে নেমে "হাই মিলি, হাউ আর ইউ?" বলে তার দিকে এগিয়ে যান। আমরা নিশ্চিৎ- আপনার এই বুক খোলা ছিক্স প্যাক, ধোঁয়া ওঠা বালছাল (ওহঃ স্যরি বেনসন), এবং হাতের গিটার দেখলে যে কোন মেয়েই আপনার প্রতি অনুরক্ত হয়ে সে আপনার প্রেমে পড়ে যাবে। তবে এক্ষেত্রে একটা জিনিস অবশ্যই দেখে নেবেন। সেটা হল, আপনার নায়িকার পিছন পিছন কোন শনি (বাবা-মা, ভাই-বোন এই জাতীয়) আসতেছে কিনা। কারণ তা না হলে কিন্তু দাবড়ানি খাওয়ার চান্সটাকেও এক্কেবারে ফেলে দেওয়া যায় না।
☆ ☆ অনন্ত জলিল স্ট্যাইলঃ- আমার মনে হয় না বাংলা সিনেমাখোর কোন পাবলিকের কাছে এই স্ট্যাইলটা আবার নতুন করে বর্ননা করা লাগতে পারে। তবে এই স্ট্যাইলটা যে কতটা ভয়ংকর এবং প্রাণঘাতি সেটা কেবল যারা 'What is Love/নিঃস্বার্থ ভালোবাসা' নামক সিনেমাটা দেখেছেন তারাই কেবল বলতে পারবেন। সুতরাং একজন সাধারণ প্রেমিক হিসাবে অবশ্যই আপনার জন্য ভাল হবে এই স্ট্যাইলটার থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকা। কিন্তু তারপরেও যদি আপনি কোন ভাবেই আপনার মনের মানুষকে পটাইতে না পারেন, এবং একান্তই যদি আপনার জন্য ভালোবাসার খুব বেশি প্রয়োজন হয়ে পড়ে; তাহলে মৃত্যুর শেষ চিকিৎসা হিসাবে অবশ্যই এই স্ট্যাইলটা একবার ব্যবহার করে দেখতে পারেন। আমি নিশ্চিৎ, কোন ধরনের পার্শ্ব প্রতিকৃয়া ছাড়াই এই স্ট্যাইল যে কোন কলিকাতা হার্বাল অথবা মার্দাজ হার্বালের থেকেও দ্রুত এবং অত্যন্ত নির্ভরতার সহিত কাজ করবে।
এখন আপনি যেটা করবেন, প্রথমতো বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের দিন আপনার মনের মানুষকে ডাকুন; তার সামনা-সামনি দাঁড়ান। তারপর তাকে কোন কিছু বুঝতে না দিয়ে জলন্ত ভাইয়ের মত 'ওগো পিওতমা' বলে ঘ্যাঁচ করে আপনার বুকের বাম পাশে ডান হাত দিয়ে একটা জোরে থাবা মেরে নখ দিয়ে চামড়া এবং মাংশ ভেদ করে হাত ঢুকিয়ে দিন একদম কলিজার মধ্যে (ইয়ে বুকের উপরে হাড়ের যে জয়েন্ট গুলো আছে সেগুলো কিভাবে ভেদ করবেন উহা লেখক বলিতে পারে না)।
তারপর বের করে আনুন আপনার কলিজাটাকে। আর সেই কলিজার ধুকপুকানির কারণ হিসাবে আপনার মনের মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করুন যে, ওটা আসলে কোন সাধারণ ধুকপুকানি নয়। ওটা হল আপনার মনের মানুষের আদরের ডাকের প্রতিধ্বনি মাত্র- 'জান....টুস, জান....টুস!'
তারপর আর কি! এই রকম অবস্থায় আপনাকে ভালোবাসবে না এমন কোন কঠিন হৃদয়ের মেয়ে এই পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত জন্মাইছে নাকি? অতঃপর সুখে শান্তিতে ঘর-গৃহবাস করতে থাকুন.....
☆ ☆ হুমকি-ধামকি স্ট্যাইলঃ- "ঐ ছেমড়ি তুই আমাকে ভালোবাসবি না? তোর বাপ বাসবে শালী (গে নাকিরে শ্লা! বাপের ভালোবাসা দিয়া করবেটা কি?)। আজ শেষ বারের মত জানতে এসেছি তোর মনের কথা। ভালোয় ভালোয় যদি চাস তো ভালোবাস, না হলে কিন্তু পরে পস্তাবি। মনে করিস না আমি তোকে অত সহজে ছেড়ে দেবো। বরং সহজে না পাইলে জোর করে হলেও তোর কাছ থেকে আমি ভালোবাসা আদায় করে ছাড়বোই ছাড়বো....হু..হা..হা..হা ইত্যাদি ইত্যাদি!" (শয়তানি হাসির ইমো হবে)
আধুনিক বাংলা সিনেমার গুণে উপরি উল্লেখিত কথা গুলো সম্পর্কে জানে না, এমন মানুষ মনে হয় আমাদের এই বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর উক্ত পদ্ধতীটাকেই বলা হয় হুমকি-ধামকি পদ্ধতি। মানে এক কথায় যাকে বলা যায়, জোর করে ভালোবাসা আদায় করা আরকি।
যদিও ফিরতি মন্তব্যে "ছেড়ে দে শয়তান! তুই আমার দেহ পাবি কিন্তু মন পাবি না" টাইপের কোন মন্তব্য হয়তো শুনতে পাইবেন। তবে তাতে একদমই ঘাবড়াবেন না। বরং ঐটাকেও বাংলা সিনেমার একটা ওল্ড ভার্সন হিসাবে ধরে নেবেন। কেননা বিখ্যাত মানুষরাই বলে গেছেন, কাউকে ভালোবেসে মন দান না করে দেহ দান করাটা আসলে- "পরকিয়া কারকে লইচ্চা বিভক্তি!" সুতরাং নো টেনশন, ললিপপ শুকতে শুকতে কদম বাড়াইয়া আগাইয়া আসেন। ভালোবেসে দেহ যখন পাইতেছেনই, তখন আর মন পাইতে কতক্ষন? সে এক সময় না এক সময় পেয়ে যাবেনই।
☆ ☆ ডিজিটাল ক্যামেরা অথবা ডিএসএলআর স্ট্যাইলঃ- অত্যাধুনিক পোলাপইনের ভাষ্যমতে 'আমার অনেকগুলো গার্লফ্রেন্ড আছে' বাক্যটার ইংরেজি ট্রান্সলেশান হবে- 'I have a DSLR!' সুতরাং আপনার কি নিক্কন, ক্যানন ইত্যাদি টাইপের কোন ডিএসএলআর ক্যামেরা আছে? তাহলে আর চিন্তা কি? মাইয়ারা তো কেবল আপনার জন্যই ওয়েট করতাছে। বর্তমান সময়ে একজন ডিএসএলআর ধারী পোলার যে কত মূল্য, সেটা কেবলমাত্র সেই পোলার গার্লফ্রেন্ডরাই ভাল বলতে পারবে। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, আপনি যেকোন ডিএসএলআর ধারী পোলার কাছে জিগাইয়া দেখেন 'বর্তমানে তার গার্লফ্রেন্ড কতজন?' দেখবেন সঠিক ভাবে সে তাদের নামগুলোও বলতে পারবে না। মানে ডজ্জন খানিক তো হবেই। সুতরাং আসন্ন বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের দিন যদি নিজেকে আপনি হতাশার সাগরে ডুবাইয়া দিতে না চান, তাহলে আজই যে কোন ক্যামেরার শো রুম থেকে একটা ক্যামেরা কিনে আনুন। তারপর সেই ক্যামেরা গলায় ঝুলিয়ে হাজির হয়ে যান আপনার প্রিয়তমার বাড়ির সামনে। অতঃপর দেখুন না, ক্যামেরার কি ক্যালমা......
☆ ☆ হিমু স্ট্যাইলঃ- হুমায়ুন আহম্মেদের সৌজন্যে বর্তমান সময়ে হিমুকে চেনেনা এমন কোন শিক্ষিত মানুষ কি আদৌ এই বাংলাদেশে আছে? আমার তো মনে হয় না। বিশেষ করে মেয়েরা তো নয়ই। অন্তত যতদূর জানা যায়, হুমায়ুন আহম্মেদের সৃষ্ট সব গুলো ক্যারেক্টারের মধ্যে শিক্ষিত মেয়েরা সব থেকে বেশি পছন্দ করে এই হিমু চরিত্রটাকে। সুতরাং আর দেরি কেন? বরং আগামী কালই বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের দিন একটা পকেট ছাড়া হলুদ পাঞ্চাবি, একটা চটের ব্যাগ এবং খালি পায়ে রাস্তায় বের হয়ে পড়ৃুন। আর নিজেকে একজন পুরোদস্তুর হিমু হিসাবে পরিচয় দিতে থাকুন। তারপর দেখুন হিমুর কারিশমা.... কেবল অটোগ্রাফের জন্য আপনার পিছনে মেয়েদের লাইন পড়ে যাবে! এমনকি যে আপনি এতদিন পর্যন্ত কোন মেয়ের কাছে পাত্তাই পাইতেন না, সেই আপনি অটোগ্রাফ দিতে দিতে হয়তো ক্লান্তও হয়ে যেতে পারেন। তবে তারা আসলে আপনাকে ভালো না বাসলেও হিমুকে ভালোবেসে আপনার কাছে আসবে। আর আপনার তখন কাজ হবে, তাদের মধ্য থেকে এমন একজনকে বেছে নেওয়া যে আসলেই সত্যিকার ভাবে হিমুকে ভালোবাসে। কারণ যে সত্যিকার হিমুকে ভালোবাসে, সে হিমুর ভেকধারী আপনাকেও ভালোবাসতে বাধ্য হবে গ্যারান্টেড!
☆ ☆ হিরুলোম স্ট্যাইলঃ- এই পদ্ধতী ব্যবহার করতে গেলে আপনাকে যে খুব একটা রুপ চেহারার অধিকারী কিংবা বিশাল বডি ফিটনেসের অধিকারী হইতে হবে এমন না। বরং খুবই সহজ এবং সাবালিল ভাবে আপনি আগামীকাল বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের দিন এই পদ্ধতীটা আপনার মনের মানুষের উপর প্রয়োগ করে দেখতে পারেন, আশাকরা যায় এই পদ্ধতীর মাধ্যমে আপনার এতদিন ধরে যত্নকরে তুলে রাখা মনবাসনাটা পূর্ণ হলেও হতে পারে।
আর সেজন্য আপনাকে কিচ্ছু করতে হবে না। কেবল খানকত শুটকি আর ভুটকি (হিরুলোমের ভিডিও গুলো দেখলে বুঝবেন) জোগাড় করে তাদের সাথে স্ট্যাইল মাইরা কিছু ভিডিও বানিয়ে সেটা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেন। ব্যস বাকি কাজ করে দেবে আমাদের প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়ুমনিরা। আপনার পিন্ডি চটকিয়ে যদি রাতারাতি তারা আপনাকে বিখ্যাত না বানাইতে পারে, তাইলে সোশ্যাল মিডিয়ার মা'য়রে বাপ। আর আপনার এই রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে ওঠার ঘটনাটা যখন সংবাদ পত্র অথবা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম (মুখবই) যোগে আপনার মনের মানুষের কানে পৌঁছাইবে, তখন কি আর সে পারবে আপনার প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করতে? ভুলে যাবেন না, "মেয়েরা টাককেও বিয়ে করতে পারে, যদি সেই টাকের সাথে টাকাটাও থাকে!"
☆ ☆ ডিজিটাল স্ট্যাইলঃ- সব থেকে সহজ এবং লাভজনক পদ্ধতি। যে পদ্ধতি প্রয়োগে কোন ধরনের পার্শ্ব প্রতিকৃয়া তো নেই-ই, আরো বরং আপনার বিখ্যাত হওয়ার রাস্তা খুলে যাবে খুব অল্প পরিশ্রমেই। আর কেবল মাত্র এই কারণেই বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের প্রত্যেকটা পোলাপানই অত্যন্ত স্বাচ্ছ্যন্দের সহিত এই পদ্ধতিটাকে ফলো করছে!
আগামী কাল বিশ্ব ভালোবাসা দিবস থাকলেও সেজন্য আমাদের স্কুল অথবা কলেজ গুলোতে কোন ধরনেরই সরকারি ছুটি ঘোষনা করা হয় নাই। আর বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের দিনে আপনার মনের মানুষের কাছে নিজের প্রেম নিবেদন করার এটাই হল সব থেকে মোক্ষম সুযোগ। সুতরাং প্রথমেই আপনি আপনার স্কুল অথবা কলেজেরই কিছু পুংটা পোলাপান জোগাড় করুন। তারপর তাদেরকে আপনার প্রপোজ করার ট্রিক্সটা শিখিয়ে দেন। যেন আপনার মনের মানুষ আসার সাথে সাথে তারা চারদিক থেকে হাতের সাথে হাত রেখে আপনার মনের মানুষকে বৃত্তাকার একটা সার্কেলের মধ্যে ঘিরে রাখে।
তারপর আপনি হাতে একটা রক্তলাল গোলাপ নিয়ে হস্তবন্ধনির মধ্যে আবদ্ধ আপনার মনের মানুষের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে তাকে আপনার মনের কথাটা খুলে বলুন। এবং অতি অবশ্যই পাশের অন্য আর একজন পুংটাকে বলুন সেটা ভিডিও করে রাখতে। বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে মনেহয় এমন কোন মেয়ে নাই যে, আপনার এতবড় সারপ্রাইজকে সে ডিনাই করে ফিরিয়ে দেবে! সুতরাং ভালো তো আপনাকে তার বাসতেই হবে! তারপর প্রপোজ শেষ করে উক্ত ভিডিওটা আপলোড করে দিন সোশ্যাল মিডিয়ায়। ব্যস, আর কিছু লাগবে না। গার্লফ্রেন্ডের সাথে যে আপনি রাতারাতি বিখ্যাত হওয়াটাও ফ্রিতে পেয়ে যাবেন. এ ব্যাপারে যে কোন রকমেরই গ্যারান্টি আর কেউ দিতে না পারলেও অন্তত আমি পারি.....
☆ ☆ আঙ্গুর ফল টক স্ট্যাইলঃ- উপরে উল্লেখিত একটা স্ট্যাইলও যদি আপনি কাজে না লাগাইতে পারেন, তাহলে অবশেষে আপনার জন্য এই একটাই মাত্র স্ট্যাটাইল বাকি আছে। আর অবশ্যই সেটা আপনার জন্য একদম পারফেক্ট স্ট্যাইল হবে বলে ধারনা করা যাচ্ছে। শুধু ব্যর্থ প্রেমিক বা প্রেমিকারাই না, বরং চাইলে এই স্ট্যাইল আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা যে কেউই ব্যবহার করতে পারে। আর সেজন্য আপনাকে একটুও কষ্ট করতে হবে না। বরং বাসায় শুয়ে শুয়ে একটা ছেড়া কাঁথা গায়ে দিয়ে কেবল একমনে ভাবতে থাকুন- 'ভালোবাসা ভালু না!'
উপরে উল্লেখিত স্ট্যাইল গুলো ছাড়াও ভালোবাসার ট্রিক্স হিসাবে আরো কিছু জনপ্রিয় স্ট্যাইল আছে। যার মধ্যে অন্যতম হল- "শশুর-শাশুড়ি পটানো স্ট্যাইল, কাব্যিক স্ট্যাইল, সেলিব্রেটি স্ট্যাইল, তেল্মারা স্ট্যাইল, আবুল মার্কা স্ট্যাইল এবং সর্বশেষ লুলীয় স্ট্যাইল!"
☞ ☞ সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ- পোস্টে উল্লেখিত যাবতিয় স্ট্যাইল গুলোর সবই এই লেখকের অনূর্বর মস্তিষ্কের একটা বাহ্যিক প্রকাশ মাত্র। যার সাথে বাস্তব জীবনের কোন মিল নেই। তবে চাইলে আপনি আপনার ভালোবাসার মানুষটাকে চিরদিনের জন্য আপন করে কাছে টেনে নিতে উপরে উল্লেখিত স্ট্যাইলগুলোর মধ্যে যে কোন একটি অথবা একের অধিক স্ট্যাইলকে ব্যবহার করে দেখতে পারেন। হয়তো কাজ হইলেও হইতে পারে!
তবে সেক্ষেত্রে অভার ডোজ (লিটনের ফ্লাট) অথবা চেইন রি-এ্যাকশানের কারণে যদি আপনার প্রেমের মধ্যে কোন ধরনের পার্শ্ব-প্রতিকৃয়া লক্ষ করা যায় অথবা আপনি যদি কোন ধরনের দূর্ঘটনার শিকার হন, তাহলে সেজন্য কোন ভাবেই লেখককে দ্বায়ী করা যাবে না! বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের দিন মনের মানুষের সাথে আপনার দিনটি সুন্দর কাটুক, সেটাই হবে আপনার জন্য আমার সব থেকে বড় শুভ কামনা! সবাইকে অগ্রীম হ্যপি ভ্যালেন্টাইন ডে'র শুভেচ্ছা.....
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ- টাইপিংয়ের ভুলের কারনে হয়তো অনেক জায়গায় বানানে ভুল থাকতে পারে। সেটাকে বিবেচ্য বিষয় হিসাবে না ধরে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখলে কৃতার্থ হবো! তাছাড়া এতক্ষণ যাবত সাথে থেকে এবং কষ্ট করে এতবড় একটা পোস্ট পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন! সবাইকে পহেলা ফাল্গুন তথা নব বসন্তের শুভেচ্ছা! হ্যাপি ব্লগিং....!!