ভারতের থিংক ট্যাংক ও গোয়েন্দা বাহিনীর কাজের একটা পেটার্ন আছে। এরা একই সময়ে দুটি ইস্যুর অবতারণা করে। একটি ইস্যুতে তে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আবদ্ধ হলে অন্য ইস্যুটি সবার অগোচরে পার করে নেয় ।সাম্প্রতিক সময়ের একটি উদাহরণ দেই তে হলে বুঝতে সুবিধা হবে ,সবার দৃষ্টি যখন কোটা সংস্কার আন্দোলন এর দিকে তখন তারা চামে দিয়ে রেল করিডোর চুক্তি সেরে ফেলছে। সরকার পরিবর্তন না হলে এতো দিনে রেল করিডোর চুক্তির ইস্যুটি ধামা চাপা পরে যেতো। এখনো এদের খেলার কৌশল একই রকম আছে, আগে এরা আওয়ামীলীগ এর নেতাদের ব্যবহার করে খেলতো এখন বি এন পি নেতাদের ব্যবহার করে খেলে এটাই পার্থক্য। সবাই যখন রাষ্ট্রপতি চুপ্পুর অপসারণ এর দাবি নিয়ে ব্যাস্ত তখন অন্যদিকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা আট দফা দাবি নিয়ে মহাসমাবেশ করছে সেই আগের পেটার্ন।
কেমন ত্রিভুজ প্রেম দেখেন, এই রাষ্ট্রপতি চুপ্পু আগে এস আলমের দখল করা ইসলামি ব্যাংক এর গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিল। তিনি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় এস আলম ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়ে সেই অর্থ বিদেশে পাচার করেছে।বাজারে গুজব আছে উনার একাধিক দেশে বিনিয়োগ আছে এমনকি একাধিক দেশের নাগরিকত্ব থাকার খবর ও শোনা যায় । রাষ্ট্রপতি চুপ্পু অপসারণের বিপক্ষে অবস্থান নিলো বি এন পি নেতা সালাউদ্দিন, যিনি কিছু দিন আগে নির্বাচিনী এলাকায় যাওয়ার সময় এস আলমের গাড়ি ব্যবহার করে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিলেন। এই সালাউদ্দিন বলে রাষ্ট্রপতিকে সরালে নাকি দেশে সাংবিধানিক সংকটের সৃষ্টি হবে। কি আজব ! নয় বছর পর ভারত থেকে দেশে ফিরে এখন আমাদের সংবিধান শিখাচ্ছেন। যে দেশের মানুষ পনেরো বছর থেকে কোনো ভোট দিতে পারে না ,যে দেশে রাতের ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয় ,সেই দেশ কোনো সংবিধান অনুযায়ী চলে ?
বি এন পি আবারো ভারতের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছে। বি এন পি সহ অনান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের উচিত ছিলো এক হয়ে ইউনুস সরকারের পাশে দাঁড়ানো তারা তা না করে ভারতের কথায় লাফাচ্ছে। ফলাফল তৃতীয় পক্ষ ফায়দা নিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করছে এতে স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগের এর জন্য নতুন করে ফিল্ড তৈরী হচ্ছে। হিন্দু ধর্মালম্বী দের অনুষ্ঠানে বক্তাদের কথা শুনলে বিষয়টা আরো স্পষ্ট হয়ে উঠবে। তারা বলছেন “কেউ যদি আমাদের উৎখাত করে শান্তিতে থাকার চেষ্টা করেন, তাহলে এ ভূমি আফগানিস্তান হবে, সিরিয়া হবে। সাম্প্রদায়িক আচরণ করে বাংলাদেশের কোনো গণতান্ত্রিক শক্তি রাজনীতি করার সুযোগ পাবে না। ক্ষমতার পটপরিবর্তন হচ্ছে বারবার, এ দেশে স্থিতিশীলতা আসছে না। শিক্ষককে পদত্যাগ করানো হচ্ছে। শুধু সংখ্যালঘু পরিচয়ে ৯৩ জনকে পুলিশের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ভেটেরিনারি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দুদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। মাঝখানে কিছুদিন এমন অপকর্ম থেমে গিয়েছিল। এখন আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। আমরা আর নীরব থাকব না। আমরা গণতন্ত্রের নামে প্রহসনকে মেনে নেব না। আমরা সংখ্যানুপাতিক হারে সংসদে আসন চাই।”
এই বক্তব্য থেকে কি বুঝলেন দেশেকে স্থিতিশীল করার জন্য আবারো আওয়ামীলীগ কে ক্ষমতায় আনতে হবে লাগলে আরো পনেরো বছর ক্ষমতায় রাখতে হবে। না হইলে এই ভূমি আফগানিস্তান সিরিয়া হবে , এরা বাংলাদেশ এর নাম উচ্চারণ করতে চায় না এটা উনাদের কাছে ভূমি। ৯৩ জন পুলিশ অপরাধী হলেও তারা সংখ্যালঘু তাই তাদের কে কিছু বলা যাবে না। তাদের সাত খুন মাফ। এতো দিন রাতের ভোট ,ডামি ভোট যাই হয়েছে সেটাই সঠিক গণতন্ত্র ।সংসদে তারা আনুপাতিক হরে তাদের প্রতিনিধি বসাতে চায়। দুঃখের বিষয় বি এন পি র ছাগল গুলা এই বক্তব্যের সারমর্ম বুঝে নাই। তারা উলটা আওয়ামীলীগ কে রাজনীতিতে রাখার জন্য ওকালতি করে যাচ্ছে। যারা এতো দিন ঠান্ডা মাথায় নেতৃত্ব দিয়ে দলকে একটা অবস্থানে আনলো তারা সবাই সরে গেছে। ইদানিং দলীয় বক্তব্য দেয় এস আলমের ভাড়া করা লোকজন।
উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠন আর এস এস ইতিমধ্যে তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে । তাদের পরামর্শে হিন্দুধর্মালম্বীরা আট দফা দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছে । শুরুতে তারা দেশের প্রতিটি জেলায় মহাসমাবেশ এর কর্মসূচি ঘোষণা করেছে । ঘোষিত ৮ দফা দাবি আদায় না হলে পরবর্তীতে তারা ঢাকা অভিমুখে লংমার্চের হুঁশিয়ারি দিয়েছে । বাংলাদেশে হিন্দু মুসলিম এক সাথে শান্তিতে বসবাস করছে সেটা বিজেপি সহ্য করতে পারছে না ।কট্টর বিজেপি অনেক দিন থেকে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গার চেষ্টা করে আসছিলো কিন্তু বেটে বলে সংযোগ হচ্ছিলো না ।এখন তারা সেই সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশে হিন্দু মুসলিমের মাঝে একটা ভেজাল বাঁধিয়ে দিতে পারলে পরের বার ভারতের নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে ।তখন তারা বলবে বাংলাদেশের হিন্দু জনগোষ্ঠীকে বাঁচাতে ভারতে বি জে পি সরকার কে আবার ক্ষমতায় আনা প্রয়োজন ।
এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের এক সাথে কাজ করতে হবে ।বি এন পি যেই পলিসিতে এগুচ্ছে সেটা শীঘ্রই ফ্লপ খাবে ।বি এন পি ভাবতেছে ভারত আওয়ামীলীগ কে বাদ দিয়ে বি এন পি কে আগলে নিবে সেটা কখনো সম্ভব না ।আওয়ামীলীগ এর সাথে ভারতের সম্পর্ক বহু দিনের ।গত পনেরো বছরে ছয় লক্ষ কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হয়েছে।এই টাকার ভাগ ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা , রাজনৈতিক দলের নেতারা ,প্রাক্তন ভারতের ডিপ্লোমেটরা ও সাংবাদিক সহ সকলেই পেয়েছে।প্রতিদান স্বরূপ তারা এখন আওয়ামীলীগ কে পুনঃ প্রতিষ্ঠা করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে ।বি এন পি এভাবে দুই নৌকায় পা দিয়ে বেশি দিন চলতে পারবে না ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:৫২