লাদাখ ভ্রমণ - ৩য় পর্ব
লাদাখ ভ্রমণ - সবগুলো পর্ব
মানালি এবং কুল্লু নিয়ে আমাদের দেশের লোকজনের একটা ভুল ধারণা আছে। অনেকেই কুল্লু কে মানালি জেলার মধ্যে ধরে নেয়, কিন্তু মানালি হল কুল্লু জেলার অন্তর্গত একটি উপত্যকা শহর।
আমরা শিমলা থেকে সকাল সাড়ে ৮ টায় আবারও একবার কিছু না খেয়েই বাস এ করে মানালির উদ্দেশ্যে রওনা দেই। আমাদের কাছ থেকে মানালি যাওয়ার বাস ভাড়া নিয়েছিল ৪০০ রুপি করে জন প্রতি। শিমলা হল পাহাড়ের উপরের একটা শহর। বাস কিছুক্ষণ চলার পর ই আঁকা বাঁকা পাহাড়ি পথ বেয়ে নিচের দিকে নামতে লাগল। শিমলা থেকে মানালি যাওয়ার শুরুতেই ঘুরানো পথে অনেক নিচে নামতে হয়। এবং বাস খুব দ্রুত নেমে যাওয়ার কারণে এই সময় অনেকেরই বমি বমি লাগে। আমাদের অবশ্য তেমন কোনও সমস্যা হয় নাই।
বাস এ সোহাগ একটি অসম্ভব মিষ্টি স্থানীয় বাচ্চা কে কোলে নিয়ে
শিমলা থেকে নিচে নেমে যাওয়ার পর
বাস যতই নিচের দিকে নামতে লাগল, মেঘের পরিমাণ ততই কমতে লাগল। সাথে সাথে চারপাশের প্রকৃতি স্পষ্ট হতে লাগল। এভাবে সাড়ে ৯ টা পর্যন্ত চলার বাস এক জায়গায় ৫ মিনিটের জন্য থামলে আমি নেমে পানি আর বিস্কুট কিনে নিলাম। সকাল থেকে না খেয়ে আছি, তাই বিস্কুট চিবাতে থাকলাম এবং জানালা দিয়ে চারপাশ দেখতে লাগলাম। এভাবে দুই পাশের অপরূপ দৃশ্য দেখতে দেখতে দুপুর সাড়ে ১২ টা নাগাদ আমাদের বাস একটা রেস্টুরেন্ট এ খাওয়ার জন্য থামল। আমরা বাস থেকে নেমে ঐখানে জিরা রাইস, আলু পরোটা খেয়ে নিলাম। সেই সাথে কিছু ফল ও পানি কিনে নিলাম, কারণ মানালি পৌঁছাতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যাবে আর এর মধ্যে বাস আর কোথাও বিরতি দিবে না।
মানালির পথে একটি বাঁধ
বাঁধের উপর থেকে
আবার উপরের দিকে ওঠা শুরু
বেলা আড়াই টার দিকে আমাদের বাস মান্ডি নামক একটা জায়গায় এসে থামল। বাস এর অনেক লোক জন ই এখানে নেমে গেল। আবার কিছু লোক উঠল। আমরা বসেছিলাম পিছনের দিকে, তেমন লোক ছিল না। তিনজন ই আলাদা ভাবে জানালার পাশে গিয়ে বসলাম। বাস এর লোক আমাকে বুদ্ধি ডান দিকের জানালার পাশে বসতে, তাহলে ভালো ভিউ পাওয়া যাবে। আমরা তার কথা মতো ডান দিকের জানালার পাশে গিয়ে বসলাম। কিছু দূর পর ডান দিকে শুরু হল বিয়াস(বাংলায় বিপাশা) নদীর অপরূপ সৌন্দর্য। নদীর স্রোতের গর্জনের সাথে পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে শ্বেত শুভ্র মেঘের ভেলা। মাঝে মাঝে পাহাড়ের গা বেয়ে ঝর্ণার পানি গিয়ে আবার বিয়াস এর স্রোতের সাথে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছিল অনন্তকাল ধরে এই রাস্তার পাশ দিয়ে চলা যায়।
মান্ডির পর বিয়াস এর বয়ে চলা
এভাবে চলতে চলতে কখন যে কুল্লু চলে আসলাম তা টের ই পেলাম না। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৪ টা বেজে গেছে। আমাদের বাস কুল্লু বাস স্ট্যান্ড এ ৫ মিনিটের জন্য থামল। আমি বাস থেকে নেমে চার পাশে একটু হেঁটে আসলাম। এখান থেকে মানালি যেতে বেশি হলে এক ঘণ্টা লাগবে। কুল্লু থেকে রওনা দেয়ার পর আবার ও আমরা বিয়াস এর রুপে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম। কিছু দূর যাওয়ার পর রাস্তার দুই পাশে আপেল বাগানের সারি চোখে পড়ল। আমার জীবনে প্রথম আপেল বাগান দেখা। ভালই লাগছিল কিন্তু মন উসখুস করছিল বিয়াস এর জন্য। কিছুক্ষণ পরে আবার বিয়াস এর দেখা পাওয়া গেল। আসলে মান্ডি থেকে মানালি পর্যন্ত প্রায় পুরোটা পথ ই বিয়াস নদী হাতের ডান পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়। আমরা বিয়াস এর রুপ সুধা পান করতে করতে বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকে মানালি বাস স্ট্যান্ড এ পৌঁছে গেলাম। ঝির ঝির বৃষ্টি আমাদের কে মানালি বাস স্ট্যান্ড এ স্বাগতম জানালো।
কুল্লু বাস স্ট্যান্ড
কুল্লু শহর থেকে বের হবার পর মুহূর্ত
রাস্তার পাশের আপেল বাগান
পাহাড়ের ফাঁকে মেঘের লুকোচুরি
কুল্লু পার হওয়ার পর বাস থেকে বিয়াস নদী
আমরা কোথাও কোনও হোটেল বুকিং দিয়ে যাই নাই। শিমলার অভিজ্ঞতা থেকে বাস থেকে নামার সময় তিনজন বুদ্ধি করে নিলাম এবার কোনও দালাল জিজ্ঞেস করলে বলব যে আমাদের রুম বুকিং করা আছে, তারপর তিনজন আলাদা ভাবে হোটেল খুঁজবো। বৃষ্টির মধ্যে আমরা ম্যাল রোড এর পিছনে চলে গেলাম হোটেল খুঁজতে। প্রায় ৩০ মিনিট পর আমরা হোটেল তাশিলা তে ৭০০ রুপি করে তিন জনের জন্য একটা রুম পেয়ে গেলাম। আমাদের হোটেল টা খুব ই পছন্দ হয়েছিল এবং ম্যাল থেকে মাত্র ২ মিনিটের হাঁটা দূরত্বে ছিল। আমরা ৩০ মিনিটের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে বাইরে ঘুরতে বের হলাম। প্রথমে একটা রেস্টুরেন্ট এ গিয়ে চিকেন তান্দুরি, নান, রাইস খেয়ে নিলাম। তারপর হাঁটতে হাঁটতে ম্যাল এ চলে গেলাম।
মানালির ম্যাপ
রাতের ম্যাল রোড এবং আমরা তিনজন
মানালির ম্যাল রোড এর দুই পাশে বেশিরভাগ ই হোটেল, রেস্টুরেন্ট আর অনেক ট্যুর অপারেটর দের দোকান। আমরা সোজা চলে গেলাম হিমাচল প্রদেশের ট্যুরিস্ট সেন্টার এ লাদাখ যাওয়ার বাস এর খোঁজ খবর নিতে। ওরা জানালো যে, ওদের বাস পরের দিন ছেড়ে যাবে। তারপর ওদের স্বাধীনতা দিবস এর জন্য ৪ দিন বাস বন্ধ থাকবে। অবশ্য এতে আমাদের মন খারাপের কিছু ছিল না। কারণ আমাদের প্ল্যান ছিল রিজার্ভ ট্যাক্সি করে লাদাখ যাওয়ার। এতে করে সুবিধা হল আমাদের যখন মন চায় তখন থামতে পারব। কোনও বাধা ধরা নিয়ম এ চলতে হয় না। এর পর আমরা কয়েকটা ট্যুর অপারেটর এর দোকান এ গিয়ে লাদাখ যাওয়ার ট্যাক্সি ভাড়ার তথ্য নিলাম। কখন যে রাত ১০ টা বেজে গেল টের ই পেলাম না। রাস্তা ঘাট ফাঁকা হতে শুরু করল। আমরাও কিছু হাল্কা খাবার কিনে হোটেল এ চলে আসলাম।
বিয়াস এর আরও কিছু ছবি
[img|http://s3.amazonaws.com/somewherein/pictures/RubaiatShovan/RubaiatShovan-1488218857-f32a82b_xlarge.jpg
লাদাখ ভ্রমন(৫ম পর্ব): হিমাচলের প্রাণ অপরুপা মানালি
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১৭ রাত ১১:১০