চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের তৈয়ব আশরাফ রেজি. প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুবোধ কান্তি সিকদারের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, প্রধান শিক্ষক সুবোধ পঞ্চম শ্রেণীর সব ক্লাস নিজে নেন। তিনি ক্লাসের ছাত্রীদের তার কাছে প্রাইভেট পড়তে বলেন। প্রাইভেট না পড়লে তাদের পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেয়া হবে বলে হুমকি দেন। ফলে প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে স্কুলের একটি রুমে শিক্ষার্থীরা তার কাছে পড়তে যায়। এরই মধ্যে তিনি কিছু দিন পরপর কোনো এক ছাত্রীকে অফিস ঝাড়ু দেয়ার নাম করে ডেকে নিয়ে দরজা বìধ করে যৌন নিপীড়ন চালাতেন। এ ঘটনা কাউকে না বলতে তিনি ছাত্রীদের পরীক্ষায় ফেল করানো ও স্কুল থেকে বের করে দেয়ার ভয় দেখাতেন।
নির্যাতিত ভিকটিমের সহপাঠী ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, অতি দরিদ্র পরিবারের ১২ বছর বয়সী ভিকটিমকে একই কায়দায় অফিসে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে সুবোধ। এর পর মেয়েটি অসুস্খ হয়ে পড়লেও লজ্জায় মাকে কিছু না বলে চুপ থাকে। একপর্যায়ে মেয়েটি তার মাকে ঘটনা খুলে বলে। সাথে সাথে ভিকটিমের মা-বাবা স্কুলে গিয়ে এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে অনেক ছাত্রী অতীতে তাদের ওপর স্যারের এমন যৌন নিপীড়নের কথা প্রকাশ করে।
এ ঘটনা জানাজানি হয়ে গেলে অন্য শিক্ষকদের সাক্ষী রেখে প্রধান শিক্ষক সুবোধ নিজ কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়ে ও একটি লিখিত মুচলেকা দিয়ে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতির কাছে জমা দেন। এতে তিনি আগামীতে এমন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত না হওয়ার অঙ্গীকার করেন। এ ঘটনার পর ওই স্কুলের বেশ কয়েকজন সাবেক ছাত্রী অতীতে তাদের সাথেও এমন আচরণ করা হয়েছে বলে এ প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাশের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রী জানায়, আমাদের সাথেও তিনি এমন আচরণ করতেন। কিন্তু জানাজানি হয়ে গেলে মর্যাদাহানির ভয়ে কাউকে কিছু বলিনি। আমরা শিক্ষক নামের এ লম্পটের বিচার চাই।
এই প্রতিবেদক গতকাল সোমবার ভিকটিমের বাড়িতে গেলে লজ্জায় মেয়েটি বাড়ি থেকে বের হয়নি। তবে তার মা বলেন ‘আমার সহজ সরল মেয়ের প্রতি এ জানোয়ার যা করেছে আমি তার বিচার চাই’। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার অধীর কান্তি দে বলেন, ঘটনাটি আমি জেনেছি। তবে পূর্ণ তদন্ত ছাড়া সব কিছু বলতে পারছি না।
গতকাল সরেজমিন অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায়, অভিযুক্ত শিক্ষকের ব্যাপারে এলাকার সবাই কমবেশি জানেন। তবে লজ্জাজনক বিষয়হেতু কেউ মুখ খুলতে চান না। এক অভিভাবক জানান, এ শিক্ষকের কর্মকাণ্ড নিয়ে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা পর্যন্ত বলাবলি করে।
স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির লোহাগাড়া উপজেলা শাখার নেতারা সুবোধের এসব অপকর্মের অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, তাকে নিয়ে আমরা চরম বেকায়দায় আছি। তিনি আমাদের মান ইজ্জত সব নষ্ট করে দিয়েছেন। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন লোহাগাড়া শাখার নেতৃবৃন্দও এ ঘটনার বিচার দাবি করেছেন।
View this link
কপি পেষ্টView this link
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০১১ ভোর ৫:৪২