আমার তখন ছাত্র জীবন। পলিটেকনিকালে পড়ার সুবাদে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হবার জন্য ঢাকা চলে গিয়েছিলাম এখন থেকে প্রায় ১০ বছর আগে। তারপর পড়াশুনা শেষে ছোট খাটো একটা চাকরীও পাই ঢাকাতেই। এদিকে গ্রামের বাড়ি খুবএকটা যাওয়া হয়না বললেই চলে। সব মিলিয়ে গত কয়েক বছরে ২০ বারও যাওয়া হয়েছে কিনা আমার সঠিক মনে নেই। আর আত্মীয় স্বজনের কথা তো ভুলতে বসেছি বললেই চলে। এইতো কয়েক মাস আগের কথা, বাড়ি থেকে একটা চিঠি এসেছিল আমার বিয়ের বার্তা নিয়ে। তাই অফিস থেকে লম্বা ছুটি নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। অবশ্য আমার পূর্ব পরিকল্পনা ছিল বিয়ের পর আবার ঢাকাতেই ফিরে আসবো, আর সে কথাটা বাড়িতে জানিয়ে রেখেছিলাম অনেক আগেই।
গাড়ীতে উঠলাম
বাসে বসে ভাবছি বিয়ের জন্য কনে হিসাবে কাকে পাবো। কনে বিষয়ে আমাকে কিছুই বলা হয়নি, আর আমার নিজেস্ব কোন পছন্দ নেই তাই পিতা মাতার পছন্দটাকেই প্রাধান্য দেই। এক পর্যায়ে বিকালে গিয়ে বাসায় পৌছালাম।
আমার বাড়ি আসার সংবাদ শুনে কমবেশি অনেকেই এসেছিল কুশল বিনীময় করতে। এমনি করে রাত হয়ে গেল। জায়গায় জায়গায় খন্ড খন্ড গোল মিটিং চলছে ।
এরি মধ্যে মা এসে আমার বিছানায় বসলেন।
বললেন - বাবা পাত্রি সম্পর্কে তোমাকে কোন কিছুই অবগতো করা হয়নি, কারণ পাত্রিকে তুমি ভাল করেই চেনো আর আমাদের ইচ্ছা তুমি তাকেই বিয়ে করো। আমি মায়ের কথা তেমন কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না। তাই বললাম মা তুমি কি বলতে চাইছো পরিষ্কার করে বলো। মা তখন উত্তরে বলল তোমর বড় চাচার মেয়ে ‘কণা’। কণার কথা শুনে আমিতো হতোবাক। যে মেয়ে আমাকে ছোট বেলা থেকে ভাইয়া ভাইয়া বলে ডাকতো আর সে কিনা আমর বউ হবে। অবশ্য সে হিসাবে কণা অন্য ১০ টি মেয়ের তুলনায় একেবারেই অতুলনীয় একটি মেয়ে। বুদ্ধিমত্তা, রূপ, গুনে, অনন্য একটি মেয়ে। অবশ্য গত ১০ বছরে আমি যে কয়বার বাড়ি এসেছি কখনোই তাকে ভাল করে দেখতে পাইনি। কখনো বা কাজের ফাঁকে একটু আদটু দেখেছি। যতটুকু দেখেছি ততটুকুতেই ভাল মনে হয়।
আমি মাকে জানিয়ে দিলাম তারা যাকে খুশি তাকেই তাদের ছেলের বউ বানাতে পারে এতে করে আমার কোন আপত্তি নেই।
রাত অনেক হয়েছে। বাড়ির মুরুব্বিরা ছাড়া সকলেই ঘুমিয়ে পড়েছে।
আমারো ঘুম পাচ্ছে। আর মনে মনে ভাবছি কণার কথা, একই উঠানে আমাদের ও তাদের বাড়ি হয়তো সকালেই তার সাথে আমার দেখা হয়ে যাবে। সে আমাকে দেখলে লজ্জা পেতে পারে, হয়তো আমিও আমার অনুভুতির কথা তাকে বোঝাতে পারবোনা। ভাবতে ভাবতে আমিও যেন কখন ঘুমিয়ে পড়লাম কিছুই টের পেলাম না।
সকাল হয়ে গেল।
ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাস করতে করতে কলপাড়ে গিয়ে হাজির হলাম। সেখানে গিয়ে দেখি ছোট চাচি অজু করছেন, তাই আমি তাকে কল চেপে দিলাম। এরি মধ্যে পেছন থেকে একজন বলে উঠল দয়া করে আমাকে একটু পানি নিতে দেবেন। আমি পেছন ফিরে তাকালাম। দেখি! কণা
আমার চোখে চোখ পড়তেই সে খালি কলস নিচে রেখে দৌড়ে পালিয়ে গেল। আর ছোট চাচি খিল খিল করে হেঁসে উঠলেন, বললেন মেয়েটি লজ্জ্বা পেয়েছে। আমি তখন বললাম সে লজ্জ্বা পেয়েছে বিধায় আপনার হাসি পেয়েছে তাইনা চাচি আম্মা, এবার দুজনেই হেঁসে উঠলাম।
সারাটি দিন অতিবাহিত হল গল্প করে আমার ছেলেবেলার বন্ধুদের সাথে। কিন্তু কণাকে সারা দিনে আর একটি বারের জন্যও দেখতে পেলাম না।
আগামী পরশু দিন আমাদের গায়ে হলুদ এবং পরদিন বিয়ে তাই দূর-দূরান্তের সকল আত্মিয় স্বজনেরা আসতে শুরু করেছে। আজ সারাটা দিন কেটে গেল আত্মিয় স্বজনের আগমন দিয়ে।
পরদিন সকাল ভোর বেলায় আমার এক ভগীনাকে দিয়ে কণার সংবাদ আনতে পাঠালাম আর বলে দিলাম আমি বটতলায় দেখা করতে বলেছি । ঘরে একা একা বসে অপেক্ষায় আছি, এমন সময় খবর আসলো কণা রান্না করছে আর বিয়ের আগে কোথাও দেখা করতে পারবে না। সংবাদটি শুনে মন খারাপ হয়ে গেল কিন্তু কিছুই করার নেই গ্রামের পরিবেশ সমাজ রক্ষা করে চলতে হবেতো।
এদিকে বাড়িতে যেন মেহেমানের ঢল পড়েছে আগমন যেন শেষই হয়না। একে একে সব আত্মীয় এসে হাজির। দিনের বেলা যে যার মত করে ঘুরে বেড়িয়েছে। আর রাতের বেলায় উঠানের মাঝে বসানো হয়েছে গল্পের আসোর। আবশ্য কণার সমবয়সি মেয়েরা কণার ঘরে বসে গল্প করছে হয়তো কণাও তাদের নিয়ে ব্যস্ত আছে। আমার কথা ভাববার সময় কি তার আছে! আজ সার দিনে অনেক চেষ্টা করেও তার সাথে একবারও দেখা করতে পারিনি। তাই নিজের মনকে নিজেই বললাম আর তো মাত্র দুই রাত - হে মন একটু সবুর করো, অবশ্যই সবুরে ম্যওয়া ফলে।
রাত আস্তে আস্তে কম হয়নি ভাবলাম ঘুমিয়ে পরি। তাই আমার কক্ষে চলে গেলাম, কিন্তু সে-কি ব্যপার আমার খাট আমার দখলে নেই। ছোট খালা কয়েকজন পিচ্চি, বাছুর, গ্যাদা নিয়ে ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু কিছুই করার নেই সবাই মেহমান তাই আমি নিজেই বাধ্য হলাম ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে।
গেলাম পার্শ্ববর্তী এক চাচার ঘরে কিন্তু সেখানেও জায়গা নেই। তার পর গেলাম ছোট চাচির ঘরে সেখানেও ছোট চাচার শ্যলোক সাহের তার স্ত্রী কে নিয়ে ঘুমিয়ে আছে।
এখন আমার হয়েছে যতো জ্বালা, আমি ঘুমাবো কোথায়। ভাবলাম দাদা অসুস্থ্য মানুষ আজ রাতটা কোনমতে তার কাছেই কাটিয়ে দেই।
তিনি আবার জন্ডিসের রোগী। ডাক্তার তাকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে বলেছেন,
তাই কোন রকম সাড়া শব্দ না দিয়ে চুপি চুপি গিয়ে দাদার কাথাঁর ভিতরে গিয়ে ঢুকে পড়লাম। কাথ হয়ে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে আছেন তিনি। আমার হাত-পা ঠান্ডা বিধায় তার শরীরের সাথে ছোয়ালাম না। কিন্তু আজ যেন আর ঘুম আসতে চাইছেনা শুধু কণার কথা মনে পড়ছে।
প্রথম রাতে তার কাছে গিয়ে আমি কি বলব, সে আমাকে কি বলবে। আমি যখন প্রথম বার তার হাতে হাত রাখবো তখন সে কি শিউড়ে উঠবে। ভাবনা যেন আর শেষ হয় না। এভাবে আরো অনেক কিছুই ভাবলাম সেগুলো নাহয় নাই বললাম।
ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকাল হল। তবে এখনো আধাঁর ঠিক মত কাটেনি।
আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। দেখি আমার ডান হাতটি দাদার নাকের উপর সমস্ত মুখ থুবড়ে পরে আছে। অমনি সপ করে আমার হাত সরিয়ে নিলাম, কে জানে দাদার কি আবস্থা। কিন্তু হাত সরিয়ে নিতেই আমি তো হতবাক! ছো মেরে শ্বয়ন ছেড়ে উঠে বসলাম। যাকে দাদা মনে করে সারা রাত ঘুমিয়ে ছিলাম সে তো কণা। আমর উঠে বসার শব্দে আর খাটের ঝাকুনিতে কণাও জেগে গিয়ে উঠে বসলো আমার পাশে।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম কণা তুমি এখানে কি করছো?
কণা বলল আমি তো গত কাল সন্ধ্যা হতে এখানে শুয়ে ছিলাম। কিন্তু আপনি এখানে কেমন করে এলেন।
আমি তো সাড়া রাত ধরে এখানেই তোমার পাশে শুয়ে ছিলাম।
কণা একথা শুনে লজ্জ্বায় কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। আমিও কোন কথা বললাম না শুধু তার দিকে তাকিয়ে বসে রইলাম।
আর মনে মনে ভাবলাম “যে খানে বঘের ভয় সেখানেই রাত পোহায়।”
শুধু তাই নয় প্রথম রাতের সকল আশা আকাক্সক্ষা মনের অজান্তে আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেল।
কি আর করার কণাকে বললাম তোমার হাতদুটো টাকটু ছুয়ে দেখতে পারি।
কিছুক্ষন চুপ থাকার পর কণা বলল সাড়া রাত একবিছানায় পাশে শুয়েছিলেন অনুমতি নিলেননা আর এখন হাত ছোয়ার জন্য অনুমতি চাইছেন। কথাটি শোনার পর হাতসহ পুরোটাই জড়িয়ে ধরলাম।
ইস সে কি অনুভূতি বলে বোঝানে যায় না।