সাদেক সাহেবের মনটা আজ ভালো নাই।টেনশনে আছেন।তার নিজের কোনো ব্যাপার নিয়ে নয়। টেনশনটা ছেলের রেজাল্ট নিয়ে।শুভ্রর আজ এইচ এস সি রেজাল্ট দিবে।রমজান মাস।সেহরী খেয়ে ফজরের নামাজ আদায় করে অন্যান্য দিন খনিক ঘুমিয়ে নেন তিনি। আজ ঘুমান নি।বর্তমানে ছাদের উপর পায়চারি করছেন।সকাল সাতটা বাজে।রমজান মাস বলে যান্তিক শহরটি এখনও পুরোপুরি জেগে ওঠেনি।কোলাহোল শূন্য শহরটিকে মন্দ লাগছে না আজ।নাক দিয়ে টেনে মুক্ত কিছু বাতাস ভিতরে নেন সাদেক সাহেব।বড্ড ভালো লাগে তার।নিজের মধ্যে বিরাজমান অস্থিরতাটা কিছুটা কমতে শুরূ করেছে।সাদেক সাহেব আশ্চর্য হোন।আজকাল-কার ছেলে মেয়ে গুলোর খুব রকম ছোট বয়স থেকেই এ+, এ, বি, সি, ডি ভাগে ভাগ হয়ে যাওয়াটা তার খারাপ লাগে।মায়া লাগে খুব।বিদ্যার পাল্লা তোমার চেয়ে দুই ধাপ বেশি কিংবা এক ধাপ বেশি আঙ্গুল উচিঁয়ে দেখিয়ে দেয়াটা কেমন যেনো দৃষ্টিকটু লাগে তার।সাদেক সাহেব নিজেকে সামলে নেন।তার চিন্তা-ভাবনা যে অতিরিক্ত দার্শনিক পর্যায়ে চলে যাচ্ছে তা তিনি বুঝতে পারছেন।নিচে নামতে হবে।ছেলেটা ঘুম থেকে উঠেছে কিনা দেখা দরকার।
নিচে নেমে দেখেন মা-ছেলে একসাথে এখনও ঘুমাচ্ছে।শুভ্রর রুমটা আজ কিছুটা অগোছালো।মিলি নিজেও হয়তো কিছুটা চিন্তিত।সাদেক সাহেবের মুখে মৃদু হাসির রেখা ফুটে ওঠে।মিলির বাম হাত ছেলের বুকের উপর রাখা।গভীর মমতা মাখা দৃশ্যটি থেকে সাদেক সাহেব তার চোখ দু'টিকে সরাতে পারেন না।কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকেন।হাসির রেখাটি মুখে ঝুলিয়ে রেখেই নিজ রূমের দিকে পা বাড়ান।
ছেলের সাথে তার সর্বশেষ রেজাল্ট বিষয়ক কথা হয়েছে সেহরীর সময়।খাবার টেবিলে।
- কিরে এখনও টেনশন লাগছে।
- "কিছুটা।" খেতে খেতে প্লেটের দিকে তাকিয়েই উত্তর দিয়েছিলো শুভ্র।
- "তোকে না বলছি টেনশন করতে না।" মিলি কিছুটা কৃত্তিম রাগ জড়ানো কন্ঠে বলে ওঠেছিলো।
- মা-বাবা শোন, মনে হইতাছে রেজাল্টটা আমার মাথার উপর দিয়া যাবে।
-"মানে?" সাদেক সাহেব জিজ্ঞাসা করেছিলেন।
- "মানে হলো, হয়তোবা একটুর জন্য এ+ টা মিস যাবে।" কিছুটা হেসে বলেছিলো শুভ্র।তার ছেলের হাসিটা সুন্দর।খুব।
- "তুই এ+ পেলেও আমরা খুশি।না পেলেও।তোর তো মন খারাপের কোনো দরকার নাই, বাবা।ফিজিক্স আর ক্যামেস্ট্রি এক্সামের আগে জ্বর না আসলে তো এক্সাম আরো ভালো হতো।১০২ ডিগ্রি জ্বর নিয়েও যে তুমি পরীক্ষা দিছো এটাই অনেক কিছু।" তুই তুমি মিশ্রিত করে বলেছিলো মিলি।
- "অনেক কিছু না, মা।" শুকনো হাসি দিয়ে এটাই বলেছিলো ছেলেটি তার।
সাদেক সাহেবের অস্থিরতাটা আবারো ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে।ছেলের রেজাল্ট কোনো ফেক্টর না।ফেক্টর হলো ছেলে।শুভ্র নামকরা অভিজাত কলেজে পড়ে।তার বন্ধুরাও এমন।ভালো স্টুডেন্ট।তারা এ+ পাবে।উল্লাস করবে।শুভ্র এ+ না পেলে তার মন খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক।ছেলের মন খারাপ তিনি সহ্য করতে পারেন না।তারও মন খারাপ হবে, খুব। সাথে মিলিরও।তার দু'তলা বাড়ির উপরের আকাশটুকু মেঘাচ্ছন্ন থাকবে কিছুদিন। তবে আশার কথা হলো কালকে মিলি বলেছে, তার মন বলছে শুভ্র নাকি এ+ পাবে।টেনশনের কোনো কারণ নাই।মিলির কথায় তিনি ভরসা পান।মিলির কথা সাধারণত বেঠিক হয় না।আর ছেলের প্রতি মায়ের অনুমান সঠিক হওয়ারই কথা।সাদেক সাহেব মনে মনে ঠিক করে ফেলেন রেজাল্ট যাই হোক ছেলেকে আজ তিনি জড়িয়ে ধরবেন।অনেকদিন ছেলেকে বুকে জড়ানো হয় না।বাবা-ছেলের বুক মাখামাখি হোক কিছুক্ষণ পরম মমতায়।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:৩০