বাংলাদেশ টেলিভিশন হচ্ছে সরকারি গণমাধ্যম। বাংলাদেশের অগণিত মানুষের বিনোদন চাহিদা মেটানোর একমাত্র নির্ভরতার জায়গা। দেশে যখন কোনো বেসরকারি টিভি চ্যানেল ছিল না তখন শহর-বন্দর-গ্রামে বসবাসকারী প্রত্যেকের বিনোদন চাহিদা মেটাতো এই বাংলাদেশ টেলিভিশন, যা সংক্ষেপে বিটিভি নামে পরিচিত।
এমন একটা সময় ছিল যখন এ দেশের দর্শকরা এ বিটিভি’র বিভিন্ন অনুষ্ঠান, নাটক, সিনেমা মন্ত্রমুগ্ধের মতো উপভোগ করতো। দু’একটা অনুষ্ঠান ছাড়া তেমন কোনো জোরালো অভিযোগ ছিল না। কালক্রমে সরকারি আধিপত্য ও অযোগ্য লোকদের সম্পৃক্ততার কারণে বিটিভি দিনে দিনে গণমানুষের আস্থা ও ভালোবাসা হারাতে শুরু করলো দ্রুতগতিতে। গ্রহণযোগ্য অনুষ্ঠানের অভাবে মানের ব্যারোমিটার মাত্রা ছাড়িয়ে নিচের দিকে নামতে শুরু করলো। তবুও মানুষ বিটিভি দেখতেই বাধ্য থাকতো। কারণ, তাদের অন্য কোনো পথ ছিল না। বিটিভি’র প্রতি মানুষের উদাসীনতা ও বিশ্বাসহীনতার চরম পর্যায়ে আলোর ঝলকের মতো হাজির হলো ‘ইত্যাদি’ নামক ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানটি। এ অনুষ্ঠানটি জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছাতে সক্ষম হয় মূলত জনগণের দৈনন্দিন জীবনঘনিষ্ঠ অনেক সামাজিক, প্রশাসনিক সূক্ষ্ম ত্রুটি-বিচ্যুতির সফল ও বাস্তবসম্মত উপস্থাপনার কারণে। এক্ষেত্রে উপস্থাপক হানিফ সংকেতের বিষয় নির্বাচন ও তার উপস্থাপনার গতানুগতিকতার বাইরে নিজস্ব কিছু ঢং অনুষ্ঠানটিকে শ্রেণী-বর্ণ নির্বিশেষে সবার কাছে সমান গ্রহণীয় করে তোলে।
এ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানটি প্রথমে বিটিভি’র তত্ত্বাবধানে নির্মিত হলেও পরে এটি প্যাকেজ অনুষ্ঠান নির্মাণের আওতায় চলে যায়। এক যুগেরও অধিককাল ধরে সমানতালে একক কর্তৃত্ব বজায় রেখে চলতে গিয়ে ‘ইত্যাদি’ এখন গতানুগতিকতার দোষে অনেকটাই দুষ্ট। প্যাকেজ অনুষ্ঠানের আওতায় নির্মিত হতে গিয়ে এটির বাহ্যিক চাকচিক্য বাড়লেও বিষয় বৈচিত্র্যে মার খেয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন চ্যানেল যেমন একই মুখ প্রচারের দোষে দুষ্ট তেমনি ‘ইত্যাদি’ও একই মুখ ও একই ধাঁচের বিষয় নির্বাচন ও উপস্থাপনার দোষে দুষ্ট হতে শুরু করেছে। উপস্থাপক হানিফ সংকেতের ছড়ার স্টাইলে যে কোনো বিষয়কে উপস্থাপনের বিষয়টি এখন অনেক দর্শকের কাছেই উপভোগ্য না হয়ে বিরক্তির কারণ হচ্ছে। প্যারোডি গান, বিদেশি ভাষাভাষীদের মুখে বাংলা সংলাপ, দর্শকদের মাঝ থেকে প্রতিযোগী নির্বাচন, নির্দিষ্ট কিছু বিদেশি শিল্পীকে (?) নিয়ে বাংলা সংস্কৃতি সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয়ের উপর অভিনয় করিয়ে নেয়ার চেষ্টার মধ্যে এখন আর লোকে আনন্দ খুঁজে পায় না।
কারণ একই কুমিরের ছানা বিভিন্ন ঢং-এ কতোবার আর বের করা যায়? আর তা দিয়ে দর্শককেই বা আর কতো বোকা বানানো যায়? যারা বিভাগীয় শহরে বাস করেন তারা আকাশ সংস্কৃতি ও স্যাটেলাইট সুবিধার কারণে দেশি-বিদেশি অনেক চ্যানেল দেখার সুযোগ পান। কিন্তু তারপরও দেশব্যাপী বিটিভি’র দর্শক এখনো অনেক অনেক বেশি। কারণ, দেশের সর্বত্র স্যাটেলাইট সুবিধা পৌঁছেনি যাতে মানুষ চাইলে অন্য কোনো চ্যানেলে জাম্প করবে।
আরো একটি ব্যাপার দর্শকদের ধৈর্যচ্যুতি ও বিরক্তির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা হলো প্রচারিত সময়টা উল্লিখিত সময়ে হয় না। যদিও সব সময় অনুষ্ঠানসূচিতে বা প্রমোশনে রাত ৯টা লেখা হয়, কিন্তু বেশিরভাগ সময়ে দেখা যায়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন প্রচার হতে হতে অনুষ্ঠান শুরু হয় ৯টা ৪০ বা ৯টা ৪৫ মিনিটে। ১০ বা ১৫ মিনিট অনুষ্ঠান চলতে না চলতেই ১০টার ইংরেজি সংবাদ এবং আবার বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি। একটি ৫০ মিনিটের অনুষ্ঠান উপভোগ করার জন্য দর্শককে দুই ঘণ্টা সময় নষ্ট করতে হয়।
বিটিভির অনুষ্ঠানের মান নিয়ে নতুন করে আর কিছু বলার নেই। যাও বা ভরসার জায়গা ছিল ‘ইত্যাদি’, তাও এখন নানান কারণে বিতর্কিত। একটি অনুষ্ঠান জনপ্রিয়তার দোহাই দিয়ে যুগের পর যুগ চলতেই থাকবে এটা বোধ হয় কোনো নৈতিক সিদ্ধান্ত নয়। সরকার আসে, সরকার যায়, দেশের আলো-মাটিতে কতো উত্থান-পতনের মহড়া হয় কিন্তু বিটিভি’র ইত্যাদি ও হানিফ সংকেত যথারীতি বহাল তবিয়তে আছেন। ‘ইত্যাদি’ বা হানিফ সংকেত বিটিভি’তে নিষিদ্ধ হয়ে যাকÑ এটা আমার বক্তব্য নয়। হানিফ সংকেতের মতো একজন গুণী ‘ইত্যাদি’কে বিষয় বৈচিত্র্যে আরো সমৃদ্ধ করবেন, এটা অবশ্যই আশা করি। পাশাপাশি আরো অনেক গুণী ও যোগ্য উপস্থাপক এখনো এদেশে বেঁচে আছেন যাদের মধ্যে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, আনিসুল হক, আবেদ খান, সানজিদা খাতুন, এদের এখনো বিটিভি সম্মানের সঙ্গে কাজে লাগিয়ে তার হারানো গৌরব কিছুটা হলেও ফিরে পেতে পারে বলে বোদ্ধামহল মনে করে। সুতরাং আশা করা যায়, বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখবেন।
আলোচিত ব্লগ
কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন