আমার মায়ের সারাজীবনের আফসোস তার ছেলের বউ বিশ্ব সুন্দরী হলো না। ছেলে দেখে শুনে প্রেম করে একটা মোটা-কালা বউ ঘরে আনছে, সেই বউ নিয়া তিনি পাশের বাড়িতেও বেড়াতে যেতে পারেন না, এইটা কি একটা বউ হৈল? কিন্তু আমার ভালবাসার মানুষ, আমার সেরা বন্ধু, প্রেমিকা আর প্রেমময়ী স্ত্রী, সেযে আমার সবচেযে আপনার। তোমাদের চোখের দেখা চুলোয় যাক্।
মানুষ প্রথাগত ভাবে নারীর যৌন আবেদনকেই সৌন্দর্য়ের প্রতীক হিসেবে ধরে, তাই প্রাচীনকাল থেকেই পুরুষ নারীকে সহযোগী না করে ভেবে এসেছে ভোগের সামগ্রী। ফলে সমাজ জীবনে নারীও স্বীকৃত হয়েছে দাসী রূপেই। সেটা কেবলমাত্র বাহ্যিক নয়, অন্তরের অন্তস্থলেও। বেগম রোকেয়া এই দাসত্বকে বলেছেন 'মানসিক দাসত্ব'। এখানে পুরুষ পুর্ণাঙ্গ মালিকানায় নারীকে ভোগ করার অধিকার রাখে। কেন রাখবে না? কারণ সে নারীর যোগ্যতার বিচার করে শুধু শরীর কেন্দ্রিক। আর মানসিক দাসত্বের নিগরে বন্দি নারীও নিজের যোগ্যতা যাচাই করে পুরুষের চোখে। পুরুষের আত্মীয়ারাও তাই দেখে, খোঁজ করে পাত্রী হিসেবে নরম একদলা মাংসপিন্ড। কিন্তু যারা সেই গতানুগতিক পথে হাঁটেন না, যে চেতনায় জীবন সঙ্গীকে একজন বন্ধুরূপে কামনা করে, সেই হয়ে ওঠে সমালোচনার পাত্র। তাঁর ব্যক্তিগত জীবনকে দুর্বিসহ করে তোলে আশপাশের আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশি-পরিজন। কেন?
নারী অথবা পুরুষ পরস্পরের প্রতি মন্তব্যের বাহারেই যার যার মেন্টাল স্ট্যাটাস সম্পর্কে ধারনা করা যায়। যদি প্রেমিক খুঁজতে হয় তবে প্রত্যেক মেযেকে খুঁজতে হবে ছেলেদের মনন, আর যদি কেবল একজন পুরুষ প্রয়োজন হয় তবে খুঁজুন পেটমোটা মানিব্যাগওয়ালা। নিজের চেহারা সুরত নিয়ে যে মেয়ে অহংকার করে সে আসলে যোগ্য মেয়েও নয়, মানুষও নয়; সে হলো মেয়েমানুষ। সেই সব মেয়েমানুষ পুরুষের কাছে প্লেটে রাখা কষানো মাংসের মতো। পাত্র বলতে তো ঐ পুরুষকেই বোঝায়, তাই না?
তবে নারীকে যোগ্য হতে আমাদের সমাজ বাধা দেয়। এই বাধা পরিবার থেকেই শুরু হয়, সমাজও তাতে সমান অংশগ্রহণ করে। একটি মেয়ে শিশু জন্মগ্রহণ করার পর থেকেই তাঁর দৈহিক সৌন্দর্য নিয়ে চালে বিচার বিশ্লেষণ।
"রহিমের মেয়েটা কালো হয়েছে। বিয়ে দিতে ঠেলা বেড়বে।''
"পারভীন কি মেয়ের জন্ম দিয়েছে রে, একটু যদি সুন্দর হতো!"
"মুকুলের মেয়েটা দেখতে একেবারে নায়িকার মতো হয়েছে।''
এসবই হচ্ছে আমাদের কাছের মানুষের মন্তব্য। মেয়ে শিশুর শিক্ষা, কেরিয়ার নিয়ে কোন বাবা-মাই যেন দুশ্চিন্তা করে না, যতোটা করে তাাঁর বিয়ে নিয়ে। হ্যাঁ সেই বাবা মা দুশ্চিন্তা করে যে আমাদের সমাজে খুবসুরত নয়। যদি সুন্দরী না হয় তবেই তাকে নিয়ে বাবা মা সাবলম্বি করে তোলার জন্র চেষ্টা নেয়। সুতরাং নারীকে অযোগ্য করার পেছনে পরিবারই প্রধান দায়ী একথা অস্বীকার করার উপায় নাই।