somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছাউনী

০৬ ই মে, ২০১৬ সকাল ৮:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সন্ধ্যা চলে আসবার মধ্যে এক ধরণের নিশ্চয়তা আছে। আজকের দিবসের যতোটুকু সময় অপাত্রে বিসর্জন দেওয়ার ছিলো তা দেওয়া হয়ে গেছে। এখন থেকে ঘুমাতে যাবার আগ পর্যন্ত সময়টুকু নিভৃতে কাটবে। নিঃসঙ্গই হোক কিংবা পরিবার পরিজনের সাথেই হোক। ঐকান্তিক এই অনিবার্য প্রহরগুলোতে বহুবিধ প্রাত্যহিক ক্লেদে হারিয়ে যাওয়া জীবনবোধ যেন ফিরে আসে।

বৃষ্টিতে কাঁদা হয়ে যাওয়া এবড়োথেবড়ো রাস্তা পার হতে হতে আমি ভাবতে থাকি কথাগুলোতে বড় কোন ধরণের ফাঁকি নেই তো? কিংবা ভাবনাতে?

নির্দিষ্ট কোন উত্তর আসেনা। এই বাস্তবতায় বিচলিত হইনা। প্রতিদিনই এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হই। যখন উত্তর কিংবা সমাধানের কোন নির্দিষ্টতা খুঁজে পাওয়াটা অসম্ভব হয়ে পড়ে।

এক বর্ষার রাতে দেখেছিলাম এক মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক বৃষ্টির হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে প্রাণপণে বাসস্ট্যান্ডের ছাউনীর মাঝে আশ্রয় খুঁজছিলেন। অথচ তার চারপাশের ভিড় প্রায়শই তাকে ঠেলে দিচ্ছিলো ছাউনীর বাইরে। কিন্তু ভদ্রলোক নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তির কারনেই কিনা ঠিকই ছাউনীতে নিজের জায়গা করে নিতে পারছিলেন। ভিড় পাতলা হবার পরে তার সাথে নিজে থেকে কথা বলেছিলাম। জেনেছিলাম ভদ্রলোকের প্রবল এজমার সমস্যা। মাত্র কিছুদিন হলো জ্বর থেকে সেরে উঠেছেন। ভগ্ন স্বাস্থ্যের স্ত্রী এবং বিধবা একটি মেয়ে নিয়ে তার পরিবার। এই বাস্তবতায় ভদ্রলোকের গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া মানে আরো দুইটি প্রাণীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে চলে যাবার নিশ্চয়তা।

কিন্তু ভদ্রলোক আমাকে বিস্মিত করে জানিয়েছিলেন ছাউনীতে প্রাণপণে প্রবেশ করার সময়ে নিজের স্ত্রী কন্যা কারো কথাই তিনি ভাবছিলেন না। তিনি শুধুমাত্র ভাবছিলেন নিজের কথা। আত্মচিন্তার প্রখরতা থেকেই বৃষ্টিস্নাত রাতে তিনি বারবার ছাউনীতে নিজের জায়গা করে নিতে পারছিলেন। ভদ্রলোকের সরল স্বীকারোক্তি। কথাগুলো শুনে তাকে তখন এতোটুকু দোষী বলে মনে হয়নি।

আজও তাকে দোষী মনে হয়না। কথাগুলো উচ্চারণ করার সময়তে তার মুখের দিকে দৃষ্টি গভীরতর করেছিলাম। সোডিয়াম আলোতে বৃষ্টিতে মাখামাখি একটি বিষণ্ণ রাত্রিতে যতোটুকু তাকিয়ে থাকা যায় আর কি। তার মুখের প্রতিটি রেখাতেই অপরাধবোধ ঠিকরে ঠিকরে বেরুচ্ছে। সম্ভবত পরিবারের সাথেও আত্মিকভাবে সম্পৃক্ত হতে না পারার গ্লানি।

আমাদের সামাজিকতাবোধে প্রচুর আড়ম্বরতা প্রস্ফুটিত হয়। আমরা অপরের সাথে হাসিতে উজ্জ্বল হয়ে কথা বলি। সংযোগ স্থাপন করি। যেমনটা মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি বলে ধরে নেওয়া হয়। আমরা নিজেদের গঠিত বর্তমানকে অতিক্রম করে সেই মুহূর্তগুলোতে অন্য কোন এক বর্তমানে অবগাহন করি। নিজেদের ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে ছড়িয়ে দেই। নাকি খোদ সময়কেই?

কোন উত্তরের অন্বেষণে যেতে আমরা অনাগ্রহ পোষণ করি। আমরা ভীত চমকিত সচকিত হয়ে উঠি। যেই বন্ধুর সাথে মুহূর্তগুলোকে ক্লেদে মাখামাখি হয়ে কাটিয়ে দিচ্ছি তাকে আমার প্রয়োজন। ভীষণভাবে প্রয়োজন। কোন আত্মিক টানে আপ্লুত হয়ে নয়। শক্ত মাটিতে শক্ত হয়ে দাঁড়াবার জন্য তাকে আমার প্রয়োজন। ইতোমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে প্রভাবশালীদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া আমার সেই বন্ধু আমাকে কোন লোভনীয় চাকরী পাইয়ে দিতে পারে। কিংবা আমাকে পৌঁছে দিতে পারে তেমন কোন প্রভাবশালীর কাছে যাকে আমার সেই অনতিক্রম্য বর্তমানে খুবই দরকার। আমরা তার হ্যা এর সাথে হ্যা মিলিয়ে যাই। অস্তিত্বশীল বর্তমানের সারাৎসার অতিক্রম করে অন্য কোন বর্তমানে প্রবেশ করতে আমাদের উৎকন্ঠা প্রভাবশালী সেই বন্ধুর পরিবার পরিজনের খোঁজ়খবর করতে আমাদের প্ররোচিত করে। আমরা তার সুখে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠি। তার শঙ্কা আমাদেরও দুশ্চিন্তার অন্তর্ভুক্ত হয়। বিষয়টি আর কিছুই নয়। প্রয়োজন।

সেই সুদীর্ঘ সময়টুকু কাটিয়ে অবশেষে আমরা যার যার ঘরে ফিরি। তবে সচেতনভাবেই আয়নাকে এড়িয়ে যাই।

না এড়ালে দেখতে পারতাম বৃষ্টিস্নাত একটি রাতে সোডিয়াম আলোতে মাখামাখি হয়ে ভিড় ঠেলে প্রাণপণে ছাউনীতে আশ্রয় নিতে ব্যাপৃত এক মধ্যবয়স্ক মধ্যবিত্ত ভদ্রলোকের চেহারার সাথে আমাদের চেহারার আশ্চর্য সামঞ্জস্য। আমাদের মুখের প্রতিটি রেখার দিকে কেউ গভীরতর দৃষ্টি রাখলে এক অপরাধীকে দেখতে পাবে।

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১৬ সকাল ৮:৪৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×