কহলীল জিব্রান-এর তিনটি কবিতা
ভাষান্তর : ঋতো আহমেদ
শকুন এবং ম’রে-যাচ্ছে-যে
থামো, ব্যাকুল বন্ধু আমার, অন্ততঃ কিছুক্ষণ থামো
এই তো ছেড়ে যাচ্ছি আমার দ্রুত ছেড়ে-যাবার-ই দেহ
সন্তাপ চারিয়ে আছে খুব, অযথা
আর তোমার স্থিরতাকে গুড়িয়ে দিচ্ছে।
এক মুহূর্ত অপেক্ষা নাও
ঠেকিয়ে রাখবো না আর তোমার সত্য-ক্ষুধা:
অবশ্য এ বাধা, যদিও নিঃশ্বাস মাত্র
ভেঙে ফেলা কঠিন।
সমস্ত কিছুর চে’ সমর্থ
যে মৃত্যু ইচ্ছা,
দূর্বল থেকে দূর্বলতর
বেঁচে থাকার ইচ্ছে নিয়েই ছিল।
ক্ষমা কোরো ভাই আমায়; অনেক্ষণ ঝুলে আছি।
স্মৃতি আমাকে আগলে রাখছে
অনেক অনেক দিনের শোভাযাত্রা যেন,
তারুণ্যে-গড়া এ পথ এখনও চারিয়ে আছে এই চোখে,
একটি মুখ প্রতিবার ঘুরে ফিরে আসছে, ঘুমুতে দেয় না,
একটি কণ্ঠ কানে আমার আটকে আছে,
আর একটি হাত ছেনে দিচ্ছে আমার হাত।
অনেক অনেক ক্ষণ অপেক্ষা নিয়ে আছো, ক্ষমা কোরো আমায়।
সমস্ত-ই শেষ এখন, মুছে যাচ্ছে ধীরে—
সেই মুখ, সেই কণ্ঠ, সেই হাত, আর সেই কুহক যে ওদের নিয়ে এসছিল। বাঁধন হালকা
এখন।
কেটে গ্যাছে সুতো।
খাবার ও পানিও— কিচ্ছু তুলে নেয়া হয়নি।
এগিয়ে এসো, বুভুক্ষু ভাই আমার,
আসন প্রস্তুত,
মেনু, হিসাব এবং সঞ্চয়ও,
সব দেয়া হচ্ছে ভালোবাসায়।
এসো, রাখো তোমার দীর্ঘ-ঠোঁট-কোপ, এই বাঁ পাশটায়,
খাঁচা-পাখি থেকে বেরিয়ে আসুক জল,
ডানা আর ঝাপটায় না যার:
তার সাথে আকাশে ভাসবো আমি।
এসো এবার, বন্ধু আমার, আমি তোমার নিমণ্ত্রক,
আর তুমি, তুমি আমার এসো-হে-বন্ধু অতিথি।
নতুন আনন্দ
গত রাতে নতুন এক আনন্দ খুঁজে পেয়েছি আমি, কিন্তু ঠিক যখন তা শুরু করলাম, দেবদূত আর এক শয়তান দৌড়ে এলো। আমার দরজার কাছে ওদের দেখা। আমার এই নতুন-সৃষ্ট আনন্দকে নিয়ে তর্ক তুললো ওরা; একজন বললো, “এটা পাপ”— আর অন্যজন, “এটা একটা সত্য”।
উপস্থিতি
তোমায় দেখতে পাচ্ছি বটপাতাজলে
যেন এক শিশুর কান্না এই বিপন্ন বনে।
একটি পালকে তুমি সারাটি দিন ছিলে
উড়ে আসোনি, কুড়িয়ে পেয়েছি তোমায়
ভোরে, অ-পরিচ্ছন্ন পথে;
বিদায় দাওনি তুমি সান্ধ্য-অস্থিরতায়
পথ চেয়ে রও
আমার ঘরের
না-জ্ব’লে-থাকা বাতি যেন। অথচ
'ঘর নেই' বিশ্বাস করে না কেউ
দেয়ালটাকেও অনুভব করে না—
কী অদ্ভুত… কী অদ্ভুত তুমি ! তোমার মাঝেই
তোমায় দেখতে পাচ্ছি ভূগোলে-বিজ্ঞানে
যদিও মানতে চায় না অনেকে—এইসব বুঝি
সারাদিন পাশে থাকো
তুমি তো আমায় জানো।
বি: দ্র: এক যুগেরও বেশি আগে করা আমার এই অনুবাদ গুলো হঠাৎ পেয়ে গেলাম এক বন্ধুর ফেসবুক পোস্টে। SUST-এর 'অঙ্কুট' নামের একটি লিটিল-ম্যাগ-এ ছাপা হয়েছিল ২০০৫-এ। আশা করি ভালো লাগবে আপনাদের।
ছবি : internet
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:২১