সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখুন , , লাইফ সাপোর্টে থাকা বাংলাদেশের চলচিত্রকে বাঁচিয়ে তুলুন।
ঘোড়াশাল পাওয়ার প্লান্ট থেকে ফিরে আড্ডা দিচ্ছি , এমনই সময় বন্ধু লিফান দেখালো মাহির নতুন ছবি "রোমিও বনাম জুলিয়েট" ।
কিছুদিন পর আরও কয়েকটা গান বের হল , দেখতে হবে ছবিটা ঠিক করে ফেললাম। ইদানিং অবশ্য খারাপ ভালো বেশ কিছু বাংলা ছিনেমা হলে গিয়ে দেখে ফেলেছি।
>> ঢাকার ১৩ টি প্রেক্ষাগৃহ সহ সারা দেশে ৯১ টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ।
সারাদেশে ৯১ টি প্রেক্ষাগৃহের তালিকা
অবরোধের জন্য দূরে কোথাও গেলাম না , , যদিও ৪ টি হল বাসার কাছে , , সেগুলোর মদ্ধে গেলাম বাসাবোতে "আগমন" সিনেমা হলে। অনেক পুরনো সিনামা হল ,তবে সম্প্রতি সংস্কার করা হয়ে এখন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত । এখানে ৩ টি ক্লাস রয়েছে টিকেটের , ১ম শ্রেণী , নিরিবিলি আর ডিসি। তবে টিকেটের ২টি ভাগ । ১ম ও নিরিবিলি ৫৫ টাকা এবং ডিসি ৭৫ টাকা।
কাহিনি সংক্ষেপেঃ
গ্রামে পঞ্চায়েতের বিচার বসে কুলাঙ্গার ছেলে রোমিও কে নিয়ে। ৮ম শ্রেণী পাস রোমিও কাজের চেয়ে অকাজ করে বেড়ায় বেশি। গ্রামের মোড়লের সান্নিধ্য পেতে তার ভাগ্নির সাথে ইটিস পিটিস করে করে , এই তো বিপদের আর মিথ্যার শুরু । মটকু শ্যামলী এখন তাকে বিয়ে করতে চায় । এর মাঝে রোমিওর বন্ধু ফেসবুকে খুজে পায় জুলিয়েটকে । ছিনেমার ১ম গান । জুলিয়েট লন্ডনের মিলিওনিয়ার , অক্সফোর্ডে পড়ে । রোমিও , মটু শ্যামলীর সাথে বিয়ে হয়া থেকে মুক্তি পেতে বলে দেয় জুলিয়েটের সাথে সম্পর্ক আছে। হইলও না কাজ , , এবার পুরো গ্রাম ১ মাসের সময় দিয়েছে। এবার লন্ডনের পথে রোমিও। লন্ডনে গিয়ে পরিচয় তারই গ্রাম পানাহাটির এক মেয়ের সাথে। ভারত আর বাংলাদেশের চাচা কাকা নিয়ে এবার জুলিয়েটের সাথে ছবি তুলার পালা , গ্রামের সবাইকে দেখাবে কিন্তু ব্যর্থ । মিলিয়নিয়ার জুলিয়েট কে সন্ত্রাসীরা মারতে চায় এবং নায়ক রোমিও বাঁচিয়ে নিয়ে যায়। এখন থেকে রোমিও জুলিয়েটের দেহরক্ষী । ক্রমাগত আক্রমণ চলে নায়িকার উপর। এবার রোমিও বলে তার সাথে তার গ্রামে চলে আসতে , যতদিন না জুলিয়েট ২১ বছর হচ্ছে।
বিরতি
জুলিয়েট কে সত্য গোপন করে পানাহাটি নিজে আসে রোমিও , আর জুলিয়েট এর নতুন অবস্থান কেবল জানে তার প্রেমিকা রাহুল। ধীরে ধীরে জুলিয়েট আর রোমিও মা সত্য কাহিনি জানতে পারে। জুলিয়েট হালকা হালকা ভালবাসতে থাকে রোমিও কে কিন্তু এই দিকে তার ২১ বছর হতে আর কয়েকদিন বাকি। এখানেও তার উপর হামলা হয়। রাহুল হঠাৎ করে জুলিয়েটকে নিতে চলে আসে। রাস্তায় জুলিয়েট জানায় সে রোমিওকে ভালবেসে ফেলেছে। এই দিকে রোমিও জানতে পারে , লন্ডনে পরিচয় হওয়া পানাহাটির মেয়ে বন্ধুকে যে ছেলেটি ধোঁকা দিয়েছিল সেই এই রাহুল। রোমিও ফোন করে সব জানায় জুলিয়েটকে। এখনি ভিলেনের আগমন , রাহুল ই ই ই ভিলেন। জুলিয়েটকে রোমিওর কাছে আনার কথা বলে গুন্ডা নিয়ে হামলা করে তার উপর , রোমিও এসে বাঁচিয়ে নিয়ে যায় জুলিয়েটকে । এভাবেই হল রোমিও জুলিয়েটের ভালোবাসা।
কিছু ভালো মন্দ কথাঃ
* ১৯১৯ সালের পুরাতন একটি জমিদার বাড়ি নায়কের বাড়ি হিসেবে নির্বাচন করা হয় যা আমার খুব ভালো লেগেছে।
* পুরো সিনেমার ডায়লগ গুলো একটু কমেডি ছিল তাই একদম বোরিং লাগে নি ।
* কমেডির প্রয়োজনে নায়ক একটু হ্যাংলামি করলেও একশনের সময় সিরিয়াস ছিল।
* ডিজিটাল ইফেক্ট প্রয়োজন মত ছিল , অতিরিক্ত দিয়ে বিরক্তির কারন হয়নি।
* মূল ৪ টি গানের কোনটাতেই ফিমেল ভয়েস নেই , অর্থাৎ কেবল নায়ক ই গান গেয়ে গেল। ডুয়েট কোন গান নেই।
* ক্যামেরার কাজ অসাধারণ ছিল।
* বেখেয়ালি মন গানে নায়কের চুল ঈর্ষনীয় রকমের সিল্কি ছিল।
* মাহিকে বেশ ভালো লেগেছে , বেশ আকর্ষণীয় সাবলীল ও সুন্দর লেগেছে। অগ্নির সেই মারমুখী মেয়েটি আর নাই।
* নায়ক বেশ ভালই , উঁচা লম্বা সুদর্শন তবে কিছু কিছু জায়গাতে বেশ হেংলা করে তুলে ধরা হয়েছে।
* যৌথ প্রযোজনা হলেও ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে ভারতের প্রাধান্য ছিল।
* দামি দামি বেশ কিছু গাড়ি দেখানো হয়েছে।
* কাবিলাকে তার কারিশমা দেখানোর বেশি সুযোগ দেয়া হয়নি।
* মাহির ঠোঁটের নিচের তিল মাঝে মাঝে মেকআপে হারিয়ে গিয়েছিল।
* মাহির পোশাক গুলো বেশ ভালো নির্বাচন করা হয়েছে তবে পানাহাটি ফিরে আসার পর সেলয়ার গুলো সব একই রকম ছিল।
* নায়িকার কোন বন্ধু বান্ধবি দেখা যায়নি । সে পুরাই এতিম এক ভণ্ড প্রেমিক রাহুল ছাড়া।
* বডিগার্ডের চরিত্রে নায়ককে বেশি পারসোনালিটি সম্পন্ন লেগেছে ।
সর্বশেষ বলবো , সব কিছু পরিমিত মাপে দিয়ে সাদামাটা কাহিনির মধ্যে দিয়ে কমেডি , রোমান্স , একশন সব কিছুই মিলিয়ে সুন্দর একটি ছবি । যতটুকু আশা ছিল একটু বেশি ভালো লেগেছে।