লাদাখ ভ্রমণ - সবগুলো পর্ব
লাদাখ ভ্রমনঃ(৯ম পর্ব) – লেহ শহরের অলস দিনগুলো এবং জীবনের অন্যতম একটা আনন্দের সংবাদ
লাদাখ অনেকের কাছেই একটা স্বপ্নের শহর। প্রকৃতির এক অপরূপ নিদর্শন সেই সাথে আছে এর ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো। এবং আমি হলফ করে বলতে পারি যে, একজন মানুষের জন্য আজীবন গল্প করার মত একটা ভ্রমণ হয়ে থাকে লাদাখ। আমরা তিন বন্ধু গত আগস্ট মাসে লাদাখ গিয়েছিলাম। আমাদের রুট টা ছিল – ঢাকা >> বুড়িমারী >> শিলিগুড়ি >> দিল্লী >> কালকা >> শিমলা >> মানালি >> কিলং >> লেহ >> নুব্রা ভ্যালী >> প্যাংগং লেক >> লেহ >> সোনমার্গ >> শ্রীনগর >> দিল্লী >> শিলিগুড়ি >> ঢাকা। আমরা বুড়িমারী দিয়ে গিয়েছিলাম কারণ আমাদের ভিসা ছিল চ্যাংড়াবান্ধা দিয়ে।
আমি একেবারে বাজেট ট্রাভেলার নই, আবার উড়নচণ্ডী ও নই, আমার আরাম এর জন্য যেখানে যতটুকু খরচ করা দরকার বলে মনে করি, তততুকুই খরচ করি। ঘুরতে গিয়ে বিলাসিতা আমার পছন্দ নয়, আবার ভ্রমণটাকে উপভোগ্য করতে কার্পণ্য করতেও আমি কখনো রাজি নাই। রাতে ঘুমানোর জন্য একটা পরিষ্কার বিছানা এবং ফ্রেশ হওয়ার জন্য একটি পরিষ্কার ওয়াশরুম হলেই হয়। তাই এই খরচের ব্যাপার সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এই যাত্রাপথের আমার খরচগুলো নিচে পর্যায়ক্রমে দেয়া হলঃ আমরা শিলিগুড়ি থেকে দিল্লী এয়ার এ, শ্রীনগর থেকে দিল্লী এয়ার এ, দিল্লী থেকে শিলিগুড়ি এয়ার এ ভ্রমণ করেছিলাম।
ক) ঢাকা থেকে শিলিগুড়ি হয়ে দিল্লী এয়ারপোর্ট
১। ঢাকা থেকে বুড়িমারী – ৮৫০ টাকা ( এসআর প্লাস )
২। রাতের বাস এ হোটেলে খাওয়া – ৪৫ টাকা
৩। সকালে বুড়ির হোটেলে নাস্তা – ৭৫ টাকা
৪। বর্ডার পার হতে খরচ – ১৫০ টাকা
৫। বর্ডার হতে বাগডোগরা এয়ারপোর্ট ট্যাক্সি ভাড়া – ২৫০ রুপি
৬। দুপুরের খাবার – ৫০ রুপি
৭। সিম এবং নেট ক্রয় – ৩৪০ রুপি
৮। বাগডোগরা থেকে দিল্লী এয়ার ফেয়ার – ৩৯৬০ রুপি
মোট – ৪৬০০ রুপি।
খ) দিল্লী এয়ারপোর্ট থেকে কালকা হয়ে শিমলা
১। দিল্লী এয়ারপোর্ট থেকে ওল্ড দিল্লী রেলস্টেশন ট্যাক্সি ভাড়া – ৩৬৭ রুপি
২। রাতের খাবার এবং কফি – ১৬৭ রুপি
৩। দিল্লী থেকে কালকা ( কালকা মেইল ট্রেন -২ এসি) – ৮২০ রুপি + ২০০ রুপি
৪। টয়ট্রেন এর টিকেট – ৪২০ রুপি
৫। রাতের খাবার – ১২২ রুপি (সকালের খাবার টয়ট্রেন থেকে দিয়েছিল - দুপুরে খাওয়া হয় নাই)
৬। সারাদিনের স্ন্যাক্স – ৩০ রুপি
৭। শিমলায় হোটেল ভাড়া – ৩৩৪ রুপি
৮। স্পঞ্জের জুতা কেনা – ১২০ রুপি
মোট – ২৫৮০ রুপি।
টয় ট্রেন
শিমলা রিজ
গ) মানালির ১ম দিন
১। শিমলা ওল্ড বাস স্ট্যান্ড থেকে নিউ বাস স্ট্যান্ড – ৭ রুপি
২। শিমলা থেকে মানালি বাস ভাড়া – ৪০০ রুপি (লোকাল বাস ছিল)
৩। দুপুরের খাবার – ১১৪ রুপি (সকালে খাওয়া হয় নাই)
৪। মানালিতে ১ম দিনের হোটেল ভাড়া – ২৩৪ রুপি
৫। রাতের খাবার – ১৫৭ রুপি
৬। সারাদিনের স্ন্যাক্স – ৮৭ রুপি
৭। ইনো কেনা – ৮০ রুপি
মোট – ১০৭৯ রুপি
ঘ) মানালির ২য় দিন
১। সকালের নাস্তা – ২৫ রুপি
২। ঝর্ণা দেখতে যেতে অটো ভাড়া – ১০০ রুপি
৩। বিকালে অটো ভাড়া – ১৮০ রুপি
৪। দুপুরের খাবার – ৮০ রুপি
৫। রাতের খাবার – ১৮০ রুপি
৬। মোবাইল এ রিচারজ – ১০০ রুপি
৭। সারাদিনের স্ন্যাক্স – ১০০ রুপি
৮। ২য় দিনের হোটেল ভাড়া – ২৩৪ রুপি
মোট – ৯৯৯ রুপি
ঙ) মানালি থেকে কিলং
১। সকালের নাস্তা - ৮০ রুপি
২। দুপুরের খাবার – ১৪০ রুপি
৩। রাতের খাবার – ১৩০ রুপি
৪। কিলং এ হোটেল ভাড়া – ৫০০ রুপি
৫। স্ন্যাক্স এবং ফল কেনা – ১৩৫ রুপি
৬। মোবাইল খরচ – ৬০ রুপি
মোট – ১০৪৫ রুপি
চ) কিলং থেকে লেহ পৌঁছানো
১। মানালি থেকে লেহ ট্যাক্সি ভাড়া = ১৪০০০/৩ = ৪৬৬৭ রুপি
২। দুপুরের সারচুতে খাওয়া – ১৪০ রুপি
৩। প্যাং এ চা খাওয়া – ১০০ রুপি
৪। রুমসে তে চা খাওয়া – ৩০ রুপি
৫। লেহ তে রাতের খাবার – ৩৮০ রুপি
মোট – ৫৩১৭ রুপি
ছ) লেহ তে ১ম দিন
১। সকালের নাস্তা অথবা দুপুরের খাবার যাই বলা হোক না কেন – ১৪০ রুপি
২। রাতের খাবার – ২৬০ রুপি
৩। স্ন্যাক্স – ৫৫ রুপি
৪। এয়ারপোর্ট এ যাওয়া আসা – ৪০ রুপি
মোট – ৪৯৫ রুপি
জ) লেহ তে ২য় দিন
১। সকালের নাস্তা অথবা দুপুরের খাবার – ২০০ রুপি
২। নুব্রা ভ্যালী এবং প্যাংগং লেক যাওয়ার অনুমতি - ৭০০ রুপি
৩। লেহ শহরে ঘোরাঘুরি – ৪০০০/৩ = ১৩৩৪ রুপি
৪। কফি এবং স্ন্যাক্স – ৩৪০ রুপি
৫। নুব্রা ভ্যালী যাওয়ার জন্য ট্যাক্সি ভাড়া - ১৮০০ রুপি (এক ট্যাক্সিতে ৬ জন ছিলাম-শেয়ার ট্যাক্সি)
৬। লেহ তে তিন রাতের হোটেল ভাড়া – ১০০০ রুপি
৭। রাতের খাবার – ১৪০ রুপি
মোট – ৫৫১৪ রুপি
ঝ) লেহ থেকে নুব্রা ভ্যালী
১। সকালের নাস্তা – ৭৫ রুপি
২। অক্সিজেন সিলিন্ডার ভাড়া – ১০০০ রুপি (পুরো টাকাটাই লস প্রজেক্ট)
৩। দুপুরের খাবার – ২২০ রুপি
৪। নুব্রা তে বিকালের নাস্তা – ১১৫ রুপি
৫। নুব্রাতে হোটেল ভাড়া – ৬০০ রুপি ( রাতের খাবার এবং সকালের নাস্তা সহ)
৬। স্ন্যাক্স - ৪০ রুপি
মোট – ২০৫০ রুপি
নুব্রা ভ্যালী
ঞ) নুব্রা ভ্যালী থেকে লেহ
১। দুপুরের খাবার – ১৫৫ রুপি
২। রাতের খাবার – ২০০ রুপি
৩। লেহ তে রুম ভাড়া – ৪০০ রুপি
৪। কফি এবং স্ন্যাক্স – ১৬০ রুপি
৫। টিপস – ১০০ রুপি
৬। প্যাংগং লেক যাওয়ার ট্যাক্সি ভাড়া – ২১৫০ রুপি (এক ট্যাক্সিতে ৪ জন ছিলাম)
মোট – ৩১৬৫ রুপি
ট) লেহ থেকে প্যাংগং লেক হয়ে লেহ
১। দুপুরের খাবার – ১৫০ রুপি (সকালের নাস্তা হয় নাই)
২। রাতের খাবার – ১৪০ রুপি
৩। লেহ তে হোটেল ভাড়া- ৪০০ রুপি
৪। স্ন্যাক্স এবং চা – ১৫০ রুপি
৫। টিপস – ৫০ রুপি
মোট – ৮৯০ রুপি
প্যাংগং লেক
ঠ) লেহ থেকে কারগিল হয়ে সোনমার্গ
১। সকালের নাস্তা - ১৬০ রুপি
২। দুপুরের খাবার – ৭০ রুপি
৩। লেহ থেকে কারগিল ট্যাক্সি ভাড়া – ৭৫০ রুপি
৪। সোনমার্গ এ হোটেল ভাড়া – ২৫০ রুপি
৫। স্ন্যাক্স – ১৪০ রুপি (রাতের খাবার এর টাকা লাগে নাই – ফ্রি পাইছিলাম)
মোট – ১৩৭০ রুপি
মনে হয় যেন শিল্পীর হাতে আঁকা ছবি(ড্রাস নামক ছোট এক গ্রাম)
ড) সোনমার্গ থেকে শ্রীনগর এয়ারপোর্ট হয়ে দিল্লী
১। কারগিল থেকে শ্রীনগর ট্যাক্সি ভাড়া – ৭০০ রুপি
২। শ্রীনগর ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকে এয়ারপোর্ট ট্যাক্সি ভাড়া – ৩৫০ রুপি
৩। সকালের নাস্তা – ৯০ রুপি
৪। শ্রীনগর থেকে দিল্লী এয়ার ভাড়া – ২৮৯০ রুপি
৫। দিল্লী এয়ারপোর্ট থেকে হোটেল মেট্রো ভাড়া – ৮০ রুপি
৬। দিল্লীতে ১ম দিন হোটেল ভাড়া – ৫০০ রুপি
৭। রিকশা এবং অটো ভাড়া – ১৯০ রুপি
৮। বিরিয়ানি, কাবাব, কেসার, কোক, রাবড়ি, জুস – ৩৮০ রুপি
৯। স্পঞ্জ এর জুতা – ১০০ রুপি
১০। স্ন্যাক্স – ১২৫ রুপি
মোট – ৫৪০৫ রুপি
ঢ) দিল্লীতে ২য় দিন
১। সকালের নাস্তা – ৭৫ রুপি
২। ঘোরাঘুরির জন্য বাস ভাড়া – ৪০০ রুপি ( আরও একটা লস প্রজেক্ট)
৩। দুপুরের খাবার – ৬০ রুপি
৪। ২য় দিনের হোটেল ভাড়া – ৫০০ রুপি
৫। রাতের খাবার – ১৩৫ রুপি
৬। স্ন্যাক্স – ১৩৫ রুপি
৭। অটো-মেট্রো-এন্ট্রি ফি – ১৪০ রুপি
৮। রাত এ ট্যাক্সি তে এয়ারপোর্ট এ আসা - ৫০০ রুপি
৯। দিল্লী থেকে শিলিগুড়ি এয়ার ভাড়া ছিল – ৪০০৯ রুপি
মোট – ৫৯৫৪ রুপি
যদিও আমি পরে দিল্লী থেকে শিলিগুড়ি এয়ার টিকেট ক্যান্সেল করেছিলাম। কিন্তু আমাদের প্ল্যান ছিল ঐটাই। আমি জরুরি কাজ এ কলকাতা চলে গেছিলাম। সোহাগ প্ল্যান মত পরের দিন দুপুরে দিল্লী থেকে শিলিগুড়ি নির্ধারিত ফ্লাইটে চলে গিয়েছিল। আমি জরুরি কাজে দিল্লী থেকে ফ্লাইট ধরে কলকাতা চলে গিয়েছিলাম। পরে কলকাতা থেকে ট্রেন এ শিলিগুড়ি হয়ে ঢাকায় এসেছি। সে ক্ষেত্রে আমার একটা অর্জন হল লেহ-নুব্রা-লেহ এবং লেহ-প্যাংগং লেক-লেহ এই দুইটা বাদ দিয়ে আমি আমার ট্যুরে একই পথে ২য় বার যাই নাই। যাওয়ার সময় বর্ডার পার হওয়ার পর থেকে উপরের হিসেবে আবার শিলিগুড়ি এয়ারপোর্ট পর্যন্ত আসার সর্বমোট খরচ হয়েছে – ৪০৪৬৩ রুপি। উল্লেখ্য যে, এখানে সকল প্রকার কেনাকাটা বাদ দেয়া হয়েছে। এবং আমি যেহেতু অধূমপায়ী তাই এই খাতে আমার কখনোই কোনও খরচ করা লাগে না।
নাম না জানা কোনও জায়গায়
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৪