হৃদয়ে মন্বন্তর নিয়ে খাঁ খাঁ রোদ্দুর ওঠে পরদিন।
শহর হেলে পড়ে নৈরাশে।
খোঁচা খোঁচা দাড়ির ভেতর
যে মেয়েটি গোলাপ খুঁজে পেয়েছিলো একদিন—
সে-ও চলে গেছে। চলে গেছে
প্রেমের গন্ধের ঘাম—চলে গেছে ঘামের গন্ধের রাত—চলে গেছে মেঘ ও বৃষ্টি-বিদ্যুৎ
‘ভালোবাসি’-কথা না লিখেই চলে যায় তারা !
তারপর, জন্মেছি আমি;
হৃদয়ে মন্বন্তর নিয়ে খাঁ খাঁ এক রোদ। কী খাই বলো ! সহস্রাব্দের ক্ষুধার্ত চোখ আমার..
উত্তপ্ত পিচ—ফাঁকা পথ—রাজপথ
হঠাৎ দু-একটি দারুণ দানব—তেড়ে যাওয়া বিষাদ চিৎকার—
গলে যাওয়া কালচে নরম ঘিলু—এইসব?
কী খাবো,—কী খাই আমি ! কাত হয়ে—
দিগন্ত পর্যন্ত শুয়ে আছে নদ। ক্লান্ত, অবসন্ন, অচল। অথচ পাহাড় বেয়ে নেমে আসবার কথা অশ্রু। গড়িয়ে নামবার কথা জল। আছড়ে ভাঙবার কথা শহর-সমুদ্রের পাড়।, অথচ বায়ু,, ঘূর্ণির মতো ঘোর মধ্যহ্নেও উপরে ফেলবার কথা হেলা—সহাস্য প্রতারনা। উড়িয়ে দেবার কথা মিথ্যে মায়ার ব্যাথা—জুলফি।
আসমান থেকে অবতীর্ণ হওয়ার কথা একএকটি নতুন পংক্তি—'ভালোবাসি'..'ভালোবাসি'..
বলো তবে, কী খাই আমি? স্মৃতি খাবো? গত জন্মের গ্রীষ্ম-গোঁজা অন্ধ-আলোর মাটি?
সে-ও খেতে পারি। মাটির ভাঙার মড়মড়ে শব্দের ধ্বনি, মাটির পোড়ার বিস্মৃত গন্ধের ভাপ—সব। সব খাবো। ক্লিওপেট্রার ঘুম, সীতার বন, অথবা নেফারতিতি,, তোমাকেও তুলে এনে খেয়ে নেবো আজ। ক্ষুধার দৃষ্টি নিয়ে দলবেঁধে নেমে যাবো প্রাচীন পুরাণে। পৌরাণিক পৃথিবীতে খুবলে খাবো স্মৃতি। কে আছো প্রেম, কে আছো রতি,—কে আমার প্রণয় সারথী! এসো, ওঠো এই স্মৃতির চরাচর। মহাকাল মহাবিশ্ব মহাকাশ, তুমি। পৃথিবীতে নামো। তাকাও এ চোখে। মণির মধ্যে এই—এমন আকাল, এমন নৈঃশব্দ্য নৈরাশ, এমন নৈরাজ্যের ক্ষুধা ! কী করবো এখন? বলো আমায়—
হৃদয়ে মন্বন্তর নিয়ে কী খাই আমি !
আশা?
২৪.০৯.২০১৮
ছবি : সালভাদর দালি
কৃতজ্ঞতা স্বীকার : অনুব্রতা গুপ্তা, তৌহিদুল ইসলাম
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:৪২