আমরা বাঙালী, বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। বিশ্বের প্রায় ৩০ কোটি মানুষের এই ভাষাটিকে মাইকেল, বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনান্দ, শরতচন্দ্রসহ অসংখ্য সাহিত্যকর্মীর কর্মপ্রয়াসে বাংলা ভাষা উন্নীত হয়েছে আন্তর্জাতিক মানে। ভাষা শহীদের আত্নত্যাগে অবিস্বরনীয় অর্জন আমাদের একুশের গৌরবোজ্জল ইতিহাস বিশ্ব দরবারে ছড়িয়ে গেছে । এ গৌরবের সাথে নতুন মাত্রা যোগ করলো বাংলাদেশ ক্রিকেট তরুণরা। একের পর এক সাফল্য পেয়ে মাশরাফির দল আজ কোটি বাঙালির হৃদয়ের মণিকোঠায়।
বর্তমানে ক্রিকেট বিশ্ব কাঁপানো কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান দুর্দান্ত বোলার হিসেবে সারা বিশ্বে সমাদৃত। যিনিই প্রথম কাটারকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের বিস্মিত করে আলোচিত হয়েছেন।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রালয় মুস্তাফিজকে বিস্ময় উপহার দেওয়ার জন্য শেরে বাংলা নগরের পুরো এলাকার দেয়ালজুড়ে ‘কাটার মাস্টারের চিত্রপট। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও মুস্তাফিজের গুনকিত্তনে শরিক হয়েছেন।
শুধুমাত্র বাংলাদেশই নয় ক্রিকেটে বিশ্বও মেতে উঠেছে মুস্তাফিজ বন্দনায়। সাবেক ক্রিকেটার থেকে শুরু করে সমসাময়িক খ্যাতিসম্পন্ন ক্রিকেট তারকারাও তার গীত-বন্দনায় আজ পঞ্চমুখ। বিশেষ করে অবাককরা মজার বিষয় হচ্ছে অষ্ট্রেলিয়ান ওপেনিং ঝড়োয়া ব্যাটসম্যান ডেভিড ওয়ার্নার তার আপাদমস্তক বুঝতে ইতিমধ্যে বাংলা ভাষা অনুশীলন শুরু করে দিয়েছেন।
এরই মধে পরিচালকবৃন্দের কেউবা কাটার মাষ্টারকে ইংরেজি ভাষা শিক্ষার জোর দিচ্ছেন। প্রকৃতপক্ষে ব্যাক্তির নিজস্ব প্রতিভা অনুযায়ী তাকে সাধীনভাবে লক্ষে পৌছার জন্য সুষ্ঠু কাযপরিবেশ দেয়া উচিৎ।
মোস্তাফিজের কথায় যেন সেটিই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
কথাটি বানী হিসেবে গ্রহন করা যায়,
"আমি ইংরেজি কিংবা হিন্দি ভাল বুঝি না।
তবে, দিন শেষে এটা সত্যি যে, ক্রিকেটের নিজস্ব একটা ভাষা আছে।
আর সেটা আমি বেশ ভালই বুঝি।"
এই কথাটি কেউকেউ আজ বানী হিসেবে গ্রহণ করছে।
বিজাতিদের ভাষায় দক্ষতা অজনের চেয়ে নিজস্ব প্রতিভার সুদক্ষতা অজনই বেশি জরুরী। আমরা যদি নিজস্ব দক্ষতা অজন করতে পারি তবে ঘরেঘরে মুস্তাফিজ তৈরি হবে। সেই মুস্তাফিজদের ভাষা (বাংলা) সারা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হবে। নিঃষন্দেহে বাংলা ভাষাই বিশ্বের সবচেয়ে সুমধুর ভাষা হওয়া সত্তেও বাংলাদেশেরই কোন কোন প্রতিষ্টানে বাংলা ভাষায় কথোপকথন নিষিদ্ধ করা হয়েছে ২০১৬ সালে। ১৯৫২ সালে নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়ে যারা বাংলা ভাষাকে মার্তৃ ভাষায় রূপায়ন করেছিলেন তার হয়তো এখন বুঝতে পেরেছেন যে, বাঙালির ওপর বিশ্বাস রাখা বিপজ্জনক কারন বাঙালি আন্দোলন করে সফল হওয়ার পর মনে থাকে না কেনো তারা আন্দোলন করেছিলো।
এ যুগেও যারা আধুনিকতার নামে হিন্দিতে কথা বলে ইংলিশে ভাব মারে এবং বাংলাটা ঠিকভাবে বলতে পারে না তাদের জন্য কবি - আবদুল হাকিম তার বঙ্গবাণী কবিতায় যথার্থই বলেছেন-
যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।
সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি॥
দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে ন জুয়ায়।
নিজ দেশ তেয়াগী কেন বিদেশ ন যায়।।
কবি হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন, "একজন চাষী বা নদীর মাঝি সাংস্কৃতিকভাবে যতোটা মূল্যবান, সারা সচিবালয় ও মন্ত্রীপরিষদও ততোটা মূল্যবান নয়।"
ঐতিহ্য-সাংকৃতির এবং দেশ উন্নয়নের প্রতি সরকারের অসচেতনতা এবং অবহেলার সুযোগে আজকের দিনের নাব্য রাজাকারদের সেচ্ছাচারিতা দিনদিন বেড়ে যাচ্ছে।
যেমনি সুন্দরবনে ক্রমান্বয়ে পরিকল্পিতভাবে আগুনে লাগিয়ে বনাঞ্চল ধংষ এবং বাঘ দেশান্তরিত করা হচ্ছে তেমনি ক্রিকেটারদের জার্সি থেকেও টাইগারকে তাড়িয়ে দেয়ার চক্রান্ত চলছে সম্ভবত। শেরে বাংলা নগরের দেয়ালে কাটার মাস্টারের ছবিগুলো যেন তাই বলছে।
তবে ছবির সঙ্গে লেখা কথাগুলো চমকপ্রদ, ‘সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’।
বাংলার তরুণ-তরুণীরা এই কথাটি অবশ্যই বাস্তবে রুপায়ন করতে পারবে বলে বিশ্বাস করি যদি সরকার তথা সর্বস্তরের জনগন নবীনদের সর্বোপরি পৃষ্ঠপোষক হয়।
ছবি সূত্রঃ ইন্টারনেট
পরিশেষে
এটা একটা মনোস্তাত্ত্বিক লেখা। গবেষণামুলক কিছু না। তাই আমার যুক্তির পক্ষে রেফারেন্স টেনে লেখা বড় করিনাই। শুধু নিজের ধারনাগুলো শেয়ার করেছি।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১৬ দুপুর ১:২৭