‘ইতি পত্রমিতা’ নাটকের একটি দৃশ্য
এ যেন ঢাকা থিয়েটারের ভবিতব্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল, মুক্তমঞ্চে নাটক মঞ্চায়ন করতে গেলেই বৃষ্টি এসে তা পণ্ড করে যাবে! কিন্তু না, জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের একনিষ্ঠকর্মীদল, মুক্তমঞ্চের অসাধারণ দর্শক আর আমার সংশপ্তক কলাকুশলীগণ, সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় যে ফল এল তা অসামান্য। অসাধারণ অনুভূতি নিয়ে আমাদের নাটক ‘ইতি পত্রমিতা’ শেষ হল। আজ পুনর্বার মনে হল, এই ক্ষণটুকুর প্রতীক্ষাতেই মঞ্চেরকর্মীরা বাকি অনেক সময়ের যন্ত্রণা সহ্য করে যায় অবলীলায়।
‘ইতি পত্রমিতা’ নাটকের একটি দৃশ্য
৩ জানুয়ারি ২০১৫। বৃষ্টি নেমেছিল আজও। মুক্তমঞ্চ পিচ্ছিল থেকে পিচ্ছিলতর হয়ে উঠছিল। যেখানে নিজেই দাঁড়াতে পারছিলাম না সেখানে এতো ছোটাছুটি মাখানো ‘ইতি পত্রমিতা’র অভিনয়শিল্পীরা কীভাবে পারবে নাটক মঞ্চায়ন করতে? বৃষ্টি একটু কমে আসে আর তখুনি পেপার বিছানো শুরু হয় মঞ্চের মেঝেতে। তারপর কম্বল-কাঁথা। আমাদের নাটক শুরু হল গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির মাঝেই। দর্শক উঠি উঠি। অনেকে চলেও গেলেন। কিন্তু ভবিতব্য খণ্ডানোর পণ করেই যেনবা আমাদের যাত্রা! শেষ করতে পারবো তো... এই শঙ্কা নিয়েই এগিয়ে যেতে থাকি। সবিস্ময়ে তাকিয়ে দেখি, আমার নির্দেশ অমান্য করেই অভিনেতৃগণ তাদের পূর্ণ সামর্থ্য দিয়ে অভিনয়ের ঝাঁঝ ছড়াতে থাকে। আর দর্শকের তুমুল হাসি-উচ্ছ্বাস আমাদের মঞ্চায়নকে নিয়ে যায় সাফল্যের চূড়ায়। এমন অভিজ্ঞতা খুব বেশি নাট্যকর্মীর জীবনে আসে না। আমরা ভাগ্যবান সেই স্বাদটুকু নিতে পেরেছি।
জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের নাট্যপার্বণ ২০১৫-এর পোস্টার
কৃতজ্ঞতা জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের প্রতি, তারা আমাদের এই সুযোগটুকু করে দিয়েছেন। কৃতজ্ঞতা মুক্তমঞ্চের দর্শকের প্রতি, বৃষ্টির শাসানিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রায় পৌনে চার হাজার মানুষ আমাদের মঞ্চায়নে সমর্থন জুগিয়েছেন। কৃতজ্ঞতা আমার কলাকুশলীদের প্রতি, নিজেদের উজার করে দিয়ে ভবিতব্য খণ্ডানোর সাহসী কাজটুকু করেছে নিবেদিত হয়ে। আর অদূরেই তো সেলিম আল দীনের সমাধি। তিনি নিশ্চয় তাঁর এই ব্যর্থ শিষ্যের হৃদকম্পনটুকু টের পেয়েছিলেন!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৩৪