আর্তের সেবায় নার্স—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখেই নার্সিং পেশার উদ্ভব । ডাক্তারের দেয়া ওষুধপত্র আর নার্সের সেবায় রোগ নিরাময়—সারা বিশ্বে এই বিহিত মেনেই পরিচালিত হয় চিকিত্সা কেন্দ্র বা হাসপাতাল। কথায় আছে, নার্সের নিবিড় শুশ্রূষায় অর্ধেক সেরে ওঠেন রোগী। সেই নার্সই যদি কর্মবিমুখ হন, নিজের কাজ করান অন্য পেশায় নিয়োজিত হাসপাতাল কর্মচারীদের দিয়ে, তাহলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের চিকিত্সার মান কোন তলানিতে ঠেকেছে তা কল্পনা করতেও গা শিউরে ওঠে। হাসপাতালে ডাক্তার বা নার্সরা যথাযথ দায়িত্ব পালন করছেন না— এমন হাল হলে চটজলদি বলে দেয়া যায়, ওই হাসপাতালটি স্বয়ং রোগশোকে জর্জরিত। একে সুস্থ করতে সংশ্লিষ্ট সবারই চিকিত্সা জরুরি।
জানা গেছে, বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজের রোগীদের অনেকে জিম্মি হয়ে পড়েছেন নার্সদের হাতে। ট্রিটমেন্ট অনুযায়ী নার্সরা যথাসময়ে রোগীদের ওষুধ প্রয়োগ করছেন না। নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করাচ্ছেন স্পেশাল আয়াদের দিয়ে। আয়া যত স্পেশালই হোন না কেন তিনি নার্সের কাজ করার কেউ নন। এ ধরনের অব্যবস্থায় চিকিত্সকদের দেয়া ট্রিটমেন্ট অনুযায়ী ওষুধ দেয়া হচ্ছে না রোগীদের। এমনকি যেসব ওষুধ হাসপাতালে নেই সেগুলো বাইরে থেকে কিনে আনার কথাও বলছেন না রোগীর লোকজনদের। এদিকে যেসব আয়া দিয়ে নার্সরা নিজের কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন সেই আয়াদেরও সহজে চেনার কোনো উপায় নেই। ডিউটিরত অনেক আয়া আছেন যারা হাসপাতাল থেকে দেয়া ড্রেস পরেন না। তারা হাসপাতালের নির্ধারিত কাজ ফেলে নার্সদের হয়ে কাজ করেন। এ নিয়ে রোগীর লোকজন কথা বললে তাদের অপদস্ত করতেও ছাড়েন না বলে অভিযোগ আছে। অর্থাত্ ‘ছাগল দিয়ে ধান মাড়ানো’র মতো নৈরাজ্য চলছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে যে, হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা বেশিরভাগ নার্সই ভালো চোখে দেখেন না। কারণ, এতে করে হাসপাতালের নিকটস্থ ওষুধের দোকানের বেচাবিক্রি কমে যায়। এতে নার্সদের মনোকষ্টের কারণ কী তা নিয়েও অভিযোগ রয়েছে।
প্রাপ্ত সংবাদ অনুসারে গত ১৯ জুন নার্সদের এ ধরনের কাজকর্মের জন্য সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেছেন জনৈক সিজারিয়ান সন্তানের মায়ের লোকজন। এরই মধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট নার্সকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, কেবিনে অবস্থানরতা ওই রোগীকে ডাক্তারের দেয়া সব ওষুধ নার্স ব্যবহার করেননি। এমনকি ডিউটিরত নার্স রোগীর হাতে লাগানো ক্যানুলায় পাইপটি না লাগিয়ে স্পেশাল আয়াকে তা করার জন্য নির্দেশ দিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর স্পেশাল আয়া ‘অমুকের মা’ সিরিঞ্জ দিয়ে ক্যানুলা পরিষ্কার করে ইনজেকশনের পাইপ লাগান। কিন্তু ইনজেকশন ক্যানুলার বাইরে থেকে পড়ে যাচ্ছিল। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে সরকারি আয়া রোগীর স্বজনদের ওপর চটে যান এবং দুর্ব্যবহার করেন।
এ অবস্থায় বলা যেতেই পারে যে, দেশের অন্যতম বিখ্যাত সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটির সেবার মান নেমে যাওয়ার প্রধান একটি কারণ হচ্ছে প্রশাসনিক অব্যবস্থা। হাসপাতাল তো রাস্তাঘাটের অস্থায়ী ‘কবিরাজ ঘর’ নয় যে, যে কেউ ভাঙা পায়ে মালিশ করে দেবে। হাসপাতাল খ্যাতির শিখরে চলে যায় দক্ষ চিকিত্সকের চিকিত্সায় আর মমতাময়ী সেবিকার সেবায়। বিশ্বের উন্নত চিকিত্সালয়ের এটি একটি অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য। এর আগে নার্সরা তাদের ন্যায্য দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন করেছেন। আমরাও যথাসম্ভব তাদের দাবির সপক্ষে কথা বলেছি। তাদের অনেক দাবিদাওয়া মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে সরকার। সঙ্গত কারণেই আশা করা গিয়েছিল, এবার হাসপাতালের সেবার মান বদলে যাবে, নার্সদের নিবিড় শুশ্রূষার কথা লোকের মুখে মুখে ফিরবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, গোটা চালচিত্র তার বিপরীত। আমরা রাতারাতি কোনো ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল প্রত্যাশা করি না। কিন্তু নার্সের কাজ ‘অমুকের মা’য়েরা করবে তা মেনে নিতে পারি না, নেবে না কেউ।
সূত্র-আমারদেশ
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১১ সকাল ১০:৩৭