আচ্ছা সীমা রেখা হীন কি কোন কিছু আছে ? হয়ত অনেক কিছু আছে,কিন্তু আমার এই দীর্ঘ ১৯ বছরের জীবনে আমি মাত্র একটা অসহ্য সীমাহীন(!) জিনিস প্রত্যক্ষ করেছি , এখনও করছি,মনে হয় আরো কিছুদিন করা লাগবে।
এবার মূল আলোচনায় আসা যাক , যেই জিনিসটার সম্পর্কে এই বর্ণনা লিখছি সেই জিনিসটা হচ্ছে আমি যেই হোস্টেল এ থাকি সেই হোস্টেল এর ৫ম তলায় বসবাসকারি এক আজব চিড়িয়া।আমার কাছে অসহ্য হয় সেই মানব রুপি চিড়িয়ার ভাব আর সীমাহীন হচ্ছে তার চাপাবাজি ।
এই লেখায় তার সীমাহীন চাপাবাজির ছোট একটা ঘটনা উল্লেখ করছি। এই ঘটনায় যে চাপাবাজির কথা বলব সেটা শুরু হয়েছিল ঢাকা ভার্সিটির খ ইউনিট এর পরিক্ষার আগে আর তার শেষ হবে কিনা তা সেই আজব চিড়িয়া ছাড়া আর কেউ বলতে পারে না।
ঘটনাটা হয়েছে আমাদের বন্ধু হানিফ কে নিয়ে, যে খ ইউনিট এ পরীক্ষা দিয়েছে। এই সময় যা হয় আরকি পরীক্ষার্থীরা ঢাকা ভার্সিটির পুরাতন ছাত্রদের কাছে চান্স পাওয়ার কৌশল জানতে চায়। আমাদের সেই ৫ম তলার চিড়িয়া যেহেতু তার শিক্ষা জীবন নিয়ে অনেক চাপাবাজি করেছে ( “আমি ঢাকা ভার্সিটিতে ১৬ বছর পড়াশুনা করেছি, আমার ৫-৬টা মাস্টার ডিগ্রী! , আমি আইবিএ থেকে এম বি এ করেছি!, বুয়েট থেকে ইংলিশ এ মাস্টার্স করেছি!!!!!, জাপান থেকে পুষ্টি বিজ্ঞানের উপর পিএইচডি করেছি!!!!!”){সংক্ষেপিত} ) তাই হানিফ গিয়েছিল তার কাছে চান্স পাওয়ার কৌশল জানতে (হানিফ ভেবেছিল তার শিক্ষা সম্পর্কিত চাপাবাজি সব সঠিক) তো সে পরামর্শ দিল “ভালভাবে ইংরেজি পর”(এই পরামর্শ যে এখনও এইচ এস সি পাশ করে নি তার ও জানা)। যাই হোক পরামর্শ সঠিক এবং চান্স পাওয়ার জন্য উপযুক্ত।আসল ঘটনা ঘটলো যখন হানিফ পরীক্ষা দিয়ে চিড়িয়াকে বলল আমার পরীক্ষা ভাল হয়েছে আর ইংরেজি ২১ টা আমি কারেক্ট উত্তর দিয়েছি। এই কথা বলে হানিফ যে কেরোসিনে জলন্ত দিয়াশলাইয়ের কাঠি ফেলল তা ও বুঝতে না পারলেও ও হোস্টেল থেকে চলে যাওয়ার পর আমাদের তার উত্তাপ সহ্য করতে হল।
ওই ঘটনার পর দুই দিন আমরা ৫ম তলায় ডাইনিং এ যতবার খেতে গেছি চিড়িয়াটার চাপায় আমরা থেতলে যেতে শুরু করলাম । তার কিছু চাপা উল্লেখ করিছ “তোমাদের পরীক্ষা খারাপ হবে, তোমরা তো ইংরেজি কিছুই পার না,হানিফ ইংরেজিতে ২৬ পাবে,আমি ওকে ইংরেজি শিখেয়েছি, ও আমার রুম এ এসে ২ ঘণ্টা করে দৈনিক ইংরেজি শিখত, দেখবা ও ঢাকা ভার্সিটিতে ৫০ এর মধ্যে থাকবে”...ইত্যাদি ইত্যাদি। যাই হোক তার চাপায় পিষ্ঠ হয়ে রেজাল্ট এর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।
২ দিন পর যখন রেজাল্ট দিল তখন হানিফ এর জন্য মন খারাপ হলেও আজ চিড়িয়াটাকে শিক্ষা দিব ভেবে খুব মজা লাগতেছিল।আমি কখন চিড়িয়াটাকে জায়গা মত পাব তাই ভাবতেছিলাম। সন্ধ্যার সময় তাকে টিভি রুমে পেয়ে গেলাম।
“আঙ্কেল(চিড়িয়া) হানিফ তো ৫২ তম হয়েছে”
সে টিভি দেখা বাদ দিয়ে রীতিমত লাফ দিয়ে উঠে বলল “বলেছিলাম না, দেখতে হবে না?,! ইস! একটুর জন্য ৫০ এর ভিতর থাকতে পারল না!”
“আঙ্কেল(চিড়িয়া) দুঃক্ষিত ২৫২ তম হয়েছে”
“আরে হইল ৫২ আর ২৫২ একি কথা,দেখবা ও ইংরেজিতেই চান্স পাবে”!!!!
“আঙ্কেল(চিড়িয়া)সরি ৩২৫২(!!!!!) তম হয়েছে” !!!!!
সেই দিন উনি আর কিছু বলল না। আমি তো মহা খুশি চিড়িয়াটাকে একটা কঠিন শিক্ষা দিয়েছি এই ভেবে । কিন্তু সে যে চাপাবাজিতে পিএইচডি করা সেটা আমি ভুলে গিয়েছিলাম।
২ দিন পর............
আমি ডাইনিং এ খেতে গেছি। হঠাৎ রুম থেকে চিড়িয়াটা এসে বসলো, বসতেই পারে স্বাভাবিক বেপার।কিন্তু সে যে কথাটা বলল আমি শুনে ধাক্কার মত খেলাম।“আজ সকালে আমি ঢাকা ভার্সিটির একটা বোর্ড মিটিং এ গিয়েছিলাম,আমি হানিফ এর খাতা দেখেছি, ও ইংরেজিতে ২য় সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়েছে,বিশেষ বিবেচনায় ও ইংরেজিতে চান্স পাবে”!!!!!!!!!!!!!!!!
আমি তখন মনে মনে ভাবলাম সে খালি খালি চাপা মারে না। চাপা মারা এবং তাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার যতেষ্ঠ শক্তি তার আছে।!!!!!!!!!!!!!
বি.দ্রঃ-আমার বন্ধু হানিফ এখন চবি তে লোক প্রশাসন এ অধ্যায়নরত।
(পুনঃপ্রকাশিত)