মিয়ানমারের দাঙ্গায় বাস্তুহারা হাজার হাজার মুসলিম রোহিঙ্গা ও রাখাইন বৌদ্ধদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য, পানি ও আশ্রয় প্রয়োজন।
বেশ কয়েক বছর ধরে মিয়ানমারের ওই অঞ্চলে জাতিগত দাঙ্গা চলছে।
বুধবারও বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন অঞ্চলে বেশ কয়েকটি বাড়িঘরে আগুন দিয়েছে দাঙ্গাকারীরা। তবে এতে এখনও পর্যন্ত হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ৮ জুন মিয়ানমারে রাখাইন প্রদেশে মুসলিম রোহিঙ্গা ও বৌদ্ধ রাখাইনদের মধ্যে নতুন করে দাঙ্গা শুরু হয়।
বেশ কয়েকদিন ধরে আগুন দেয়া ও হত্যাযজ্ঞ চলার পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়ে এসেছে। তবে মিয়ানমারের সংস্কারপন্থী প্রেসিডেন্টে থিয়েন শিয়েনের জন্য এ দাঙ্গাকে বড় একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
ওয়ান ল্যাট ফাউন্ডেশনের সদস্য চাও তুন জানান, এ সপ্তাহের শুরুতে যে অঞ্চলগুলো দাঙ্গার কেন্দ্র ছিল প্রাদেশিক রাজধানী সিত্তুয়িসহ সে অঞ্চলগুলো শান্ত হয়ে আসছে।
রাখাইন প্রদেশের সিনেটর অং মিয়াত কিয়াও রয়টার্সকে বলেন, “দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা কমেছে। সিত্তুয়িতে প্রায় ২০ হাজার শারণার্থী আছে। এদের বেশির ভাগই সহিংসতার ভয়ে গ্রাম থেকে পালিয়ে এসেছে।”
তিনি আরো বলেন, “এসব শরণার্থীদের জন্য খাদ্য প্রয়োজন। প্রবল বৃষ্টির কারণে তাদের স্বাস্থ্য নিয়েও দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। কেননা তাদের জন্য যথেষ্ঠ পরিমাণে আশ্রয়স্থল নেই।”
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, শুধু সোমবারই দাঙ্গায় ২১ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া ১ হাজার ৬শ’ ৬২টি বাড়ি আগুনে পোড়ানো হয়েছে।
তবে কী কারণে এ দাঙ্গার সূত্রপাত হয়েছে এ বিষয়টি স্পষ্ট নয়। কয়েক প্রজন্ম ধরেই রাখাইন প্রদেশে মুসলিম ও বৌদ্ধদের মধ্যে অপ্রীতিকর সম্পর্ক চলে আসছে। সম্প্রতি এক বৌদ্ধ নারী গণধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়। এই ঘটনার জন্য মুসলিমদের দায়ী করে বৌদ্ধরা।
এরই প্রতিশোধ হিসেবে ৩ জুন ১০ মুসলিম রোহিঙ্গাকে হত্যা করে বৌদ্ধরা। হত্যার শিকার রোহিঙ্গারা একটি বাসে করে যাচ্ছিল। বৌদ্ধ জনতা বাসটি থামিয়ে তাদের হত্যা করে। বাসের ওই যাত্রীদের সঙ্গে বৌদ্ধ নারীকে ধর্ষণ ও হত্যার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।
মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নিজেদের নাগরিক বলে স্বীকার করে না। মিয়ানমার সরকার ও বার্মিজ জাতির অনেকেই তাদের ‘রোহিঙ্গা’ বলেও স্বীকার করে না, তাদের ‘বাঙালি’ হিসেবে চিহ্নিত করে।
জাতিসংঘের উদ্বাস্তু সংস্থার দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইন প্রদেশের তিনটি জেলায় প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গার বসবাস।
হতভাগ্য এসব রোহিঙ্গাদের চরম ঘৃণা করে প্রদেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইনরা। মিয়ানমারে ধর্মীয় অনুসারীর ভিত্তিতে বৌদ্ধরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।
রোহিঙ্গা মানবাধিকারকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের রাখাইন প্রদেশের স্বাভাবিক নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে জন্মসূত্রে মিয়ানমারের পূর্ণ নাগরিকত্ব দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু সরকার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে আগত অবৈধ অভিবাসী বিবেচনা করে নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকার করে।
১৯৯২ সালে মিয়ানমার থেকে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। মিয়ানমার সেনারা তাদের নির্যাতন করছে বলে অভিযোগ জানায় তারা। কিন্তু এদের উদ্ধাস্তু হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাংলাদেশ অস্বীকার করে।
সা¤প্রতিক দাঙ্গার পর কয়েকশ’ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা চালায় বলে জানা গেছে।
দেখলে মনটা খারাপ হইয়া যাইব: Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১২ বিকাল ৩:৫৫