সংস্কৃতি কি? অনেক সময়ই এই প্রশ্নের মুখোমুখি হই শিক্ষার্থীদের মাঝে। আসলে সংস্কৃতির সহজ কোন সংজ্ঞা আমি কোথাও পড়িনি। ফলে এই বিষয়ে একেক সময় একেকভাবে ছাত্রছাত্রীদের বলতে হয়। সেটা বেশ আয়াস সাধ্য, কেননা কোন কোন সময় বুঝানোটা খুব সহজ হয়ে যায়, আবার কখনো জটিলতায় ঠিক খোলাসা হয় না।
উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই সংস্কৃতি বা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বলতে গান-বাজনা আর বিবিধ প্রকার বিনোদন অনুষ্ঠান মনে করে। ফলে সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা দিতে বেশ বেগ পেতে হয়। আমাকে অনেকে বলেন উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের এতো কিছু বোঝাতে যাওয়ার প্রয়োজন কেন? আমার জবাব হলো এই সময়ই যদি নিজের সংস্কৃতির প্রতি ভালবাসা না জন্মায় তো বাড়োয়াড়ি সংস্কৃতিই যে তাদের ভবিতব্য। তাই লাগাম টানতেই তাদের নিজের পরিচয়টা সঠিকভবে চিনতে শেখাও, তাহলে দেখবে তারা নিজেই ঠিক ঠিক পথ বেছে নেবে। কোন জবরদস্তি করতে হবে না।
সংস্কৃতির পরিচয়টা তাদের কিভাবে দেই? বিষয়টা একটা উদাহরণ দিয়ে শুরু করা যায়-
একটু চোখ মেললেই আমরা দেখতে পাই, সনাতন ধর্মীয় দেবদেবী যারা এদেশে পুজিত হয়, তাদের মুখছবি, দৈহিক গঠন দেখতে একেবারে এই দেশি; আবার ভারতের অন্যান্য অংশে একই দেব-দেবীর দৈহিক গঠন সেই অঞ্চলের নিজস্ব; মুর্তিও যেন তাদের স্বজাতির কোন মানব প্রতিচ্ছ্ববি। একই ভাবে আমরা দেখি আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন উপজাতি গোত্রের ভেতর তাদের নিজস্ব দেব-দেবীও তাদের মতোই দৈহিক গঠনের হয়। তাদের মতোই নাক থ্যাবড়া, ঠোট চ্যাপটা, গায়ের রঙও কালো। পৃথিবীর যে স্থানেই যে জনগোষ্ঠির ভেতারেই যাওয়া যাক না কেন আমরা তাদের চিন্তার ক্ষেত্রগুলো তাদেরই পরিবেশ-প্রতিবেশের মধ্যে দিয়ে বেড়ে উঠতে দেখি। ব্যক্তি মানুষের মনোজগতেও এর প্রভাব তীব্র। তাই তার বিশ্বাস, রীতিনীতি-অভ্যাস, প্রথাপালনের অনায়াস ভঙ্গি এবং তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যও একটি পৃথক পরিচিতি নিয়ে আসে। এই যে মানব সমাজের প্রতিটি জনগোষ্ঠির আলাদা আলাদা ধরণ, প্রত্যের সমাজের পৃথক জীবন যাত্রা এমন কি চিন্তা ক্ষেত্রে ভিন্নতা তাই তার সাংস্কৃতিক পরিচয়।
আমরা যেভাবে একজন ব্যক্তিকে অন্য একজন ব্যক্তি থেকে পৃথক করে চিনতে পারি। এই চিনতে পারার ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির মুখচ্ছবি বা চেহারা, তার দৈহিক গড়ন এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলি বিচার করি, তোমনি একটি জনসমাজ থেকে অন্য একটি জনসমাজকে আলাদা করে পরিচিতি এনেদেয় সংস্কৃতি।
যে কোন জাতির সাংস্কৃতিক পরিচয় তার গর্বের বস্তু। যে কোন উন্নত ও সচেতন জাতি তার সাংস্কৃতিক পরিচয়কে নিবিড় ভবে পরিচর্যা করে।এ কারণেই আমাদের জনগণের মাঝে সংস্কৃতির জন্য যে প্রাণচ্ছ্বাস তার পৃষ্ঠপোষকতা খুব গুরুত্বপূর্ণ।