হঠাৎ করেই বের হলাম মুজিবনগরের পথে। লক্ষ্য মুজিবনগর হয়ে চুয়াডাঙ্গা , ঝিনাইদহ হয়ে যশোর । ঢাকায় হালকা বৃষ্টি , কক্সবাজারে ৬ নম্বর সংকেত। তবুও বের হলাম একাই , কাওকে পেলাম না যাবার জন্য। নিজেকে এখন এভাবেই অনেকটা তৈরি করে নিয়েছি যে এই অঞ্চলগুলোতে যাবার সময় কাওকে পাব না।
যাই হোক ঝিরি ঝিরি বৃষ্টিতে নন এসি শ্যামলী বাসে সায়দাবাদ থেকে ৫০০ টাকা দিয়ে বুকিং দেয়া টিকিটটি নিয়ে বাসে উঠে দিলাম এক ঘুম , সোজা সকালে মেহেরপুর সদর বাস স্ট্যান্ডে। মাঝে কখন যে যাত্রা বিরতি ছিল খবরই পাই নাই , পাবার দরকারও ছিল না। বাসা থেকে ঠেসে খেয়ে নিয়েছি , কারন রাস্তায় টাকা যত কম খরচ করা যায়।
এখানের সকালটা একদম অন্য রকম। মনেই হচ্ছিল না দেশের কোথাও ৬ নম্বর সংকেত আছে। মিষ্টি রোদ পরিস্কার ঝিমঝাম শহর। সবাই তখন ঘুমাচ্ছে। কয়েকটা হোটেল কেবল খোলা। প্রথমেই এক রিক্সায় চড়ে বসলাম। চাচার মাথায় একটু বয়াতি মার্কা চুল। ঢাকা থেকে তাদের শহরে এসেছি শুনে বেজায় খুশি। তাকে নিয়েই শহরটা ঘুরে দেখালাম। একদম আনাছে কানাছে সব জায়গা। স্টেডিয়াম , মসজিদ , মন্দির , পার্ক উদ্যান , শহীদ মিনার সব সব সব।শহরে উঁচু ভবন নেই বললেই চলে, রাস্তা গুলো খুব বেশি প্রশস্ত না। অনেকটা ময়মনসিংহ শহরের মত। গায়ে গা লেগে যাওয়ার মত। মোটামুটি সব ঘুরা শেষে এসে নামলাম "জেলা প্রশাসকের কার্যালয়য়ের" সামনে।কারন এখান থেকেই পাওয়া যাবে মুজিবনগর যাবার অটো রিক্সা বা বাস।
সকালের নাস্তা করতে এসে বেশ অবাকই হলাম । এত কম দামে নাস্তা এই প্রথম। ২ খানা পরটা ( তেলে চুপচুপা , লুচি) আর ডাল ১০ টাকা।মিষ্টিও ছিল দোকানে, সকাল সকাল দেখলাম অনেকে মিষ্টি কিনছে। রিক্সা মামাকে নাস্তা করিয়ে ২০০ টাকা দিয়ে বিদায় দিয়ে এবার বাসের অপেক্ষা। যদিও বাস স্ট্যান্ড থেকে যেতে পারবেন চাইলে , তবে এখানে অটো আছে। ভাড়া একই সময় কম লাগে তাই উঠে পড়লাম অটো তে। মেহেরপুর থেকে মুজিবনগর ১৪ কিমি প্রায় , বাস বা অটো তে ভাড়া ২৫ টাকা।রাস্তা বেশ ভালোই , ভালো তো হতেই হবে তাই নয় কি ! ! !
এখান থেকে অটোতে উঠেছিলাম
অটো আপনাকে এখানে নামিয়ে দিবে । এখান থেকে ৫ টাকায় নসিমনে করে চলে গেলাম মুজিবনগর কমপ্লেক্সের গেটে। পথে পরিচয় হল কারিতাসে কাজ করেন এক মহিলার সাথে । বেশ আন্তরিক , এলাকার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হল। একা ভ্রমনের এটি একটি ভালো দিক , এলাকার মানুষ জনের সাথে কথা বার্তার বেশ সুযোগ পাওয়া যায় এবং তাদের সাহায্যও পাওয়া যায়।
টিকেট ও খোলা-বন্ধঃ কোন টিকেট লাগে না । সপ্তাহের প্রত্যেকদিন খোলা ।
প্রশস্ত ছায়ানিবির সবুজে সবুজে ঘেরা রাস্তা পার হয়ে কিছুদুর গেলেই সৌধ দেখতে পাবেন। এখানে আছে ২৩ টি স্তম্ভ ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ । আছে ১১ টি সিঁড়ি মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর , আছে ৩০ লক্ষ পাথর । আছে ২১ শে ফেব্রুয়ারির প্রতিক , লাল মঞ্ছ , বঙ্গোপসাগর ।
সুভাষ মল্লিক , উনি এখন স্মৃতিসৌধের দেখা শোনা করেন। বিনা বেতনে। পর্যটকটা গেলে সুন্দর করে ইতিহাস বর্ণনা করেন।
এরপর ডানদিকে হাঁটা দিলে পেয়ে যাবেন কমপ্লেক্স। সবার পরিচিত ভাস্কর গুলো এখানেই আছে। হেঁটে যেতেই চোখে পড়ল গোলাকার স্টেডিয়ামের মত । ভিতরে যেতেই দেখি বিশাল বাংলাদেশের ম্যাপ। ম্যাপে সুন্দর করে ছবি করে দেয়া আছে মুক্তিযুদ্ধকালীন দেশের তৎকালীন অবস্থা।
এর বাইরে দিকে আছে ভাস্কর গুলো। ইতোমধ্যে আরও অনেক মানুষ চলে এসেছে ঘুরতে। আবহাওয়া টাও বেশ ভালো , হালকা রোদ মেঘলা আকাশে। স্কুল কলেজের কিছু ছেয়েমেয়ে এসে পুরো এলাকা যেন মাতিয়ে রেখে। আসলে বয়সটাই এমন। কর্তব্যরত গার্ডরাও যেন হিমশিম খাচ্ছে।
এছাড়াও বিশাল এলাকায় আছে লাইব্রেরি , মিলনায়তন। মাঝের বাগানে আছে ৬ রকমের ফুলের গাছ যা ৬ দফার কথা মনে করিয়ে দেয়। ঢাকা থেকে এত দূরে এসে সুন্দর একটি পরিবেশ পেলাম। যেন দেশের জন্মলগ্নের সাথে কিছুটা সময়।
কিভাবে যাবেনঃ মেহেরপুর শহর থেকে রাজধানী ঢাকার দুরত্ব ৩১২ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে সড়ক পথে মেহেরপুর আসতে গাবতলী বাস টামিনাল থেকে বিভিন্ন সংস্থার পরিবহনে ৭-৮ ঘণ্টায় মেহেরপুর পৌঁছা যায়। সায়দাবাদ থেকে শ্যামলী বাস পাবেন। ভাড়া ৫০০ টাকা।
কোথায় থাকবেনঃ থাকার তেমন ভালো কিছু নেই। শহরের বড়বাজার এলাকায় এবং বাস স্ট্যান্ড রোডে বেস কিছু আবাসিক হোটেল আছে। ভাড়া ১০০ - ২০০ বেশি এক টাকাও না । ফিল টাওয়ার , আনাবিল , অবকাশ আবাসিক হোটেল আছে কোন রকম।
কিভাবে ঘুরবেনঃ মেহেরপুর শহর ঘুরে দেখার জন্য ব্যাটারি ছাড়া রিক্সা নেবেন কারন তাহলে রিক্সাতে বসেই আসতে আসতে সব দেখতে পারবেন। ঘণ্টা খানিক লাগবে ১০০ - ১৫০টাকা। মেহেরপুর থেকে মুজিব নগর ২৫ টাকা ৫ টাকা।
পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখুন , , রেখে আসবেন পদচিহ্ন আর নিয়ে আসবেন শুধুই ফটোগ্রাফ।
সাজিদ ঢাকা'র ভ্রমণ পোস্ট সংকলনহঠাৎ করেই বের হলাম মুজিবনগরের পথে। লক্ষ্য মুজিবনগর হয়ে চুয়াডাঙ্গা , ঝিনাইদহ হয়ে যশোর । ঢাকায় হালকা বৃষ্টি , কক্স বাজারে ৬ নম্বর সংকেত। তবুও বের হলাম একাই , কাওকে পেলাম না যাবার জন্য। নিজেকে এখন এভাবেই অনেকটা তৈরি করে নিয়েছি যে যাবার সময় কাওকে পাব না ।
যাই হোক ঝিরি ঝিরি বৃষ্টিতে নন এসি বাসে উঠে দিলাম এক ঘুম , সোজা সকালে মেহেরপুর সদর বাস স্ট্যান্ডে। মাঝে কখন যে যাত্রা বিরতি ছিল খবর ই পাই নাই , পাবার ও দরকার ছিল না। বাসা থেকে ঠেসে খেয়ে নিয়েছি , কারন রাস্তায় টাকা যত কম খরচ করা যায়।
এখানের সকালটা একদম অন্য রকম। মনেই হচ্ছিল না দেশের কোথাও ৬ নম্বর সংকেত আছে। মিষ্টি রোদ পরিস্কার ঝিমঝাম শহর। সবাই তখন ঘুমাচ্ছে। কয়েকটা হোটেল কেবল খোলা। প্রথমেই এক রিক্সায় চড়ে বসলাম। চাচার মাথায় একটু বয়াতি মার্কা চুল। ঢাকা থেকে তাদের শহরে এসেছি শুনে বেজায় খুশি। তাকে নিয়েই শহরটা ঘুরে দেখালাম। একদম আনাছে কানাছে সব জায়গা। স্টেডিয়াম , মসজিদ , মন্দির , পার্ক উদ্যান , শহীদ মিনার সব সব সব । শেষে এসে নামলাম "জেলা প্রশাসকের কার্যালয়য়ের" সামনে।কারন এখান থেকেই পাওয়া যাবে মুজিবনগর যাবার অটো রিক্সা বা বাস।
সকালের নাস্তা করতে এসে বেশ অবাকই হলাম । এত কম দামে। ২ খানা পরটা ( তেলে চুপচুপা , লুচি) আর ডাল ১০ টাকা। রিক্সা মামাকে নাস্তা করিয়ে ২০০ টাকা দিয়ে বিদায় দিয়ে এবার বাসের অপেক্ষা। যদিও বাস স্ট্যান্ড থেকে যেতে পারবেন চাইলে , তবে এখানে অটো আছে। ভাড়া একই সময় কম লাগে তাই উঠে পড়লাম অটো তে। মেহেরপুর থেকে মুজিবনগর ১৪ কিমি প্রায় , বাস বা অটো তে ভাড়া ২৫ টাকা।রাস্তা বেশ ভালোই , ভালো তো হতেই হবে তাই নয় কি ! ! !
এখান থেকে অটোতে উঠেছিলাম
অটো আপনাকে এখানে নামিয়ে দিবে । এখান থেকে ৫ টাকায় নসিমনে করে চলে গেলাম মুজিবনগর কমপ্লেক্সের গেটে। পথে পরিচয় হল কারিতাসে কাজ করেন এক মহিলার সাথে । বেশ আন্তরিক , এলাকার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হল। একা ভ্রমনের এটি একটি ভালো দিক , এলাকার মানুষ জনের সাথে কথা বার্তার বেশ সুযোগ পাওয়া যায় এবং তাদের সাহায্যও পাওয়া যায়।
টিকেট ও খোলা-বন্ধঃ কোন টিকেট লাগে না । সপ্তাহের প্রত্যেকদিন খোলা ।
প্রশস্ত ছায়ানিবির সবুজে সবুজে ঘেরা রাস্তা পার হয়ে কিছুদুর গেলেই সৌধ দেখতে পাবেন। এখানে আছে ২৩ টি স্তম্ভ ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ । আছে ১১ টি সিঁড়ি মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর , আছে ৩০ লক্ষ পাথর । আছে ২১ শে ফেব্রুয়ারির প্রতিক , লাল মঞ্ছ , বঙ্গোপসাগর ।
সুভাষ মল্লিক , উনি এখন স্মৃতিসৌধের দেখা শোনা করেন। বিনা বেতনে। পর্যটকটা গেলে সুন্দর করে ইতিহাস বর্ণনা করেন।
এরপর ডানদিকে হাঁটা দিলে পেয়ে যাবেন কমপ্লেক্স। সবার পরিচিত ভাস্কর গুলো এখানেই আছে। হেঁটে যেতেই চোখে পড়ল গোলাকার স্টেডিয়ামের মত । ভিতরে যেতেই দেখি বিশাল বাংলাদেশের ম্যাপ। ম্যাপে সুন্দর করে ছবি করে দেয়া আছে মুক্তিযুদ্ধকালীন দেশের তৎকালীন অবস্থা।
এর বাইরে দিকে আছে ভাস্কর গুলো। ইতোমধ্যে আরও অনেক মানুষ চলে এসেছে ঘুরতে। আবহাওয়া টাও বেশ ভালো , হালকা রোদ মেঘলা আকাশে। স্কুল কলেজের কিছু ছেয়েমেয়ে এসে পুরো এলাকা যেন মাতিয়ে রেখে। আসলে বয়সটাই এমন। কর্তব্যরত গার্ডরাও যেন হিমশিম খাচ্ছে।
এছাড়াও বিশাল এলাকায় আছে লাইব্রেরি , মিলনায়তন। মাঝের বাগানে আছে ৬ রকমের ফুলের গাছ যা ৬ দফার কথা মনে করিয়ে দেয়। ঢাকা থেকে এত দূরে এসে সুন্দর একটি পরিবেশ পেলাম। যেন দেশের জন্মলগ্নের সাথে কিছুটা সময়।
কিভাবে যাবেনঃ মেহেরপুর শহর থেকে রাজধানী ঢাকার দুরত্ব ৩১২ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে সড়ক পথে মেহেরপুর আসতে গাবতলী বাস টামিনাল থেকে বিভিন্ন সংস্থার পরিবহনে ৭-৮ ঘণ্টায় মেহেরপুর পৌঁছা যায়। সায়দাবাদ থেকে শ্যামলী বাস পাবেন। ভাড়া ৫০০ টাকা।
কোথায় থাকবেনঃ থাকার তেমন ভালো কিছু নেই। শহরের বড়বাজার এলাকায় এবং বাস স্ট্যান্ড রোডে বেস কিছু আবাসিক হোটেল আছে। ভাড়া ১০০ - ২০০ বেশি এক টাকাও না । ফিল টাওয়ার , আনাবিল , অবকাশ আবাসিক হোটেল আছে কোন রকম।
কিভাবে ঘুরবেনঃ মেহেরপুর শহর ঘুরে দেখার জন্য ব্যাটারি ছাড়া রিক্সা নেবেন কারন তাহলে রিক্সাতে বসেই আসতে আসতে সব দেখতে পারবেন। ঘণ্টা খানিক লাগবে ১০০ - ১৫০টাকা। মেহেরপুর থেকে মুজিব নগর ২৫ টাকা ৫ টাকা।
পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখুন , , রেখে আসবেন পদচিহ্ন আর নিয়ে আসবেন শুধুই ফটোগ্রাফ।
সাজিদ ঢাকা'র ভ্রমণ পোস্ট সংকলন