‘আশ্চর্য সুন্দর এই বেঁচে থাকা’ নাটকের একটি দৃশ্য
‘দ্য গেইম’ লুইজি ব্রায়ান্ট রচিত একটি হিতোপদেশমূলক একাঙ্ক নাটক, যেখানে আত্মহত্যাকে নিরুৎসাহিত করে গাওয়া হয়েছে জীবনের জয়গান। ১৯১৬ সালে ‘দ্য প্রোভিন্সটাউন প্লে’স এ নাটকটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়। সেখান থেকেই পুনর্মুদ্রিত ইন্টারনেট সংস্করণ হতে এটি নেওয়া হয়েছে। বাংলা ভাষান্তরে নাম দেওয়া হয়েছে ‘আশ্চর্য সুন্দর এই বেঁচে থাকা’। নাটকটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগ এবং চট্টগ্রামের একটি নাট্যদলের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে মঞ্চে উদ্ভাসিত হয়েছে।
‘আশ্চর্য সুন্দর এই বেঁচে থাকা’ নাটকের একটি দৃশ্য
সে যাই হোক। ২০১৩ সালের শেষ দিকে তারেক মাসুদ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থেকে আমার একটি নাটক চাওয়া হয় মঞ্চায়নের জন্য। নতুন দল, নবীন অভিনয়শিল্পী- সে কারণে এই নাটকটি তাদের মঞ্চায়নের জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচনা করি। কিন্তু পাণ্ডুলিপি পাঠন্তে দলটি পতিত হয় ‘নির্দেশক’ সংকটে। বিভিন্নজনের প্রতি আমি ব্যক্তিগতভাবে আহ্বান জানাই এটি নির্দেশনা দেয়ার। কিন্তু যে সময়ে এই কাজটি শুরু হয় তখন দেশজুড়ে প্রবল রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও অনিশ্চয়তার কালো মেঘের ঘনঘটা। হয়তো সে কারণেই কিংবা ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে তারা প্রত্যেকেই শেষ পর্যন্ত অপারগতা জানান। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা হাবিবুর রহমান মাসুদের অনুরোধে অবশেষে আমিই সম্মত হলাম নির্দেশনা দিতে। নেমে যাই কাজে। আর এর মধ্যদিয়ে ঢাকার মঞ্চে আমার প্রথম নির্দেশনাকর্মের জন্ম হল।
‘আশ্চর্য সুন্দর এই বেঁচে থাকা’ নাটকের একটি দৃশ্য
২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে মহড়া শুরু করে ২০১৪ সালের মার্চে অবশেষে নানা চড়াই-উৎরাই পার হয়ে একটি নির্দিষ্ট চেহারা নিয়ে দাঁড়াল। ৩ এপ্রিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটারে হল এর উদ্বোধনী মঞ্চায়ন। পেশাগত দায়িত্বসহ নানাবিধ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় সময়ের সমন্বয় ঘটাতে আমাকে প্রায়ই খেতে হয়েছে হিমশিম। অনিক ইসলাম, চিন্ময়ী গুপ্তা, হাসনাত মিথুন- এই মানুষগুলোর অক্লান্ত পরিশ্রম, সমর্থন ও সহযোগিতা না পেলে প্রযোজনাটিকে এই পর্যন্ত নিয়ে আসা সম্ভব হতো না। তাঁদের নাম না উল্লেখ করলে নির্দেশক হিসেবে অপরাধ রয়ে যাবে।
‘আশ্চর্য সুন্দর এই বেঁচে থাকা’ নাটকের একটি দৃশ্য
নাট্যজন চন্দন চৌধুরী মাত্র কয়েকদিনের নিবিড় ধ্যানে নাটকটির সংগীত পরিকল্পনা করে দিয়ে চিরঋণী করে রাখলেন। ওয়াসিম আহমেদের বর্ণিল আলো একে করে তুলেছে আরো প্রাণবন্ত।
‘আশ্চর্য সুন্দর এই বেঁচে থাকা’ নাটকের একটি দৃশ্য
এ নাটকের প্রায় সবাই প্রথমবারের মতো অভিনয় করছেন। তাঁদের সবার অমানুষিক পরিশ্রম আর আকাঙ্ক্ষার প্রণামীই বিভিন্ন চরিত্রকে শূন্য থেকে মঞ্চে মূর্ত করে তুলেছে। যে মানুষটি নেপথ্যে থেকে এসবকিছু বাস্তবায়নে ভূমিকা রেখেছেন, যিনি অকুণ্ঠ প্রণোদনা জুগিয়েছেন সমগ্র দলে, তিনি হাবিবুর রহমান মাসুদ। পরিশেষে এই সংগঠন যাঁর অক্ষয় নামে অংকিত, শ্রদ্ধা জানাই চলচ্চিত্রের সেই ফেরিওয়ালা তারেক মাসুদের প্রতি। তাঁর কীর্তি চিরঅক্ষয় হোক।
‘আশ্চর্য সুন্দর এই বেঁচে থাকা’ নাটকের একটি দৃশ্য
এই নাট্যদর্শনে কিংবা পাঠে সকল মানুষের অভ্যন্তর হতে মিলাক জীবনের অসহনীয় বেদনা, সর্বান্তকরণ ভরে থাক প্রেম, ভালবাসা, মায়া আর মমতায়।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৩৩